ভালোবাসার সারপ্রাইজ

ভালোবাসার সারপ্রাইজ
গরম পরেছে বেশ। প্রতিদিনের তুলনায় আজকে গরমের তাপমাত্রা মনে হয় একটু বেশিই। রাস্তার পাশে যে ছোট আমগাছটা রয়েছে তার নিচে একটু ছায়া। সেখানেই বসে আছে সুমন। বাতাসের রেশ পর্যন্তও নেই৷ সুমন আশেপাশে তাকালো। ইচ্ছে করছে গায়ের খাকি ইউনিফর্ম পরা পোশাক খুলে একটু আরাম করে বসতে। সেটাও পারছেনা সে৷ কারন লোকলজ্জা! আর তাছাড়া একজন পুলিশ রাস্তার পাশে খালি গায়ে বসে থাকলে ব্যাপারটা নিতান্তই পাগলামো ছাড়া কি বৈকি। সুমন পোশাক খুললনা, পায়ের জুতা মোজা খুলে একপাশে রাখলো। শার্টের সামনের বোতাম গুলো খুলে দিলো৷ সুমনের ফোন বাঁজছে। স্ক্রিনের উপর একটা নাম ভাসছে, ‘আম্মা।’ সুমন কল রিসিভ করে বলল….
-আসসালামু আলাইকুম মা। কেমন আছো?
–এইতো ভালো বাবা, তুই কেমন আছিস?
-ভালো আছি মা। বাবা কোথায়?
–তোর বাবা একটু বাহিরে গেছে৷
-আর আয়েশা কোথায়?
–আয়েশা তো বাসায়ই আছে৷ তোর সাথে না সকালেও কথা হলো।
-না মানে!
–বউয়ের সাথে মান অভিমান হয়েছে নাকি হু?
-আরে তুমি না মা, কিছুনা এমনিই।
–শোন আমি জানি, মায়ের কাছে লুকোতে হবেনা কিচ্ছু। সকাল থেকেই আয়েশার মন খারাপ তখনই বুঝলাম কিছু একটা হয়েছে। তাই তোকে ফোন করেছি।
-ফোনটা একটু ওকে দাওতো।
–আমি কেন দিব, তুই বউমার ফোনে ফোন দে।
-ওরটায় দেওয়া যাবেনা, তুমি ফোন দাও ওকে।
–কেন দেওয়া যাবেনা কেন শুনি?
-না মানে আমার নাম্বারটা ও ব্লকলিস্টে রেখেছে। সেজন্যই আরকি।
জহুরা বেগম (সুমনের মা) হাসলো। ছেলের এমন পাগলামো মার্কা কথা শুনে যেকোনো মা-য়ই হাসবে। সুমনের কেমন জানি লজ্জা লাগছে৷ জহুরা বেগম বলল…
–আচ্ছা দাঁড়া আমি বউমাকে বলি তোকে আনব্লক করতে। তবুও আমার ফোন দিবনা, পরে আবার অভ্যাস হয়ে যাবে।
-আচ্ছা বলো তাড়াতাড়ি! জহুরা বেগম আয়েশার কাছে গেলো। আয়েশা তখন বটি দা দিয়ে তরকারী কুটছে। জহুরা বেগমের উপস্থিতি পেয়ে আয়েশা মাথার কাপড় একটু টেনে দিলো৷ পাশে থাকা পিরে এগিয়ে দিয়ে বলল….
–বসুন মা।
-বসবনা, সুমন ফোন করেছিলো। বলল তোমায় নাকি ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। ফোনে চার্জ নাই নাকি? (কিঞ্চিত হেসে)
–আসলে আম্মা!
-পাগলি মেয়ে বরের উপর রাগ করে থাকতে নেই। যাও তুমি ঘরে যাও আমি তরকারী কুটছি।
–না মা, এগুলো আমিই করতে পারব।
-যাও আগে পাগলটার সাথে কথা বলো। সারাদিন ডিউটি করে একটু কথা বলো।
বলেই এক প্রকার টেনে উঠিয়ে দেয় আয়েশাকে। আয়েশা মাঝেমাঝে অবাক হয়। এত ভালোবাসে এই মানুষ গুলো ওকে। এক মুহূর্ত এদের ছাড়া চলেনা। কিন্তু হতচ্ছাড়া সুমন আমায় বোঝেনা হু৷ আয়েশা সুমনে ফোনে কল দেয়, রিসিভ করতেই সুমন বলল….
-কি করো?
–তরকারি কুটতেছি, এখন কাজে আছি। পরে ফোন দিয়েন।
-আরে শোনো?
–বলুন আমার হাতে কাজ আছে।
-এত কাজ কাজ করো কেন? তোমায় দেখতে ইচ্ছে করছে।
–বাসায় এসে দেখে যান।
-একটু ভিডিও কল দাওনা।
–কেন দিব? কতবার বলেছি বড় স্যারের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় আসুন। আমার কথাতো আপনার কানেই যায়না।
-আরে স্যার খুব রাগি।
–আচ্ছা রাখি তাহলে।
-শোনো না, গতকাল ছুটির কথা বলেছি স্যারকে। স্যার বলছে দেখবে।
–দেখা শেষ হলে আমায় জানিও। আমি কাজ করব এখন।
–শোনেননা..!
-বলো..?
–আমি জ্বালাই আপনেরে?
-আমারতো ভালোই লাগে। সবাই পুলিশকে ভয় পায় আর আমি এমন পুলিশ যে বউকে ভয় পাই। সুমনের কথা শুনে রাগ করে থাকতে পারেনা আয়েশা। ফিক করে হেসে দেয়। হাসতে হাসতে বলে….
–আইছে আমার পুলিশ, যে নিজের বউকেই কিনা ভয় পায় হি হি।
-পাওয়ার দেখতে চাও আমার আমার? ১৪ শিকের ভিতরে ঢুকিয়ে দিব।
–তাই বুঝি তা কবে ঢুকাবেন শুনি?
-এই মনের শিকেতো সেই কবেই ঢুকিয়ে রেখেছি।
–আমি সারাজীবন সেই শিকের ভিতরে থাকতে চাই।
তারপর অনেক কথা বলে দুজন। কথা বলা শেষ হতেই দুজনের মুখে হাসি ফুটে উঠে। ভালোবাসা জিনিসটাই এমন। মান, অভিমান, খুনসুটি এগুলোর মাঝেই লুকিয়ে থাকে মিষ্টি এক অনুভূতি। সুমন জুতা পরে নেয়। ইউনিফর্ম ঠিকঠাক করে রাস্তার অপজিটের দোকানের বেঞ্চে গিয়ে বসে। দোকানের মালিক সগির মিয়ার বেশ ভালোই মিল হয়েছে সুমনের সাথে। পুলিশের সাথে আপন মনে কথা বলতে ভালোই লাগে সগির মিয়ার। সগির মিয়ার মতে সুমনের মতন ভালো পুলিশ পুরো দেশজুড়ে একজনও নেই৷ মনে কোন হিংসা নেই, নেই কোন অহংকার। সুমন বেঞ্চে বসতেই সগির মিয়া বলে….
–স্যার একটা কথা কমু রাগ কইরেননা?
-আরে রাগব কেন, বলুন আপনি।
–একটু আগে কি ভাবির লগে কতা লইলেন নাকি? হাইস্যা হাইস্যা কথা কইলেন দেখলাম। সগির মিয়ার কথায় হাসে সুমন। সগির মিয়াও হাসে। সুমন দোকানের বোম্বাই চানাচুর ছিড়তে ছিড়তে বলল….
–হুম বউয়ের সাথেই বললাম।
-আপনের বউ অনেক সোন্দর তাইনা স্যার?
–কে বলল?
-পুলিশগো বউতো সোন্দরই হয়।
–এককাজ করব একদিন আয়েশাকে নিয়ে আপনার বাসায় নেমন্তন্ন খেতে আসব। নেমন্তন্ন কথা শুনে একটু ভরকে যায় সগির মিয়া। লজ্জা লজ্জাও পায় তার। মুচকি হেসে বলে….
–গরীবের বাইত্তে নেমন্তন খাইতে আইবেন শুইনা খুশি হইলাম স্যার…!
-হা হা, আপনি লোকটা অনেক সহজ সরল।
–আপনেও অনেক ভালো মানুষ৷ আপনের মতন পুলিশ আমি আমার বাপের জনমেও দেহি নাই।
সুমন হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়ায়। চানাচুর এখনও খাওয়া হয়নি৷ অল্প খেয়ে বাকি টুকু সগির মিয়ার হাতে দেয়। ‘খান, আমি যাই পুলিশের ডিউটি বোঝেনিতো’ বলেই বিল মিটিয়ে সুমন চলে যায়৷ সগির মিয়া অবাক, বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সুমনের চলে যাওয়ার দিকে। সে ভাবে..’মানুষ এত ভালো হয় কেমনে, তাও আবার পুলিশ মানুষ।’
অবশেষে বড় স্যারকে বলার পর ছুটির ব্যবস্থা হয়েছে সুমনের। সুমন বাসায় যাচ্ছে, এই ব্যাপারটা আয়েশাকে জানায়নি সে। আয়েশার ফোনে ছোট একটা মেসেজ পাঠায় ‘অর্ধ রজনীতে আজ চন্দ্রবিলাশ করব দু’জন, আচ্ছা তোমার কেমন লাগবে আমায় হুট করে দেখে? সেই রজনীতে গভীর ভাবে নাহয় ভালোবাসা দিব মেখে।’ এমন মেসেজ পেয়ে আয়েশা হতভম্ব হয়ে যায়। এর আগে এমন মেসেজ সুমন কখনো দেয়নি তাকে। একটু লজ্জা লজ্জা লাগে তার। সেও ফিরতি রিপ্লে দেয় “বাসায় আগে আসেন তারপর চান্দ্র বিলাশ কইরেন। তখন যত ইচ্ছে ভালোবাসা মেখে দিয়েন, হি হি হি…” আপন মনেই হাসে আয়েশা। সামান্য মেসেজে এত লজ্জা পাবে এটা ভেবেই সে আরো লজ্জা পায়। অথচ সে জানেনা আজকে তারজন্য কত বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত