“আরে থামলেন কেন? ভালই তো লাগছিল। দেখি আবার শুরু করেন। এখন অনেক রাত ১.৪০ এ এম। অবশ্য এটাকে গভীর রাত বলা যেতে পারে। যেই রাতে একজন শিশু তার মায়ের আচল পেচিয়ে জড়িয়ে শুয়ে থাকে। দিনের আলোর শেষে যখন রাতের আধার নেমে আসে তখন নিজের মধ্যে কেমন যেন একটা অনুভূতি তৈরি হয়। মনে হয় সব ছেড়ে একা নির্জনে কোথাও গিয়ে পড়ে থাকি। কিন্তু নিজের মা, ভাই, বোনের কথা যখন মনে পড়ে যায় তখন আর নিরুদ্দেশ হতে পারি না। তবে হ্যাঁ যখন রাত নেমে আসে তখন নিজেকে নিরুদ্দেশ মনে হয়।
বাসার সবার চোখে যখন ঘুম রাজ্যের ছায়ারা এসে তাদের চোখে ঘুম দিয়ে যায় তখন আমি বাহিরে বের হয়ে যাই। রাস্তার হলদে দ্বীপ দ্বীপ জ্বলে থাকা ল্যাম্প পোষ্টের বাতির নিচে হাটতে থাকি। কখনো গিটার নিয়ে বের হয়ে নিশ্চুপ রাতের আধার আর চাঁদের আলোয় এই দুটির সংমিশ্রনে একা একা গুন গুন করতে থাকি। আজ আমি খালি হাতে আসি নি। আমার একাকীত্বের সঙীকে নিয়ে বের হয়েছি এই রাতের বুকে। হ্যাঁ আমার গিটারই আমার একাকীত্বের সঙী। অনেকক্ষন হাটাহাটি করে একটা চায়ের টঙে এক কাপ চা খেয়ে একটা সিগারেট টানতে টানতে আবার হাটতে লাগলাম। রাতের বেলা সাধারণত এই রকম চায়ের টঙ গুলো অনেক রাত পর্যন্ত খোলা থাকে। আমি সিগারেট টেনে ধোয়া গুলা উপরের দিকে ঐ রাতের আধারের সাথে মিশিয়ে দিতে লাগলাম।
একটা পর্যায়ে হাটতে হাটতে একটা গাছের বড় টুকরোতে বসলাম। জায়গাটা অনেকটা নিরব। হালকা ঠান্ডাও পড়ছে। আমি আস্তে আস্তে গিটার বাজাতে বাজাতে গাইছিলাম আর অর্ধেক যখন গেয়ে একটু থামলাম তখন একটা মেয়ের কন্ঠের মত আমায় বলল.. আমি থামলাম কেন? আবার যেন গাওয়া শুরু করি। আমি একটু চমকিয়ে উঠি এত রাতে মেয়ের কন্ঠ আমার শ্রবনে স্পর্শ করেছে, আমি ভুল শুনলাম নাতো। খানিকটা এদিক ওদিক দেখে কাউকে দেখতে পেলাম না। হয়ত মনের ভুল। এত রাতে এখানে মেয়ে আসবে কোথা থেকে। আমি যখন একটু নিশ্চুপ কালো রাতের মত একটু নিশ্চুপ হয়ে রইলাম। তখন আবার ঐ কণ্ঠটা শব্দ শুনতে পেলাম “কি হলো গাইছেন না যে?
কণ্ঠটা মনে হয় আমার পিছন থেকে এসেছে। আমি ঘাঢ় ফিরে তাকিয়ে দেখলাম একটা মেয়ে আমার সাত কি আট হাত দুরে দাড়িয়ে আছে। গায়ে সেলোয়ার কামিজের উপরে একটা চাদর পড়া অবস্হায় দাড়িয়ে আছে। আমি একটু আশ্চর্য হলাম এই রাতে মেয়েটা এখানে কি করে? “এই ভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? নিশ্চয় ঘাবরিয়ে গিয়েছেন, এত রাতে একটা মেয়ে বাহিরে কি করে তাই না? আমি কিছু না বলে এবারো একটু চুপ করে রইলাম। কি বলবো বুঝতে পারছি না। এক পা দু পা এগিয়ে মেয়েটি আমার সামনে এগিয়ে এসে গাছের বড় টুকরোর অপর প্রান্তে বসতে বসতে বলল…
“ভয় পাচ্ছেন? ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি মানুষ ,পেত্নী না। পেত্নী হলে পিছন থেকে এসে নিরবে আপনার ঘাড় মটকে দিতাম। হি হি হি। আমি মেয়েটির কথা শুনে আকাশের দিকে তাকালাম। আজকের আকাশটা অনেক উজ্জল। তারাও আছে। এই রকম কত রাত আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে তারা গুনার চেষ্টা করেছি কিন্তু গুনতে পারি নি। আমি আবার মেয়েটির দিকে একনজর তাকালাম। আচ্ছা মেয়েটাকে কি এখন আমার জিজ্ঞাস করা উচিত যে, এত রাতে এখানে কি করে বা এত রাতে বাহিরে বের হয়েছে কেন এই টাইপের কিছু। আমি কিছু বলতে যাব মেয়েটি আমার দিকে না তাকিয়েই আবার বলল…
“তারা গুনা শেষ? কয়টা গুনেছেন? তারা গুনতে পারেন নাকি?
“না একটাও গুনি নাই।
“আমায় জিজ্ঞেস করবেন না, আমি কে?
“ও হ্যাঁ তাই তো আপনি কে? এত রাতে বাহিরে কি করছেন?
“আমি হুম আমি একটা সাতচুন্নি। সাতচুন্নিরা কিন্তু রাতের বেলাই ঘোরাঘুরি করে।
আমি আর কিছু বললাম না। মেয়েটা মনে হয় আমার সাথে ফান করছে। আমি গিটারের তারে টুং করে একটু বাজিয়ে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলাম আপনার নাম কি? মেয়েটি আমার দিকে একটু তাকিয়ে থেকে বলল “নাইমা। আপনি সাজু তাই না?
আমি নাইমা নামের মেয়েটির দিকে অবাক দৃষ্টি তাকালাম। এই মেয়ে আমার নাম জানে কিভাবে? এরপর মেয়েটা যা বলল সেটার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না “আপনার নাম আমি কি করে বললাম এটা শুনে নিশ্চয় অবাক হয়েছেন। আসলে আমি আপনাকে মাঝে মাঝে রাতে পায়চারি করতে দেখি। আবার কখনো একা একা গাইতে দেখি। আমার মনে কৌতহল জাগল যে আপনার সাথে একদিন গল্প করব। আর দেখুন আজ চলে এসেছি। ভাল হয়েছে তাই না? “আমার সাথে গল্প করবেন?
“কেন গল্প করা যাবে না? কোন সমস্যা? আপনার সমস্যা থাকুক বা না থাকুক এতে কিছু আসে যায় না। আমি কিন্তু গল্প করব। আজ কিন্তু মনকে স্হির করে প্রিপারেশন নিয়ে এসেছি। আপনার সাথে গল্প করবো করবোই হু। আপনাকে আজ আমি ছাড়ছি না। নাইমার কথা গুলো শুনে মীমের কথা মনে পড়ে গেল। মীম ও এই রকম আমার সাথে একরোখা টাইপের আচরণ করত। যেটা বলত সেটাই করত। যে কাজটার বাহানা করবে সেই কাজটা করবেই করবে। কেমন একটা অদ্ভুত মেয়ে ছিল। মাঝে মাঝে ও আমায় রাতে ফোন করে বলত…
“সাজু তুমি এখন কি করো আর না করো সেটার কৈফিয়ত তুমি আমায় একদম দেখাবা না। এখন জলদি আমার ভার্সিটির হলের সামনে চলে এসো। যা বলছি তাই করো। আসলে এই মেয়েটা একটা অদ্ভুত মেয়ে। ও আমার সাথে ফোনে কথা বললে হ্যালো টাইপের কিছুই বলবে না। সাধারণত ফোনে কথা বলার সময় কেমন আছো কি করো, সবাই কেমন আছেন, এই গুলা প্রথমে জিজ্ঞেস করা হয় কিন্তু মীম এইসব কিছুই জিজ্ঞেস করবে না। ও যে কারনে ফোন করবে সেই কথাটা প্রথমে বলবে। তারপর বাকি সব কথা বার্তা বলবে।
“কোন সমস্যা হয়েছে? হঠাত্ তোমার হলের সামনে আসতে বলছো। “দেখো বেশি কথা বলবা না। যা করতে বলেছি সেটা করো। “মাথা খারাপ তোমার? এত রাতে হলের সামনে যাব এটা তুমি ভেবে দেখছো কেউ যদি দেখে একবার কি হবে। তোমাদের হলটাতে শুধু মেয়েরা থাকে। আর এই হলের সামনে আমি যাই আর হলের দাড়োয়ানরা আমায় দেখে প্যাদানি দেখ এটা তোমার ভাল লাগবে তাই না? “প্লিজ সাজু আসো না প্লিজ? তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। তুমি আসো কিছুই হবে না।
কথাটা খুব করুনার কন্ঠে বলল মীম। মাঝে মাঝে মনে হয় মেয়েটা এমন কেন? এই রকম পাগলামী না করলে হয় না। আমি ওর করুনার সুরটা শুনে আর নিষেধ করতে পারলাম না। ওর হলের সামনে গেলাম। আমি যখন ওর হলের সামনে গেলাম দেখলাম মীম গেটের এক পাশেই দাড়িয়ে আছে। আমাকে দেখেই একটু তাড়াতাড়ি হেটে আমার সামনে এসে মীম একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। আমার দিকে তাকিয়ে থেকে আমার হাতটা ধরে টেনে নিয়ে হলের একটু পাশেই একটা নিরব জায়গায় নিয়ে আসে। আর আমায় জড়িয়ে ধরে বলে “তুমি আমায় ছেড়ে কখনো কোত্থাও যাবে না বলো।
ও কি বলছে আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। হঠাত্ এই কথা বলছে কেন? আমি ওর মাথার চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বললাম…
“কি হয়েছে একটু বলবা?
“না আগে বলো তুমি আমায় ছেড়ে কোথাও যাবে না?
“আমি তো সব সময় তোমার পাশে আছি তাই না? খারাপ স্বপ্ন দেখেছো তাই না? ও আমার বুক থেকে মাথাটা তুলে হ্যাঁ সূচক ইশারা দিল আর বলল…
“আমি স্বপ্নে দেখেছি বাবা তোমায় বন্ধুক দিয়ে…..
মীম পুরো কথাটা শেষ করলো না। কিন্তু যা বুঝার আমি বুঝে গেছি। মীম ওর বাবাকে ভীষন ভয় পায়। ওর বাবা খুব জেদ্দি একটা লোক। ওর বাবাকে ওদের এলাকার সবাই সম্মান করে। কোথাও কোন বিচার হলে ওর বাবাকে ডাক দেয়। এক কথায় এলাকার শালিশি বলা যেতে পারে। “আরে বোকা মেয়ে আমার কিছুই হবে না। তুমি আমার পাশে আছো না? তুমি থাকতে আমার কিছু হতে দিবা? “না কিছুই হতে দিব না, একদম না, তবে আমার ভীষন ভয় হয় সাজু। দাড়োয়ানকে কোন মতে মানিয়ে ১৫ মিনিটের সময় নিয়ে গেটের বাহিরে দেখা করতে এসেছি…..
“কি হলো চুপ করে আছেন কেন? কিছু বলছেন না কেন? আপনি কি কম কথা বলেন? নাকি লজ্জা পাচ্ছেন একটা মেয়ের সাথে কথা বলতে? নাইমার ডাকে বাস্তবে ফিরলাম। মীমের কথা মনে পড়ে শরীলে এক ধরনের শিহরন জাগল। চোখের কোনে পানি জমতে শুরু করলো। একটু স্বাভাবিক হয়ে বললাম….
“না কোন সমস্যা নেই। হ্যাঁ গল্প করা যেতে পারে।
“দ্যাটস গুড। আপনার শীত লাগছে না?
“হ্যাঁ একটু একটু তো লাগছেই।
“আমার কিন্তু অনেক ঠান্ডা লাগছে।
এই যে দেখলেন না, চাদর গায়ে দিয়ে বেরিয়েছি। ঠান্ডাকে তোয়াক্কা করে পিছনে ফেলে আপনার সাথে গল্প করব বলে ছুটে আসা। এইখানে কিন্তু আমি একটা ধন্যবাদ পাওয়ার কাম্য হু। আমি নাইমার কথা শুনে একটু হাসলাম। একটু বেশি ঘন কথা বলে। মীমও আমার সাথে এই রকম ভাবে ঘন ঘন কথা বলতো।
“ধন্যবাদ দিব কেন? আমার সাথে গল্প করতে এসেছেন তার জন্য?
“অবশ্যই। বুঝছি আপনি ধন্যবাদ দিবেন না। কারন আপনি একজন কিপ্টুস। আমি একটু চুপ করে থেকে বললাম…
“ধন্যবাদ আপনাকে।
“মোস্ট ওয়েলকাম। আচ্ছা চা খাবেন? চা খেতে খেতে আপনার সাথে কথা বলব আর গান শুনব। মন্দ হবে না কি বলুন?
“আমি চা খেয়ে এসেছি কিছুকক্ষন আগে। আর তাছাড়া আপনি চা পাবেন কোথায় এখন?
“এই যে চা। কি খাবেন না?
আমি আসলেই অবাক হয়েছি। নাইমা একটা ছোট প্লাসে চা সাথে করে নিয়ে এসেছে। ওর চাদরের কারনে আমি সেটা দেখতে পাইনি। আসলে মেয়েটা প্রিপারেশন নিয়ে এসেছে আমার সাথে গল্প করব বলে। আমার চোখে আবার পানি জমতে শুরু করেছে। এই মেয়েটার আচরণ গুলার সাথে মীমের আচরণ গুলো অনেকটা মিলে যাচ্ছে। এরপর নাইমা আমার দিকে প্লাসের মুখের ঢাকনাটায় কিছু চা ঢেলে যে গাছের টুকরোটাতে বসে আছি তার উপর রেখে চা টা খেতে বলল। আমি চায়ের দিকে তাকিয়ে চা টা পরিত্যাক্ত অবস্হায় রেখে আমার গিটারের তারে টুং টাং করে সুর তুললাম…..
শুনতে কি পাও কথা গুলো তুমি ঠোটের কোনে তুমি কি সাড়া দিবে? এই ভাবে আমার বাড়ছে জীবনটা মাসের শেষে ছোট খাটো কান্না কি আর হবে এই ভাবে বেঁচে থেকে কি আর হবে কালো ঠোটে চায়ের কাপে আমি পাশ থেকে প্লাসের ঢাকনাটা নিয়ে একটা ওটাতে একটা চুমুক দিয়ে বললাম….
“চা টা কি আপনি বানিয়েছেন?
“কেন ভাল হয় নি চা?
“না তা না। আপনি অনেকে ভাল চা তৈরি করতে পারেন। চমত্কার একটা চা হয়েছে।
“পাম দিচ্ছেন আমায় তাই না?
“মেয়েদের একটা অভ্যাস কি জানেন? ওদের নিন্দা করলে যেমন সাপের মত ফুস করে উঠে। তেমনি একটু ভাল বা প্রশংসা করলে কথাটা উড়িয়ে দিয়ে বলে পাম দিচ্ছি বা মিথ্যে বলেছি। আচ্ছা ভালকে তো ভাল বলতে হবে তাই না?
“আপনি এত কিছু বুঝেন কিভাবে হুহ? মেয়েদের নিয়ে গবেষনা করেন নাকি?
“মেয়েদের আরেকটা অভ্যাস কি জানেন? মেয়েরা একটু বেশি বুঝে।
“হি হি হি। আমার কথা গুলো শুনে নাইমা একটু হাসল। আমি আবার চায়েতে চুমুক দিলাম। খানিকক্ষন পর নাইমা বলল…
“আচ্ছা আপনি কি করেন?
কথাটা শুনেই আমি চুপ হয়ে গেলাম। আরেকটু চুপ করে থাকার পর চা টুকু সম্পূর্ণ না খেয়ে ছুড়ে ফেলে দিয়ে প্লাসের ঢাকনাটা আমার পাশে রেখে দিলাম। আমার এই রকম আচরণে নাইমা হয়ত অবাক হয়েছে। সত্য কথা বলতে কি, আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে আপনি কি করেন? তখন আমি চুপ করে বসে থাকি, না হয় কথা পাশ কেটে অন্য কথায় চলে যাই। আপনি কি করেন? এই বাক্যটার প্রতি আমার এলার্জি আছে। মীমের সাথে আমার সম্পর্ক সেই কলেজ লাইফ থেকে। কলেজ যখন পাশ করলাম ও ভার্সিটিতে ভর্তি হলো আর আমি ন্যাশেনাল থেকে পড়তে থাকলাম। তবে আমাদের রিলেশনে কোন ব্যাঘাত ঘটে নি। আমি তখন অনার্সের শেষ বর্ষের ফাইনাল দিয়েছি মাত্র। আর ঐ সময়েই আমাদের রিলেশনার কথা মীমের বাবা জেনে যায়। সম্ভাবত হ্যাঁ মীম তখন বাসায় ছিল রাতে যখন ওর সাথে কথা বলছিলাম তখন ওর বাবা সব শুনতে পাও। এরপর দিন সকালে মীম আমার সাথে দেখা করে বলে…
“সাজু একটা কথা বলব?
“হুম বলো।
“না মানে মীম সব সময় যা বলবে তা আগেই বলে ফেলবে। কিন্তু ওর কথার মাঝে যখন অস্হিরতার গন্ধ শুনলাম তখনি বুঝলাম কিছু একটা হয়েছে।
“এত নার্ভাসের কি আছে? তুমি রিলেক্সে বলো।
“বাবা তোমাকে যেতে বলেছে। বাবা তোমার আর আমার বিষয়টা জেনে গেছে।
“ভালই তো হয়েছে। এখন কাজী ডেকে বিয়ে করিয়ে দিলেই তো হয়। হা হা হা।
“তুমি হাসছো? একটু সিরিয়াসলি হও সাজু। তুমি আমার বাবাকে ভাল করে চিনো না। বাবার সাথে তোমাকে দেখা করতে বলেছে। কি করবে না করবে আমি কিছুই জানি না।
কথাটা বলেই মীম কাঁদতে থাকলো। ওর কান্না দেখে আমিও একটু হতাশ হলাম। নিজের মনের ভিতরেও একটু ভয় ঢুকে গেল। কি বলব বুঝতেছি না। মনের ভিতর ভয় থাকা সত্বে ও ওকে বললাম ধুর পাগলি কিছুই হবে না আমার। এত টেনশন করার কি আছে? আমি নার্ভাস হয়ে সন্ধ্যার নাগাত মীমদের বাসায় গেলাম। সৌফায় বসে আছি। আর মনে মনে আল্লাহকে স্মরন করতে লাগলাম। একটা বারো মীমকে দেখতে পেলাম না। কিছুকক্ষন পর মীমের বাবা আমার সামনে আসলে আমি দাড়িয়ে সালাম দিলাম। তারপর মীমের বাবা বসতে বসতে আমায় বলল…
“কি নাম তোমার?
“জ্বি সাজু।
“এটা আবার কেমন নাম? নামের আগে পিছনে কিছু নেই।
“ইয়ে মানে আছে।
“তো পুরো নাম বলো।
“মোঃ জাহিদুল হক সাজু।
সত্য কথা বলতে কি আমি কি বলব, না বলব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। মুখ দিয়ে কথাই বের হচ্ছিল না। এর পর মীম ওর বাবার পিছনে এসে দাড়াল। মনে একটু সাহস পেলাম। মীম আমায় বলল…
“দাড়িয়ে আছো কেন বসো? আমি কিছু না ভেবে সোফার টুপ করে বসে পরলাম। এরপর মীমের বাবা আবার জিজ্ঞেসা করলো।
“বাবা কি করে?
“জ্বি বাবা নেই। তারপর খানিকক্ষন পর আবার বললো…
“তা তুমি কি করো?
“জ্বি সবে মাত্র অনার্স ফাইনাল দিয়েছি।
“ও আচ্ছা তাহলে এখন কিছুই করো না। তার মানে একজন বেকার। তুমি এখন আসতে পারো।
কথাটা শুনেই চুপ হয়ে মীমের দিকে তাকালাম। মনের ভিতর কেমন যেন একটা অনুভূতি জাগতে লাগল। একবার ভাবলাম বলি আংকেল এখন না হয় কিছু করি না, কিন্তু একটা সময় তো আর বেকার হয়ে গায়ে সার্টিফিকেট লাগিয়ে ঘুরবো না যে , আমি বেকার। কথাটা বলি নি আমি। মীমের বাবা আবার বললো “আমি কি বলিছি তুমি শুনতে পাওনি? আমি তারপরও চুপ করে রইলাম। মীমের বাবার এই রকম কথা শুনে মীম বলল “বাবা তুমি এই রকম করছো কেন ওর সাথে?
“তুই চুপ থাক। আমি কি করবো আর কি করবো না, আমাকে শিখাতে আসবি না। এই ছেলে দেখছো তুমি? যে মেয়ে তার বাবার দিকে চোখ তুলে তাকাতে ভয় পায় সেই মেয়ে আজ আমার চোখের দিকে তাকিয়ে মুখের উপর কথা বলে। কেন জানো? তোমার কারনে। আর তুমি এখনো তামাশা দেখছো?
আমি আর এক মুহুর্ত দেরি করলাম না। যখন ওদের বাসা থেকে বের হচ্ছিলাম তখন দেখলাম মীম কান্নার গোংরানী দিয়ে ওর রুমে চলে যায়। দুনিয়া বড় অদ্ভুত। মানুষ যখন মরে যায় তখন তার নাম হয়ে যায় লাশ। কিন্তু আমি উপলব্দি করলাম একটা ছেলে যদি অনার্স/ মাষ্টার্স পাশ করে এক সেকেন্ড অতিক্রম পার করে ফেলে তখন তাকে বেকার বলা হয়। কেউ যদি ঐ ছেলেটাকে ততক্ষনাত্ জিজ্ঞেস করে কি করো তুমি? নিশ্চয় ছেলেটা উওর দিবে সবে মাত্র পাশ করেছি। তার মানে দাড়ায় ছেলেটা এখন কিছু করে না। ছেলেটা এখন একজন বেকার। কিন্তু ছেলেটা কি আজীবন বেকার হয়ে থাকবে? বেকার শব্দটা শুধু মাত্র ছেলেদের জন্যই প্রযোজ্য “কি আশ্চর্য চা ফেলে দিলেন কেন? চমত্কার হলে কেউ কিছু ফেলে দেয়?
আমি নাইমার কথায় আবার বাস্তবে ফিরলাম। সেদিনের পর থেকে মীমের সাথে বহুবার দেখা করতে চেয়েছি। যোগাযোগ করতে চেয়েছি পারি নি। একবার ভাবলাম পালিয়ে দুজন কোথাও চলে যাব। পরে আবার ভাবলাম আমার কারনে কেন মীম ওর মা বাবার কাছ থেকে আলাদা হবে। আরো চিন্তা আসতে লাগলো… ওর বাবা যদি আমাদের বাসায় চাপ সৃষ্টি করে তাহলে কি হবে একবার তা বুঝতে পারলাম। তারউপর আমি বাসার ছোট ছেলে। মনে হতে লাগল একটা বড় পাথর বুকে চাপা পড়েছে। এর দু তিন মাস পরেই মীমের বিয়ে হয়ে যায়। মূলত আমার উপর জিদ করেই ওর বাবা এই কাজটা করে। আমি কিছুই করতে পারি নি। কি বা করার ছিল আমার। আমার চুপ থাকা দেখে নাইমা আবার বলল “এই রকম কেন করলেন? আমি গিটারের তারে টুং করে একটু বাজিয়ে বললাম…
“কিছু মনে করবেন না। আপনার চা কিন্তু চমত্কার হয়েছে কিন্তু একটা উড়ন্ত ছোট গুড়ি গুড়ি পোক আছে না ওটা চায়ে পড়েছে তাই ফেলে দিয়েছি। যদিও আমি কথাটা মিথ্যে বলেছি। নাইমা আমায় আবার জিজ্ঞেস করল…
“কই বললেন নাতো আপনি কি করেন?
“এটা জানা কি এতোই জরুরি? ঘাস চিনেন ঘাস? ঘোড়ার ঘাস কাটি।
“হি হি হি। আপনি তো অনেক ফাযিল। বলেন কি করেন?
“চাকরি করি একটা কোম্পানীতে। আর কিছু জানতে চেয়েন না। অনেক রাত হয়েছে। গল্প করাও হয়েছে বাসায় চলে যান। এত রাতে মেয়েদের বাহিরে থাকা মানায় না।
এইটা বলে আমি উঠে পড়লাম। আর নাইমা এখনো বসে আছে। হ্যাঁ আমি এখন একটা কোম্পনীতে চাকরি করি। আমি বেকার না। সারাদিন অফিসের কাজ নিয়ে ব্যাস্ত থাকি আর রাতে আধারের মাঝে নিজেকে তলিয়ে দেই। আমি হাটতে থাকলাম আর গাইতে থাকলাম….
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা