– এই ছেলে এই তুমি আমাকে ইগনোর করো কেন? একদম বোকা সাজার ভান করবে না। যারা বোকা সাজার ভান করে তাদেরকে আমি একদম পছন্দ করি না।
– জ্বী।
– জ্বী কী হ্যাঁ? এদিকে তাকাও, আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলো।
– জ্বী।
– আবার জ্বী? তুমি কথা বলতে পারো না? এই ছেলে শোনো, তোমার মতো ছেলেরা না মিচকা শয়তান হয়। সামনে সাধু সেজে থাকে। অথচ পেছনে ঠিকই ড্যাং ড্যাং করে বেড়ায়।
– জ্বী।
– নাম কি তোমার যেন?
– আ.. আ… আলভী!
– তুমি তোতলা নাকি?
– না।
– তাহলে তোতলাচ্ছো কেন?
– অপরিচিতদের সাথে কথা বলতে গেলে আমার এমনটা হয়।
– এইতো এবার সুন্দর করে কথা বলেছো। এখন বলো তো, তুমি আমাকে ইগনোর করো কেন?
– আমার কারো সাথে মিশতে ভালো লাগে না।
– গার্লফ্রেণ্ড আছে?
– না।
– তাহলে কারো সাথে না মেশার কী আছে?
– আচ্ছা আমি আসি। আমার ফিরতে হবে।
– বাসা কোথায় তোমার?
আলভী কোনো উত্তর না দিয়ে প্রস্থান করলো। আনিকা বিস্ময় চোখে তার দিকে চেয়ে রইলো। সে মনে মনে ভাবছে, কী অদ্ভুত ছেলেরে বাবা! তার মতো এতো সুন্দর একটা মেয়েকে কিনা সে ইগনোর করলো। অথচ তার পিছে এর মতো কতশত আলভী পড়ে থাকে। হঠাৎই তার বান্ধবী তাকে ডাক দিয়ে বললো, কিরে পাত্তা দিলো না তো! আরে ঐ ছেলেকে সেই ফার্স্ট ইয়ার থেকে দেখে আসছি। কারো সাথে তেমন কথা বলে না। ক্লাস, কলেজ কিংবা ক্যাম্পাসে তার কোনো বন্ধু বান্ধবও নেই। মাঝে মাঝে স্যার ম্যামদের সাথে কথা বলে। তবুও সেটা প্রয়োজন মাফিক। আনিকা বললো, আমি আমার পছন্দের জিনিস আদায় করে ছাড়ি। ঐ ছেলেকে আমার প্রেমে পড়তেই হবে। দেখি সে কত ভদ্র সেজে থাকতে পারে!
– আরে থাক না। বাদ দে। শুধু শুধু ছেলেটার পিছে লাগতে গেলি কেন?
– লাগবো না মানে? সে কিভাবে আমাকে ইগনোর করে দেখেছিস? আর আজ সে কথা বলার মাঝখানে হুট করে চলে গেল।
– দেখ, ওর চেয়ে রাকিব ছেলেটা শতগুণে ভালো। সবসময় তোর পিছে লেগে থাকে। ঐযে দেখ কেমন ড্যাবড্যাব করে তোর দিকে তাকিয়ে আছে।
– আমার ঐ আলভীকেই চাই। ছেলেটা যেমন আজ আমাকে ঘুরাচ্ছে, ইগনোর করছে। তেমন ওকেও আমার পিছে ঘুরাবো। যখন সে আমার প্রেমে হাবুডুবু খাবে, তখন আমিও ওকে ইগনোর করবো।
– এটা একটা বাড়াবাড়ি না?
– হ্যাঁ বাড়াবাড়ি। তো?
– তোর যা ইচ্ছে কর।
আনিকা রোজ আলভীর পেছনে পড়ে থাকে। তার টার্গেট, যেমন করেই হোক আলভীকে তার প্রেমে ফেলতে হবে। ওদিকে আলভী শান্তশিষ্ট নম্র-ভদ্র একটা ছেলে। প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথে কথা বলে না। তাছাড়া প্রতিদিন ক্লাসে গিয়ে মাঝ বরাবর একটা বেন্চে চুপ করে বসে থাকে। স্যার ম্যাম কোনো প্রশ্ন করলে অন্য সবার মতো সেও উত্তর দিতে চেষ্টা করে। অথচ বছর শেষে দেখা যায় তার রেজাল্টই সবার থেকে সেরা। আকাশে আজ মেঘ করেছে। বৃষ্টি হতে পারে। আনিকা তার রুমের জানালাগুলো বন্ধ করতে গেল। এর মাঝে হঠাৎই তার রাস্তার দিকে চোখ পড়লো। একটা ছেলে ল্যাম্পোস্টের খুটি ধরে দাঁড়িয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে আলভী। আনিকা দু’হাতে চোখ দু’টো ডলে আবার তাকালো। নাহ, কোথাও কেউ নেই। ততক্ষণে বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে। সে ভাবছে হয়তো মন কিংবা চোখের ভ্রম।
রাতে আলভীকে নিয়ে ভাবতে গিয়ে সে অনুভব করলো, সে সত্য সত্যই আলভীকে ভালোবেসে ফেলেছে। তার মনে যত কু-চিন্তা ছিল আলভীকে নিয়ে, সে এক নিমিষে সব ঝেড়ে ফেলে দিলো। ছেলেটা বড্ড ভালো একটা ছেলে। তার মন নিয়ে খেলাটা একদম ঠিক হবে না। আনিকা মনে মনে পরিকল্পনা তৈরি করতে থাকলো। আগে আলভীর সাথে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করবে। যখন সম্পর্কটা গভীর থেকে অতি গভীরে চলে যাবে। তখন সে তার মনের কথাগুলো আলভীকে বলবে। তাতে সে যে উত্তর দেয় দিক। যদি ফিরিয়েও দেয়, তবুও সে জোর করবে না। আর তাছাড়া তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো কারণও দেখছে না সে। কেননা সে অনেক সুন্দরী একটা মেয়ে। সকাল ন’টা বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিট। আনিকার তখনো ঘুম ভাঙেনি। ওদিকে রাকিব তার পথ চেয়ে বসে আছে। এর মাঝে অহনা তাকে কল করে বললো, কিরে আজ ক্যাম্পাসে আসবি না? আনিকা ঘুম ঘুম চোখে অস্পষ্ট স্বরে বললো, হু।
– তোর মজনু তো এসে বসে আছে। আনিকা লাফ দিয়ে বিছানাতে উঠে বসলো। তারপর বললো, কে? আলভী?
– না, রাকিব।
– হুর, বাদ দে তো!
– হু বাদ দিলাম। এখন ঝটপট ক্যাম্পাসে চলে আয়।
– ওকে আসতেছি।
নাশতা না করেই সে বেরিয়ে পড়লো। রাকিব ছেলেটা যে একেবারেই মন্দ, তাও নয়। যথেষ্ট ভদ্র এবং স্মার্ট একটা ছেলে। তবে আলভীর থেকে বেশি নয়। আলভী ছেলেটা আনিকার নজরে পড়ে তার ভালো রেজাল্টের কারণে। কেননা যে ছেলেকে ক্লাসের কেউ চেনে না, জানে না, সেই ছেলে কী করে ক্লাসের ফার্স্ট হয়? আনিকা ক্যাম্পাসে ঢুকতেই দেখলো আলভী ক্লাসরুমের দিকেই যাচ্ছে। সে দ্রুত পায়ে তার দিকে হাঁটা ধরতেই রাকিব তার পথ আটকে দাঁড়ালো। আনিকা তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বললো, দেখ রাকিব আমি আলভীকে পছন্দ করি। সো, আমার পিছে আর ঘুরবি না। তোকে আমি একটা ভালো ছেলে বলে জানি। তুই এমন কোনো কিছু করিস না, যাতে তোকে আমি খারাপ ছেলে ভাবতে বাধ্য হই। রাকিব মাথা নিচু করে বললো, আচ্ছা আমরা তো ফ্রেণ্ড হতে পারি। আনিকা কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দিলো, হ্যাঁ হতে পারি। কিন্তু একটা শর্তে। রাকিব অতি দ্রুততার সাথে বললো, কী শর্ত?
– আমরা দু’জন নয়। বরং আমরা তিনজন ফ্রেণ্ড হবো।
– আরেকজন কে?
– আলভী।
– ওকে ঠিক আছে। তুমি চিন্তা কোনো চিন্তা করো না। আমি বিষয়টা দেখছি।
– ওকে। আর আজকের মধ্যে সেটা করতে হবে।
– এটা আমার উপর ছেড়ে দাও। আর শোনো।
– বল।
– তুমি তো এখন আমার বন্ধু। তো এখন কি আমি তোমাকে তুই করে বলতে পারি?
– এটাও তোকে বলে দিতে হবে? গাঁধা কোথাকার! এখন চল, ঝটপট ওর সাথে একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি করে দে।
– হ্যাঁ চল।
রাকিব আলভীকে পেছন থেকে ডাক দিয়ে বললো, আলভী শোন। আলভী রাকিবের সাথে আনিকাকে দেখে বললো, উনাকে একটু দূরে যেতে বল। রাকিব বললো, দেখ দোস্ত তুুই জানিস যে আমি আনিকাকে পছন্দ করি। আর সে তোকে। এখন সে বলছে সে আমার প্রেমিকা হতে পারবে না। তবে বন্ধু হতে পারবে।
– তাহলে বন্ধুই হয়ে থাক না। সমস্যা কী?
– বন্ধু হতে হলেও একটা শর্ত জুড়ে দিয়েছে।
– কী শর্ত?
– তোর সাথে ওকে ফ্রেণ্ডশীপ করিয়ে দিতে হবে।
– এ সম্ভব না দোস্ত।
– কেন সম্ভব না?
– দেখ আমি আগেও বলেছি, এখনো বলছি, মেয়ে মানুষের সাথে আমি কোনো সম্পর্ক করতে পারবো না।
– প্লিজ দোস্ত। আমার জন্য অন্তত কর।
আলভী তার হাতে থাকা কলমটা কামড়ে কিয়ৎকাল পর বললো, আচ্ছা ডাক দে। রাকিব আনিকাকে ডাক দিলো। আনিকা এগিয়ে এলে রাকিব আলভীর সাথে তাকে বন্ধুত্ব করিয়ে দিলো। এতে যেন আনিকার আনন্দের শেষ নেই। যেন সে এভারেস্ট জয় করে ফেলেছে। সে রাকিবকে বললো, চল আজ একটা পার্টি দেই। আলভী “না” করলো। বললো, আজ না। অন্য একদিন হোক। আনিকা রাকিবকে বললো, কিরে ও এখনো আপনি করে বলে কেন? রাকিব বললো, দোস্ত একটু তুই করে বল না!
– দেখ আমি তুই করে বলতে পারবো না। তবে তোর রিকুয়েস্ট রাখতে আমি তাকে তুমি করে বলতে পারি। আনিকা বিস্ময়চোখে রাকিবের দিকে চেয়ে বললো, ও কি তোকে আগে থেকেই চিনে নাকি?
– হুম। ফার্স্ট ইয়ারের সেই প্রথমদিন থেকেই ও আমার বন্ধু।
– তাহলে তোর সাথে ওকে ঘুরতে দেখি না কেন?
– কই? আমরা ঘুরি তো! তবে ক্যাম্পাসে না। ক্যাম্পাসের বাইরে।
– ও।
পরদিন ক্লাস শেষ করে একটা পার্টি দেবে বলে ঠিক করলো আনিকা। আলভীও আর আপত্তি করলো না। তবে সে শুধু বললো, আমরা এমন একটা মিষ্টির দোকানে গিয়ে পার্টিটা করবো। যেই দোকানে ভীড় কম। কিংবা কোনো বেচাকেনা নেই।
আনিকা চোখ বড় করে বললো, মিষ্টির দোকানে যাবো কেন? তার চেয়ে বরং কোনো ফার্স্টফুডে যাই! রাকিব আনিকাকে নিষেধ করে বললো, আলভী মিষ্টি পছন্দ করে। আর সে মিষ্টির দোকান ছাড়া কোথাও যাবে না।
অগত্যা আনিকাও রাজি হয়ে গেল। তারপর তারা ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে পাশের একটা মিষ্টির দোকানে ঢুকলো। অবশ্য একে দোকান বললে ভুল হবে। বরং একে হোটেল বললে মন্দ হয় না। তবে ডাল ভাত বিক্রির মতো হোটেল না। সেখানে শুধু মিষ্টিই বিক্রি হয়। তারা হোটেলে ঢুকতেই কয়েকজন ছেলে তাদের দিকে এগিয়ে এসে স্যার সম্বোধনে তাদেরকে আপ্যায়ন করলো। সাথে তাদের সেবা দেওয়ার কোনো ত্রুটি রাখলো না। আলভী কিছু দামি দামি মিষ্টি অর্ডার করলো। আনিকার মিষ্টিতে এলার্জি। সে কখনো মিষ্টি খায়নি। আর এলার্জি বলতে সে মিষ্টি পছন্দ করে না। কিন্তু আলভীর কারণে আজ তাকে মিষ্টি খেতে হচ্ছে।
আলভী একটা মিষ্টি মুখে দিতেই কর্মচারী এক ছেলেকে বললো, আপনাদের মিষ্টি তো দারুণ স্বাদ। কিন্তু কাস্টমার নেই কেন? ছেলেটা বললো, স্যার কাস্টমার নেই কেন সেটা ঠিক সঠিকভাবে বলতে পারছি না। তবে আশা করা যায়, একদিন আমাদের এখানেও কাস্টমার হবে। হোটেল থেকে বের হয়ে আনিকা বললো, মিষ্টিগুলো কিন্তু দারুণ ছিল। রাকিব তার কথায় যথাসম্ভব সায় দিলো। আর আলভী খানিকটা মাথা নাড়লো কেবল। এদিকে বিকেল গড়িয়ে যাচ্ছে। আলভী বললো, দোস্ত আজ আসি। কাল দেখা হবে। আনিকা তার এমন হঠাৎ করে যাওয়ার কথা শুনে বললো, এখনই যাবি কেন? আরেকটু থাক না। সন্ধ্যে হলে যাস।
– দেখো, আমার দ্রুত বাসায় ফিরতে হবে। নয়তো সমস্যা আছে। রাকিব বললো, যা তাহলে। কাল দেখা হচ্ছে। আলভী প্রস্থান করলো। রাত দশটা বাজে। আনিকার ঘুম আসছে না। আজকে আলভীর সাথে কাটানো মুহুর্তটাকে সে বড্ড মিস করছে। সে ভাবছে, ইশ কখন সকাল হবে? আর কখন সে ক্যাস্পাসে যাবে! অলিন্দে পায়চারি করতে করতে সে রাকিবকে কল করলো। একবার রিং হতেই রাকিব রিসিভ করে বললো, হ্যাঁ আনিকা বল। আলভীর ফোন নাম্বার লাগবে তাইতো? সে রাকিবের এমন কথা শুনে রীতিমত অবাক না হয়ে পারলো না। সে বললো, তুই জানলি কী করে যে আমি আলভীর ফোন নাম্বার নেওয়ার জন্য কল করেছি?
– এ আর এমন কঠিন কী? তবে ফোন নাম্বার নিলেও এখন তাকে ফোনে পাবি না।
– কেন?
– ও রাতে কারো সাথে কথা বলে না।
– আচ্ছা, ও এমন কেন বল তো?
– জানি না। তবে ছেলেটা বড্ড সহজ সরল।
– হুম। সেটা তাকে প্রথম দেখাতেই বুঝেছি।
আনিকা রাকিবের থেকে আলভীর ফোন নাম্বার নিয়ে সেভ করে রাখলো। সকাল হতেই সে আলভীকে কল করলো। আলভী রিসিভ করতেই সে তার পরিচয় দিয়ে বললো, কখন ক্যাস্পাসে যাবি? আলভী উত্তর করলো, আটটা নাগাদ পৌঁছে যাবো। তুমি কখন যাবে? আলভীর এই “তুমি” করে বলাটা আনিকার কাছে কেমন যেন অস্বস্তি লাগে। কেননা সে তাকে তুই করে বলে। অথচ সে কিনা তুমি করে বলে। আনিকা ঠিক করলো সেও তুমি করে বলবে।
সম্প্রতি লেখাপড়ার প্রতি মন নেই আনিকার। সে প্রথম থেকেই আলভীকে পছন্দ করতো, ভালোবাসতো। এখন তাদের সম্পর্কটা বন্ধুত্বের হলেও তা অনেক গভীরে চলে গিয়েছে। অন্যদিকে রাকিব তার মন থেকে আনিকাকে পাবার আশাটা মুছে ফেলেছে। আনিকা ঠিক করলো কাল পরশুর মধ্যে আলভীকে তার ভালোবাসার কথাগুলো বলবে। কিন্তু তার মনে একটা ভয় কাজ করছে। যদি সে না করে দেয়! অবশ্য না করে দিলে যে তাদের বন্ধুত্বটা নষ্ট হয়ে যাবে এমনটা নয়। কিন্তু রাকিব যদি জানতে পারে, আলভী তাকে না করে দিয়েছে। তবে সে কী ভাববে? তবুও সে পণ করলো আলভীকে সে ভালোবাসি বলবেই। ক্যাস্পাসে বসে আছে তারা। আনিকা একদম চুপচাপ বসে আছে। রাকিব আর আলভীই একটু আধটু কথা বলছে। নিরবতা ভেঙে আনিকা বললো, আচ্ছা অনেকদিন হলো মিষ্টি খাওয়া হয় না। চল খেয়ে আসি। আলভী আর রাকিবের মেজাজ তখন ফুরফুরা। তারা বললো, হ্যাঁ খাওয়া যায়।
পূর্বের সেই হোটেলটাতেই গেল তারা। কিন্তু আজ হোটেলে প্রচণ্ড ভীড়। বেচাকেনাও দারুণ চলছে। আলভীদের দেখে সেদিনের সেই কর্মচারী ছেলেগুলোর মধ্যে থেকে একটা ছেলে এগিয়ে এসে তাদেরকে বললো, স্যার আপনারা এতদিন বাদে এলেন! সেদিন আপনারা যাওয়ার পর পরই আমাদের এখানে কাস্টমার আসতে শুরু করে। সন্ধ্যা হতে না হতেই পুরো হোটেল মিষ্টি শূন্য হয়ে যায়। পরে ব্যাপকভাবে মিষ্টির যোগান দিয়েও কূল পাওয়া যায় না। তাই আমাদের স্যার বলেছেন আপনারা এলে যেন ফ্রীতে খাওয়াই। প্লিজ স্যার! মিষ্টি খাওয়া শেষে আলভী বিল দিতে গেলে কর্মচারী ছেলেটা “না” করলো। আলভী বললো, দেখুন আমি বিনা পয়সায় কিছু খাই না। আপনারা বলেছেন এটাই অনেক। ধন্যবাদ।
তারা হোটেল থেকে প্রস্থান করলো। আনিকা আলভীর এমন কাণ্ড দেখে মনে মনে ভাবছে, কী অদ্ভুত ছেলে! তারা ফ্রীতে খাওয়াতে চাইলো। আর সে কিনা না করলো। আনিকার ইচ্ছে ছিল আজ আলভীকে ভালোবাসার কথা বলবে। কিন্তু হলো না। বিকেল গড়াতেই আলভী চলে গেল। আনিকা ভাবলো রাতে কল করে কিছুটা আলাপ করবে। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো সে তো রাতে কথা বলে না।
দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার ডেট দিয়েছে। এদিকে আলভী এবং আনিকার বন্ধুত্বের প্রায় ন’মাস হতে চললো। আর রাকিবের সাথে আলভীর বন্ধুত্ব তো সেই প্রথম বর্ষ থেকেই। আনিকা আলভীর বিভিন্ন কাজ-কর্মে মনে করে আলভী তাকে পছন্দ করে। যেমন, পড়ালেখার বিষয়ে যাবতীয় হেল্প, খুটিনাটি যত প্রকার হেল্প প্রয়োজন সব করে, মাঝে মাঝে হুটহাট করে নিজে থেকেই কল করে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো সে আজ পর্যন্তও আনিকার হাত পর্যন্ত স্পর্শ করে দেখেনি। আনিকা এবার দৃঢ়ভাবে পণ করেছে সে প্রথম পরীক্ষার দিনই আলভীকে ভালোবাসি বলবে। আর আলভীও হয়তো বা না করবে না। কেননা তার আচার ব্যবহার পূর্বের থেকে অনেক পাল্টে গিয়েছে। পরীক্ষার দিন আলভী আনিকাকে সকাল সকাল কল করে বললো, তুমি আজ একটু সকাল সকাল পরীক্ষার কেন্দ্রে চলে এসো। তোমার সাথে কিছু কথা ছিল।
আলভীর মুখে এমন কথা শুনে আনিকার মনে যে কী চলছে, তা বলা বাহুল্য! আনিকা খুশি খুশি মনে বললো, আচ্ছা।
পরীক্ষা শুরু হবে দুপুর ১টা থেকে। দশটার দিকে আনিকা পরীক্ষার কেন্দ্রে গিয়ে হাজির হলো। গিয়ে দেখলো আলভী আর রাকিব দাঁড়িয়ে আছে। তার মানে আনিকা যা ভাবছে তা ভুল! আবার ঠিকও হতে পারে। সে তাদের দিকে এগিয়ে যেতেই আলভী আনিকাকে বললো, আনিকা আমি জানি তুমি আমাকে পছন্দ করো। আজ কিংবা কাল কিংবা পরশু তুমি আমাকে প্রপোজ করবে। কিন্তু দেখো, আমিও তোমাকে পছন্দ করি। তবে সেটা বন্ধু হিসেবে। আর বন্ধুর দিক থেকেই আমি তোমাকে ভালোবাসি। আনিকা অপলক চোখে আলভীর দিকে তাকিয়ে আছে। আলভী আবারও বললো, দেখো আনিকা রাকিব তোমাকে সেই শুরুর দিক থেকেই পছন্দ করে। তুমি বরং ওকেই ভালোবাসো। আনিকা বললো, কিন্তু আমি তো রাকিবকে শুধু বন্ধু ভাবি। আর আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারবো না।
– তুমি আমাকে ভালোবাসলেও আমি তোমার হতে পারবো না।
– কেন?
– প্রশ্ন করো না আনিকা। রাকিব অনেক ভালো ছেলে। তুমি তার সাথে সুখেই থাকবে।
– না, আমি পারবো না আলভী।
– না পারলে অন্য কাউকে খুঁজে নিও।
– তোমার সমস্যা কোথায়?
– সমস্যা আছে আনিকা। আর সমস্যার কথা শুনলে তুমি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারো।
পাশে থেকে রাকিব বলে উঠলো, কেন? সে অজ্ঞান হয়ে যাবে কেন? আর সে তো আমাকে নয়। তোকে ভালোবাসে। তুই তাকে ভালোবাসলে প্রবলেম কোথায়?
– রাকিব তোদের থেকে একটা জিনিস লুকিয়েছিলাম আমি।
– কী?
– আমি মানুষের সন্তান নই।
আনিকা বিস্ময়চোখে চেয়ে বললো, মানে? আলভী বললো, আমি জ্বীনের সন্তান। মানুষের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব হয়। তবে মিলন হয় না। আর আজকের পর থেকে তোমাদের সাথে আমার আর কোনো যোগাযোগ থাকবে না। তবে দূর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তোমাদের পাশে রবো। তোমরা যত প্রকার কঠিন সময় পার করবে, আমি তোমাদেরকে সহযোগিতা করবো। আর আনিকা, তুমি রাকিবকে ছেড়ে অন্যকারো সাথে ঘর বেঁধো না। ছেলেটা তোমাকে বড্ড বেশি ভালোবাসে। আর রাকিব, মেয়েটাকে দেখে রাখিস। সাথে আমি তো থাকবোই। তবে তোদের আড়ালে। আসিরে বন্ধু। আসি আনিকা। ভালো থেকো তোমরা।
আলভী পিচঢালা পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করেই হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। আনিকা যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না, আলভী আর নেই। রাকিব এই দুই বছরের সম্পর্কেও আলভীকে চিনতে পারেনি। আনিকার চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় জল পড়ছে। রাকিব তার কাছে গিয়ে দু’হাত দিয়ে তার চোখের জলটা মুছে দিয়ে তাকে বাহুডোরে আবদ্ধ করলো।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা