বাড়িতে এসে, জিজ্ঞাসা করলো, রান্না করি কিনা।
আমি বললাম, না আমি ভাল রান্না করতে পারি না।
মিম, মাথা নিচু করে বললো যদি আমি রান্না করে দিই খাবেন?
আমি বললাম খাব না কেন???
না মানে, এমনি।
বুঝতে পারলাম, ও হয়তো বলতে চাচ্ছে, ও দেহ বিক্রি করে বলে ওর রান্না খাবো না।
আমি বললাম, ফ্রিজে দেখ কি আছে, পারলে রান্না কর, দুজনেই খায়।
মিমের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
মিম রান্না করে, আমি খায়, এভাবেই চলে গেল কয়েক দিন।
হাসপাতালের বিল দিয়ে দিলাম।
মিম জিজ্ঞেস করলো, আমি এত গুলো টাকা দিলাম, এত কিছু কেন করলেন?
দেখ মিম, আমারতো মা নেই, তোমার মা কি আমার মা হতে পারে না।
মিম আর কোন কথা বলেনি।
এভাবে কেটে যাই কয়েক দিন।
হঠাৎ এক দিন, মিমের মা মারা যান।
মায়ের মৃত্যুর পর মিম যেন কেমন হয়ে গেল।
বুঝতে পারলাম, ও বেচে থাকতে চায় না।
মরে যেতে চাই, যে কারনেই হোক, মিম আজ দেহ ব্যাবসায়ি।
তার স্থান এই সমাজে নেই।
যে সমাজ বিপদের দিনে হাত গুটিয়ে ন্যায়, অথচ, সুযোগ বুজে ধিক্ষার দিতেও দিধাবোধ করে না।
সেই সমাজে মীম বেঁচে থাকতে চাই না।
মিমের কেউ নেই, কার কাছে থাকবে, বাড়ি বলতে ঝুপড়ি।।
এদিকে, দাদা বৌদি চলে আসছে।
আমি বৌদিকে সব বললাম (শুধু মিমের অনৈতিক কাজের কথা বাদে)।
বৌদি বললো মেয়েটিকে নিয়ে আসতে।
আমি মিম কে নিয়ে আসলাম।
বৌদি আমাকে ডেকে বললো, মীম, মেয়েটি অনেক ভাল।
তুমি কি মীমের প্রেমে পড়ে গেছ। বিয়ে করতে চাও?
বৌদির কথায়, আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।
আমি কখনো এভাবে ভাবিনি। বৌদি শুনতে চাইলেন।
আমি কি বলবো, ভেবে না পেয়ে বললাম, ভেবে দেখবো।
রাতে, খবর এল, আমার চাকরি হয়ে গেছে, কিন্ত আমাকে যেতে হবে অনেক দূরে,।
ওখানেই হবে আমার পোস্টিং।
যেতে হবে ৭ দিনের মধ্যে।
রাতে, বাগানের ভেতর বসে ভাবছি, কি করবো, এই অসহায় মেয়েটিকে কি তার ভাগ্যের উপর ছেড়ে
দেবো।
যদি তাই দিই, তাহলে হয়তো ও মরে যাবে, না হয়তো সারা জীবন, নিশিদ্ধ পল্লিতেই কাটাতে হবে।
কি করবো, মাথায় আসছে না।
হঠাৎ লক্ষ করলাম কে যেন, গেটের বাহিরে যাচ্ছে।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ১১.৩৫ , এত রাতে কে, যায়?
পিছু নিলাম, বাহিরে গিয়ে বুঝতে পারলাম, মীম যাচ্ছে।
আম বাগানের ভিতর দিয়ে, আমিও পেছন পেছন যাচ্ছি, মীম কি করতে চাচ্ছে, বুঝতে চেস্টা করছি, দেখলাম জংগলের ভেতর যাচ্ছে, আমি আড়াল থেকে দেখছি।
কিছুক্ষণ পর মিম একটি আম গাছের নিচে আসলো, তার পর গা থেকে কাপড় খুলে দড়ির মত পাক
দিল।
বুজতে পারলাম, মীম মরতে চাচ্ছে।
আমার কেন জানি খুব রাগ হল, গাছের দিকে এগোতে থাকলাম।
যখই গাছে উঠবে, সামনে দাঁড়িয়ে দিলাম এক চড়।
মীম কিছু বলচ্ছে না, কাপড়ের গিট খুলে দিলাম।
এটা কি করতে যাচ্ছিলে?
মরে গেলেই সব কিছু শেষ।
মীম কাঁদছে, কি হল,কাদছেন কেন??
মীম বললো, বৌদির কথা আমি সব শুনেছি।
বুজতে পারলাম কেন মরতে চাচ্ছে।
এই সমাজ, ওর অতিত জানলে মেনে নেবেনা, মেনে নেবেনা কোন পুরুষ।
নির্ভরতার হাত কেউ হয়তো বাড়িয়ে দেবেনা।
কিছু না ভেবেই, মীমের হাত ধরলাম।
বলেই ফেললাম, যাবে আমার সাথে, এখান থেকে বহুদূরে।
আমার সাথে বাকি জীবনটা কাটাবে?
মীম আমার পা জড়িয়ে ধরে,,, এ হয় না, আমি কে কি আপনি ভাল করেই জানেন, আমি অসতি।
আমাকে মাফ করবেন। ছেড়ে দিন ভাগ্যের হাতে।
আমি মীম কে উঠিয়ে, জড়িয়ে ধরে বললাম, আর কোন কথা বলবা না। আমি যা করবো, তুমি শুধু পাশে থেকো, হতে পারো তুমি অন্যের কাছে অসতি, আমার কাছে নয়..।
মীম কে নিয়ে বিয়ে করে গ্রামে আসলাম।
বাড়ি থেকে, আমার সৎ মা আমাদের মেনে নিলেন না।
বাধ্য হয়ে, চলে গেলাম।
গিয়ে,সেই প্রথম রাতে, মিম কে বলেছিলাম,আমি কখনো, কারো কাছে ভালবাসা পায়নি, তুমি শুধু একটু ভালবাসা দিও।
মীম, পা জড়িয়ে ধরে,বলেছিল, আপনার পায়ের নিচে আমাকে একাটু ঠায় দেবেন, আর কিছু চায় না।
আজ ৩ বছর হল,ক্যান্সারে আর্কান্ত হয়ে মীম আমায় ছেড়ে চলে গেছে, না ফেরার দেশে।
রেখে গেছে, ২টি সন্তান।
একজন আমার মা, অন্যজন আমার বাবা।
আমি আজও মীমের কথা, মনে করে, চোখের জলে ভাসি।
কত ভালবাসতো আমায়, কখনো বলে বোঝাতে পারবো না।
আজ সন্তানেরা বড় হয়ে গেছে। আমি ওদের নিয়েই আছি।
আজ মেয়েটার বিয়ে হয়ে, শশুর বাড়ি চলে গেল, মীম আজ তুমি থাকলে আমি আরো অনেক বেশি খুশি হতাম।
এখনো অনেক মিস করি তোমায়…………!
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা