মায়ের ভালোবাসা

মায়ের ভালোবাসা
__মা রে এই মাসে যে কটা টাকা পাঠিয়েছি তা দিয়েই কষ্ট করে চালিয়ে নিস কেমন?? (অসহায় কণ্ঠে কথা টা বললেন তাফার মা ) ওপাশ থেকে তাফা তার মা কে বললো,
__ মা এই মাসে আর কিছু টাকা লাগবে আমার। কলেজ থেকে সবাই পিকনিকে যাবে। আমি ও যেতে চাই মা।
__ মা এবার না গেলে কি হয় না? আমার হাতটা যে এই মাসে খালি। মাত্র দুশো টাকা আছে। শরীর টা যেন কেমন করে সারাদিন। রাতে মনে হয় জ্বর জ্বর ভাব হয়। ভাবছিলাম জ্বরের জন্য কটা ঔষধ কিনবো!
__ আচ্ছা মা লাগবে না এবার না হয় যাবো না । পরের বার যখন তোমার কাছে টাকা থাকবে তখন যাবো। তুমি বরং
ঔষধ কিনো। আর নিজের খেয়াল রেখো!
এখন তাইলে ফোন রাখি! আল্লাহ হাফেজ। (তাফা ও অসহায়ত্বের একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ফোনটা রাখলো)
তাফার মা ফোনটা রেখে অঝোরে চোখের জল ফেলতে লাগলেন,আজ টাকার অভাবে মেয়ের বাড়তি কোনো ইচ্ছে ই পূরন করতে পারেন না। উনি বসে ভাবছেন আমার মেয়ের সামনে যখন ওর সাথী সঙ্গী গুলো পিকনিকে যাবে,তখন আমার মেয়ে হয়তো ওদের দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে থাকবে । হয়তো দোষারোপ করবে তার খারাপ ভাগ্যকে। আমার মেয়ের তো তখন খুব কষ্ট পাবে।। তারপর ভাবলেন কারো থেকে ঋণ করে হলে ও মেয়ের পিকনিকে যাওয়ার টাকা টা দিবেন। কারণ তাফা এতো সহজে ওর মার কাছে কিছু আবদার করে না। আজ করেছে সেটাকে ফিরিয়ে দিয়ে তাফার মা যেন নিজেকে খুব অপরাধী বোধ করছেন!
(তাফার বাবা মারা গেছে সে ছোট বেলায়। প্রায় ৯ বছর হল। অবশ্য ওর বাবার কিছু জমি আছে কিন্তু জমি থেকে তো লাভ পাওয়া যায় না।। খরচ আর ফসল সমান সমান। খাওয়ার পরিমাণ হয় কোনো রকম।  কিন্তু ওর বাবার মার্কেটে নিজের একটা দোকান ছিলো। মারা যাবার পর দোকান টা এখন ভাড়া দেওয়া। যেটার মাসিক ভাড়া ৫ হাজার টাকা। আর এই টাকা দিয়েই ওদের সংসার চলে। তাফাকে একটা ভালো কলেজে পড়াতে কলেজ হোস্টেলে দিয়েছেন। আর তাফা ও পড়ালেখায় মনযোগী।
৫ হাজার টাকা থেকে প্রতি মাসে ৪ হাজার টাকা যে তাফাকেই দিতে হয়। তাফার থাকা খাওয়া আর পড়ালেখার জন্য সবটাই লেগে যায়। সরকারি কলেজ হওয়ায় কোনোরকম হয়ে যায় তার। আর ওর মা ১ হাজার টাকা দিয়ে খুব কষ্টে মাস পার করে। তাফা ও মায়ের কষ্টকে সম্মান করে। কখনো জাকজমক চলাফেরা করে না। কিন্তু আজ তার মায়ের কাছে ভুল করেই একটা আবদার করে ফেলেছে। পরে তাফার ও এর জন্য খুব খারাপ লাগতে লাগলো! সে বুঝতে পারছে তার মার কাছে টাকা চাওয়া ঠিক হয় নি। তাফা মন খারাপ করে শুয়ে পড়লো। ঘুম থেকে উঠে দেখে বিকাল পরে গেছে, সময় দেখতে মোবাইল টা হাতে নিলো,দেখে তার মোবাইলে বিকাশে কে যেন টাকা পাঠিয়েছে। কে পাঠাইছে বুঝতে বাকি রইলো না আর।
ভাবতে লাগলো মা জাতি টা এতো মমতাময়ী কিভাবে হয়? মোবাইলের দিকে তাকিয়ে তাফা চোখের ফেলছে। তার ইচ্ছে করছে মাকে জড়িয়ে ভিষন কান্না করতে। কারণ জানে এই টাকা টা তার মা অনেক কষ্টে পাঠিয়েছে৷
তারাতাড়ি করে সে উঠে বোরকা পরে রওয়ানা দিলো বাড়ির দিকে। সন্ধার দিকে বাড়িতে পৌছালো। গিয়ে দেখে ঘর টা অন্ধকার। দৌড়ে ভেতরে গেলো,দেখে কাঁথা গায়ে দিয়ে তার মা চুপচাপ শুয়ে আছে। পাশে গিয়ে মাথায় হাত রেখে চমকে উঠলো ! গা জ্বরে পুরে যাচ্ছে । কারোর হাতের ছোয়ায় ওর মা তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো। মেয়েকে দেখে যেন বহুদিনের একাকিত্বতার অবসান পেলেন।। তাফা তা মা কে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলো! আর বলতে লাগলো
__ আর কখনো অসুস্থ থাকলে ঔষধ না খেয়ে আমাকে টাকা দিতে যাবে না।। তাইলে আমি আর পড়ালেখা ই করবো না।
__ পাগলি মেয়ে কাঁদিস না। তোর মন খারাপ আর কান্না যে আমার সহ্য হয় না।।
__ তাইলে নিজেকে কষ্ট দিয়ে আমাকে টাকা দিতে গেলে কেন? তোমার কিছু হলে আমার কি হবে বলো তো? তুমি ছাড়া আমার আর কে আছে পৃথিবীতে?
__ আচ্ছা মা! আমি এখন থেকে নিজের খেয়াল রাখবো আর অসুস্থ হলে ঔষধ খাবো! কিন্তু এই তুই অবেলায় যে চলে এলি?কোনো সমস্যা হয় নি তো??
__ না মা,কিছু হয় নি। আর আসবো না তো কি করবো, কতো জ্বর তোমার দেখেছো? আজই ডক্টর দেখাতে হবে।
তাফার মা তখন তার মেয়েকে মেয়ে জড়িয়ে ধরে কাদঁতে লাগলেন! এ যে এক মায়ের কান্না। তার সন্তানের জন্য গভীর ভালোবাসার কান্না। যে ভালোবাসার সীমান্তটা অসীম!
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত