—-চলো না আবার স্বপ্ন দেখি?
—-ইচ্ছা নেই।
—-ইচ্ছাটা করে নেও?
—-ভরসা নেই।
—-শেষবার এর মতো?
—-কেনো জ্বালাচ্ছো?
—-ভালো লাগে যে।
—-আমার ভালো লাগে না।
—-জানি তো।
—-তাহলে কেনো করো?
—-ঐ যে ভালো লাগে জ্বালাতে।
—-কেনো বুঝতে চাও না?
—-বুঝি বলেই তো বলি।
—-কি চাও?
—-তোমাকে।
—-অসম্ভব।
—-সম্ভব করে নেবো.
—-যাও এখান থেকে।
—-যাবো না।
—-আমি যাচ্ছি।
—-একা ফেলে চলে যাচ্ছো?
—-দুজন হয়েছি কখন?
—-হয়ে যাও, হৃদয় শোনো, হৃদয়?
আমি আর এক মূহুর্তের জন্য ওখানে দাঁড়ালাম না। যতোক্ষন থাকবো আজে বাজে কথা বলেই যাবে যা এখন আমার একটু সহ্য হয় না। হৃদয়ের আয়না টা ভেঙে গিয়েছে তাতে কারো মুখ দেখানোর তার জন্য অমঙ্গল হবে। আর তার জন্য মিষ্টিকে বার বার দূরে ঠেলে দেই যাতে ওর জীবনটা সুন্দর হয়ে উঠে। আমি জানি মেয়েটা আমাকে অনেক ভালোবাসে তার জন্য বার বার ফিরে আসে আমাকে আগের মতো সাভাবিক করতে। আমি তো সাভাবিক জীবন যাপন করছিলাম। মাঝ থেকে কেও এসে আমার জীবনটা এলোমেলো করে দিলো আচড়ে পড়া নদীর ঢেও এর মত। বন্ধুদের সাথে হাসি, আড্ডা, দুষ্টামি আর বাবার ব্যবসা দেখা শোনা ছিলো আমার নিত্যদিনের রুটিন।
আর মিষ্টি হচ্ছে আমাদের বাসার নিচতলায় থাকে দীর্ঘদিন ধরে আর আমার বাবার ব্যবসার পার্টনার মিষ্টির বাবা। মিষ্টি এখন অর্নাস ২য় বর্ষে পড়ে। আর মেয়েটা আমাকে ভালোবাসে তা আমিকখনো জানতাম না, মুখ ফুটে একটিবারও বলেনিকোনো দিন। দিন চলতে থাকলো এক বন্ধু রনি সাথে একদিন তার খালার বাসাতে যায় এর আগেও গিয়েছি । তখন শীতকাল চলছিলো ভোরবেলা চারিদিকি কুয়াশায় আচ্ছন্ন। গ্রামের ভিতর বাড়িটা আর আমাদের একটু শহরের মাঝে তাই এমন সময় টা উপভোগ করতে পারি না বলে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সময়টা উপভোগ করি। সেদিন বিকালে আমরা বাড়িতে ফিরলাম। রাতে ঘরে বসে আছি ঠিক এমন সময় একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে।
—-কেমন আছেন?(রিয়া)
—-ভালো আছি। আপনি?(আমি)
—-খুব ভালো আছি।
—-আপনার পরিচয়?
—-একটু পরে নেন।
—-না এখনি নেবো।
—-আমি এখন দেবো না।
—-তাহলে কাটতে বাধ্য হলাম?
—-আবার দেবো।
—-ব্লাক করে দেবো।
—-অন্য নাম্বার দিয়ে দেবো।
—-আজব কে আপনি?
—-আপনাকে আমি ভলোবাসি।
—-কবে থেকে?
—-যে কয়দিন আপনি আমাদের এখানে এসেছেন।
—-কোথায় বলুন তো?
—-তাহলে সব বলি?
—-হুম।
—-আমি রিয়া,রনির খালাতো বোনের চাচাতো বোন, আমি ইন্টার ২ বর্ষে পড়ি আর আপনি পড়া শোনা করেন না, বাবার ব্যবসা দেখা শোনা করেন।
—-এতো কিছু কে বললো রনি?
—-হুমম,
এই ভাবে একটু একটু কথা বলতে থাকলাম। রনির কাছে রিয়ার ছবি দেখলাম দেখে তো প্রায় অবাক সত্যি দেখতে অপরূপ সুন্দর মেয়েটা। তার থেকে বেশী সুন্দর ওর কথা গুলো। এক সময় কথা বলতে বলতে আর ওর ভালোবাসাই আমি জড়িয়ে যায়। একটা সুন্দরি মেয়ের মায়া জড়ানো কথায় ছলে যে কোনো ছেলেকে গলিয়ে দিতে পারে একসময়। মাঝে মাঝে রিয়ার সাথে দেখা করতাম, হাতে হাত রেখে কিছুটা পথ হাটতাম তার নাকি আমার হাতে হাত রেখে চলাতে ভালো লাগে। আমার কাঁধে মাথা রেখে স্বপ্নের রাজ্যতে হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করে।
ওর আবেগ ভরা ইচ্ছার মাঝে আমি আমার জামানো আবেগ গুলো মিশেয়ে দিতাম। আস্তে আস্তে আমি রিয়া কে পাগলের মতো ভালো বেসে ফেললাম এক মূহুর্তের জন্য ওর থেকে থাকা আমার কষ্ট কর হয়ে যাচ্ছিলো। কাজে মন বসে না মনটা পড়ে থাকে তার কাছে। রিয়া আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা। একসময় মা আর বাবাকে সব খুলে বললাম তারা খুসি হয়েছিলো। আবার একটু কেমন বিষন্ন লাগছিলো। কেনো জানতেই বললো, মিষ্টির সাথে আমার বিয়ের কথা বলেছে তারা কিন্তু সেটা বলার আগে আমি তাদের বলে দেই। আমি কখনো ভাবতেও পারিনি মিষ্টির সাথে আমার বিয়ের কথা চলছে তবুও আমি মানা করলাম কারণ মিষ্টির জন্য আমার মানে বন্ধুত্বের জায়গা আছে কিন্তু ভালোবাসা এটা কখনো ভাবিনি।
মিষ্টিও দেখতে অপরুপ সুন্দর আর মায়া ভরা মেয়েটা। আর মিষ্টি সব জানার পরে অনেক কান্নাকাঁটি করে সে আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। মিষ্টিকে বুঝানোর দরকার হয়নি সে নিজ থেকে বুঝে যায়। রিয়ার বাড়িতে আমার পরিবার এর মানুষ বিয়ের প্রস্তব নিয়ে গেলো। রিয়াকে কিছু জানাইনি ওকে সারপ্রাইজ দেবো বলে । তাকে যে খুব ভালোবেসে ফেলেছি। তাকে ছাড়া জীবন আমার থমকে দাড়াবে গো। অধিক আগ্রহ, আর আনন্দিত হয়ে আছি মা বাবার ফিরার জন্য। অবশেষে তারা ফিরলো কিন্তু মুখটা শুকনা লাগছে। যেখানে খুসিতে ভরে থাকার কথা সেখানে এমন টা ভাবিয়ে তুললো। তারপর যা বললো তাতে আমার পায়ের মাটি সরে গেলো।
রিয়ার বিয়ে হয়ে গিয়েছে গতোকাল, ছেলে ঢাকায় একটা গার্মেন্টস এর মালিক। অনেক বড় লোকের ছেলে আর মা বাবার একমাএ ছেলে সে। গতো কাল রাতে কেনো মোবাইল বন্ধ ছিলো বুঝতে পারলাম। রিয়া কোনোদিন বলেনি তার পরিবারের কাছে আমার কথা। অথচ আমাকে সবসময় বলতো তার মা বাবাকে জানিয়েছে আর আমি যেনো আমার পরিবার কে দিয়ে প্রস্তাব নিয়ে যেতে। কিন্তু এটা কি হলো? আমার চারিদিকটা যেনো অন্ধকারে ঢেকে আসছিলো। আমার কথা বালার বাকশক্তি যেনো হারিয়ে ফেলেছিলাম। গলাটা শুকিয়ে কাঁট হয়ে গিয়েছে। পৃথিবীর সমস্থ পানি এনে দিলেও আমার গলার এককোনা ভিজবে না। কেনো করলো সে আজ আমার সাথে? কেনো একটিবার জানালো না সে আমাকে ভালোবাসে না?
কেনো মিথ্যা ভালোবাসাই জড়িয়ে আমার সুন্দর জীবনটা নরকে পরিনত করে দিলো। আমার সাজানো ঘরটা এক নিমেষে ভেঙেদিলো কেনো? কোন অপরাধে এমন করলো? খুব ইচ্ছা করছে প্রশ্নের উওর গুলো তার থেকে পেতে? খুব ইচ্ছা করছে আজ জানতে কোন দোষে এমন করলো? কান্না করেছিলাম ওদিন আমার ঘরে মাঝে চার দেওয়াল এর ভিতর। সত্যি চিৎকার দিয়ে কান্না করেছিলাম, আমার কলিজা ছিড়ে ছাচ্ছিলো যে। বাইরে থেকে মা, বাবা, মিষ্টি দরজা খোলার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলো। সেদিন পর থেকে আমি অন্যরকম হয়ে যায়। কারো সাথে তেমন কথা বলতাম না ভালো করে। সবসময় একা একা থাকতাম। তার ৭দিন পর রিয়ার নাম্বার থেকে কল আসলো।
—-কেমন আছো হৃদয়?(রিয়া)
—-কেনো করলে এমন?(আমি)
—-আমার কথা শুনো?
—-কোনো দোষে এমন শাস্তি দিলে?
—-কোনো দোষ না।
—-তাহলে কেনো আমার জীবন টা নরক বানিয়ে দিলে?
—-আমার কিছু করার ছিলো না।
—-মিথ্যা কেনো বলো?
—-আমি সত্যি বলছি.
—-স্বার্থের লোভে তুমি আমার ভালোবাসা কে ছুড়ে ফেলেদিতে তোমার বিবেকে বাধলো না?
—-আমি আমার ভবিষ্যতের কথা ভেবে এটা বেছে নিয়েছি?
—-জীবনে টাকা,বাড়ি, গাড়ি তুমি সুখ মনে করলে। আর আমার এই দুবছরে তিলে তিলে গড়া তোমাকে নিয়ে সাজানো ঘর টা ভেঙে দিতে পারলে?
—-সময় সবকিছু বদলে দেই।
—-একটিবার জানাতে পরতে আমাকে তুমি ভালোবাসো না?
—-জানালে কি হতো আমি জানতাম তাই প্রয়োজন মনে করিনি।
—-আমি কি নিয়ে বাঁচবো?
—-নতুন কাওকে খুজে নেও.
—-এতোটা সহজ।
—-আমি তো পেরেছি।
—-তোমার মতো স্বার্থপর না।
—-যাই ভাবো তোমাকে কল দিয়েছি মা বাবা কাছে সব শুনে।
—-জানতে চাইচিলে বেঁচে আছি না মরে গিয়েছি।
—-ফালতু কথা বলবে না,আর আমি অনেক সুখেই আছি।এই নাম্বারে দয়া করে আর কল দেবে না তুমি চাওনা আমি ভালো থাকি?
—-দোয়া করি সুখে থাকো সবসময়।
—-ধন্যবাদ, আর আমাকে ক্ষমা করে দিও হৃদয়।
—-হুমম, ভালো থেকো.
—-তুমিও, বাই কলটা কেটেদিলো রিয়া,আজ স্বার্থের লোভে পড়ে আমার ভালোবাসা কে তুচ্ছো মনে করলে। আমি ওকে অভিশাপ দেবো না রিয়া, ভালোবাসার মানুষটা যেখানে থাক সুখে থাকুক তাতে আমার সুখটা পেয়ে যাবো।
এমন করে একটা বছর এর বেশী কেটে গেলো আর তারপর থেকে মিষ্টি আমাকে ফরে পাওয়ার জন্য, আমাকে আবার আগের মতো করে পাওয়ার জন্য সবসময় এমনি করে। মায়ের ডাকে অতীতে মাঝে ছেদ পড়লো। মাথা ধরেছে খুব মা কে বলাতে একটা মেডিসিন দিলো খেয়ে বসে রইলাম ঘরে। এমন সময় মিষ্টি আসলো। এসে জানতে চাইলো মাথা ব্যথা কমেছে কিনা? আমার কিছু হলে ওর জানতে দেরি হয় না। আমি জানি মেয়েটা প্রচন্ড পরিমান ভালোবাসে কিন্তু কেনো জানি ভয় হয় সে আমার সাথে এমন করবে আর তার জন্য নিজেকে আলাদা রাখি। একটু পর চলে গেলো একমাস পর একদিন সন্ধায় বাজার থেকে বাড়ি আসলাম আর জানতে পারলাম মিষ্টিকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসছিলো আর তাদের পছন্দ হয়ে গেছে। রাতে বসে আছি ছাদের পরে। এমন সময় মিষ্টিও আসলো।
—-কি করো?(মিষ্ট)
—-(চুপ)
—-আরে কথা বলো না প্লিজ আরতো কয়টা দিন তারপর চলে যাবো।
—-(চুপ)
—-কথা বলতে মানা করেছে রিয়া বুঝি?
—-কেনো বার বার ওর নাম মুখে আনো? (জোর গলায় আমি)
—-আমার নাম আনলে তোমার ভালো লাগে না তাই।
—-ভালো লাগে না, আমাকে কষ্টটা জানান দিতে?
—-না, কষ্টের বদলে সুখটা জানান দিতে চাইছি এতো দিন।কিন্তু তুমি নিজে থেকে কষ্ট টেনে আনো আর সেটা আমার সহ্য হয় না।
—-(ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছি অশ্রুতে ভেজা)
—-তোমার কষ্টটা আমি নিয়ে আমার সুখটা তোমাকে দিতে চেয়েছি এতোদিন।
তোমার সাজানো সুখের ভেঙে যাওয়া ঘরটা সাজাতে চেয়েছি আমার সুখদিয়ে। তোমার মুখের সেই হাসিটা আমি ফিরিয়ে দিতে চেয়েছি আমার হাসি দিয়ে।তোমার কষ্টের জীবনটা আমার সুখের জীবনদিয়ে ভরিয়ে দিতে চেয়েছি তুমি দেওনি আমার সে সুজক।আমি কি তোমার যোগ্য না হৃদয়?
—-আমি তোমার যোগ্য না মিষ্টি ।
—-জানি তুমি বুঝবে না আমার ভিতরে তোমার জন্য হাহাকার কান্না।
—-কেনো এমন করো?
—-তোমাকে সত্যি আমি জীবনের থেকেও ভালোবাসি,তোমার পায়ের নিচে একটু ঠায় দেওনা?
—-(চুপ)
—-তোমাকে ছাড়া আমার জীবনে অন্য পুরুষের কথা কখনো ভাবিনি আর পারবো না।
—-(চুপ)
—-পারো না আমাকে নিজে জীবনটা নতুন করে শুরু করতে?
—-(চুপ)
—-পারোনা আমাকে নিয়ে আবার স্বপ্ন বুনতে?
—-(চুপ)
—-আমি তোমাকে আর জ্বালাবো না তুমি চাওনা যখন চলে যাচ্চি (বলে উঠে চলে যেতে লাগলো)
—-কখনো ছেড়ে যাবে না তো তাহলে? ( মিষ্টি দাড়িয়ে গেলে)
—-( মিষ্টি চুপ)
—-চলো আবার স্বপ্নটা সাজায় দুজনে?
দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো মিষ্টি আর কান্না করে দিলো পাগলীটা। শক্ত করে জড়িয়ে আছে। একজন আমার সুন্দর জীবনটা অসুন্দরে পরিনত করেদিয়েছে। আর এখন যদি এই মিষ্টিকেও হারিয়ে ফেলি তাহলে জীবনে জীবনের সবথেকে বড় ভুলটা করবো।
যে আমার কথা না চিন্তা করে চলে গিয়েছে স্বার্থপরে মতো তাহলে কেনো তাকে ভেবে আমার জীবনটা নষ্ট করবো। আর যে আমাকে এতোটা পাগলের মতো ভালোবাসে, বার বার ঠেলে দেওয়ার পর, তাড়িয়ে দেওয়ার পরেও ফিরে আসে আমাকে ভালোবাসে বলে তাকে আর হারাতে চাই না। সব কিছুর মাঝে এটাই বুঝায়, আমাদের তাকে ভালোবাসা উচিত যে ভালোবাসার মানে বোঝে, যে তোমার অনুভূতি দাম দেই,যে তোমাকে ভালোবাসে তাকে ভালোবাসো জীবনের অপূর্নতা পূর্নতা পাবে। পাগলীটা কান্না জড়িতো কন্ঠে বলতে লাগলো, কখনে যাবো না, শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তোমার হাত ছাড়বো না গো। মেয়েটা আমার বুকে কান্না করছে আমি ওকে থামাচ্ছি না,কারন এটায় তার শেষ কান্না আমার জন্য।
এতোদিন অনেক কাঁদিয়েছি আর না। এটা তার সুখের কান্না, ভালোবাসা পাওয়ার কান্না গো কি করে থামাই বলো? মাথা তুলে হাত দিয়ে ওর চোখে পানি মুছে দিলাম, আর বললাম, এখনো কান্না করলে কিন্তু যে দেখতে আসছিলো তার সাথে বিয়ে দেবো। পাজি, বাদর, পচা বলে বুকে কয়েকটা বসিয়ে দিলো তার মাঝে জড়িয়ে ধরে আছি দুজন দুজনাকে পরম মমতায়,ভালোবাসা দিয়ে।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা