দীর্ঘ দিন হোম কোয়েন্টারে থাকার ফলে বফের সাথে দেখা হয় না। টুকটাক গাড়ি চলায় বফ মাথা খারাপ করে ফেলছে দেখা করার জন্য। আমি কিছুতেই রাজি হচ্ছি না। কিভাবে যাব বলেন, পার্লার যে বন্ধ। কতদিন পার্লারে যাওয়া হয় না। ভ্রুটা বেসাইজ হয়ে আছে। মুখে ব্রন বের হয়েছে। চোখের নিচে কালো দাগ। হেয়ার কার্লারটাও ঠিকমত নেই। এত সমস্যা নিয়ে কখনও দেখা করা যায়। মেহেদি অর্থাৎ আমার বফ কিছুতেই শুনছে না।বাধ্য হয়ে দেখা করতে রাজি হলাম। এদিক থেকে বাসায় কোন মেকাপ ও নেই।সব শেষ। কি যে করি ভেবেই পাচ্ছি না। পরের দিন সকাল সকাল মেহেদির ফোন-
-বেপি তুমি কোথায়?
-ওমা বেইপি তুমি এত দ্রুত চলে আসছো?
-কেন?তুমি এখনো বের হওনি?
-না মানে রেডি হচ্ছিলাম।
-আচ্ছা আমি তোমার বাসার সামনে দাঁড়াই আছি।তুমি চলে আসো।
-ওকে পাঁচ মিনিট। পাঁচ মিনিট পর আমি আবার কল দিলাম মেহেদিকে-
-বেইপি তুমি কোথায়?
-এই তো।বাসার সামনে?
-কোথায় আমি দেখতে পাচ্ছি না তো?
-ওমা তুমি চলে আসছো।
-বললাম তো পাঁচ মিনিট।
-না আসলে পাঁচ মিনিট ও তোমার তিন ঘন্টার সমান।তাই ভাবলাম…তা আজ এত দ্রুত রেডি হয়ে গেলে?
-আমি রেগে গিয়ে বললাম,আমি অপেক্ষা করতেছি তুই পাঁচ মিনিটের মধ্যে না আসলে আমি চলে যাব বলে দিলাম।
-রেগে যাচ্ছো কেন বেপি।আমি তো কত অপেক্ষা করি।আজ না হয় তুমি একটু করো।
-জাস্ট পাঁচ মিনিট।বলেই ফোনটা কেঁটে দিলাম।
তিন মিনিট যেতেই মেহেদি এসে হাজির। আমাকে দেখেও পাশ কাঁটিয়ে চলে গেল। আমি ডাকতে যাব ঠিক তখনি দেখি মেহেদি আমাকে কল দিচ্ছে-
-হ্যালো বেপি তুমি কই?আমি তোমার বাসার নিচে?
-তুমি আমাকে দেখতে পাওনি?
-নাহ তো।কই তুমি?
-হলুদ ড্রেস পড়া একটা মেয়ে…
-হ্যাঁ।মেয়েটাকে তো দেখলাম কিন্তু তুমি কোথায়? আচ্ছা আমাকে বলবে কোন মেয়েটা যে মেয়েটা হলুদ ড্রেস পড়া মুখে ব্রন,কালো করে ওই মেয়েটার পাশে দাঁড়িয়ে আছো।
-হুম।আবেগে কাঁদতে ইচ্ছা করছে।আমার বফ আমাকেই চিনতে পারছে না।সাদিয়া এই ছিল তোর কপালে। মেহেদি আবার বলতে শুরু করলো-
-তা তুমি কোথায়।তাড়াতারি আসো।যাই হোক আসার সময় মুখের ব্রন সারানোর জন্য মেয়েটাকে কিছু টিপস দিয়ে এসো। আমি কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললাম-
-আচ্ছা তুমি আমার সৌন্দর্য দেখে আমাকে ভালোবাসো?
-কি যে বলো।আমি জানিতো বাহ্যিক সৌন্দর্যের মত তোমার মনটাও সুন্দর।
-সত্যি বলছো?
-হ্যা তো।
-বলছিলাম একটু পেছন ঘুরবে আমি তোমার পেছনে।
মেহেদি পেছন ঘুরতেই আমি আমার দাঁতটা বের করে সুন্দর একটা হাসি দিয়েছে। ও আমার দিকে চোখ বড় বড় করে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি লাজুক স্বরে মাথা নিচু করে বললাম- এভাবে কি দেখছো।আসলে ওই মেয়েটা আমি। তুমি আমার সৌন্দর্যকে ভালোবাসোনি।মনটাকে ভালোবাসো।এই জন্যইতো তোমাকে এত ভালোবাসি। বলেই সবে মাথাটা উঁচু করেছি দেখি মেহেদি নিচে পড়ে আছে। মনে হয় জ্ঞান হারিয়েছে। এখন আমার ঠিক কি করা উচিত বুঝতে পারছি না।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা