আড়ালে থেকে ভালোবাসা

আড়ালে থেকে ভালোবাসা
ইফতার করে একটু শুয়েছিলাম।তখনি কলিংবেলটা বেজে উঠলো।কলিংবেল বাজার সাথে সাথে আমার মুখে বিরক্তি ভাবটাও ফুটে উঠলো।সারাদিন রোজা রেখে এমনিতেই ক্লান্ত তার উপর এই সন্ধ্যা বেলা আবার কে। আমি ইচ্ছে না হওয়া সত্ত্বেও উঠে দড়জা খুললাম।দড়জা খুলতেই দেখি ইশিতা দাঁড়িয়ে। ইশিতা কে দেখে আমার মুখের বিরক্তি ভাব নিমিষেই কেটে গেলো।কেমন যেন সব ক্লান্তি আমায় ছেড়ে চলে গেলো।আমি কিছু বলার আগেই ইশিতা আমার দিকে প্লেট এগিয়ে দিয়ে বললো,
-আম্মু পাঠিয়েছে আপনার জন্যে।আর কাল সেহেরী আমাদের বাসায় করবেন। ইশিতার হাত থেকে প্লেটটা নিয়ে বললাম,
-আসলে সেহেরীতে আমার একটু সমস্যা হয়।আমি বরং বাসায়ই করে নেবো।
-ঘুম থেকে উঠতে পারেন না জানি।ঘুম ভাঙানোর দায়িত্ব আমার উপর ছেড়ে দিন।
কথাটি বলেই ইশিতা সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো। হ্যা,,, আমি (মিনার) । আর এতক্ষন যার সাথে কথা বল্লাম ও হচ্ছে, ইশিতা। বাবা মার একমাত্র মেয়ে.। ওর বাবা পুলিশ, চাকরির জন্য এই শহরে থাকে। আমিও ওদের নিচ তলায় সাবলেট থাকি। ইশিতা কিভাকে জানলো যে আমার সেহেরীতে উঠতে দেড়ি হয়।ঘুম ভাঙে না।আসলে অফিস শেষে বাসায় এসে খুব ক্লান্ত হয়ে যাই।ঘুমাতেও বেশ দেড়ি হয়ে যায়।যার কারনে সেহেরীতে উঠতেও সমস্যা হয়।
ইশিতারা আমাদের উপর তলায় থাকে।এ বাসায় ওঠার পর থেকে ইশিতাদের সাথে আমার বেশ খাতির জমে গেছে।ওর বাবা মা আমাকে বেশ পছন্দ করে।কিন্তু ইশিতা আমাকে পছন্দ করে কি করে না সেইটা আজও বুঝতে পারলাম না।আসলে মেয়েটা কেমন যেন গম্ভীর স্বভারের। প্রতিদিনের মত আজকেও এলার্ম দিয়ে শুয়েছিলাম।কিন্তু এলার্ম বাজার আগেই কারও ফোনে ঘুমটা ভেঙে গেলো।আমি ফোনের স্ক্রিনে ইশিতার নামটা দেখে বেশ অবাক হলাম।ও আমার নাম্বার পেলো কোথায়।আমি ফোনটা ধরতেই ইশিতা মিষ্টি করে বললো,
-ঘুম ভেঙেছে?
-হ্যা,তোমার ফোনেই ভাঙলো।
-আমার নাম্বার সেইভ করাই ছিল?
-না মানে,আসলে,,,,
-হয়েছে আর বলতে হবে না।এবার ফ্রেশ হয়ে চলে আসুন।সবাই অপেক্ষা করছে আপনার জন্যে।
আমি আসছি বলেই ফোনটা কেটে দিলাম।প্রতিদিন যদি এরকম মিষ্টি করে ইশিতা জাগিয়ে দিত তাহলে মন্দ হতো না।আমি আর দেড়ি না করে ফ্রেশ হয়ে বের হলাম। ইশিতাদের বাসার সামনে এসে কলিংবেল বাজাতেই ইশিতা দড়জা খুলে দিল।মেয়েটা কি দড়জার পাশেই ছিল নাকি। আমি ভেতরে ঢুকতেই ইশিতার বাবা বললেন,
-এসো বাবা,তোমার জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম। আমি ওনাদের সালাম দিয়ে চেয়ার টেনে বসে পড়লাম।তবে এটুকু বুঝতে পারলাম যে,আমি আসাতে ওনারা বেশ খুশীই হয়েছে।আমিও তো কম খুশি হইনি।বুয়ার হাতের রান্না আর ভাল্লাগেনা। বাবা একটু বসবে। সেহেরী শেষে আমি চেয়ার থেকে উঠতেই ইশিতার বাবা কথাটি বললেন।আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
-জ্বী আংকেল কিছু বলবেন?
-একটা কথা বলার ছিল।
-জ্বী বলুন।
-এসো আমার সাথে।
আমি ইশিতার বাবার পেছন পেছন গিয়ে ভেতরের রুমে বসলাম। ইশিতার বাবা ঠিক আমার সামনে বসলেন।কিছুক্ষন চুপ থেকে বললেন,
-বাবা, ইশিতাকে তোমার কেমন লাগে?
-হুম বেশ ভাল।লক্ষী একটা মেয়ে।
-আমার এই ঘরের লক্ষীটাকে আমি তোমাকে দিতে চাই। ইশিতার বাবার কথায় আমি কিছুই বুঝলাম না।ঘরের লক্ষী দেবেন মানে।আমি বললাম,
-আসলে আমি ঠিক বুঝলাম না। ইশিতার বাবা এবার আমার হাত ধরে বললেন,
-আসলে বাবা আমি আর ইশিতার মা চাই ইশিতাকে তোমার সাথে বিয়ে দিতে।যদি তোমার আপত্তি না থাকে আমাদের বয়স হয়েছে।
কখন কি হয়ে যায় বলা যায় না। ইশিতার বাবার কথায় আমার খুশি হওয়ার কথা।কেননা যার জন্যে এতদিন আমি অপেক্ষা করছিলাম সে আজ আমার কাছে।ধরলেই পাবো। চাওয়ার আগেই পাওয়া!  কিন্তু এসব বিষয়ে আমার জায়গায় আমার বাবা মায়েরই থাকার কথা ছিল।কিন্তু আজ তারা নেই।চলে গেছে অনেক দূরে। আমি ইশিতার বাবাকে বললাম,
– ইশিতা কি রাজী?
-আমরা যেটা বলবো ও সেটাই শুনবে।
-তবুও ওর মতের দরকার আছে।
-আচ্ছা বাবা তুমি আমাকে ফিরিয়ে দেবে না তো।তোমার যদি সময় লাগে বলো।
ভেবে উত্তর দিও।তুমি বরং আজ ইফতার আমাদের সাথেই করো,তখন না হয় তোমার উত্তর টা জানা যাবে। ইশিতার বাবার কথায় আমি মাথা নাড়িয়ে সালাম দিয়ে উঠে আসলাম।দড়জা দিয়ে বের হতেই দেখি ইশিতা দাঁড়িয়ে। আমি ওর মুখের দিকে তাকাতেই মেয়েটা মাথা নিচু করে ফেললো।ওকে আজ কেমন যেন অন্যরকম লাগছে।আগের সেই গম্ভীর ভাবটা আর নেই।আমি আর দাড়ালাম না।চলে আসলাম।
অফিসে বসে আজ কাজে মন বসাতে পারছিলাম না।শুধু ইশিতার কথায় মনে পড়ছিল।আচ্ছা ও কি রাজি হবে।ও কি আমাকে ভালবাসে। এসব ভাবতে ভাবতে অফিস থেকে বের হলাম।ইফতারের প্রায় এক ঘন্টা সময় আছে।আজ আর কিছু কিনতে হবে।শ্বশুর বাড়িতে বেশ ভালভাবেই ইফতার করা যাবে। আমি রিক্সায় বসতেই তা চলতে শুরু করলো।কেমন যেন শুধু ইশিতাকেই মনে পড়ছে। রিক্সাটা একটু এগুতেই রাস্তার পাশে আমার চোখ আটকে গেলো। ইশিতা।ও এখানে। আমি রিক্সাওয়ালাকে থামাতে বলে ভালভাবে লক্ষ করলাম।হুম রেশমাই তো।রিক্সার জন্যে অপেক্ষা করছে হয়তো।তবে ওর মুখ দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা ঠিক নেই।আমি রিক্সা থেকে নেমে একটু এগিয়ে গিয়ে ইশিতাকে ডাক দিলাম।মেয়েটা আমাকে দেখেই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিল। ইশিতার এরকম আচরনে আমি একটু অবাকই হলাম।কি হলো।আমি ইশিতার মুখ তুলে ওকে জিজ্ঞেস করলাম,
-কি হয়েছে? ইশিতা হাত দিয়ে ইশারা করে বললো,
-ওই ছেলেগুলা,,,
কথাটি বলেই ইশিতা আবার কান্না শুরু করে দিলো। আমি ছেলেগুলার দিকে তাকাতেই ছেলেগুলা প্রায় দৌড়ে চলে গেলো।আমি ইশিতাকে কিছু না বলে ওকে নিয়ে রিক্সায় চেপে বসলাম।মেয়েটা আমার হাত শক্ত করেই ধরে আছে।আমি ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে ওর হাতটা শক্ত করেই ধরলাম। আজ না হয় ইশিতাকে আমি রক্ষা করলাম কিন্তু কাল এরকম হাজার হাজার ইশিতাকে কে রক্ষা করবে।কে করবে। মেয়েটা বেশ ভয় পেয়ে গেছে।রিক্সা থেকে নেমেও আমার হাতটা ঠিক আগের মতই শক্ত করে ধরে আছে।আমি ভাড়াটা দিয়ে ইশিতাকে নিয়ে উপরে উঠতে উঠতে বললাম,
-এখন থেকে একা বের হবে না।
-তুমি যাবে আমার সাথে? ইশিতার মুখে তুমি শুনে কেমন যেন ভাল লাগা কাজ করলো।আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,
-হ্যা আমি যাব।এবার যাও বাসায় যায়।
-ইফতারে আসবে তো?
-দেখা যাক।
-আমি অপেক্ষা করবো।
কথাটি বলেই ইশিতা চলে গেলো।অপেক্ষা করবে।হুট করেই আমার ঠোটের কোনে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো। ফ্রেশ হয়ে বের হতেই ফোনটা বেজে উঠলো। ইশিতার ফোন।মাত্রই তো কথা বলে আসলাম এখনি আবার কি হলো।আমি ফোন ধরতেই ইশিতা বললো,
-আসো না কেন? আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি এখনও প্রায় আধ ঘন্টা আছে আযানের।আমি ইশিতাকে বললাম,
-এখনো প্রায় আধ ঘন্টা আছে।একটু পরে আসি।
-না এখনি এসো।আর আসার সময় কালো পাঞ্জাবিটা পড়ে আসবা।
কথাটি বলেই ইশিতা ফোনটা কেটে দিল। ইশিতার হঠাৎ এরকম পরিবর্তন আমি আগে দেখিনি।কেমন যেন আগের ইশিতার সাথে এই ইশিতার কোন মিলই খুজে পাচ্ছিনা। আমি আর দেড়ি না করে কালো পাঞ্জাবিটা পড়েই বের হলাম।কলিংবেল যখনি বাজাতে যাব তখনি দড়জাটা খুলে গেলো।এইটা কি হলো। ইশিতা কিভাবে বুঝলো যে আমি এসেছি।আমি ইশিতার চোখের দিকে তাকাতেই মেয়েটা লজ্জায় চোখ নামিয়ে বললো,
-এসো ভেতরে এসো।
আমি কিছু না বলে ইশিতার বাবা,মা কে সালাম দিয়ে বসে পড়লাম।ওনাদের সাথে কথা বলতে বলতে আযানের সময় হয়ে গেলো প্রায়। তবে আযানের আগেই আমি ওনাদের জানিয়ে দিলাম যে, ইশিতাকে বিয়ে করতে আমার কোন আপত্তি নেই।আমার কথায় ওনাদের চেয়ে ইশিতাই মনে হয় বেশী খুশি হলো। ইশিতা ঠিক আমার পাশে বসেছিল।লজ্জায় মাথাটা তুলতে পারছিল না মেয়েটা।বুঝিনা মেয়েটা এত লজ্জা পায় কেন। ইফতার শেষে উঠতেই ইশিতার বাবা বললেন,
-যাও বাবা ইশিতার রুমে যাও,একটু রেস্ট নাও।
-না আংকেল, বাসায় গিয়ে সব হবে।
-আরে লজ্জা পাচ্ছ কেন,এটা তো এখন তোমারই বাসা।
ইশিতার বাবার কথায় একটু খুশিই হলাম।আমিও চাচ্ছিলাম একটু ইশিতার সাথে কথা বলতে।কিন্তু কিভাবে বলি এটা ভাবতে ভাবতেই উনি বলে দিলেন।আমি ইশিতার রুমে ঢুকতেই মেয়েটা আমার উপর ঝাপিয়ে পড়লো,
-ওই আসতে চাইছিলা না কেন।ভাল লাগে না।
-আসলে আসবো বলেই তো একটু নাটক করতে হলো। ইশিতা এবার আমার চোখে চোখ রেখে আমাকে ধরে বললো,
-এভাবেই ভালবাসবে তো সারাটাজীবন?
-সেটা পরে দেখা যাবে।আগে বলো তুমি আমার সাথে আগে এত কম কথা বলতে কেন?
-তোমার সামনে গেলেই কেমন যেন সব গুলিয়ে ফেলতাম।কথা বলতে পারতাম না।ভয় লাগতো।
-এখন ভয় লাগে না?
-না।
-এখন তো তোমাকে আমার ভয় লাগে।
-কেন?
-এখনি কলার চেপে ঝাপিয়ে পরলে, পরে যে গলা চেপে ধরবা না তার কি গেরান্টি আছে। আমার কথায় ইশিতা মুচকি হেসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-অন্য মেয়েদের দিকে তাকালেই গলা চেপে ধরবো।
-আর আমি তখন তোমাকে ঠিক এভাবেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরবো।বেশ শক্ত করেই।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত