করিম ভাই

করিম ভাই

>> করিম ভাই কি খবর?
শিশির কে ভালবাসেন। আপনার সাহস তো কম না । শিশির কে প্রপোজ করেন।
>> না।
আসলে আজ হয়েছি কি জানেন । শিশির কে আজ স্বপ্নে দেখলাম। শিশির আমাকে বলছে কিছু বলবেন? বললে বলে পেলেন। যা বলবেন তা আজ মেনে নিব। তাই সকাল বেলা শিশির কে ভার্সিটি তে প্রপোজ করলাম। কিন্তু শিশির রেগে গিয়ে আমার চশমা টা খুলে। আমাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে চলে যায়।
>> তাইলে আপনাকে কি হাতে ধরে সারা ক্যাম্পাস ঘুরাবে । শুনেন। কোনো দিন যেন না দেখি। শিশির কে প্রপোজ করতে। দেখলে স্যার কে গিয়ে সব বলব। বড় ভাই হয়ে আপনি আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। তখন বুঝবেন কত ধানে কত চাউল। তখন আপনার ভালবাসা জানালা দিয়ে পালাবে। আপনি ভার্সিটি ছেড়ে গাছতলায় গিয়ে বসবেন।
.
আসলে সকালে হয়েছে কি জানেন ? করিম রাতে স্বপ্নে দেখল শিশির করিম কে বলছে যা বলবে তা আজ মেনে নিব। করিম শিশির কে খুব ভালবাসে। করিম ভাবছে শিশির কে প্রপোজ করবে। করিম যেহেতু স্বপ্ন টা দেখল। তাই ভাবছে শিশির রাজি হয়ে যেতে পারে। শিশির ভার্সিটি তে আসতেই…….
>> শিশির কেমন আছ?
>> তা আপনাকে বলব কেন? আর আপনি আমার রাস্তা আটকাচ্ছেন কেন?
>> আমি আপনাকে ভালবাসি। এই কথা টা বলার জন্য এখানে দাঁড়িয়ে আছি।
>> এই কথা টা এখন থেকে কতবার বলছেন। ৫ বার। আর এখন একবার। তার মানে ৬ বার। আমি তো একবারও বলি নি আমি আপনাকে ভালবাসি। আপনি বড় ভাই। আপনি কেন বুঝেন না। আমি এসব ভালবাসা বিশ্বাস করি না। প্লিজ আমাকে আমার মতো থাকতে দেন।
>> ক্লাস করতে যাবে। চল হেঁটে হেঁটে যাই। দু’জন দু’ক্লাসে চলে যাব।
>> আমি এতোটা বোকা মাইয়া না। যে আপনার সাথে যাব। তারপর সবাই ভাববে আপনার আমার মধ্যে প্রেম চলছে। তারপর আমাকে নিয়ে সবাই মজা করবে। তা আমি হতে দিব না। আপনি আপনার যাওয়া যান।
>> নাতো। কেউ কিছু ভাববে না। আমি তো সবার বড়। আমার একটা সম্মান আছে তো।
>> তা দেখলেই বুঝা যায়। কতটা বোকা আপনি। বোকা না হলে এতো বড় চশমা আর চুলগুলো এভাবে আছড়ি রাখতেন না।
দেখি আপনার চশমা। এই নেন হাতে। আর সরেন।
.
করিম তো খুব অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। এতে চশমা খুলার কি আছে। আসলে মেয়েটা দেখতে যত টা সুন্দর তার থেকে সুন্দর মেয়েটার মন। মন টা একদম শিশুর মনের মতো। অবুঝ। তারপর ঐ মেয়েগুলো এসে করিম কে ধরল।
.
সবাই ক্যাম্পাসে বসে পড়াশোনা নিয়ে আলাপ করছে। এখানে শিশির ও শিশিরের এর বান্ধবী মেয়েগুলা আছে। সবাই একটা প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করছে। সেই প্রশ্ন টা কেউ পারে না। সবাই টেনশনে আছে। কারণ একটু পর এক্সাম। এই প্রশ্নটা আসতে পারে। করিম তাদের বিপরীত পাশে বসে ছিল। সব কিছু শুনতে পায়। করিম তাদের পাশে এসে উত্তর টা বলে যায়। শিশিরের দিকে একবার চেয়ে চলে যায়। সবাই প্রশ্নর উত্তর টা ভালো মতো বুঝে। তারপর সবাই পরীক্ষার হলে যায়। যে প্রশ্ন টা সবাই দেখে এসেছিল। আর এই প্রশ্নটা ওই এসেছে। সবাই তার উত্তর দিয়ে চলে আসে।
.
>> ভাইয়া প্রশ্ন টা এসেছিল। আমরা সবাই উত্তর টা দিয়েছি।
ধন্যবাদ ভাইয়া।
>> শিশির কি উত্তর টা দিয়েছে।
>> ভাইয়া দিয়েছে। এখন ভাইয়া আমরা চলে যায়। আপনি এখানে বসে হাওয়া খাঁন।
>> ও। চলে যাবে। শিশির কে কোথায় পাব?
>> দ্যাত ভাইয়া। শিশির কে খালি খুঁজেন কেন? শিশির আপানকে পছন্দ করে না। তাকে কেন বিরক্ত করেন?
>> আচ্ছা শিশির আমাকে কেন পছন্দ করে না ? আমি কি দোষ করছি।
>> কারণ আপনি বোকা। আপনার মতো বোকা ছেলে এই ভার্সিটি তে নাই। তাই শিশির পছন্দ করে না।
>> বোকা কি আবার।
>> আমরা জানি না । তোরা সবাই চলতো।
.
>> শিশির কি খাচ্ছেন। ও আপনি ফুচকা খাচ্ছেন।
>> ওই আপনি এখানে কেন? এইটা মেয়েদের ক্যান্টিন। আপনাকে এখানে মেয়েরা দেখলে হাসাহাসি করবে আপনি এখান থেকে যান।
>> আমি কি খাওয়ার জন্য এসেছি নাকি। আমি তো আপনাকে দেখার জন্য এসেছি।
>> আমাকে এতো দেখার কি আছে?
যান এখান থেকে।
>> যাব না।
>> যাবেন না মানে কি? আমি আপনাকে দেখলে সহ্য করতে পারি না। আপনি বুঝেন না। নাকি না বুঝার বান করেন।
>> এতো কিছু আমি বুঝি না। আমি আপনাকে ভালবাসি।
>> কিন্তু আমি আপনাকে ভালবাসি না।
দূর হোন আমার সামনে থেকে।
>> না গেলে কি করবেন?
>> দেখবেন কি করব।
ওই তোরা সবাই এ দিকে আয় তো।
>> না যাচ্ছি। এতো লোকজন ডাকার কি আছে।
>> তাইলে যাচ্ছেন না কেন । যান।
>> আমি আপনাকে খুব ভালবাসি। আপনাকে এখানে একা রেখে আমার মন চাইতেছে না।
>> আমি আপনাকে ভালবাসি না। এবার যান। দূর হোন আমার সামনে থেকে।
.
>> শিশির দাঁড়ান। আপনার জন্য একটা জিনিস এনেছি।
>> ডাকছেন কেন? কি জিনিস এনেছেন?
>> কেমন আছেন?
>> আমাকে দাড় করিয়ে বলেন কেমন আছি। আমি ভাল থাকব। আর ভাল না থাকলে আপনার কি?
>> ছিঃ ছিঃ কি বলছ এসব। আপনি ভালো না থাকলে। আমি ভালো থাকব কি করে। এই গোলাপ ফুল।
আপনার জন্য এনেছি।
>> শিশির দাঁড়িয়ে আছে। রাগে তার নাক ফুলছে। ঠোট টা ত্যাড়া হচ্ছে। চোখটা ভিতরে ঢুকিয়ে বলে করিম ভাই মেয়েদের চড় খাইছেন। যদি না খাঁন তাইলে এখন আমাকে বলেন। আমি আপনাকে ইচ্ছা মতো চড়াব। এই ১৫ টাকার ফুল আমাকে দেওয়ার জন্য রাস্তায় আটকালেন।
>> এই ফুলটা ১৫ টা হলে কি হবে। এই ফুলে ভালবাসা জড়িয়ে আছে। গভীর মমতা জড়িয়ে আছে। আছে আমার ভালবাসা।
>> কোথায় থেকে আইছেন রাজকুমার।
আমাকে ভালবাসতে। আমি আবার বলছি। আমি আপনাকে ভালবাসি না।
আমি আপনাকে দু’চোখে দেখতে পারি না। আপনাকে দেখলেই আমার রাগ উঠে যায়।
.
>> শিশির দাঁড়ান। আমার তো প্রিয় মানুষ নেই। আমার প্রিয় মানুষ শুধু আপনি একজন। আমি কাল মেলায় গিয়েছিলাম। দেখলাম সবাই তাদের প্রিয় মানুষের জন্য কত জিনিস কিনল। তাই আমারও আপনার জন্য কিছু কিনতে মনটা পাগল হয়ে গেল। কিছু উপহার দিব। আপনি নিতে হবে। এই নেন একটা ডায়েরী। একটা কলম। আপনি তো আমাকে ভালবাসেন না। আমাকে সহ্য করতে পারেন না। আপনার যদি কোনো প্রিয় মানুষ থাকে। তাইলে আপনার সব কথা এই ডায়েরীর মধ্যে লিখে রাখবেন। পরে তাকে দিয়ে দিবেন।
>> ওকে। করিম ভাই। এখন থেকে আপনি আর আমার সামনে আসবেন না।
>> আমি আর আসব না।
.
>> এই তোরা জানিস। করিম ভাই কাল আমাকে একটা ডায়েরী আর একটা কলম দিয়েছে। আমি নাকি আমার সব মনের কথা লিখব। লোকটা কত বোকা দেখছস।
>> বোকা হইত নইলে তোর মতো মেয়ের পিছনে ঘুরে। যে মেয়ে কোনো ছেলের সাথে ওই কথা বলে না। আর সে মেয়ে নাকি প্রেম করবে।
>> আমাকে খুঁচা দিচ্ছিস। দে দে। যত খুশি দে। আমি কিছু বলব না। আজ থেকে আমি মুক্ত। আমাকে আর কেউ বিরক্ত করবে না। করিম ভাইটা আমার জন্য একটা বিরক্তিকর কারণ ছিল। কি রকম করে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকতো।
>> হা হা হা। তুই সত্যি ওই বলছিস।
>> চল ক্লাস করতে যাই। অনেক দেরি হয়ে গেছে।
.
>> শিশির তোর জন্য আমরা একটা ছেলে দেখেছি।
তোকে তার মা-বাবার খুব পছন্দ হয়েছে। (মা)
>> আম্মু আমি আগে লেখাপড়া শেষ করি। তারপর বিয়ে দিয়ে দিও। এখন একটু লেখাপড়া নিয়ে চাপে আছি।
>> লেখাপড়া তো বিয়ের পরও করা যায়। তারা বলছে তোকে লেখাপড়া করাবে। তুই এসব নিয়ে চিন্তা করিস না।
মা রাজি হয়ে যা।
.
তারপর দুমদাম করে শিশিরের বিয়ে হয়ে যায়। শিশিরের মা-বাবা অনেক খুশি। শিশিরও একটু একটু খুশি। কারণ একদিন তো শিশিরের বিয়ে হবে ওই । শিশির বধূ সেজে খাটের মধ্যে বসে আছে। শিশিরের কত স্বপ্ন ছিল। শিশির আর তার জামাই মিলে সারারাত গল্প করবে। কিন্তু গল্প করবে দূরের কথা শিশিরের জামাই মদ খেয়ে তার রুমে ঢুকল। কি আবুলতাবুল বলছে। শিশির ভয় পেয়ে যায়। শিশির দৌড় দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসে। সবাই শিশিরের দিকে চেয়ে আছে। শিশিরের জামাইও রুম থেকে বের হয়ে এসে শিশির কে মারতে থাকে। তারপর সবাই শিশির কে উদ্ধার করে। পরের দিন শিশির তার বাবার বাসায় চলে যায়। পরে শিশিরের মা-বাবা জানতে পারে এই ছেলে খুব খারাপ। এই ছেলে কে পুলিশ অনেকবার ধরে নিয়েছে।
শিশির আর আগের মতো নেই। তার এতো বড় সর্বনাশ হলো। শিশির চমকে উঠলো। যখন দেখছিল তার স্বামী কাপুরষের মতো তার রুমে ঢুকেছিল। এই কথা ভাবতেই সে কান্না করতে শুরু করল।
.
৪ বছর পর।
হঠাৎ একদিন করিম হাতে ব্যাগ নিয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। শিশির করিম কে দেখতে পায়। কি নিষ্পাপ মুখ। চুলগুলো আগে যে রকম ছিল সে রকম ওই আছে। আর দেখতে কেমন বোকা বোকা লাগে। এই বোকা মানুষটা কে নিয়ে কত রাত জেগে স্বপ্ন দেখেছে শিশির তা সে নিজেও জানে না। সব কিছু এই ডায়েরীর মধ্যে লেখা আছে।
শিশির করিমের কাছে যায়। করিম শিশির কে দেখে চমকে যায়। করিম কি বলবে বুঝতে পারছে না। শিশির করিম কে ডায়েরী টা হাতে দিয়ে চলে যায়।
শিশির চোখ টা ফুলে যাচ্চে। সম্ভবত কান্না করবে কিন্তু কোনো কান্না আসবে না। কারণ চোখ থেকে কান্না পুড়িয়ে গেছে। হয়তো বা করিমের জন্য নয়তো বা তার বাস্তব জীবনের জন্য।
.
করিম ডায়েরী টা হাতে করে নিয়ে বাসায় চলে গেল।
.
কি আছে এই ডায়েরী টার মধ্যে লেখা। কার ভালবাসার কথা। করিম ভাবতে লাগলো অন্যর ভালবাসার গল্প কেন পড়বে? কেন মনের কষ্টটা দিগুণ করবে। সে তো এখন অন্য কার। অন্য কারো। আমি তো এখনও বিয়ে করে নি। তাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম বলে। তাকে নিয়ে সুখের সাগরে হারাতে চেয়েছিলাম বলে। এসব কথা চিন্তা করতে করতে করিম হাতে একটা সিগারেট নিল। করিম কোনো দিনও সিগারেট খেত না। যেই শিশিরের কাছ থেকে চলে এসেছিল সে দিন থেকে করিম সিগারেট খাওয়া শুরু করেছিল। হয়তো শিশির কে ভুলার জন্য। কিন্তু করিম কি শিশির কে ভুলতে পেরেছে ? না পারে নি।
আর পারবেও না। কারণ শিশির যে তার প্রথম ও শেষ ভালবাসা ছিল।
তবুও করিম চিঠি টা হাতে নিল। এক কাপ চা হাতে নিয়ে ডায়েরী টা পড়তে শুরু করল।
প্রিয় করিম ভাই কেমন আছেন। অবশ্য ভালো নেই। ভালো থাকার কারণ টা জানতে চাইব না। এতে আপনার কষ্টটা ভেড়ে যাবে। আপনি যেমন আছেন তেমন ওই রয়ে গেলেন। কারণ আপনি তো অবিবাহিত। আপনি আমাকে খুব ভালবাসতেন। আমাকে নিয়ে একটা সুখের সংসার করতে চেয়েছিলেন। তা আমি জানতাম। কিন্তু বিশ্বাস করেন ভালবাসা মানে কি তা আমি বুঝতাম না।
ভালবাসার অভাব টা আমি বুঝি। যখন আমি চার দেয়ালের মাঝে বন্ধী থাকি। কেউ আমাকে বলে না চল না ঘুরে আসি । কেউ আমার জন্য গোলাপ ফুল এনে বলে না। আপনার জন্য এই গোলাপ ফুলটা এনেছি। কেউ আমাকে পথে দাড় করিয়ে বলে না আমি আপনাকে ভালবাসি।
করিম ভাই বিশ্বাস করেন। আমি হাটতে চাই। আমি এখন ঘুরতে চাই। আমি এখন ডানাকাটা পরীর মতো উড়তে চাই। যেখানে আপনি আমি থাকব। আর থাকবে আপনার সাজানো স্বপ্ন। আপনার স্বপ্নের মাঝে আমি বেঁচে থাকতে চাই। আচ্ছা আপনি কি আমাকে আজও ভালবাসেন। ভালবাসেন কিন্তু ঘৃণা করেন না। কারণ ভালবাসার মানুষকে ঘৃণা করা যায় না। আচ্ছা আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না। ক্ষমা করে ভালবাসা যায় না। যদি ক্ষমা করে ভালবাসেন তাইলে আমাকে চার দেয়ালের মাঝ থেকে উদ্ধার করবেন।
.
করিম আকাশের দিকে চেয়ে আছে। করিম কি শিশিরের কাছে যাবে। আচ্ছা করিম তো শিশির কে ভালবাসে। করিম হাটতে লাগলো। খুব ধীরে ধীরে হাটছে । এক সময় করিম চমকে উঠলো। কারণ শিশির তাকে ডাকছে। তার মনে খুশির আমেজ উঠতে লাগলো। সে শিশিরর কাছে যেতে লাগলো।
আর শিশির বারান্দায় বসে বসে করিমের আসার অপেক্ষায় রইল।
আজ শিশির একটা শাড়ী পড়েছে। শিশির কে কেমন বউ বউ লাগছে।
করিম এক সময় শিশির কে দেখতে পায়। শিশির চেয়ে আছে করিমের দিকে। করিম কাছে গিয়ে বলে আমি আজও আপনাকে ভালবাসি। শিশির করিমের বুকে এসে মুখটা আড়াল করে নেয়।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত