ভালোবাসি তোমায় বাবা

ভালোবাসি তোমায় বাবা
সেহরী খেয়ে শুইলাম এমন সময় বাড়ি থেকে ফোন, ফোনের ওপাশ থেকে জিন্নাত খুশিতে গদগদ হয়ে বললো, “ভাইয়্যা টিভি দেখেছিস?”
ভাবলাম আমার পছন্দের কোন সেলিব্রিটি না হয় কোন পলিটিশিয়ান মারা-টারা গেছে। কারণ আমার যাদের পছন্দ তাদের জিন্নাতের অপছন্দ তাই হয়তো সে এতো খুশী। জিজ্ঞেস করলাম, “কেনো কি হয়েছে?” জিন্নাত হাসতে হাসতে বললো, “জানিস তো আজ ১০ তারিখ, আজ থেকে সীমিত পরিসরে শপিংমল খুলতেছে!”
যা বুঝার বুঝা হয়ে গেছে তারপরেও বললাম, “তো কি হয়েছে?”
ওপাশ থেকে খুব উদাস কন্ঠে জিন্নাত বললো, “ভাইয়্যা লকডাউনে তুর কি মাথা-টাথা হ্যাং হয়ে গেছে? অন্যান্য বছর ৩ টা ড্রেস কিনি এই বছর সীমিত পরিসরে ২ টা ড্রেস নিয়ে আসিস। আর হ্যাঁ কিনার আগে অবশ্যই হোয়াটসঅ্যাপে ছবি পাঠাবি।” পাগলির সীমিত পরিসরে, সীমিত পরিসরে কথাটা শোনে হেসে হেসে আমিও বললাম, “আচ্ছা সীমিত পরিসরে আমার সালামি টাও রাখিও! মা’কে ফোনটা দে?” বাড়িতে সবার থেকে মায়ের সাথেই কথা বেশী হয়। কেনো জানি তারপরেও মায়ের সাথেই কথা বলতে মন চায়। রাতেও মায়ের সাথে কথা বলেছি। ওপাশ থেকে মা ফোন নিয়ে বললো, “বাবা ভালো আছিস?”
আমি সালাম দিয়ে বললাম, “মা আজ থেকে তো শপিংমল খুলতেছে তোমার জন্য কি নিবো?” আমি জানি মায়ের জন্য কিছু নিতে চাইলে মা সবসময় না নিতে বলে। শুধু একটা কথায় বলবে আমার আছে, এইতো কয়েকদিন আগে নিছি সেগুলো এখনো পুরনো হয়নি, বৌমা আর বাচ্চাদের জন্য নিয়ে আসিস তাহলেই হবে। তারপরেও বরাবরের মত মায়ের আবেগ মাখা ‘আমার লাগবেনা’ কথাটা শোনার জন্যই জিজ্ঞেস করি। মা যখন ওপাশ থেকে কোন উত্তর দিচ্ছেনা তখন আমিই বললাম, “আমি তো জানি তুমি কি বলবে, তোমার লাগবেনা, কয়েকদিন আগে নিছো সেগুলো দিয়ে চলবে এসব বলবে তাইতো?”
— হ্যা এই কথা গুলোই বলবো। আমার জন্য কিছু লাগবেনা, তোর আব্বার জন্য পাঞ্জাবি আর পায়জামা নিস।
আব্বার সাথে অনেক দিন কথা হয়না আজ একটু কথা বলি। মায়ের মুখে আব্বার কথা শোনে মা’কে বললাম আব্বাকে একটু ফোনটা দিতে।
সালাম দিয়ে আব্বাকে বললাম, “আব্বা ভালো আছেন?” আব্বা সালাম নিয়ে কিছুই বলতেছেনা। অনেকক্ষণ আমি এপাশ থেকে আব্বা আব্বা বলে ডাকতেছি কিন্তু ওপাশ থেকে কোন কথায় আসতেছেনা। অনেকক্ষণ চুপ থেকে আব্বা বললো, “আব্বা আছিস? আসলে অনেকদিন হয় তোর কন্ঠ শুনি না তাই তোর মুখে আব্বা আব্বা ডাকটা শুনতেছি। শোনতে ভালো লাগতেছিলো। সেই ছোট বেলায় মন খুলে তুই আমাকে আব্বা আব্বা ডাকতিস এখন তো এত বেশী ডাকিস না তাই সুযোগটা নিলাম আর কি! আমার শপিংয়ের কথা বলবি? বাবা আমার প্রতিদিন শপিং করা লাগবে তুই প্রতিদিন একবার একবার ফোন করে জিজ্ঞেস করবি আমার কি কি লাগবে সেই সুবাদে তোর সাথে কথা বলা হবে তোর মুখে আব্বা ডাকটাও শোনা হবে।
আব্বার কথা শোনে কখন যে আমার চোখের পানি মুখ বেয়ে নিচে এসে পড়লো বুঝতেই পারিনি। আসলে আমি কখনো খেয়ালই করিনি আব্বা আমার উপর এতটা অভিমান করে বসে আছে। আমার মনে ছিলোনা পৃথিবীর বাবাদেরও মন থাকে তাদেরও তাদের সন্তানদের সাথে কথা বলতে মন চায়। এখন বুঝতে পারতেছিনা কিভাবে আব্বাকে সরি বলবো, আমার ভেতরের চাপা কান্নাটা যেনো আটকে রাখতে পারতেছিনা।
বাবা ওপাশ থেকে ফোঁপাতে ফোপাঁতে বললো, ” আমি তো পৃথিবীর সব থেকে স্বার্থপর পিতা যার ছেলে তাঁকে কিছু লাগবে কিনা সেটা জানার জন্য ফোন দেয় নাহলে কোন কথা বলার জন্য সে ফোন দেয়না।” আব্বার কাছ থেকে মা ফোনটা নিয়ে, ‘তোরা বাপ ছেলে কি শুরু করলি’ বলে ফোনটা কেটে দিলো! বাবা তোমাকে ভালোবাসি সেটাও বলা হয়না কোন দিন তোমাকে সরি টাও বলা হয়না কোন দিন। কিন্তু অনেক বেশী ভালোবাসি তোমায়, “বাবা”।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত