মামুন জেরিনের ভালোবাসা

মামুন জেরিনের ভালোবাসা
–তোমার বউয়ের কোমরের নিচে যে একটা তিল আছে সেটা কিন্তু তোমার আগে থেকে আমি জানি। সেকেন্ডহ্যান্ড বাইক কিনছো, সেকেন্ডহ্যান্ড ফোন কিনছো তবুও বুঝতে পারিনি। যখন সেকেন্ডহ্যান্ড মেয়ে বিয়ে করলা তখন বুঝলাম, তোমার সবকিছু সেকেন্ডহ্যান্ড পছন্দ।
চায়ের দোকানে বসে মামুনের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলছিলো আরিফ। দোকানে বসে থাকা লোকগুলো আরিফের কথা শুনে মিটমিট করে হাসছিলো। মামুন দোকানের দিকেই যাচ্ছিলো চা খাওয়ার জন্য। আরিফের কথা শুনে মাথা নিচু করে বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করলো। আরিফের সাথে দেখা হলেই মামুনকে এ ধরনের কথা শুনতে হয়। মামুন এ বিষয়ে আরিফকে নিষেধ করেছে, বাজে কথা বলবিনা। মামুনের কথার জবাবে আরিফ বলেছে, তুমি খারাপ চোখে মানুষের বউকে দেখতে পারো। আর আমি বলতে পারবোনা।
মামুনের এখন মনে হচ্ছে, ছোট ভাইয়ের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে বিয়ে করে সে অনেক বড় অন্যায় করেছে। এটা যদি অন্যায় না হতো তাহলে সবাই এভাবে তার চরিত্রের দিকে আঙুল তুলতোনা। যেই মানুষরা তাকে ভালো বলে জানতো, সম্মান করতো এখন তারা তাকে নিয়ে নানা রকম কথা বলে। দেখা হলেই বলে, এটা একটা কাজ করলা। যারা মুখের সামনে বলতে পারেনা তারা আড়ালে বলে। যা নয় তাও বলে। যেমন রুহুল ভাইয়ের বউ সেদিন বলছিলো, তিনি গোসল করার সময় মামুন নাকি ইচ্ছা করে পুকুর পাড়ে এসে দাঁড়াতো। মামুন হেঁটে যাবার সময় কথাটা তার কানে এসেছে। অথচ মামুন এমন কখনোই করেনি। আজ অফিসের এক কলিগ এর ছেলের জন্মদিন উপলক্ষে সবাইকে দাওয়াত করছিলো। একজন ঠাট্টা করে বললো, মামুন ভাইকে দাওয়াত দিচ্ছেন কিন্তু সাবধান। ভাবিকে না পটিয়ে ফেলে। কথাটা ঠাট্টার ছলে বললেও মামুনের মনে হচ্ছিলো কথাগুলো বলে তাকে ইচ্ছা করে অপমান করা হচ্ছে।
মামুন বাসার সামনে এসে দাঁড়ালো। বাসায় ঢুকতে তার সঙ্কোচ হচ্ছে। বাসায় ঢুকলেই এখন জেরিনের সাথে দেখা হবে। জেরিন তার স্ত্রী হলেও দুজনের সম্পর্কটা বেশ অদ্ভুত। মামুন যেমন তার ছোট ভাইয়ের প্রাক্তন স্ত্রীকে হুট করেই নিজের স্ত্রী ভাবতে পারছেনা। ঠিক তেমন জেরিনও হয়তো তার প্রাক্তন স্বামীর বড় ভাইকে স্বামী বলে মানতে পারছেনা। মামুন বাসায় না ঢুকে পুকুর পাড়ে বসলো। আকাশে চাঁদ থাকলেও মেঘের কারনে চাঁদটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছেনা। ঠান্ডা বাতাস বইছে। মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে।
–পুকুর পাড়ে কে? আরিফ নাকি? ছোট চাচার কণ্ঠ শুনে মামুন জবাব দিলো,
-না চাচা আমি, মামুন। আরিফ দোকানে।
ছোট চাচা মামুনের কথার জবাব দিলেন না। ছোট চাচা এখন মামুনের সাথে কথা বলেন না। মামুন সালাম দিলে সালামের জবাব পর্যন্ত দেন না। শুধু ছোট চাচা না। এই বাড়ির কেউ এখন আর মামুনের সাথে কথা বলেনা। যেদিন মামুন জেরিনকে বিয়ে করলো, ছোট চাচা তার পরের দিনই দুটো বাসার মাঝে দেয়াল দিয়ে দিলেন। আগে বাসা দুটোর মাঝে কোন দেয়াল ছিলোনা। এক রাতের ব্যবধানে যেন আপন মানুষগুলো পর হয়ে গেলো। এতোদিনের অর্জিত সম্মান সব ধুলোয় মিশে গেলো। মামুন এখন বুঝতে পারছে, ন্যায় অন্যায়ের হিসাব সব জায়গায় করতে নেই। সমাজের কিছু নিয়ম আছে। সেই নিয়ম অনুযায়ি কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে হবে। যেদিন আরিফের বিয়ে হচ্ছিলো সেদিন থেকেই যদি মামুন চুপ থাকতো তাহলে আজ এমনটা হতোনা। মামুন আর আরিফ চাচাতো ভাই। মামুনের মা মারা যান মামুনের ছোট বোন মিতিকে জন্ম দিতে গিয়ে। তখন মামুনের বয়স মাত্র তিন। বাবা মারা গেলেন মামুন যখন ক্লাস নাইনে পড়ে। ছোট চাচা আর ছোট চাচি মামুনকে আর মিতিকে নিজের ছেলে মেয়ের মতোই মানুষ করেছেন।
মামুন নিজের চেষ্টায় লেখাপড়া শেষ করেছে, চাকরি পেয়েছে। কিন্তু সঙ্গদোষে আরিফ নষ্ট হয়ে গেলো। নেশা করার জন্য একবার পুলিশ ধরে নিয়ে গেলো। চাচা অনেক কষ্টে থানায় টাকা দিয়ে ছেলেকে ছাড়িয়ে আনলেন। আরিফ রাতে বাড়ি ফিরেনা। নেশা করে ক্লাবের মাঠে পরে থাকে। চাচা চাচি রাত জেগে ছেলের জন্য অপেক্ষা করেন। এমনও হয়েছে চাচা চাচির অনুরোধে মামুন আরিফকে বাসায় নিয়ে এসেছে। জোয়ান একটা ছেলে অথচ সোজা হয়ে হাঁটতে পারছিলোনা। মামুন অনেকবার চেষ্টা করেছে আরিফকে বুঝানোর। লাভ হয়নি বরং একদিন আরিফ নেশার টাকার জন্য মামুনের ফোন চুরি করে বিক্রি করে দিয়েছে। নেশার টাকার জন্য চাচা চাচির সাথে চিল্লাচিল্লি রোজকার ব্যাপার হয়ে গিয়েছিলো।
মামুন ছোট চাচাকে বলেছিলো, রিহ্যাবে পাঠিয়ে দেন। ছোট চাচা রাজি হননি। যখন পুলিশ ধরে নিয়ে গেলে মামুন বললো, কিছুদিন জেলে থাকুক আক্কেল হবে। কিন্তু ছেলের দুঃখে চাচিকে বারবার অজ্ঞান হতে দেখে চাচা ছাড়িয়ে আনলেন। মামুন রেগে বললো, ধরে ইচ্ছা মতো পিটুনি দেন। পিটুনি দিতে হলোনা। পরেরদিন আরেক নেশাখোরের সাথে মারামারি করে মাথা ফাটিয়ে বাসা ফিরলো আরিফ। সবাই যখন আরিফের উপর থেকে আশা ছেড়ে দিলো ঠিক তখনি বাসায় উপস্থিত হলেন জামিলা ফুপু। তিনি পরামর্শ দিলেন,
–ভালো মেয়ে দেখে ছেলেকে বিয়ে দাও। জামিলা ফুপুর প্রস্তাব মামুন বাদে সকলের পছন্দ হলো। মামুন বললো,
-এই ছেলের সাথে বিয়ে দেয়া মানে একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করা।
কেউ মামুনের কথায় কান দিলোনা। নষ্ট ছেলেকে শুধরানোর জন্য বিয়ে যে একমাত্র সমাধান সেটা আমাদের সমাজে অতি গ্রহণযোগ্য উপায়। তারা বিশ্বাস করে জন্মদাতা পিতা মাতা যে ছেলেকে শুধরাতে পারেনা, তাকে বউ এসে শুধরাবে। বউ ভালোবাসা দিয়ে শুধরাতে পারলে ভালো। আর না পারলে কেমন বউ নিজের স্বামীকে ঠিক করতে পারেনা। মামুনের অবাক লাগে যখন সে একজন নারীর মুখেই এসব কথা শুনে। আসলে সমাজের মানুষ আঙুল নিয়ে বসে থাকে। সময়ের সাথে সাথে আঙুল একেক সময় একেক জনের দিকে তাক করে। কখনো ভুলে নিজের দিকে তারা আঙুল তুলেনা। যদি তুলতো তাহলে বুঝতে ভুল সেও হতে পারে। হয়তো নিজে ভুল প্রমাণিত হবার ভয়ে তারা নিজের দিকে আঙুল তুলেনা।
বিয়ের জন্য অনেক মেয়ে দেখা হলো। মেয়েপক্ষ যখন শুনে ছেলে নেশাখোর তখন আর তারা এগুতে চায়না। এই সমস্যার সমাধানও দিলেন জামিলা ফুপু। ইন্টার পড়ুয়া এক মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক করলেন আরিফের। গরীব ঘরের মেয়ে। বাবা নেই। মা আছে তবে তারা মামার বাড়িতে থাকে। আরিফের নেশা করার কথা গোপন করে তাড়াহুড়া করে বিয়ে ঠিক করলেন। মামুন জামিলা ফুপুকে অবশ্য বলেছিলো,
-ফুপু তোমার ও তো একটা মেয়ে আছে। এমন ছেলের সাথে কি তুমি তোমার মেয়ের বিয়ে দিতে? জামিলা ফুপু মামুনের কথায় রাগ করেছিলেন কিন্তু কোন জবাব দিতে পারেন নি। মানুষ যখন নিজের দোষের পক্ষে যুক্তি দিতে পারেনা তখন রাগের আশ্রয় নেয়। দোষ লুকানোর সহজ উপায়।
জেরিন নামের একটা মেয়ের সাথে বিয়ে হলো আরিফের। জেরিনকে দেখেই বুঝা যায় গ্রামের সহজ সরল মেয়ে। হুট করে আরিফের মাঝে পরিবর্তন দেখা গেলো। যে ছেলেকে রাতে খুঁজে বাসায় নিয়ে আসা হতো সেই ছেলে সন্ধ্যা হতে হতেই বাসায় এসে উপস্থিত। মামুনের মনে হলো সেই হতো ভুল ছিলো। আরিফ ঠিক বদলে গেছে। নিজের ভুল প্রমাণ হওয়ায় তার কখনো খারাপ লাগেনি বরং ছোট ভাইয়ের পরিবর্তন দেখে অনেক খুশি হয়েছে। বিয়ের পরে একদিন চায়ের দোকানে আরিফকে পাশে বসিয়ে বলেছে,
-দেখ ভাই তোর পরিবর্তন দেখে অনেক খুশি হয়েছি। এখন এসব নেশা-টেশার মধ্যে আর যাসনা। কাজ কর্ম কিছু কর। ভালো মতো সংসার কর। বিয়ের এক সপ্তাহের মতো হয়েছে। মামুন রাতের খাওয়া করে শুয়ে পড়েছিলো ঠিক সেসময় চাচি এসে মামুনকে ডাকতে শুরু করলো। মামুন দরজা খুলতেই চাচি বললো,
–আরিফ এখনো বাসায় ফিরেনি। দেখ না বাবা কোথায় গেছে। মামুন শার্টটা গায়ে দিয়ে বের হলো। কুকুরের লেজ নিয়ে খুব সুন্দর একটা বাংলা প্রবাদ বাক্য আছে, কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয়না। নেশাখোরদের সাথে এই বাক্যটা পুরোপুরি মিলে যায়। মামুন আরিফকে ক্লাবের মাঠে মাতাল অবস্থায় পেলো। বাসায় নতুন বউ, মাতালকে নিয়ে বাসায় ফিরলে মেয়েটার মনের অবস্থা কি হবে। মামুন আরিফকে তার এক বন্ধুর বাসায় রেখে বাড়ি ফিরলো। চাচি পুকুর পাড়েই দাঁড়িয়ে ছিলেন। মামুনকে দেখে এগিয়ে গিয়ে বললেন,
–কিরে পাইলি আরিফকে?
-তোমার ছেলে মাতাল হয়ে পরে ছিলো। বাসায় নতুন বউ যেন জানতে না পারে সেজন্য আমার এক বন্ধুর বাসায় রেখে আসলাম। মেয়েটাকে শুয়ে পরতে বলো। আরিফের কথা বললে বলবা বন্ধুর বাসায় গেছে।
মামুন বাসায় ঢুকার সময় জেরিন মেয়েটাকে দেখতে পেলো। মেয়েটা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। মাথায় লম্বা করে ঘোমটা দেয়া। মামুন নিজের ঘরে এসে শুয়ে পড়লো। সকাল সকাল চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙ্গলো মামুনের। আরিফ বাসায় ফিরেছে। তার বউকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করছে। এরপর এই ঘটনা যেন রোজকার ব্যাপার হয়ে গেলো। আরিফ নেশা করে বাসায় ফিরে বউকে গালাগালি করে। গায়ে হাত তুলে। বাবার বাসা থেকে টাকা আনার জন্য চাপ দেয়। মামুন চোখের সামনে অন্যায় দেখে কিছু বলতে পারছেনা কারন অন্যের ব্যক্তিগত ব্যাপারে কথা বলার অধিকার তার নেই। তবুও মামুন চেষ্টা করে আরিফকে বুঝানোর জন্য। জেরিন মেয়েটাকে দেখে মায়া হয় মামুনের। মেয়েটার মুখ দেখেই বুঝা যায় যে, মেয়েটা সবসময় ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে থাকে। নতুন বউয়ের লাজুক হাসিটা হারিয়ে গেছে কবেই। জেরিনকে পুকুর পাড়ে আনমনে বসে থাকতে প্রায় দেখে মামুন। একদিন অফিস থেকে ফিরে দেখে আরিফ তার স্ত্রীকে মারছে। মেয়েটা হয়তো লজ্জায় বা অভিমানে ঠিকমতো কাঁদতেও পারছেনা। শুধু চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে। একটা মেয়ের সহ্য করার ক্ষমতা দেখে অবাক হয় মামুন।
অফিসের কাজে তিন দিন বাইরে ছিলো মামুন। তিনদিন পরে বাসায় ফিরেই বুঝতে পারলো, বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটেছে। বাড়ির উঠোন ভর্তি লোকজন। মামুন নিজের ঘরে ব্যাগটা রেখে উঠোনে এসে দাঁড়ালো। ছোট চাচি একটা চেয়ের এনে মামুনকে বসতে দিলো। থমথমে একটা পরিবেশ। ছোট চাচা, জামিলা ফুপু, এলাকার কিছু মুরুব্বি আছেন। অপরিচিত একজন ভদ্রলোককেও দেখতে পেলো মামুন। উঠোনের এক কোণে জেরিন আর তার মা দাঁড়িয়ে আছেন। ঘটনা কি ঠিক বুঝতে পারছেনা মামুন। ঘটনা জানার জন্য অবশ্য মামুনের বেশিক্ষন অপেক্ষা করতে হলোনা। আরিফ রাগি কণ্ঠে বললো,
–আমি বিচার-আচার বুঝিনা। এই মেয়েকে আমি তালাক দিবো। মেয়েকে আমার ঘাড়ে ফ্রিতে চাপিয়ে দিয়েছেন। আরে একটা পানের দোকানদার ও কম করে দেড় দুই লাখ টাকা যৌতুক পায়। আপনারা কি দিয়েছেন। জেরিনের মামা বললেন,
–দেখ বাবা আমরা আগেই বলেছি, টাকা দেয়ার সামর্থ আমাদের নেই। আরিফ যেন আরো রেগে গেলো,
–আপনাদের মেয়ের তো চরিত্র ভালো না। প্রথম রাতেই বুঝতে পারছি এই মেয়ের আগেও ইয়ার দোস্ত ছিলো। মামুনের কেন যেন মনে হচ্ছে আরিফ মিথ্যা বলছে। নিজেকে সঠিক প্রমাণের জন্য, নিজের দাবি আদায়ের জন্য মিথ্যা দোষ দিচ্ছে। মামুন এবার চুপ থাকতে না পেরে বললো,
-আরিফ কি বলছিস এসব। এতো মানুষের সামনে বুঝে শুনে কথা বল। জেরিন এতোক্ষন চুপ করেই ছিলো। হুট করেই কান্না জড়ানো কণ্ঠে আরিফের দিকে তাকিয়ে বললো,
–আপনি এমন মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছেন কেন? আরিফ জেরিনকে ধমক দিয়ে বললো,
–তুই চুপ থাক, বেশ্যা মাগি। তোকে আমি তালাক দিবো। এক্ষুণি তালাক দিবো। কোন বিচার হবেনা, কোন মিমাংসা হবেনা। দেখি তালাক দিলে কি করিস। মামলা করলে করবি, নুন আনতে যাদের পান্তা ফুরায় তারা করবে মামলা। দেখবো তোদের দৌঁড় কতোদূর। শালি, হারামজাদি মামুন এবার গলার স্বর উঁচু করে বললো,
-আরিফ অনেক হইছে। তুই মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছিস।
–আমার বউকে আমি যা খুশি বলবো। তুমি বলার কে? তোমার এতো দরদ কিসের? ওই হারামজাদির সাথে কি তোমার নষ্টি ফষ্টি আছে নাকি। এতোই যদি দরদ তাহলে বিয়ে করো। বিয়ে করে দরদ সোহাগ দেখাও।
-প্রয়োজন হলে তাই করবো।
মামুনের কথাটা বলেছিলো শুধুমাত্র আরিফকে চুপ করানোর জন্য। তার সেরকম কোন উদ্দেশ্য ছিলোনা। কিন্তু তার মুখ ফসকে বের হওয়া কথাটা নিয়ে অনেক কথা হলো। আরিফ অনেক আজে বাজে মন্তব্য করলো। ছোট চাচা, চাচি, জামিলা ফুপু বুঝানোর চেষ্টা করলো কিন্তু কোন কাজ হলোনা। আরিফের এক কথা সে জেরিনের সাথে সংসার করবেনা। সেদিনের মতো জেরিনের মা আর মামা জেরিনকে সাথে নিয়ে গেলেন। মামুন ভেবেছিলো দু চারদিনের মধ্যে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সেরকম কিছুই হলোনা। আরিফ সত্যি সত্যি জেরিনকে তালাক দিলো। ছোট চাচা-চাচি এবং অনেকেই চেষ্টা করেছিলো আরিফকে বুঝানোর কিন্তু কোন লাভ হয়নি। অবুঝকে বুঝানো যায় কিন্তু নেশায় আসক্ত মানুষদের বুঝানো যায়না। প্রায় সপ্তাহ খানেক পরে মামুনের অফিসে জেরিনের মামা উপস্থিত। জেরিনের মামাকে দেখে মামুন বুঝতে পারছিলোনা তিনি এখানে কেন এসেছেন। তার আসার কারন শুনে মামুন কিছুক্ষনের জন চুপ করে থাকলো। জেরিনের মামা চান মামুন যেন জেরিনকে বিয়ে করে। মামুন তো সেদিন নিজের মুখেই বলেছিলো, প্রয়োজনে সে জেরিনকে বিয়ে করবে। জেরিনের মামার কথা শুনে মামুন বললো,
-সেদিন তো পরিস্থিতির কারনে কথাটা বলে ফেলেছিলাম। সেটা এতো সিরিয়াসলি নিচ্ছেন কেন? জেরিনের মামা মামুনের হাত ধরে বললেন,
–বাবা মেয়েটার তো কোন দোষ নাই। খোদায় কসম বাবা ওই মেয়েটার চরিত্রে কোন দাগ নাই। আপনার ভাই মিথ্যা বলছে। মেয়েটার বদনাম ছড়িয়ে গেছে বাবা। এই মেয়ে কে বিয়ে করবে বলেন। আমার নিজের দুইটা মেয়ে আছে। তাদের বা কিভাবে বিয়ে দিবো। আপনি তো বুঝেন। মেয়ের চরিত্রে কেউ দাগ দিলে সেই দাগ পুরো পরিবারের শরিরে লাগে।
মামুন ভেবে দেখার জন্য সময় চেয়ে সেদিন জেরিনের মামাকে বাসায় পাঠিয়ে দিলো। জেরিনের মামা প্রতিদিন অফিসে এসে বারান্দায় পায়চারি করেন। মামুন পিয়নকে দিয়ে খবর পাঠায় যে সে অফিসে নেই তারপরেও লোকটা দাঁড়িয়ে থাকেন। শীর্ণ দেহের বয়ষ্ক একজন মানুষ। গালের খোঁচা খোঁচা সাদা দাড়ি যেন তার অসহায়ত্বের প্রমাণ। শেভ করার জন্য টাকাও বুঝি লোকটার হিসেব করা। সেই মানুষটার ঘাড়ে তিনটা মেয়ের দ্বায়িত্ব। তার মধ্যে একজন তালাকপ্রাপ্তা। মামুনের মনে হলো সে চাইলেই তো মানুষটাকে একটু দায়মুক্ত করতে পারে। তাছাড়া জেরিন মেয়েটা তো খারাপ না। সে যতোটুকু মেয়েটাকে দেখেছে, শান্ত, সহজ, সরল একটা মেয়ে। যেই মেয়েটার জীবনে একটা কলঙ্ক লেগেছে তারই আপন চাচাতো ভাইয়ের কারনে। তাদের পরিবারের কারনে।
মামুন দ্বিধা দ্বন্দে ভুগছিলো। সে চাইলে না বলে দিতে পারে। আবার চাইলে অনেককিছু ঠিক করতে পারে। তার জায়গায় অন্যকেউ থাকলে সে নিশ্চই বিয়ে করার পরামর্শ দিতো কিন্তু নিজের বেলা কেন সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছেনা। তবে কি সেও অন্য সবার মতোই? সবাইকে ন্যায়ের পথ দেখায় কিন্তু নিজের দিকে আঙুল তাক করতে চায়না। মামুন পিয়কে দিয়ে জেরিনের চাচাকে ভেতরে ডেকে পাঠালো। লোকটা প্রায় আধ ঘন্টা ধরে বারান্দায় বসে ছিলেন। মামুন নিজের জন্যে দিয়ে যাওয়া চায়ের কাপটা লোকটার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
-বিয়ের ব্যাপারে জেরিনের মতামত কি? মামুনের কথা শুনে আনন্দে লোকটার চোখে পানি চলে আসলো। পরিষ্কার মনের মানুষদের নাকি খুশিতে চোখে পানি আসে। লোকটা মামুনের হাত ধরে বললেন,
–জেরিনের কোন আপত্তি নেই বাবা। তাকে সব বলেছি। সে বলেছে আমার সিদ্ধান্তই তার সিদ্ধান্ত। মামুন বললো,
-একবার তো তার হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কি হলো? মেয়েটার জীবনটা নষ্ট করলেন। আবার যদি এমন হয়?
–জামিলা আপাকে বিশ্বাস করছিলাম বাবা। কখনো ভাবতে পারিনাই তিনি এমন করবেন। তিনি বলছিলেন। আমার ভাগ্নি আর তার নিজের মেয়ের মধ্যে তিনি পার্থক্য দেখেন না। ছেলে ভালো।
-আচ্ছা ঠিক আছে। আমি আগে বাসায় কথা বলি তারপর জানাবো আপনাকে। আর প্রতিদিন অফিসে আসার দরকার নেই আমি নিজেই খবর পাঠাবো।
মামুন বাসায় কথাটা বলার পর যেন বাসায় একটা তুফান বয়ে গেলো। কেউ মানতেই পারছেনা মামুন আরিফের তালাক দেয়া বউকে বিয়ে করতে চাচ্ছে। সবাই এক কথায় না বলে দিলো। মামুনের ছোট বোন মিতির স্বামীকে চাচা খবর দিয়ে পাঠালেন। মিতি আর মিতির স্বামী সবার সাথে তাল মিলিয়ে বললো, এ বিয়ে সম্ভব না। কিন্তু মিতি চলে যাবার আগে মামুনকে আলাদাভাবে ডেকে বললো,
–ভাইয়া তুই যেটা ভালো মনে করিস সেটাই কর। আমি জানি তুই যাই করবি ভালোর জন্য করবি। সবার সাথে হয়তো আমাকেও তাল মিলিয়ে না বলতে হচ্ছে। বুঝিস তো পরের সংসার করি। কিন্তু তুই যাই কর আমি তোকে কখনো ভুল বুঝবোনা। জেরিন মেয়েটা ভালো রে। আসি…
মামুন আর জেরিনের বিয়েটা ঘরোয়া ভাবেই হয়েছিলো। মামুন যখন জেরিনকে বাসায় নিয়ে আসলো। তখন থেকে সবকিছু যেন বদলে গেলো। অনেকক্ষন হলো মামুন পুকুর পাড়ে বসে আছে। হালকা হালকা বৃষ্টি পরতে শুরু করেছে। মামুন বাসার দিকে পা বাড়াতেই আরিফের কণ্ঠ শুনতে পেলো। আরিফ কোন হিন্দি গান গাইতে গাইতে বাসা ফিরছে। কি গান গাচ্ছে বুঝা যাচ্ছেনা কেননা সে জড়ানো গলায় গান গাচ্ছে। স্পষ্ট উচ্চারন করতে পারছেনা। আরিফ বাসার কাছাকাছি আসতেই শব্দ করে মাটিতে লুটিয়ে পরলো। মামুন দরজায় একবার কড়া নাড়তেই জেরিন দরজা খুলে দিলো। মামুন ভেবে জেরিন হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু না, জেরিন জেগেই ছিলো হয়তো। নিশ্চই বারান্দায় বসে ছিলো। তাই একবার কড়া নাড়তেই দরজা খুলে দিয়েছে।
–হাত মুখ ধুয়ে বসেন। আমি তরকারি গরম করে আনছি। কথাটা বলে জেরিন রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো। রাতের খাওয়া শেষ করে দুজনে বিছানার দুপাশে শুয়ে পরলো। টিনের চালে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পরছে। আজ কেন যেন মামুনের ইচ্ছে করছে জেরিনকে একটু ছুঁয়ে দেখতে। জেরিন এখন তার স্ত্রী। সে চাইলেই জেরিনকে স্পর্শ করতে পারে। মামুন জেরিনকে স্পর্শ করার জন্য হাত বাড়ালো। জেরিনকে স্পর্শ করবে কি করবেনা সেই দ্বিধা দ্বন্দে আবার হাত সরিয়ে নিলো। তাদের বিয়ের বেশ কিছুদিন পেরিয়ে গেছে অথচ দুজনের মাঝে স্বামী স্ত্রীর কোন সম্পর্ক হয়নি। সকালে অফিস যাওয়ার সময় জেরিন দরজা পর্যন্ত এগিয়ে আসলো। জেরিনের মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু বলতে পারছেনা। মামুন বললো,
-আমার মনে হচ্ছে তুমি কিছু বলতে চাও। কি কথা বলে ফেলো। আমার কাছে সঙ্কোচ করার কোন কারন নেই।
–আমি কি পরীক্ষাটা দিবো?
-অবশ্যই দিবে। তোমার পড়তে ইচ্ছা করলে পড়বে। আমার কোন আপত্তি নেই।
–কিন্তু আমার যে বই নেই।
-বই কি হয়েছে? জেরিন কিছুক্ষন চুপ থেকে মাটির দিকে তাকিয়ে বললো,
–উনি পুড়িয়ে ফেলছিলেন।
-উনি কে, আরিফ?
–জ্বি…
-আচ্ছা সমস্যা নেই আমি কিনে দিবো। আর কিছু বলবে? অফিসে যেতে লেট হচ্ছে।
–না।
-তোমার জন্য কিছু আনতে হবে?
জেরিন মাথা নাড়লো। এর অর্থ তার জন্য কিছু আনতে হবেনা। লাঞ্চ ব্রেকে সবাই মিলে অফিসে খেতে বসেছে। একজন মামুনকে বললো,
–কি ভাই সন্ধ্যায় সিদ্দিক ভাইয়ের ছেলের জন্মদিনে আসছেন তো? জন্মদিনের দাওয়াতের কথা মামুন ভুলেই গেছিলো। হঠাৎ প্রশ্ন করায় তো না বলতে পারেনা কেননা সিদ্দিক সাহেব তার সামনেই বসে আছেন। মামুন বললো, হ্যাঁ যাবো।
–ভাবিকে আনবেন তো সাথে? এখন তো আপনি ডাবল মানুষ। একা আসলে কিন্তু হবেনা।
এই লোকটা কথায় কথায় জেরিনের প্রসঙ্গ টেনে নিয়ে আসে। মামুনের প্রচন্ড রাগ হয়। ভদ্রতার কারনে কিছু বলতে পারেনা। মামুন বিকেলে জেরিনকে ফোন করে রেডি থাকতে বললো। বাসায় ফিরে দেখলো, আরিফ তার বাসা থেকে বের হচ্ছে। মামুন নিজেকে প্রশ্ন করলো, আরিফ এখানে কি করছে। আরিফ মামুনকে দেখে হাসি দিয়ে বললো,
খালি বাইরে ঘুরলে হবে। ঘরের খবর কে রাখবে। পুরোনো ভালোবাসা বুঝেন তো। মামুনের কেমন যেন অস্থির লাগছে। আরিফের কথাগুলো কানের মধ্যে বাজছে। মামুনের সাথে যাওয়ার জন্য জেরিন শাড়ি পরে, সেজেগুজে তৈরি হয়ে ছিলো। মামুনকে চুপচাপ থাকতে দেখে জেরিন বললো,
–আপনি ফোন করেছিলেন কোথায় যেন যাবেন। মামুন কিছুটা রুক্ষ্ণ স্বরে জবাব দিলো,
-যাবোনা।
–আপনি কি কোন কারনে রাগ করেছেন?
-আরিফ কেন এসেছিলো বাসায়?
–উনি যখন তখন বাসায় এসে আজে বাজে কথা বলেন।
-কই আমাকে তো আগে কখনো বলোনি।
–আপনি কি আমাকে অবিশ্বাস করছেন?
মামুন জেরিনের কথার জবাব দিলোনা। তার মনের অস্থিরতা যেন কিছুতেই কাটছেনা। রাতে দুজনের কেউ খেলোনা। মামুন বারান্দাতেই চুপচাপ বসে থাকলো। জেরিন জানালার পাশে বসে থাকলো। আজ রাতেও প্রচন্ড বৃষ্টি নামলো। জেরিন জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। মামুনের ডাক শুনে জেরিন পেছন ফিরে তাকালো।
-খেতে আসো। জেরিন তরকারি গরম করে মামুনকে ভাত বেড়ে দিলো। মামুন জেরিনকে বললো,
-তোমার প্লেট কই?
–আমি খাবোনা। জেরিনের কণ্ঠে অভিমান। জেরিন ঘরে ঢুকছিলো মামুন জেরিনের হাত চেপে ধরলো। এই প্রথম স্পর্শ তাদের। স্ত্রীর প্রতি প্রথম অধিকার খাটানো। মামুন বললো,
-সরি। আসলে তখন খুব বেশি অস্থির লাগছিলো। খেতে বসো। জেরিন খেতে বসে মামুনকে প্রশ্ন করলো,
–আমাকে বিয়ে করে কি আপনি খুব বিপদে পড়েছেন? সবাই আপনাকে নিয়ে নানান কথা বলছে। আচ্ছা আমাকে সাথে নিয়ে বের হতে আপনার লজ্জা লাগে তাইনা?
-এভাবে বলছো কেন?
–আজ ফোন করে যখন বললেন, একখানে নিয়ে যাবেন। আমি অনেকক্ষন ধরে সেজেছি। অথচ আপনি আমাকে সাথে নিয়ে বের হওয়া তো দূরের কথা আমার দিকে একবারের জন্য তাকালেন না।
মামুন লক্ষ্য করলো জেরিন খুব সুন্দর গুছিয়ে কথা বলছে। এটা সে আগে কখনো লক্ষ্য করেনি। জেরিনের কণ্ঠে অভিমান যেন বলে দিচ্ছে সে স্ত্রীর অধিকার খাটাচ্ছে। তবে কি জেরিন তাকে স্বামী হিসেবে গ্রহন করতে শুরু করেছে। আজ মামুনের অফিস নেই। মামুন জেরিনকে বলেছে সেজেগুজে তৈরি হতে। আজ জেরিনকে নিয়ে সে বের হবে। জেরিনের সাজ খুব সাধারন। আসমানি রঙের শাড়ি, চোখে একটু কাজল, ঠোটে হালকা লিপস্টিক। এতো অল্প সাজেও জেরিনকে যেন অপরূপ সুন্দর লাগছে।
আরিফ বাসায় মায়ের সাথে ঝগড়া করে বের হয়েছে। ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজেও টাকা পায়নি। নেশা করতে না পারার কারনে তার পুরো শরির যেন শিরশির করছে। মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে। রাস্তার পাশের টং দোকানের বেঞ্চটাতে সোজা হয়ে শুয়ে আছে। দোকানদার কয়েকবার তাকে সেখান থেকে উঠতে বলছে। আরিফ শাসিয়ে দিয়েছে আর একবার কথা বললে দোকান ভেঙ্গে ফেলবে। দোকানদার ভয়ে কিছু বলছেনা। সন্ধ্যা নেমে আসছে। আরিফ দেখলো জেরিন আর মামুন রিকশায় করে ফিরছে।
দুজনকে দেখে মনে হচ্ছে তারা খুব সুখেই আছে। তাদের সুখটা আরিফের সহ্য হচ্ছেনা। পরোক্ষনে আরিফের মনে হলো, সে চাইলে সেও তো জেরিনকে নিয়ে সুখে থাকতে পারতো। আশেপাশে কেউ গাজা ধরিয়েছে। গাজার কড়া গন্ধ আরিফের নেশাটাকে আরও জাগিয়ে তুলছে। আরিফ বেঞ্চ ছেড়ে দাঁড়ালো। সে খুঁজছে কে গাজা ধরিয়েছে। গাজায় দুটো টান দিয়ে হলেও নিজেকে কিছুটা শান্ত করতে হবে তার। শরিরের প্রতিটা রক্তবিন্দু তার কাছে নেশা চাইছে। রাতে সিগারেট খাওয়ার জন্য মামুন বাইরে বের হয়েছে। বাসায় সিগারেট খেলে জেরিন রাগ করে। ইদানিং মামুন সিগারেট কমিয়ে দিচ্ছে। আরিফ পুকুর পাড়েই বসে ছিলো। মামুনকে দেখে বললো,
–ভাই সিগারেট দেন একটা।
মামুন পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বের করে দিলো। আরিফ প্যাকেট থেকে দুটো সিগারেট বের করে একটা ঠোটে দিলো অন্যটা পকেটে রেখে দিলো। সিগারেট ধরানোর সময় লাইটারের আলোতে মামুন দেখলো আরিফের হাত রক্তমাখা। মামুন জিজ্ঞাসা করলো,
-কিরে হাতে কিসের রক্ত?
–কিছুনা। শরিরের রক্ত শিরশির করছিলো। ব্লেড দিয়ে দিলাম কয়টা পোচ। রক্ত বের হলে শান্তি লাগে। বড় ভাই একটা কথা শুনেন। জেরিনের পিঠের ডান পাশে একটা তিল আছে। হাহাহাহা…
-তোর উপর রাগ করার কথা কিন্তু তোকে দেখে মায়া লাগে।
–আরেকজনের স্ত্রীকে নিয়া মায়া দেখাও?
-তিনবার কবুল বলে এক বিছানায় রাত কাটালেই সে স্ত্রী হয়ে যায়না। কখনো জেরিনকে ভালোবেসেছিলি? কখনো তাকে স্ত্রীর সম্মানটা দিয়েছিলি?
–অতো টাইম নাই। টাকা থাকলে জেরিনের থেকে ভালো মেয়ে পাওয়া যায়। জ্ঞান দিয়োনা যাও ভাগো।
মামুন বাসার দিকে পা বাড়াতেই দেখলো জেরিন বাইরের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। মামুন কাছে আসতেই জেরিন বললো,
–আমরা কি এখান থেকে কোথাও চলে যেতে পারিনা?
-কেন?
–আমার ভয় করে। তাছাড়া মানুষ তোমাকে নিয়ে কতো কথা বলে। আমার ভালো লাগেনা। মামুন লক্ষ্য করলো আজ সকাল থেকে জেরিন তাকে তুমি করে ডাকছে। মামুন বললো,
-আচ্ছা সে দেখা যাবে।
জেরিনের কথা মতো মামুন বদলি নিয়েছে। শহরের মধ্যে এতো কম ভাড়ায় এতো সুন্দর একটা বাসা পেয়ে যাবে ভাবতে পারেনি মামুন। জেরিনের বাসাটা খুব পছন্দ হয়েছে। বারান্দায় টবে কয়েকটা ফুলের গাছ লাগিয়েছে। জেরিনের ঠোটের হারিয়ে যাওয়া লাজুক হাসিটা ফিরে এসেছে। মামুন মুগ্ধ দৃষ্টিতে জেরিনের চঞ্চলতা দেখছে।।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত