আজ প্রায় ১ মাস হলো রাজের কোনো খবর নাই।এফবিতে আসেনা আবার সিমটাও বন্ধ।এদিকে আইরিন এর প্রচুর কষ্ট হচ্ছে।রাজের সাথে কথা বা দেখা কিছুই হচ্ছেনা।কখনও তো রাজ এমন করেনা।ওর কিছু হয়নিতো ও কলেজেও আসছেনা কেন? এদিকে আব্বু আমার বিয়ে ঠিক করছে।আমি এখন কি করবো প্রিয়া।:-(আইরিন)
প্রিয়া:-আইরিন তুই কিছু চিন্তা করিস না হয়তো রাজ কাজে ব্যস্ত তাই তোর সাথে যোগাযোগ করছেনা।
আইরিন:-কিন্তু ৩০ টি দিনের মধ্যে একটিবারও কল দিতে পারে না।
প্রিয়া:-জানি না রে।
আজমল সাহেব:-আইরিন আইরিন একটু শোনো তো মা।
আইরিন:-জ্বি আব্বু আসছি।এই প্রিয়া আমাকে আব্বু ডাকছে। তোর সাথে আমি পরে কথা বলতেছি কেমন।
প্রিয়া:-ওকে দোস্ত বাই। ফোন রেখে আইরিন তার বাবা আজমল সাহেব এর কাছে গেলো।
আইরিন:-আব্বু আমাকে ডাকছো?
আজমল সাহেব:-আইরিন এই ফটোটা দেখো।এর নাম ইমন চৌধুরী।বিখ্যাত ব্যবসায়ী রাইসুল চৌধুরি এর ছেলে। ছেলেটি ডাক্তার। তোমার ছবি দেখেছে আর পছন্দও করেছে। ছেলেটা অনেক ভালো।আমার আর তোমার মায়ের পছন্দ।
আইরিন:-আব্বু আমি এখন বিয়ে করতে পারবোনা ব্যাস।
আইরিন চলে গেলো তার রুমে।রুম বন্ধ করে কান্না করতে লাগলো।হঠাৎ একটি নাম্বার থেকে কল আসলো।আইরিন কল ধরলো…..
আইরিন:-হ্যালো কে?
ওপাশ থেকে:- পাগলি আমি রাজ।
আইরিন:-তুমি।তুমি এতোদিন কোথায় ছিলে আর এটা কার নাম্বার।তুমি আমাকে একটিবার ও কল করোনি কেন?
রাজ:-আইরিন সরি।আমি একটু দেশের বাইরে ছিলাম।
আইরিন:-তুমি তো একটু বলে যেতে পারতে।এদিকে আব্বু আম্মু বাসায় চাপ দিচ্ছে বিয়ের জন্যে।
রাজ:-বিয়ে বললেই তো বিয়ে না।ঝামেলা আছে বিয়েতে।
আইরিন:-তবুও ভয় করছে আমার।
রাজ:-কিচ্ছু হবেনা।আইরিন আজ একটু দেখা করবে?
আইরিন:-হুম বলো কোথায়।
রাজ:-ওই যে আমাদের প্রথম দেখা হয় যেখানে সেইখানে। বিকেল ৪ টায়।
আইরিন:-ওকে।
রাজ:-আচ্ছা পাগলি।এখন রাখি।বাই- মিস ইউ।
ফোন রেখে দিলো।আইরিনের খুব ভালো লাগছে আজ।তাই সে অনেক সুন্দর করে সাজলো। নীল শাড়ী হাত ভরতি নীল চুড়ি কপালে নীল টিপ খোপায় বকুল ফুলের মালা মুখে হালকা মেকআপ।একদম মায়াবতী এক অপ্সরীর মতো লাগছে তাকে।।আয়নাতে নিজেকে দেখছে আর লজ্জা পাচ্ছে।হঠাৎ টাইম এর কথা মনে পরতেই সে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।রিক্সাই উঠে চলে গেলো রেনউইক বাঁধ এ।তারপর বসলো সেই বেঞ্চটাতে যেখানে রাজ আর তার প্রথম দেখা হয়। আর যেখানে পাশাপাশি বসে দুজনে কথা বলে।হঠাৎ পেছন থেকে কেউ একজন আইরিনের চোখ ধরলো……
কেও একজন:-বলো তো আমি কে?(হাসতে হাসতে)
আইরিন:-রাজ ফাজলামি করোনা আমি তোমাকে চিনে ফেলেছি।(হাসতে হাসতে) অচেনা ছেলেটি হাত ছেড়ে সামনে চলে গেলো….
ছেলেটি:-এই রাজ কে হ্যা আমি তো আবির।
আইরিন:-কে আপনি আমার চোখ ধরলেন কেন?
আবির:-সরি আপু আমি বুঝতে পারিনি। আসলে আমার গার্লফ্রেন্ড রিয়ার এখানে আসার কথা ছিল।ও আসেনি এখনও। আমি আপনাকে পেছন থেকে তাই চোখ ধরছি কিন্তু যখন রাজ নাম বললেন তখনি অবাক হয়ে সামনে এসে দেখলাম আপনি অন্য কেও।প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিন আপু।
আইরিন:-ওকে ওকে যান আপনি। আবির নামের ছেলেটি চলে গেলো। আইরিন অপেক্ষা করছে।এক ঘন্টা লেট করে রাজ আসলো।
আইরিন:-কি হলো তোমার এতো লেট করলে কেন আসতে।(রেগে)
রাজ:-এমনি ভাবলাম তোমার আরেক বিএফ এর সাথে হয়তো দেখা করবে।
আইরিন:-রাজ কি বলছো এসব।আমার বিএফ মানে কি তুমিই তো আমার বিএফ।
রাজ:-হুম আমি তোমার বিএফ তাহলে এটা কি।তুমি তিনটাই এখানে একটা ছেলের সাথে দেখা করেছো।আর দুজন কি খুশি কি প্রেম আলাপ।পেছন থেকে চোখ ধরে কানে কানে বলে আই লাভ ইউ।আর তুমি শুনে হাসো আর বলো লাভ ইউ টু।(রেগে বললো)
আইরিন:-রাজ বিশ্বাস করো এসব মিথ্যা।এই ছেলেকে আমি চিনি না।
রাজ:-হুম মিথ্যা ছবিটা আমি চেক করেছি একদম আসল।আর আপনার ওই বিএফ আমার পা ধরে আপনাকে ভিক্ষে চাইছে এটাও মিথ্যা।আপনি বলুন এই রকম আর কতোগুলো বিএফ আছে আপনার বলুন।আর কতোজনের সাথে এরকম অন্তরঙ্গ অবস্থায় থেকেছেন বলুন। (চিৎকার করে)
আইরিন:-রাজ ঠাস্…..ঠাস্……।(থাপ্পড় দিলো)
রাজ:-ছিহ্ তোমার লজ্জা করলোনা আমাকে মারতে।আরে যাও যাও যত্তসব আইছে।বিএফ নিয়ে সুখে থাকবেন। আজ থেকে আপনার আর আমার পথ আলাদা। আপনাকে আমি চিনিনা।আপনার সাথে ব্রেক আপ।কখনও আমার সামনে আসলে আমার মরা মুখ দেখবেন।গুড বাই। রাজ চলে গেলো।আইরিন কান্না করতে লাগলো।বাসায় আসার পর আইরিনের মা বললো….
আইরিনের আম্মু:-তোর লজ্জা করলোনা তোর বাবার মান সম্মান শেষ করতে। তোর বাবার অফিসের বস্ তার ছেলের জন্যে তোকে পছন্দ করলো আর তুই রাজি না হয়ে তাদের কাছে তোর বাবাকে ছোট করলি।আজ ২২ টা বছর তোকে তোকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছি। আর তুই এই তার প্রতিদান দিলি।
আইরিন:-আব্বু আম্মু আমি তোমাদের কথায় রাজি। তোমাদের সব কথা শুনবো।তোমরা যদি কোনো বোবাকেও বিয়ে করতে বলো আমি তাও রাজি।
আইরিনের আব্বু:-ওকে মা।তাহলে আমি সব ঠিক করে ফেলি।
আইরিন:-আচ্ছা বাবা।
আইরিন ওর রুমে চলে গেলো আর রুম বন্ধ করে কান্না করতে লাগলো।ওদিকে আইরিনের আব্বু রাইসুল চৌধুরীকে কল দিয়ে সব ঠিকঠাক করে ফেললো। পরেরদিন সকালে……
আইরিনের আব্বু:-মা আইরিন একটু এদিকে আসো তো।
আইরিন:-জ্বি আব্বু।(তার বাবার রুমে এসে)
আইরিনের আব্বু:-মা নাও ইমন তোমার সাথে কথা বলবে।
আইরিন:-হ্যালো।(ফোন নিয়ে)
ইমন:-হ্যালো।কেমন আছেন?
আইরিন:-জ্বি ভালো।আপনি?
ইমন:-ভালো।তা আপনি তো সব শুনেছেন আপনার বাবার থেকে।
আইরিন:-জ্বি শুনেছি।
ইমন:-তা আর ১সপ্তাহ পর আমাদের বিয়ে কার্ড ও ছাপাইছে এখনও কেও কাওকে চিনিনা।চলুন দেখা করি।
আইরিন:-ওকে।
ইমন:-আপনি ১ ঘন্টা পর জিরো পয়েন্ট এ।
আইরিন:-ওকে। কল রেখে আইরিন ওর রুমে চলে গেলো। তারপর সে তার বান্ধবী প্রিয়াকে কল দিলো।
আইরিন:-প্রিয়া তুই কোথায়?
প্রিয়া:-আইরিন আমি জিরো পয়েন্ট এ বসে আছি।
আইরিন:-প্রিয়া আমার শুক্রবার এ বিয়ে।
প্রিয়া:-বাহ তোর বিয়ে রাজ ভাইয়ার সাথে ওয়াও তোর তো তাহলে মন ভালো ট্রিট কবে দিবি।
আইরিন:-প্রিয়া আমার বিয়ে রাজ এর সাথে নয়। বিখ্যাত বিজনেসম্যান রাইসুল চৌধুরির ছেলে ডাক্তার ইমন চৌধুরীর
সাথে।(মন খারাপ করে)
প্রিয়া:-আইরিন কি বলছিস রাজ ভাইয়ার কি হবে?
আইরিন:-রাজ আমাকে ভুল বুঝে দূরে চলে গেছে।
প্রিয়া:-বলিস কি তা এতোকিছু হয়েছে আমাকে বলিস নি কেন?
আইরিন:-প্রিয়া তুই থাক আমি জিরো পয়েন্ট এ আসছি।ওখানে তোর দুলাভাই ও আসবে।
প্রিয়া:-ওকে।আমার সাথেও আমার বিএফ আছে।
আইরিন:-ওয়াও কবে প্রেম করলি বলিস নাই তো।
প্রিয়া:-তোকে বলেছিলাম না আগে আবিরের কথা।
আইরিন:-ওয়াও সেই ছোটবেলার খেলার সাথি কবে আসলো ঢাকা থেকে।
প্রিয়া:-১ মাস মতো আর যাবেনা ঢাকা।
আইরিন:-ওকে আমি আসছি। ফোন রেখে আইরিন রেডি হলো।তারপর চলে গেলো জিরো পয়েন্ট এ।গিয়ে দেখলো প্রিয়া বসে আছে।
আইরিন:-কি রে দোস্ত তুই একা যে তোর আবির কোথায়?
প্রিয়া:-দোস্ত ওইতো ও ফোনে কথা বলছে চল ওখানে।
আইরিন:-ওকে চল। প্রিয়া আর আইরিন আবিরের কাছে গেলো।আবির পিছু ফিরে কথা বলছে।প্রিয়া বললো……
প্রিয়া:-আবির এই হচ্ছে আইরিন আমার সব থেকে ভালো ও কাছের বান্ধবী।
আবির:-হাই।(সামনে ঘুরে হাত বারিয়ে)
আইরিন:-আপনি।
আবির:-মাথা নিচু করে চুপ হয়ে আছে।
প্রিয়া:-কি হলো তোমরা দুজন দুজনকে আগে থেকেই চিনো নাকি?
আইরিন:-চিনি মানে।ইনাকে চিনবোনা ইনি আমার আর রাজের মাঝে বাঁধা হয়ে ছিলো।ইনি রাজকে অনুরোধ করেছে আর আমাকে ভিক্ষা চাইছে।ইনি আমার আর রাজের সব শেষ করে দিয়েছে। আইরিনের কথা শুনে প্রিয়ার মনে ঝড় বইতে শুরু করলো।
প্রিয়া:-আবির আমি কি শুনছি এসব।বলো এসব কি সত্যি। আবির মাথা নিচু করে আছে।
প্রিয়া:-বলো আবির বলো চুপ করে থেকোনা তুমি বলো।
আইরিন:-চোর ধরা পরলে কিছু বলেনা প্রিয়া।
প্রিয়া:-আবির কেন করলে এরকম।(কান্না করতে করতে)
আইরিন:-বলুন কেন আমার আর আমার রাজের মাঝে বিষ হয়ে ছড়ালেন।কেন আমাদের সুখের জীবনটা নষ্ট করলেন বলুন। আবির চুপ করে মাথা নিচু করে আছে।
প্রিয়া:-আবির তুমি আমার ইমোশোন নিয়ে খেললে। তুমি আমাকে ধোকা দিলে আমার বিশ্বাস নিয়ে খেললে। কেন এমন করলে বলো নইলে আমি নিজেকে শেষ করে ফেলবো। আবির এবার আর চুপ করে থাকতে পারলোনা।সে বললো……
আবির:-রাজ আমাকে বলেছিলো।আমি আর রাজ খুব ভালো বন্ধু।হঠাৎ মাস খানিক আগে ও আমাকে কল দিয়ে বলে ওর একটা কাজ করে দিতে হবে।আমি জিঙ্গেস করি কি কাজ। তখন ও বললো একজনের রিলেশন ভাঙতে হবে।আমি প্রথমে না করি কিন্তু পরে ও জোড় করাই আমি রাজি হয়।
প্রিয়া:-কিহ রাজ এমন বললো।(অবাক হয়ে)
আবির:-হ্যা রাজ বলেছে আর আমি ওর জন্যেই ঢাকা থেকে এসেছি।
প্রিয়া:-কিন্তু রাজ তো আইরিনকে খুব ভালোবাসে।ও কেন এমন করবে?
আবির:-আমি জানিনা।আর আমিতো জানিইনা ইনি রাজ এর জিএফ।আর জানলে কখনও এমন করতাম না।
আইরিন:-রাজ এখন কোথায়। (রেগে)
আবির:-ও এখন অফিসেও যায় না বাসাতে আছে।
আইরিন:-চল প্রিয়া। প্রিয়া আর আইরিন রাজের বাসায় গেলো।কলিংবেল বাঁজাতেই রাজ দরজা খুলে দিলো।
রাজ:-তুমি এখানে।
আইরিন:-হ্যা মিস্টার আরিয়ান মাহাবুব রাজ আমি এখানে।এই নিন আমার বিয়ের কার্ড।সবার আগে আপনাকে নিমন্ত্রন করলাম।আপনি না গেলে আমি বিয়েই করবোনা।
রাজ:-ওহ্ কনগ্রাচুলেসন।
আইরিন:-ধন্যবাদ দিয়ে আর আপনাকে ছোট করবোনা মিস্টার রাজ।কারন আপনি এমনিই একজন নিচু ও কুৎসিত মনের মানুষ।কেন এমন করলেন। কেন আমার ইমোশন নিয়ে খেললেন আপনার লজ্জা করলোনা।আপনার তো লজ্জাই নাই।কি দরকার ছিলো অভিনয় করার। ভালোই হলো আগেই ধরা খেয়ে গেলেন। তবে অভিনয়টা সেই ছিলো পুরষ্কার নিয়ে যান ঠাস্ ঠাস্।(থাপ্পড় দিলো রাজকে)
প্রিয়া:-রাজ ভাইয়া আমার না কোনো ভাই নেই আপনাকে বড় ভাই ভাবতাম।আপনি এমন করলেন আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা বলুন না কি হয়েছে।
রাজ:-কিছুনা চলে যাও এখান থেকে।
আবির:-আজ আমিও চলে যাবো রাজ।তুই এরকম একটা বাজে কাজ করবি কখনও ভাবিনি।চল প্রিয়া।
আইরিন:-আমার বিয়ে তে অবশ্বই আসবেন রাজ সাহেব ও না অভিনেতা সাহেব।
আইরিন আবির প্রিয়া তিন জনেই চলে গেলো।ওরা যাওয়ার পর রাজ কান্না করতে লাগলো।ওদিকে ইমন এসে কল দিলো আইরিনকে।
আইরিন:-হ্যালো।
ইমন:-হ্যালো আইরিন তুমি কোথায় এখনও আসলেনা।
আইরিন:-আমি গিয়েছিলাম আপনাকে না দেখে চলে এসেছি আসলে বিয়ের ইনভাইট করছিতো সবাইকে।
ইমন:-ওহ্ আচ্ছা সমস্যা নাই।
আইরিন:-হুম একবারে বিয়ের পরে চিনে নিবেন এখন আপাতত ফোনেই কথা হোক।
ইমন:-আচ্ছা মহারানী।বাই। ফোন রাখার পর আইরিন কান্না করে দিলো। মহারানী বলে তাকে রাজ ডাকতো। ৬ দিন পর আজ ইমনের বিয়ে ওদিকে ওর বন্ধুর দেখা নাই।
ইমন:-দোস্ত কোই তুই?
ইমনের বন্ধু:-দোস্ত শরীরটা খুব খারাপ।খুব কষ্ট হচ্ছে আজ।
ইমন:-জানু তুই ঔষধ খেয়ে চলে আই তোর বাসার সামনে গাড়ি রেখেছি।
ইমনের বন্ধু:-আমি না গেলে হয়না।
ইমন:-বন্ধু তুই জানিস তোর পছন্দ মতো বিয়ে করতে চেয়েছি অথচো তুই আমার বাসায় আসিসও না আর শুনলিওনা মেয়ে কেমন।বাবা মা ও তোকে ছাড়া কেমন যেন হয়ে গেছে।
ইমনের বন্ধুু:-আচ্ছা আমি আসছি।
ইমন:-আচ্ছা।
ইমন বর সেজে দাঁড়িয়ে আছে এখনও ওর বন্ধু আসছেনা।তাই গাড়িতে উঠছেনা।ওদিকে দেড়ি হয়ে যাচ্ছে তাই ইমনের বাবা বললো……
ইমনের আব্বু:-ইমন বাবা দেরি হয়ে যাচ্ছে।
ইমন:-আব্বু রাজ না আসলে আমি যাবোনা।
ইমনের বাবা:-ছেলেটা এভাবে আমাদের সবাইকে একা করে চলে যাবে ভাবতেও পারছিনা।
ইমন:-আব্বু আমি এতো বড় ডাক্তার হয়েও আমার কলিজা টাকে বাঁচাতে পারছিনা।আমি ব্যর্থ আব্বু আমি রাজকে ছাড়া থাকতে পারবোনা।(কান্না করতে করতে)
ইমনের আব্বু:-আমরাও তো ওই বাবা মা মরা এতিম ছেলেটাকে নিজের ছেলের মতোই ভালোবাসি বাবা।আমরা ওকে ছাড়া কিভাবে থাকবো বল।
রাজ:-আমি এসে গেছি আর হ্যা আঙ্কেল তুমি কান্না করছো কেন আর জানোনা আমি ইমনের আরর তোমার কান্না সহ্য করতে পারিনা চলে যাবো এখান থেকে হুহ।
ইমনের আব্বু:-আর কাঁদবোনা বাবা দেখনা আমরা হাসছি।(জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো)
রাজ:-আঙ্কেল আমি তোমাদের ছেড়ে থাকতে পারবোনা।
ইমন:-রাজ। (জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো)
রাজ:-হিহিহি হাহাহা হেহেহে ওই শালা ওঠ চল বিয়ে করতে যাবি শালা আজও কান্দে আমি এমনি অভিনয় করলাম।
ইমন:-শালা এমন অভিনয় করবিনা।
রাজ:-চল এখন।
গাড়িতে ওঠার পর চলে গেলো বিয়ে বাড়ি।ইমনের গলায় চেইন পরিয়ে নামানো হলো।ইমন গেইট এর সামনে দাঁড়িয়ে রাজকে ডাকলো আর রাজ আসলো।ইমন রাজকে আর মেহেদীকে তার পাশে নিয়ে বসলো।কারন সবসময় তারা তিনজনে একসাথে থাকে।হঠাৎ প্রিয়া আর ওর বান্ধবীরা গেইট এ আসলো।রাজকে দেখে প্রিয়া অবাক। রাজও প্রিয়াকে দেখে অবাক। তার আর বুঝতে বাকি রইলোনা কার সাথে ইমনের বিয়ে।গেইট এর পর্ব শেষ হলে সবাই ভেতরে যেতে লাগলো।ইমন রাজকে আর মেহেদিকে পাশে নিয়ে বসলো। তাদের সামনের স্টেজ এ কনেকে বসানো।ইমন রাজকে বললো……
ইমন:-দোস্ত তোর ভাবিকে দেখনা কেমন লাগছে।
রাজ:-আমি আর কি দেখবো তোর চয়েজ ভালো না হয়ে পারে বল।
ইমন:-আরে দেখনা।
ওদিকে প্রিয়া ও আইরিনের কাছে বসে সব বললো। আইরিন সামনে তাকিয়ে দেখে রাজ।সে সময় রাজও আইরিনের দিকে তাকায়।রাজ আর আইরিন দুজনের চোখাচোখি হয়।রাজ এর চোখ থেকে পানি বের হচ্ছে।আইরিন স্টেজ থেকে উঠে রাজদের স্টেজের সামনে গেলো…..
আইরিন:-কি মিস্টার রাজ যে তা বিখ্যাত অভিনেতা দেখছি এখানে?
ইমন:-আরে আইরিন তুমি ওকে চিনো নাকি।
আইরিন:-হা হা হা ওর মতো একটা ছেলেকে চিনবোনা।ওকে আমি না আমার সকল বন্ধুরা চিনে এমনকি আবির ও চিনে।
ইমন:-আবির।কোন আবির।
আবির:-ইমন আমাকে চিনছিসনা।
ইমন:-দোস্ত তুই এখানে।
আবির:-হুম।
আইরিন:-তা তুমিও তাহলে রাজ সাহেবের বন্ধু।
ইমন:-হুম।তুমি ওকে কিভাবে চিনলে?
আইরিন:-বা রে একটা চিটার মিথ্যুক ফালতু নিচু ধোকাবাজকে চিনবোনা আমি।
ইমন:-আইরিন ঠাস্ ঠাস্।
রাজ:-ইমন থাম বন্ধু।
আইরিন:-আমাদের মধ্যে আপনি নাক গলাবেন না রাজ সাহেব।
ইমন:-এই যে শুনুন ও আমার সব বিষয়ে নাক গলাবে।আপনি আমার কে হু ও আমার সব ও আমার ভাই।ও চাইলে আপনার মতো হাজার হাজার মেয়েকে আমি ভুলতে পারি।
ইমনের আব্বু:-ইমন কি হচ্ছে এসব।বিয়ে বাড়িতে এসব কি।
ইমন:-আব্বু এরা আমার রাজকে ফালতু বলেছে।
প্রিয়া:-আপনি জানের এই রাজ কে এই রাজ আইরিনের ভালোবাসা।যে আইরিনকে ধোকা দিয়েছে। যে এই আবিরকে দিয়ে আইরিন এর সাথে অভিনয় করিয়ে ছবি তুলে ব্রেকআপ করেছে আর অনেক অপমান করেছে।
ইমন:-তাহলে এটাই কি সেই ভালো কাজ রাজ তুই এই মেয়ের জীবনটাই বাঁচাতে চেয়েছিস।
প্রিয়া:-মানে কি এসবের একজনের ইমোশোন নিয়ে খেলা ভালো কাজ।বাহ ভালো তো।
ইমন:-রাজ বল আজ সব খুলে।আজ এই কাঠ গড়াতে তুই অপরাধী হয়ে দাঁড়িয়েছিস একমাত্র আমিই জানি তুই অপরাধি না। আজ সব বলে দে রাজ।সব বলে দে।বলে দে তুই কেন এমন করেছিস।
রাজ:-বাদ দে ভাই।আমি চলে যাচ্ছি তুই বিয়ে করে নে পরে কথা হবে।
ইমন:-বল তুই রাজ আমার কসম্।
রাজ:-চুপ শালা তোরে না বলেছি কসম দিবিনা।
ইমন:-বলে দে রাজ।
রাজ:-ওকে।মনে আছে আইরিন আমি মাঝে মাঝে বলতাম পেট এ আর বুকে ব্যাথা করছে।তুমি ডাক্তার দেখাতে বলতা কিন্তু আমি গ্যাস্ট্রিক এর কথা বলেই এরিয়ে চলতাম।কয়েক মাস আগে আমি খুব অসুস্থ হয়ে যায়।তারপর ইমনের কাছে গেলে ইমন আমার পেট এ আলট্রা সনো আর এন্ডোসকপি করে। রোগ ধরা পরে কিডনি ড্যামেজ।আমার একটা কিডনি ইমনকে দিয়েছি।আর অবশিষ্ট কিডনি ড্যামেজ হয়ে গেছে।তারপর ইমন আমাকে বিদেশে পাঠায়।ওখানে গিয়ে জানতে পারলাম আমার সময় শেষ যেকোনো মুহুর্তে আমার মৃত্যু হতে পারে।আর তোমাকে আমি জানালে কষ্ট পেতে তাই আমি জানানাইনি।তুমি যাতে সুখে থাকো তাই সেদিন আবির কে দিয়ে ওরকম অভিনয় করিয়েছি।পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও আইরি বলতে বলতে রাজ পরে গেলো আইরিন ইমন মেহেদী আবির ইমনের আব্বু সবাই :-রা………জ।(চিৎকার করে) রাজকে হাসপাতালে নেওয়া হলো। অনেক্ষন ওকে ইমারজেন্সিতে নিয়ে দেখছে ইমন আর অন্যান্য ডাক্তার রা।হঠাৎ রাজ এর ঙ্গ্যান ফিরলো….
রাজ:-ই..ইমন এ…একটু আইরিনকে নিয়ে আইনা।
ইমন:-রাজ রাজ দোস্ত তুই থাক আমি আনছি। আইরিনকে ভেতরে আসতে বললো ইমন।আইরিন ভেতরে আসলো……
রাজ:-ইমন সবাইকে বাইরে যেতে বল।(অসুস্থ তাই আস্তে করে বললো ভালোভাবে কথাও বেরুচ্ছেনা)
ইমন:-এই সবাই বাইরে যাও।
রাজ:-তুই মেহেদীকে ডাক বন্ধু ।
ইমন:-আচ্ছা দোস্ত। ইমন গেলো মেহেদীকে ডাকতে।আর রাজ বললো……
রাজ:-খুব ভালো লাগছে রাত্রী।বউ সাজে তোমাকে এতো সুন্দর লাগবে কখনও ভাবিনি।জানো আইরিন তোমাকে যখন রাত্রী বলে ডাকি তখন মনে হয় আকাশের তারাগুলো তোমার মুখে ফুটেছে।জানো আমার স্বপ্ন ছিলো দুজনের ধুম ধাম করে বিয়ে হবে। তুমি বধূ সেজে আমার ঘরে আসবে।তোমাকে কোদে নিয়ে আমি ছাদে যাবো।পাশাপাশি বসে দুজন দুজনের কাধে মাথা দিয়ে চাঁদ আর তারাদের দেখবো। আমাদের ভালোবাসা দেখে চাঁদ তারারা হিংসে করবে।জোছনা রাতে আমি তোমার এই মায়াভরা মুখটি অপলোকে দেখবো। খুব সুন্দর ফুটফুটে একটা মেয়ে হবে আমাদের।খুব সুখে থাকবো আমরা।মাঝে মাঝে দুষ্টুমি করবো।ছোট ছোট ঝগড়া হবে।তুমি অভিমান করবে আমি রাগ ভাঙাবো।একদম খুনসুটিময় ভালোবাসা। কিন্তু দেখো সব স্বপ্নই তো সত্যি হয়না সব আশা পূরন হয়না আইরিন।উহ উহ উহ।(মুখ দিয়ে রক্ত উঠছে)
আইরিন:-রাজ আমি তোমার বউ হবো তোমার সব চাওয়া পূরন করবো। তোমার কিচ্ছু হবেনা।তুমি রেস্ট নাও। সুস্থ হয়ে নাও।
রাজ:-কে …. এনো মি….থ্যে শান্তনা দিচ্ছো আইরিন। আমি জানি আমি বাঁচবোনা।(কথা বের হচ্ছেনা)
মেহেদী:-রাজ বন্ধু কি অবস্থা তোমার। তোমার কিচ্ছু হবেনা তুমি সুস্থ হলে আমরা ঘুরতে যাবো।
রাজ:-কেন মিথ্যে শান্তনা দিচ্ছো ভাই আমি সব বুঝি। মেহেদী ইমন আর আইরিন কান্না করছে।
রাজ:-ওই কান্না করো কেন তোমরা। জানোনা কান্না আমার ভালো লাগেনা। সবাইকে আসতে বলো। ইমন সবাইকে ডাকলো সবাই আসলো…..
রাজ:-কাকু ইমনকে দেখে রাখবা আর তোমার ঔষধ সময় মতো খাবা নইলে আর কখনও কথা বলবোনা।
ইমনের আব্বু:-হুম বাবা আমি তোর সব কথা শুনবো বাবা।(কান্না করতে করতে)
রাজ:-আর আবির আমাকে ক্ষমা করে দিস।আর হ্যা প্রিয়া আমি তোর ভালো ভাই হতে পারিনি রে আমাকে ক্ষমা করে দিস। আর মেহেদী শোনো প্রিয়া আর আবির দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসে ওদের বিয়েটা দিয়ে দিও।মেহেদী হাল ছেড়োনা চেষ্টা করে অনেক বড় হবে। কথা দাও ঠিক মতো চাকরী করে বাবা মায়ের মুখে হাসি ফোটাবে।
মেহেদী:-কথা দিলাম রাজ।(কান্না করতে করতে)
প্রিয়া:-রাজ ভাইয়া তুমি আমার বড় ভাই না। তুমি আমার বড় ভাই নও রাজ ভাইয়া তুমি আমার কাছে আল্লাহর আশীর্বাদ। (কান্না করতে করতে)
রাজ:-ধূর পাগল কি সব বলিস কান্না থামা।আর হ্যা ইমন শোন কখনও কেও আলাদা হোসনা।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। শোন তুই আইরিনকে দেখে রাখিস। আর আংকেলকেও।আর হ্যা আইরিন অনেক ভালো মেয়ে ওকে কখনও কষ্ট দিবি না। দুজন খুব সুখে সংসার করবি আর আমার মায়ের কবরের ডান পাশে একটা জায়গা ফাকা আছে আমাকে ওখানে দাফন করবি।
ইমন:-রাজ তোর কিচ্ছু হবেনা আমি তোকে কিচ্ছু হতে দিবোনা।
রাজ:-আইরিন আমার ইমন খুব ভালো ছেলে।ওকে কখনও কষ্ট দিবেনা। ও আমার জন্য অনেক কিছু করেছে।ওর সাথে তুমি খুব সুখী হবে।কথা দাও ওকে কষ্ট দিবেনা।
আইরিন:-কথা দিলাম।
রাজ:-আজ আমি খুব খুশি রে।আজ আমি খুব খুশি।ওই দেখ আমার মা আমাকে ডাকছে। আমি আমার মায়ের কাছে চলে যাবো। আমি আসছি মা। মা আমি আসছি আমি আসছি। রাজ একদম নিথর হয়ে গেলো।একদম নিস্তব্ধ হয়ে গেলো।
আইরিন:-রাজ…. রাজ….. এই রাজ ওঠোনা।
ইমন:-রা……জ।
সবাই কান্না করছে রাজের পাশে।রাজ আজ আর কারো ডাক শুনছেনা আর কারো কান্না শুনছেনা।সে চলে গেছে ওপারে।সে চলে গেছে কবরে।কিন্তু রশে গেছে তার স্মৃতি।
৭ বছর পর……
রাই:-আচ্ছা আব্বু এটা কার কবর আর আম্মু আর তুমি কেন এখানে আসো?
ইমন:-আম্মু এটা তোমার ভালো বাবাই এর কবর যিনি তোমার মাকে আর তোমাকে খুব ভালোবাসতো।
নূর:-তা তিনি এখন কোথায়?
ইমন:-তিনি ওই আকাশে তারা হয়ে গেছেন। তোমাকে আর আমাদের ওই দূর থেকে দেখে।
নূর:-তিননি যতোই ভালো হোক আমার আব্বুর মতো হতে পারেনা।
ইমন:-ঠিকি মা।কারন তোমার ভালো বাবাই আমাদের সবার মুখের হাসি ফোটাতো।যা করার ক্ষমতা তোমার এই আব্বুর নাই।
আইরিন:-ইমন চলো মিলাদ দিতে হবে।
ইমন:-হুম চলো।
প্রতি বছরেই রাজের মৃত্যুবার্ষিকীত ে ইমন আর আইরিন আসে রাজের কবরের কাছে। আর তারা এই দিনে একটু মিলাদ মাহফিল এর আয়োজন করে।রাজের জন্য দোআ করে। আজ সব আছে সবাই রাজের কথা রাখে। সবাই মিলেমিশে থাকে।কিন্তু তাদের মনটা শূন্য করে দিয়ে চলে গেছে রাজ। যাকে এখনও ভুলতে পারিনি কেও। যার স্মৃতি আকরে ধরে বেঁচে আছে ওরা।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা