ভালবাসায় সীমাবদ্ধতা থাকতে নেই তবে বর্তমান ভালবাসা গুলো সীমাবদ্ধ। চাহিদা, অভিমান, ইগো প্রায় সব গুলো বিষয়ে ভালবাসা সীমাবদ্ধ। ভালবাসায় একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলো, ভালবাসার মানুষকে শুধু ভালবেসে যাওয়া, কিন্তু এক্সপেকটেশনের ভিড়ে আজ ভালবাসার অবস্থা সাইকাসের মত। যে শব্দটি সব ভাষায় সুন্দর ‘আমর মিও’ (ভালোবাসি), তোমাকে ভালোবাসি এবং তুমিও আমায় ভালোবাসো। তবে আমি তোমার চেয়ে বেশি ভালোবাসি, তুমি এ ভালোবাসা বন্ধ করতে পারবে না।
এটা ছিলো উনবিংশ শতাব্দিতে লেখা একটা চিঠির অংশ। ভালবাসা এমন ই তো হওয়ার কথা তাই না, চাইলেও যে ভালবাসা বন্ধ করা যায় না। যেখানে আবেশ কাজ করবে। তাকে দেখতে পাওয়ার আবেশ, তাকে ছুয়ে দেখার আবেশ, সে না থাকলে তাকে ফিল করার আবেশ। অভিমানের মাঝেও তাকে কাছে টানার আবেশ। এক কথায় যেটা পারস্পারিক আবেশ। বলতে পারেন এটা তো ফিজিক্সের সুত্র হয়ে গেল, তবে না এটা ভালবাসার সুত্র। আবেশ আকর্ষন, মেরু সব ভালবাসার এক একটা অংশ। বিপরিত মেরুর প্রতি আকর্ষন, ভালবাসার প্রতি আবেশের কারনে, আর এটাই ভালবাসার মহিমা।
ভালবাসা মানেই কিন্তু কারো কাছে হেরে যাওয়া বা তার ইচ্ছের দাস হয়ে যাওয়া নয়। ভালবাসা মানে মানিয়ে নেয়া, মেনে নেয়া, উৎসর্গ করা, হেরে যাওয়া। যেখানে সীমাবদ্ধতা বলতে কিছু থাকবে না, থাকবে না ভালবাসার কাছে জিততে পারার চ্যালেন্জ। আপনাকে প্রতিনিয়ত হারতে হবে আমি তা বলছি না, কিন্তু যখন আপনি বুঝতে পারবেন, হেরেও আপনার মনের মাঝে কোনো ক্ষোভ নেই, in fact আপনার কাছে আনন্দ ফিল হচ্ছে.. তখন বুঝতে পারবেন আপনি ভালবাসায় সিক্ত। তবে একটা কঠিন বাস্তবতা কি জানেন, ভালবাসায় স্যাক্রিফাইজ যে কোনো একজন কেই করতে হয়৷ যে কোনো একজনের ই হাল ধরতে হয়। যে মানুষ টা ভালো বাসে তার মুল দায়িত্ব সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে নিজের শেষ সম্বল টুকু পর্যন্ত স্যাক্রিফাইজ করা। কিন্তু সীমাবদ্ধতার দায় যখন সামনে ঠাই দাড়িয়ে যায় তখন স্যাক্রিফাইজের লেবেলের মাত্রা কমে যায়, ধিরে ধিরে আবেগ কমতে থাকে, টান কমতে থাকে। কমতে থাকে ভালবাসা। কষ্ট হলেও তাকে ফিরে আসতে হয়, হাল একা ধরে রাখা যায় না।
ভালবাসায় যদি সীমাবদ্ধতা না থাকতো তবেই তৈরী হতো অকারন ভালবাসা । রাগ থাকতো না অভিমান হতো। আবেগের মুল্য থাকতো, বিপরিত মানুষ টার প্রতি গুরুত্ব কখনো কমতো না বরং বাড়তো। ইগো তখন শুধু একটা শব্দ বাদে আর কিছু মনে হত না । কিন্তু যখন বিষয় টা বিপরীত হয়ে যায়, ইগোর বসিভুত হয়ে যখন সব সময় নিজের টাই ভাবেন তখন কি একবার খেয়াল করে দেখে না , ভালবাসায় একটা ইকুয়ালিটি থাকে, ভালবাসা = ভালবাসা। তো ইগোর ক্ষেত্রে কে তা হবে না । সবার মাঝে ইগো, অভিমান, রাগ, ক্ষোভ থাকে, ভালবাসার মানুষ টা কখনো রাগ ক্ষোভের কারনে পথ সরে দাড়ায় না, সেল্ফ রিসপেক্টের জন্য পথ থেকে সরে দাড়ায়। ভুলে পথে পা বাড়ায় না, ভুল থেকে পার পেতে পা বাড়ায়।
ভালবাসায় সীমাবদ্ধতার সংঙ্গা আমার কাছে নেই, তবে যে রাগ, অভিমান, ক্ষোধ, এক্সপেকটেশন, ইচ্ছে ভালবাসায় দুরুত্ব তৈরী করে সেটাই সীমাবদ্ধতা। হয়তো বলতে পারেন কোনো এক গন্ডিতে বদ্ধ থাকাই সীমাব্ধতা। হুমম ঠিক, বৃত্তের চারপাশে যেমন নির্দিষ্ট একটা সীমানা থাকে, ভালবাসায় সীমাবদ্ধতা ঠিক তেমন ই। ভালবাসা যদি বৃত্তের কেন্দ্র হয় তো ব্যাসার্ধ হবে তার সীমা। এই ব্যাসার্ধ অসিম হতে পারে আবার নির্দিষ্ট একটা দুরুত্বও হতে পারে। এটা নির্ভর করবে ভালবাসার প্রতি মানুষের গুরুত্ব থেকে। যে ভালবাসায় যত বেশি স্যাক্রিফাইজ, সে ভালবাসা তত বেশি সীমাহীন।
একটা কঠিন সত্য জানেন কি, হাজার পছন্দ, হাজার বিকল্পের মাঝে শুধু একজনই আছে যাকে দেখলে হার্টবিট অনায়াসেই বেড়ে যায় , মুহুর্তের জন্য মনে হয় দম বন্ধ হয়ে যাবে, বুঝতে পারা যায় অন্তরের টান। নিজের ভালবাসাকে বিকৃত করবেন না। হয়তো হাজার ও জিবন সঙ্গিনি পেয়ে যাবেন, কিন্তু নিজের খুশি টাকে হারিয়ে ফেলবেন।
প্লে বয় হোক, কিনবা প্লে গার্ল, তাদের জিবনেও এমন কেউ ছিলো যাকে সে তার জিবনের থেকে বেশি ভালবাসতো। কিন্তু সেই ভালবাসা সমাপ্তি হয় নি, তবে তাদের ভালবাসা বিকৃত হয়ে গেছে দোষারোপের উপর ভর করে। আজ তাই নিজেকে হাসি খুশি রাখতে রিলেশন করে । অন্যকে কষ্ট দিয়ে যে নিজে সুখে থাকা যায় তার উদাহরন এরা।
জিবন নামক একটা গল্পে ভালবাসা হলো উপহার স্বরুপ। আপনি চাইলেও এই উপহার পাবেন না, আপনি এটা অর্জন করতে পারবেন না, এটা ভাগ্যের লিখন, কপাল করে আসে। প্রকৃতির নিয়ম এটা। যদি সত্যিই কাউকে ভালবাসেন তো আপনি তাকে অনায়াসে মাফ করে দিতে পারবেন, তার অপরাধ ক্ষমা করার মত অনেক উপায় আপনার সামনে হাজির থাকবে। সীমাবদ্ধতার মোড়কে নিজেকে বন্দি রাখবেন না, পৃথিবীতে দুটি সুন্দর জিনিস হলো, মনের মানুষ আর ভালো মন। ভালো একটা মন তৈরী করুন মনের মানুষ অবশ্যই পেয়ে যাবেন। ভালবাসাকে ভালবাসুন, যতটা ভালবাসেন ভালুবাসার মানুষ কে ঠিক ততটাই। আপনি জিতবেন, সীমাবদ্ধতা আপনাকে স্পর্শ করবে না। একটা জিনিস মনে রাখবেন, সবার কাছে হারা যায় না, হারতে গেলে প্রিয় কাউকে দরকার। যে হার মনে প্রশান্তি এনে দেবে।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা