ভালোবাসায় অর্থ

ভালোবাসায় অর্থ
দরজা খুলতেই দেখলাম বাসার কাজের মেয়ে মরজিনা হাসিমুখে দাড়িয়ে আছে। প্রতিদিন অফিস থেকে বাসায় ফিরলে নুহা (আমার স্ত্রী) দরজা খুলে দেয়। তাতে তার হাতে যতই গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকুক না কেনো এই নিয়মের হেরফের হয়না কোনোদিন, তবে আজ কেনো হলো? মনটা কিঞ্চিৎ খারাপ লাগছে। মরজিনাকে জিগ্যেস করলাম তোর আপামনি কোথায় রে ?
– আফামনি বসার ঘরে এক মহিলার লগে কথা কয়।
ও আচ্ছা, বলে আমি ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখি ড্রইংরুমে আমার প্রথম পক্ষ আশা বসে আছে, নুহার সাথে কি যেন গল্প করছে আর নুহা হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে একদম। আমার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। বরাবরের মতোই নুহা আমাকে দেখে তার বিখ্যাত হাসি হাসলো। যে হাসি দেখলে আমার মনের অবস্থা যতই কঠিন থাকুক তা তরল অবস্থায় যেতে সময় লাগে মাত্র কয়েক সেকেন্ড। আশা শুধু একবার আমার দিকে তাকিয়ে একটা ম্লান হাসি দিলো তারপর আবার গল্পের খেই ধরলো। আমি তাদের ডিস্টার্ব না করে বেডরুমে চলে গেলাম তারপর ফ্রেশ হয়ে নুহার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। অফিস থেকে ফিরে আমার ছোট্ট টুকটুকি বউটাকে একবার জড়িয়ে না ধরলে কেমন যেন হাসফাস লাগতে থাকে। সেও তখন আহ্লাদে আটখানা হয়ে যায়,বাচ্চাদের মতন স্বভাব একদম।
এখন আশার কথা বলি, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন আশার সাথে আমার পরিচয় বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে দেখতেও বেশ সুন্দরী। পুরো ক্যাম্পাসের ছেলেদের মধ্যে হুরোহুরি লেগে যায় আশার সাথে একটু কথা বলার সুযোগ পাওয়ার জন্য। কিন্তু আশার চলাফেরা একদমই আকাশের চাঁদের মতো দেখা যাবে কিন্তু ছোয়া যাবেনা। পাজেরো গাড়িতে করে দুম করে আসবে আবার যাওয়ার সময় ওরকম দুম /(হুট) করে চলে যাবে। ক্লাসের শিক্ষকরা তাকে বেশ সমীহ ( স্নেহ) করে। সেটা তার বাবার টাকার জোড়েই হোক কিংবা আশা মেধাবী ছাত্রী বলেই হোক।
সেদিন রবীন্দ্র জয়ন্তী অনুষ্ঠানে আমি রবীন্দ্রনাথের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন স্বরুপ একটি কবিতা আবৃত্তি করে স্টেজ থেকে নামতেই আশা আমাকে ডাক দিলো। পুরো অডিটোরিয়ামের চোখ তখন আমার দিকে। আশা কাউকে ডাক দিয়ে কথা বলবে এটা বিরল ঘটনা। যাইহোক আমি তখনও স্থির চিত্রের মতো একযায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে নিজেই উঠে এসে আমার সামনে দাড়ালো, তারপর মিষ্টি কন্ঠে বললো বাহ বেশ ভালো আবৃত্তি করেন তো আপনি। আমি শুধু ধন্যবাদ বলে যায়গা পরিবর্তন করে চলে আসলাম। পরের দিন বৃষ্টি ভেজা সকাল। মাথায় ছাতা এটেঁ ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে হাটা ধরলাম, আর পাশ দিয়ে একটা পাজেরো গাড়ি শাঁ শাঁ গতিতে চলে গেলো, আমার সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট কাদায় একদম মাখামাখি অবস্থা। গাড়িটা আবার পেছনে ব্যাক করলো, জানালা খুলে আশা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। আমার রাগ হলো, অপমানিত ও বোধ করলাম খানিকটা।
এরপর আশা বললো আমি দুঃখিত। গাড়িতে উঠুন আপনাকে বাসায় নিয়ে যাচ্ছি ফ্রেশ হয়ে আবার আমার সাথে আসবেন ক্যাম্পাসে। আমি না সূচক মাথা নাড়লাম। কিন্তু আশা একপ্রকার জোড়পূর্বক আমাকে ওর বাসায় নিয়ে যায়। আমি তখন আশাদের প্রকান্ড ড্রইং রুমে বসে আছি। আমার শার্ট টা খুলে নেওয়া হয়েছে। লজ্জা নিবারনের জন্য একটা টাওয়েল দেওয়া হয়েছে সেটা জড়িয়ে বসে আছি। আশেপাশে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। অবশ্য ধনী ব্যাক্তিদের সচরাচর দেখা পাওয়া মুশকিল। একটু পর আশা দু-মগ কফি নিয়ে হাজির হলো। তার পরনে ফিনফিনে সাদা রঙের একটা শার্ট, গলায় সোনার চেইনের সাথে তীর টাইপ একটা লকেট ঝুলছে । দেখতে অপ্সরীর মতো লাগছে। এভাবে দেখলে যেকোনো পুরুষেরই মগজে মায়ার ভ্রম জন্মাতে বাধ্য। আমি তাকে জিগ্যেস করলাম কাউকে দেখতে পাচ্ছিনা যে! বাবা- মা কোথায় তোমার?
– বাপি আর মাম্মি কানাডায় থাকে। আমি এখানে একাই থাকি কিছু কাজের লোক আছে তারা সময় মতো এসে সব কাজ গুছিয়ে রেখে চলে যায়। আমার একা থাকতেই ভালো লাগে। ফিল করি সময়টা। মনে মনে ভাবলাম বড় লোকের বিরাট কারবার। এরপর থেকে আশা ক্যাম্পাসে এসে কারণে অকারণে আমায় খোঁজে, কথা বলার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে। আমি তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। আমাদের মতো ছেলেদের নারীতে ডুবে থাকতে নেই। আস্ত একটা সংসারের ভার বইতে হবে আমাকে তার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে আগে থেকেই। কিন্তু আশা নাছোড়বান্দা কিছুতেই আমাকে ছাড়বেনা। এর জন্য ক্যাম্পাসের বড় ভাইদের হাতে একদিন বেদম কেলানী খেলাম। তাদের ভাষ্যমতে “শালা আমরা লাইন লাগিয়ে চান্স পাইনা আর তুই কোথাকার কোন ফকিন্নি কোত্থেকে এসে ওর সাথে ভাব বাজিয়ে ফেললি! সিক্রেট কি এক্ষুনি বল।
আমি মার খেয়ে চলে আসলাম কারণ উল্টো প্রতিবাদের শক্তি আমার নেই এদিকে এই খবর আশার কানে গেলে সে আমাকে বিয়ে করে ওদের শিক্ষা দেবে বলে জানায়। আমি কিছুতেই এতে রাজি নই। তবুও হার মানতে হলো আশার জেদের কাছে। বিয়ে করে আমাকে তার সাথে তার বাড়িতেই থাকতে হয়। যদিও দুজনের পরিবারের কেউ ই জানে না। এভাবেই একসময় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ হয়। একদিন সকালে আশা আমাকে জানায় তার বাবা তাকে কানাডায় ফিরে যেতে বলেছে। সেখানেই সে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করুক তার বাবা নাকি সেটাই চায়। আমি জিগ্যেস করলাম তুমি কি চাও? সে বললো তার বাবার উপর দিয়ে যাওয়ার কোনো শক্তি তার নেই। তা ছাড়া বাংলাদেশে আমার সাথে থেকে সে কি করবে! আমার তো চাকরিবাকরি নেই আমি তাকে খাওয়াবো কি? সেদিন তার ওই কথার উপর কোনো কথা বলার শক্তিই আমার ছিলো না। কারণ তখন আমি বেকার যুবক।
কানাডায় যাওয়ার কয়েকমাস পর আশা আমাকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিলো। আমি আশার শোকে ডিপ্রেশনে পড়ে যাই। ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখলাম তবে আর কোনোদিন বিয়ে করবো না বলে শপথ নিলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম, যে টাকার জন্য নিজের স্ত্রীকে বিসর্জন দিতে হলো সেই টাকা আমি উপার্জন করবো তাতে যতই ঝড় ঝাপটা আসুক আমার উপর আসবে তাতে আমি পিছপা হবোনা। তারপর অনেক গুলো বছর পেরিয়ে গেলো। প্রথমে চাকরি তারপরে ব্যাবসা এখন নিজেই পাঁচ পাঁচটা সুপার শপের মালিক, নিজস্ব গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ও আছে একটা পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডেও জড়িত। অবশ্য আমি স্কুল জীবন থেকেই স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতাম সুযোগ পেলেই। এভাবে যে কতগুলো বসন্ত পেরিয়ে গেলো তার দিকে লক্ষ্য রাখার সময় আমার হলোনা।
বয়স এখন পয়ত্রিশ ছুইছুই। নুহাকে বিয়ে করলাম বছর খানেক হলো ওর বয়স মাত্র উনিশ। বছর দুয়েক আগে আমার এক সময়কার ছাত্র ফোন করে বললো তাদের একটা ব্লাড ডোনেশন গ্রুপের উদ্ভোদনী ( উদ্বোধন) অনুষ্ঠানে আমাকে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকতে হবে। আমিও রাজি হয়ে গেলাম। অনুষ্ঠান শেষে বাসায় ফিরে একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দেখতে পেলাম মিউচুয়ালে আমার ছাত্র। বুঝতে পারলাম তাদের সংগঠনের কেউ হবে, আমিও গ্রহণ করে নিলাম। মেয়েটা ফেসবুক টাইমলাইনে প্রায় ই বিভিন্ন গল্প কবিতা পোস্ট করে। আমি পড়ি, মাঝেমধ্যে অভিভূত হই, কি সুন্দর তার অনুভূতি প্রকাশের ধরন। আমার ঘোর লাগে। মাঝেমধ্যে বিরক্ত হই নিজের উপর। বুড়ো বয়সে ভীমরুতিতে***? ধরলো নাকি!
মাসকয়েক পরে ইতস্তত বোধ কাটিয়ে নক দেই ওকে, সে আমাকে স্যার সম্মোধনে কথা বলে। বিভিন্ন ছুতো খুজি কথা বলার জন্য যেমন ” আজ কি লিখবে বলে ভেবেছো খুকি? সে হাসির ইমো দিয়ে বলে কবিতা লিখবো স্যার। যতই কথা বলি ওর সাথে ততই মুগ্ধতা বাড়ে। সে একদিন জানতে চাইলো ম্যাডাম কেমন আছে! আমি তাকে বললাম বিয়ে করিনি। সে অবাক হলো, কারণ জানতে চাইলো। আমি কারন হিসেবে দেখালাম পর্যাপ্ত টাকা উপার্জন না করতে পারলে মেয়ে দিবে কে? তাই টাকার পেছনে ছুটতে ছুটতে বয়স বেড়ে গেছে। এটা শুনে সে গম্ভীর ভঙ্গিতে উত্তর দিলো;
– এই হলো আমাদের সমাজের সমস্যা, টাকার পেছনে ছুটতে ছুটতে জীবনের মূল্যবান এবং সুন্দর সময়টা নষ্ট করে ফেলে। অথচ টাকাই সব কিছু না।
আমি মুগ্ধ হই তার কথায়। একদম বড়দের মতো কথাবার্তা বলা এই মেয়ের বয়স যে মাত্র আঠেরো সেটা আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো তখন । আমি নুহাকে নক দিয়ে প্রায়ই সুখ দুঃখের গল্প করতাম আর সে আগ্রহ নিয়ে সেসবের বিভিন্ন ব্যাখ্যা দাড়** করাতো। এরপর লক্ষ্য করলাম নুহা ও আমাকে নক দেয় মাঝেমধ্যে আমি খুব খুশি হতাম মনেমনে। তারপর কথাবার্তা বাড়তে থাকে আমাদের । আর তার সাথেসাথে বাড়তে থাকে ওর প্রতি আমার দূর্বলতাও। এটা কি প্রেম নাকি অন্যকিছু! এই বয়সে কি প্রেম হয়? মনে পড়লো রবীন্দ্রনাথের উনপঞ্চাশ বছর বয়সে চোদ্দ বছরের মেয়ের সাথে প্রেমের কথা। আমার তখন প্রান যায় যায় অবস্থা। কিভাবে বলবো বললেও নুহা সেটা কিভাবে নেবে! আচ্ছা ও যদি আমার সাথে একেবারেই কথা বলা বন্ধ করে দেয়?
এমন হাজারো ভাবনা ভীড় করে বসে মনের মধ্যে সঙ্কোচ কাটিয়ে একদিন বলেই ফেললাম নুহা আমি তোমাকে খুব পছন্দ করি তুমি চাইলে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। তারপর পাঁচদিন সে আর অনলাইনে আসেনি। আমার দম বন্ধ হবার উপক্রম। কেনো যে বলতে গেলাম সেই ভাবনায় নিজেই নিজেকে দোষারোপ করতে আরম্ভ করলাম। পাঁচদিন পর সে আমাকে মেসেজ দিয়ে বললো আমি যেন তার বাসায় প্রস্তাব পাঠাই তার কোনো আপত্তি নেই। বাসায় আপত্তি করতে পারে সেটা সে বুঝিয়ে বলবে । আমি যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলাম তখন। ওর বাসায় প্রস্তাব পাঠালে ওর পরিবার** খানিক মোচড়ামুচড়ি করলো প্রথমে, পাত্র বয়স্ক। তারপর নুহাই কিভাবে যেন মানালো তাদের। আমার ইচ্ছা ছিলো ধুমধামে বিয়ে টা সারবো। কিন্তু তাতে নুহার ঘোর অমত ছিলো । একদম ই সাধাসিধা ভাবে বিয়ের কার্যক্রম শেষ হবে এটাই সে চায়। আমি তাকে জিগ্যেস করলাম বর বয়স্ক বলে লজ্জা পাচ্ছো? তারপর সে কি রাগ তার। সপ্তাহ খানেক কথাই বলেনি আমার সাথে।
বিয়ের রাতে খাটের উপর বসে আছে ছোট্ট টুকটুকি বউ আমার। আমার লজ্জা হচ্ছিলো ওর পাশে যেয়ে বসতে। সে নিজেই নিচে নেমে এসে আমাকে সালাম করলো। শ্যামবর্না মায়াদেবী একটা, আমার ঘোর লাগে। এরপর থেকেই আমি ওকে ভালোবেসে আগলে রেখেছি। তার চালচলন একেবারেই সাদামাটা। আমার এখন মনে হচ্ছে এতো সম্পত্তি অর্জন করে আমি ভুল করেছি আসলেই টাকাই জীবনের সব কিছু না। জীবনের অনেক গুলো বসন্ত আমি হেলাফেলায় কাটিয়েছি অথচ সেই সময়ে নুহার মতো কাউকে পেলে আমার এতোগুলো বসন্ত ফিকে কাটাতে হতো না। কিন্তু আশা কেনো এলো এখন! আমার সুখের সংসারে ছেঁদ ধড়াতে? ভালো লাগছেনা কিছুই। হঠাৎ নুহার কথায় আমার স্মৃতি চারনে ছেঁদ পড়লো।
– এইযে কতক্ষণ ধরে চা ধরে আছি। কি ভাবছেন? চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো। আমি চা পাশে রেখে ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম কার সাথে এতো গল্প করছিলে এতো! তুমি কি চেনো ও কে?
– আরে চিনবোনা কেনো ও আপনার প্রথম স্ত্রী আশা। আমার সাথে কত গল্প করলো এসে।
আমার ভ্রু কুঞ্চিত হলো। এই দু বছরেও আমি নুহার কাছে বলিনি আমার জীবনে যে আশা নামক একটা কালো অধ্যায় ছিলো। এখন নুহার সাথে যদি আমার সম্পর্কের অবনতি হয় সেই ভয়ে আমার কলিজা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। আমি স্বাভাবিক ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলাম ; আচ্ছা, কি কি গল্প হলো তোমাদের!
– কি আর? আপনাদের বিয়ে হলো কিভাবে, কোথায় কোথায় হ্যাং আউটে গিয়েছেন এইসব। তোমার খারাপ লাগেনি শুনতে? নুহা উত্তর দিলোনা কান চেপে রাখলো বুকের উপর মনে হয় হার্ট বিট শুনছে। ও প্রায়ই এমন করে বুকের উপর কান চেপে রাখে জিগ্যেস করলে বলে হার্ট বিট গুনছি ডিস্টার্ব করবেন নাতো। কতবার হলো জানতে চাইলে বলবে এক লক্ষ তেরাশি হাজার বার। হয়তো এই সংখ্যা টা ওর বেশি প্রিয় তাই সবসময় এটাই বলবে। জানতে চাইলাম ও কেনো আসলো বাসায়, তোমার সাথে অতীতের গল্প করতে?
– নাহ আপনার নাম্বার চাইলো। তুমি দিলে নাম্বার?
– হু, কেনো দিবোনা। নাহ, তোমার ভয় করলো না ও যদি আবার আমার জীবনে আসতে চায়?
– আসলে আসবে। একজন সদস্য বাড়বে বাসায়। একজন বাড়তি সদস্যের খুব দরকার তাইনা? তাহলে অন্য পদ্ধতি ও তো আছে।
– নুহা হাসে, কিছু বলে না।
আমি স্বর গম্ভীর করে বললাম অনেক কথা হয়েছে এখন নেইল কাটারটা নিয়ে এসো, আজ বৃহস্পতিবার মনে আছেতো ? আজ তোমার নখ কাটার দিন। নখ কেটে দিবো। নুহা উহু উহু করে ঠোঁট উল্টাতে থাকে আজ না কাল কেটে দিবেন নখ বেশি বড় হয়নি তো। এইযে নখ তো ছোটই আছে। আমি ধমকের সুরে বললাম নাহ আজ ই কাটবে নিয়মের হেরফের নেই কোনো। নুহাকে নখ কেটে দিয়ে বাইরে বেড়োলাম। এভাবেই ওর ছোটখাটো কাজ গুলো করে দিতে আমার ভালো লাগে খুব। যেমনঃ নখ কেটে দেওয়া, চুল আচড়ে দেওয়া, আলতা- চুড়ি পড়িয়ে দেওয়া । বড্ড ভালোবাসি পাগলিটাকে। বাচ্চাদের মতো আগলে রাখি। সেও আমাকে খুব ভালোবাসে।
একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল আসলো। বুঝতে পারলাম আশা কল দিয়েছে। কেমন আছো জিগ্যেস করতেই সে বলতে শুরু করলো কিভাবে একটার পর একটা ঝড় গেছে তার উপর দিয়ে। বাবার ব্যাবসা লস,তারপর স্বামীর সংসারেও তেমন আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই। সব মিলিয়ে বিরাট একটা ঋনের বোঝা তার উপর। আমি জানতে চাইলাম আমি এখন কি করতে পারি তার জন্য ? সে বললো কিছু টাকা দরকার তার। টাকার অঙ্ক টা বেশি না লাখ পঞ্চাশের মতো। আমি তাকে বললাম অফিসে এসে নিয়ে যেও শনিবার। তারপর ফোন কেটে দিলাম। আজ শনিবার, যথারীতি অফিসে বসে আছি আশা ফোন করলো সিকিউরিটি তাকে ঢুকতে দিবে না পারমিশন ছাড়া। আমি সিকিউরিটিকে ইনফর্ম করে দিলাম। আশা কেবিনে প্রবেশ করতেই লক্ষ্য করলাম তার সেই ঠিকরে পড়া সৌন্দর্য্য আর নেই। চোখের নিচে কালি জমেছে তার, বয়স ও তো কম হয়নি এখন।
আশার দিকে চেক টা বাড়িয়ে দিতে দিতে বললাম দেখো আশা আমি বিয়ে করেছি আমার জীবন টা এখন অনেক সুখের। অনেক নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি জীবনে, টাকার পেছনে ছুটতে ছুটতে ফেলে এসেছি জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় অনেক গুলো বসন্ত। কিন্তু এতোগুলো বছর পর আমার জীবন টা এখন সুখের। তোমার ইচ্ছে হলে আমার অফিসে এসে ম্যানেজার এর থেকে টাকা নিয়ে যেও তোমার প্রয়োজনমতো। কিন্তু আর কখনো নুহার মুখোমুখি হবেনা আর আমারও না। আমাকে ভালো থাকতে দিও প্লিজ। আশা চলে যেতেই নুহাকে ফোন দিলাম। ওপাশ থেকে তার বাধ ভাঙা উচ্ছাস আজ কখন আসবেন আপনি ! খুশির খবর আছে একটা।
ওকে বললাম তুমি নীল শাড়ি পড়ে রেডি হয়ে থাকো আজ বাইরে যাবো তোমায় নিয়ে। তারপর বাসার উদ্যেশে রওনা দিলাম। দরজা খুলতেই নুহার মুখের সেই বিখ্যাত হাসিটা দেখতে পেলাম, আজ আরো বিস্তৃত হয়েছে হাসিটা৷ কারণ জিগ্যেস করতেই মুখ টিপে হেসে উত্তর দিলো আরো একজন সদস্য বাড়তে যাচ্ছে আমাদের ঘরে। তারপর মুখ লুকালো আমার বুকে। খুশিতে আমার চোখ বেয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো এইতো জীবনের প্রাপ্তি আর কি চাই?
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত