সোহানা : আচ্ছা যদি আমার ফ্যামিলি এইচ. এস. সির পর বিয়ে দিয়ে দেয় তাহলে কি করবেন???
তুষার : তোমার বাবার কাছে গিয়ে আমাদের ব্যাপারে বলব।
সোহানা: যদি মেনে না নেয় তাহলে!!
সোহানা: তুমিই বল কি করব??
সোহানা: আমি না ফ্যামিলির কথার বিপরীতে যেতে পারবনা। কারণ আমার কােছ আমার ফ্যামিলি বড়।
তুষার : তাহলে কি আর করার?? দূরে কোথাও চলে যাব। বাকীটা জীবন কোনোরকম করে কাটিয়ে দিব।
সোহানা: সেটাই ভালো।
তুষার : হুম সেটাই। ( অভিমানী কণ্ঠে)
সোহানা: একটা কথা শুনবেন??
তুষার : জ্বি বলুন।
সোহানা: আপনি খাওয়া দাওয়া করুন!! দিনে দিনে তো শুকিয়ে যাচ্ছেন। আপনার আপু বলল আপনি নাকি খাওয়া দাওয়া ছেড়ে
দিয়েছেন!!! তুষার : দরকার নেই কিন্তু বলার জন্য ধন্যবাদ।
সোহানা: হুম।
তুষার: একটা কথা ছিলো রাখবেন??
সোহানা: জি বলুন!! রাখার মত হলে রাখব!!
তুষার: আপনার যদি বিয়ে হয়ে যায় তাহলে একটা কাজ করবেন??
সোহানা : কী???
তুষার : আপনার যদি ছেলে অথবা মেয়ে হলে আমাকে দিয়ে দিবেন??
সোহানা: কী বলেন এসব?? কেন?
তুষার: ওকে নিয়ে আমি আমার বাকি জীবনটুকু কাটাব আমার ভালোবাসার স্মৃতি নিয়ে। চিন্তা করিওনা ওকে আমি আমার মত করে
মানুষ করব। বড় হলে ও আপনার কাছে ফিরে যাবে।
সোহানা: আচ্ছা দেখা যাক কী হয়??? এতক্ষণ ধরে যাদের কথা শুনছিলেন তারা হল তুষার ও সোহানা। তুষার এবার ভার্সিটি
জীবনের ৪ র্থ বছরে পা দিল।সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের ছাত্র।সোহানা সবে এস.এস সি দিয়ে কলেজ জীবনে
পা রাখল। তুষার ও সোহানার সম্পর্ক ততটা গভীর ছিলোনা। তুষার সোহানাকে অনেক ভালোবাসত। সোহানা যা বলত সে তাইকরত। একদিন
তুষারের একটা ভুলের জন্য সোহানা অনপক রেগে যায়। তুষার ক্ষমা চেয়েও সোহানার রাগ ভঙ্গাতে পারেনি। শেষে সোহানা বলেছিল কানে ধরে
উঠাবসা করতে। তুষারও তাই করল। এমনি ছিলো তাদের ভালোবাসা। এদিকে হঠাৎ সোহানার বাবা ওর জন্য পাত্র খুজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কারণ
তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন।সোহানা তুষারকে বিষয়টি জানালে তুষার সোহানার বাবার সাথে দেখা করতে যায়।
তুষার: আসসালামু আলাইকুম আংকেল।
সোহানার বাবা: ওয়ালাইকুম সালাম। তুমি কে বাবা। তোমাকে তো চিনলাম না।
তুষার: আজ্ঞে আমি তুষার।
সোহানার বাবা: তো কি চায়???
তুষার: আজ্ঞে আসলে আমি———
( ভয়ে ভয়ে)
সোহানার বাবা: কি হল বল??
তুষার: আমি আসলে সোহানাকে ভালোবাসি। ওকে আমি বিয়ে করতে চাই।
সোহানার বাবা: কী????? কি কর তুমি?? আজ্ঞে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ি।
সোহানার বাবা: তোমার বাবা কি করেন??
তুষার: আজ্ঞে সামান্য চাকরী করে। তেমন একটা বেতন পান না!!
সোহানার বাবা: ফকিরের বাচ্চা আমার মেয়েকে বিয়ে করার চিন্তা মাথায় আসল কিভাবে???দূর হও এখান থেকে??সোহানা—— সোহানা—–
সোহানা: জ্বি বাবা।
সোহানার বাবা: তুই কি এই ফকিরের পোলাকে ভালোবাসিস????
সোহানা: না তো বাবা।
সোহানার বাবা:হুম সুন্দর করে তৈরী হয়ে নেয়। তোকে দেখার জন্য আসিফ আসবে। ও কাল আমেরিকা থেকে আসছে।আমি তোর
সাথে ওর বিয়ে ঠিক করেছি।
সোহানা: বাবা আমার কোনো আপত্তি নেই তোমার পছন্দই আমার পছন্দ। তুষার অশ্রুসজল নয়নে সোহানার দিকে তাকিয়ে
আছে একটা অজানা ভারাক্রান্ত মন নিয়ে। রাতে তুষার সোহানাকে কল দিল।
তুষার: কালকে একটু দেখা করতে পারবা??
সোহানা: সরি!!! আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। এখন আপনার সাথে দেখা করলে লোকে নানান কথা বলবে।
তুষার: প্লিজ একটিবার দেখা করব, শেষবারের মত।
সোহানা: টিক আছে আসব। দেখা কোথায় করবেন??
তুষার: নন্দকাননে। বিকেল ৫ টায়। পরেরদিন বিকেলে সোহানা নীল শাড়ি পড়ে পার্কে বসে আছে।নীল শাড়িতে ওকে অপূর্ব দেখাচ্ছে।
তুষার: কেমন আছো??
সোহানা: ভালো??কেন ডেকেছেন একটু বলুন???
তুষার: এভাবে কেন আমার জীবনটা নিয়ে খেললে??
সোহানা: আমি আগেও বলেছি আমি আমার ফ্যামিলির কথার অবাধ্য হতে পারবনা।
তুষার: টিক আছে। বাট আজ আমি একটা জিনিস চাইব দিবা তো আমায়??
সোহানা: কি বলুন???
তুষার: তোমার কোলে যদি একটা ফুটফুটে বাচ্চা আসে তাহলে সেটা আমাকে ভিক্ষে দিতে পারবা?? তুমি কিন্তু আমায় কথা দিয়েছিলে???
সোহানা: টিক আছে বাট আপনি এখানে থাকতে পারবেননা?? কথা দিন এখান থেকে অনেক দূরে চলে যাবেন???তুষার: টিক আছে কথা দিলাম।
এদিকে সোহানারও বিয়ে হয়ে গেল । একবছর পর ওর কোলে সুন্দর ফুটফুটে মেয়ে আসে। সে তার বাচ্চাটিকে স্বামীকে না জানিয়ে তুষারকে
দিয়ে দেয়।আর নার্সকে বলে অন্য একটি ছেলে এনে দে। এদিকে তুষার বাচ্চাটিকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসে।সে একটি ব্যাচেলর বাসায়
বন্ধুদের সাথে থাকে। তুষারের কোলে বাচ্চাটি দেখে তারা অবাক হল। তুষার তার বন্ধুদের সব খুলে বলল। তুষারের কথা শুনে তার বন্ধুদের চোখে
পানি চলে আসল।তারা আজো বিশ্বাস করতে পারছেনা ভালোবাসার পরিণতি এতটা করদণ হবে। তুষার বাচ্চাটির নাম দিল স্নেহা। স্নেহা দেখতে
খুব সুন্দর ছিল। আর বয়স বাড়ার সাথে সাথে ওর চেহারাটা সোহানার মত ধারণ করল। স্নেহাকে দেখলে তুষারের মনের দুঃখটা কমে যেত।স্নেহা
তুষারকে আব্বু বলে ডাকত আর তার বন্ধুদের আংকেল বলে ডাকত।স্নেহার আদরের শেষ নেই। বরং ওকে কোলে নেওয়ার জন্য তুষারের বন্ধুদের
মধ্যে ঝগড়া লেগে যেত।আস্তে আস্তে তুষার পড়ালেখা শেষ করে একটা ভালো কোম্পানিতে চাকরি নেয়। সোহানাকে হারানোর পর তুষারের
মুখে গেল হাসিটুকু গেল তা আর ফিরে আসে নি। স্নেহা তার বাবাকে কোনোদিন হাসতে দেখেনি। স্নেহা লক্ষ করেছিল প্রতিবছর ১৯ শে ফেব্রুয়ারিতে
তুষার বাড়িতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।রাস্তার পথশিশুদের ডেকে আনে। তাদেরকে পেট ভরে খাওয়ায়।তাদের নতুন জামাকাপড় কিনে দিত।
স্নেহা আজো সেই প্রশ্নের জবাব পাইনি। সোহানাকে হারানোর পর তুষার প্রতিরাতে সিগারেট টানত।
প্রতি রাতে যে কতটা সিগারেটের ধোয়া নিঃশেষ করে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা। তুষারের বন্ধুরা তুষারকে বলে—-
অভিজিত: কিরে তুই এভাবে জীবনটাকে শেষ করে দিবি???যাকে ভালোবাসতি সে আজসুেখ সংসার করছে। তোকে বলছি বারবার ভালো
একটা মেয়ে দেখে বিয়ে করতে
তুষার: আমি এতটা প্রতারক না যো আমি আমার কথা পাল্টাব। যাকে ভালোবেসেছিলাম তার স্মৃতি নিয়ে বাকি জীবন কাটাব। প্লিজ একা
থাকতে দেয়।
রাফসান: আচ্ছা দোস্ত বলততুই প্রতিবছর ১৯ শে ফেব্রুয়ারী পালন করিস কেন???
তুষার: ১৯ শে ফেব্রুয়ারি সোহানার জন্মদিন তাই। সেসময় স্নেহা আসল।আব্বু —আব্বু —
স্নেহা: জানো আব্বু আজ মাদার ডে। স্কুলে সবার আম্মু আসছিল। আব্বু আমার আম্মু কই?? আমি আম্মুর কাছে যাব।
তুষার: তোর মা মারা গেছে।( এই বলে রুমে চলে আসল তুষার)। কি উত্তর দিবে ভেবে পাই না। নিরবে কাঁদতে থাকে তুষার। এদিকে স্নেহাও এইচ.এস.সি দিল।
তারপর সে মেডিকেলে এডমিশন নিল।তুষারও আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে পড়ল।তার গলায় এখন কাশি লেগে থাকে,গলায় রক্ত আসে। ডাক্তারের কাছে
জানতে পারে তার ব্লাড ক্যান্সার। তুষার ভাবল সে আর বেশিদিন বাচবেনা স্নেহাকে কারো হাতে তুলে দিতে হবে। এই ব্যাপারে সে স্নহা থেকে মতামত নিল।
তুষার: মামুনি তোর কি কোনো ছেলে পছন্দ আছে??
স্নেহা: ভয় পেয়ে আমতা আমতা করে বলল, হ্যা বাবা।
তুষার: ছেলে কি করে?? কোথায় থাকে?? স্নেহা বলল, ফেসবুকে নেওয়াজ নামের ছেলের সাথে স্নেহার রিলেশন গড়ে উঠে। সে স্নেহার সাথে মেডিকেলে পড়ে। চট্টগ্রামে
থাকে।এদিকে তুষার নেওয়াজের বাবার সাথে ফোনে কথা বলে সবকিছু ফাইনাল করে। অবশেষে বিয়ের দিন আসল। তুষার অতিথিদের সাথে কৌশল
বিনিময় করছিল।হঠাৎ থমকে দাড়ায় তুষার। সোহানাকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। তারপর সেখান থেকে চলে আসে।
সোহানা: এক্সকিউজ মি, আপনাকে বলেছিলাম না আমার সামনে আসবেননা??আপনি এখানে কেন আসলেন??
তুষার: যার সাথে আপনার ছেলের বিয়ে হতে যাচ্ছে উনি আপনার মেয়ে। মনে আছে ২০ বছর আগের কথা??? এই বলে হঠাৎ বুকে ব্যাথা অনুভব করে
তুষার। কাশির সাথে বেরিয়ে আসে অজস্র রক্ত।তারপর হঠাৎ চোখ দুটো একদৃষ্টিতে সোহানার দিকে তাকিয়ে, সেই সাথে প্রাণটাও বেড়িয়ে গেল
এদিকে তুষারের বন্ধুরা জানতে পেরে গেছিল তুষারের ব্লাড ক্যান্সার। তারাও দৌড়ে আসল। তারপর অনেক ডাকাডাকি করল কিন্তু তুষার উঠে না।
একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সোহানার দিকে। এভাবে নিঃস্তব্ধ স্তুুপের মত পড়ে রইল তুষারের লাশ।
– ( কিছু কিছু হাসির পেছনে লুকিয়ে থাকে কারো গভীর কষ্ট, কিংবা কারো ক্যান্সার। শত অভিমানে হয়ত দূরত্ব বাড়লেও ভালোবাসা কমেনা।
ভালোবাসা বেচে থাকে মনের গল্পের মাধ্যমে। আমার কথায় কেউ কষ্ট পেলে ক্ষমা করবেন।)