..দুপুর ২ টা বেজে ৩৩ মিনিট
বাসা..
দুপুরের খাবার খেয়েই বাধ্য ছেলের মত পড়ার টেবিলে বসে পড়লাম আমি।
তিনটা মোটা মোটা টেক্সটবুক একসাথে খুলে জোরে জোরে চিল্লিয়ে ব্যাপক পড়াশোনা শুরু করলাম। এই তিনটা বই-ই আমার সবচেয়ে ফেভারিট।
একটু পরেই বাবার হাঁকডাক শোনা গেল, “কই রে বাবা আমার, পড়ছিস?”
আমি উত্তর না দিয়ে চিল্লানির ভলিউম বাড়িয়ে দিলাম। একটু পরে টের পেলাম, বাবা আমার ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়েছেন।
নিঃশব্দে দেখছেন আমাকে। একটু পরেই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন তিনি। আরেকটু পরে তার চলে যাবার শব্দ হল।
খুট করে দরজা বন্ধ হবার শব্দ হল আরও একটু পরে।
ব্যস, খটাশ করে সবকটা বই বন্ধ করলাম আমি। তিনটা বই একটার উপর আরেকটা সাজিয়ে রাখলাম।
এই তিনটা আমার প্রিয় বই, কারণ আমার অনেক সাধের ডেল ল্যাপটপটা আমি এগুলোর উপরই রাখি।
নাহলে আই লেভেলটা ঠিক সুবিধাজনক হয় না।
আলমারি খুলে ল্যাপটপটা বের করলাম আমি। এটা গত বছর ইন্টারে এ প্লাস পাওয়া উপলক্ষ্যে মামা কিনে দিয়েছেন।
ভালো সার্ভিস দেয়। DX-ball, এমনকি Age of Empires ও খেলা যায়। একটু বেঁধে বেঁধে যায় অবশ্য।
ল্যাপটপটা বইয়ের স্তূপের উপর রেখেই অন করে দিলাম। উইন্ডোজ লোড হতেই ফেসবুকে ঢুকলাম ব্রাউজার দিয়ে।
Loading….
এই তো নীলচে হোমপেজটা। লগিন করলাম। আবার কিছুক্ষণ Loading হবার পর আমার হোমপেজ দেখাতে লাগল।
উপর নিচ করে সবার স্ট্যাটাস দেখতে লাগলাম আমি। এক ছেলে লিখেছে, “হুররে, আমি বাবা হয়েছি।”
একজন দেখলাম কমেন্ট করেছে, “হাউ পছিবল? আকামডা কে করল?”
আরেকজন কমেন্ট করেছে, “ভুত মনে হয়।”
ছি ছি! কি অশ্লীল! এসব জিনিস দেখাও পাপ! আমি তাড়াতাড়ি হোমপেজের নিচে নামতে থাকলাম।
এক পেজ দেখি একটা ছবি আপলোড দিয়েছে, একপাশে তালগাছ আরেকপাশে কলাগাছ। তালগাছটা স্লিম, উপরের একগোছা তাল দেখা যাচ্ছে।
তালগাছের ডগায় বসে লুঙ্গি পরা এক লোক হাত উঁচিয়ে আছে। সম্ভবত বিজয়সূচক “V” চিহ্ন দেখাচ্ছে সে।
তবে তার লুঙ্গিটা অস্বাভাবিকভাবে উপরে উঠে আছে।
কলাগাছের ছবিটায় মোটা একটা কলাগাছের গায়ে ঝুলে আছে হালি হালি কলা। হলুদ হলুদ কলা।
ইনসেটে একটা কলার ছবি দেয়া, বেশ নধরকান্তি। দেখে মনে হয় এখনই ছুলে খেয়ে ফেলি।
ছবির নিচে লেখা, তালগাছ=লাইক আর কলাগাছ=কমেন্ট। মেয়েরা দেখি সমানে কমেন্ট দিচ্ছে। লাইকের সংখ্যা কম।
সাতদিনে আগে একটা নোট লিখেছিলাম। নাম “মন বসে না চেয়ার টেবিলে”; কিছুক্ষণ Loading সহ্য করে ঢুকলাম ওটায়।
বাহ, দারুণ তো! ১২৩৪৫ টা লাইক মাত্র সাত দিনে! কিন্তু ব্যাটা জুকারবার্গ ফেসবুকের কি ভুয়া ডিজাইন করেছে, ১ এর পরে ২৩৪৫ মুছে গেছে।
দেখাই যাচ্ছে না। হয়তো কোন স্প্যামের আক্রমণে এটা হয়েছে। হয়তো শত্রু Yahoo বা Google এই কাজ করেছে।
নাহ, জুকারবার্গকে সাবধান করে একটা ইমেইল আজকেই পাঠাতে হবে।
যার লাইক দেখাচ্ছে, সেই ১ জনই বা কে? হবে কোন বড় ফ্যান, কে জানে কোন বড় পত্রিকার সম্পাদক কি না। বলা তো যায় না।
হয়তো জুকারবার্গ নিজেই। আচ্ছা, জুকু কি বাংলা পড়তে পারে? না পারলে লাইক দেবে কেন? নাহ, ওকে একটা কড়া ঝাড়ি মারতেই হবে।
অবশ্য বড় লেখকদের লেখায় পাঠকরা না পড়ে না বুঝেই লাইক মারে। এও কি সেরকম কেস নাকি?
বলতে না বলতেই লাইক কে করেছে দেখার জন্য রিলোড দিলাম পেজটা। হ্যাঁ, এবার দেখা যাচ্ছে।
স্পষ্ট লেখা, You like this। You কে? জুকুর ফেইক আই ডি নাকি?
নাকি অন্য কেউ? যেই হোক, নিশ্চয়ই আমার অনেক বড় ফ্যান, হে হে।
..দুপুর ২ টা বেজে ৩৬ মিনিট
বাসা..
খুঁজে খুঁজে “বালুবাসার পুতুপুতু গল্প” নামের একটা পেজ ওপেন করলাম আমি। এই পেজে একবার একটা পুতপুতু গল্প দিয়েছিলাম আমি।
ফলাফল, পেজ থেকে আমাকে জানানো হল, “…আবার চেষ্টা করুন…
আশা করি আপনি আরও মানসম্মত লেখা লিখতে পারবেন…শুভকামনা রইল…ব্লা ব্লা ব্লা।”
দুদিন পরে ঐ লেখাটার চরিত্রদের নাম পাল্টে নিজের নামে না পাঠিয়ে “মেঘকন্যা ঈশিতা” নামে গল্পটা পাঠালাম একই পেজে।
ফলাফল, এক দিনে সাড়ে তিনশ লাইক, দুশ কমেন্ট, পঁচিশ শেয়ার।
পেজে দেখি নতুন একটা গল্প শেয়ার দিয়েছে। “অনন্ত প্রেম, তুমি দাও আমাকে।” বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম।
এটা কি আমাদের সুপারহিরো নায়ক আবদুল জলিল ওরফে এম এ জলিল অনন্ত ভাইকে উদ্দেশ্য করে লেখা?
কে লিখেছে? তার কোন মেয়ে ফ্যান? নাকি ছেলে ফ্যান?
থিওরিটিকালি তো উনার মেয়ে ফ্যানের সংখ্যাই বেশি হবার কথা, মেয়েরা তো আবার মেয়ে মেয়ে চেহারার ছেলেদেরই বেশি পছন্দ করে।
কোন মেয়েলি চেহারার ছেলে দেখলেই তাদের প্রথম কথা, “হাউ কিউট! হাউ সুইট! হাউ লাভলি!”
গল্পটা ওপেন করলাম। Loading….
হ্যাঁ, পেজটা এসেছে। আমি বেশ আয়েশ করে পড়া শুরু করলাম। নিজে যা-ই লিখি না কেন, পড়তে আমার কোন আপত্তি নেই।
হুম, গল্পের শুরুটা ভালোই। একটা উনিশ বছরের ছেলের সাথে অনেকটা হঠাৎ করেই ফোনে এক অচেনা মেয়ের পরিচয় হয়।
তাদের সম্পর্ক এগোতে থাকে সবার অগোচরে।
পড়তে ভালোই লাগছে। অনেক মজার মজার কথোপকথন গল্পের মধ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। হুম, লেখকের সেন্স অফ হিউমার আছে বলতে হবে।
..দুপুর ২ টা বেজে ৩৯ মিনিট
বাসা…
গল্পের শেষের দিকে চলে এসেছি আমি। আমার কেন যেন একটু একটু কান্না পাচ্ছে।
গল্পের নায়ক উনিশ বছরের ছেলেটা সম্পর্ক হবার পাঁচ বছরে অনেকবার মেয়েটিকে দেখতে চেয়েছে।
কিন্তু মেয়েটি এতদিন তাকে দেখা দিতে রাজি হয় নি। অবশেষে পাঁচ বছর পর মেয়েটি রাজি হয়েছে।
ছেলেটির মনে তাই অসম্ভব উত্তেজনা, সাথে আনন্দ। অবশেষে দেখা হয় তাদের।
চব্বিশ বছর বয়স এখন ছেলেটির, আর মেয়েটির বয়স আটত্রিশ। মেয়েটি বিবাহিত। এক মেয়ে আছে। স্বামী সাত বছর ধরে বিদেশে।
ছেলেটির মন ভেঙ্গে যায়। সে চলে আসে। মেয়েটি আত্মহত্যা করে। বেশ কষ্টের গল্প।
ক্যান বাবা তুই না জেনে না বুঝে প্রেম করতে গেলি? মন যখন দিতেই হবে তখন একটু দেখেশুনে দিলি নি কেন?
আর মেয়ে, তোমাকে এই খেলা খেলতে কে বলেছিল? এখন তো নিজের দোষ নিজের গলায় ফাঁস হয়ে জড়িয়ে গেল।
লেখিকার নাম দেখলাম। “রাজকন্যা অহনা।” বাহ, বেশ ভালো নাম। লেখিকার সাথে পরিচিত হতে ইচ্ছা করছে।
..দুপুর ২ টা বেজে ৪২ মিনিট
বাসা…
লেখিকার আই ডি পেয়েছি। প্রোফাইল পিকচারটা দেখেই আমার ভিতর কেমন যেন করে উঠল।
মনে হল, বিধাতা তার সরলতার সবটুকু এই রহস্যময়ীর চেহারায় ঢেলে দিয়েছেন।
আমার যদি কোন মেয়ের প্রোফাইল পিকচার খুব পছন্দ হয় তাহলে আমি সাধারণত তাকে ব্লক করে দিই।
আমি চাইনা তার প্রতি আমার কোন দুর্বলতা আসুক। কিন্তু এই অত্যধিক সরল চেহারার মেয়েটির সাথে আমি কিছুতেই এমন করতে পারলাম না।
গল্পটা সত্যি নাকি মিথ্যা, এটা জানার জন্য নিজের মধ্যে আমি অপরিচিত এক ধরণের আকুলি বিকুলি টের পেলাম।
মেয়েটার উদ্দেশ্যে একটা মেসেজ লিখলাম, “আপনার গল্প পড়লাম। এত ভালো লাগলো যে ভাষায় প্রকাশ করবার নয়।
আমার খুব জানতে ইচ্ছা করছে গল্পটা সত্যি কি না।”
আমার সামনে এখন দুটো অপশন। Send message। আর Cancel।
ফেসবুকে এর আগে কোন মেয়েকে আমি মেসেজ পাঠাই নি। এই প্রথম। কি করব আমি? পাঠাব? কি হবে পাঠালে?
আমার মাউস পয়েন্টার পাগলের মত একবার Send message, আরেকবার Cancel এর উপর ঘোরাফিরা করতে লাগল।
..দুপুর ২ টা বেজে ৪৫ মিনিট
বাসা…
মেসেজ পাঠিয়েছি। তারপর বুভুক্ষের মত বসে থেকেছি টানা এক ঘণ্টা।
রিপ্লাই আসে নি। অথচ মেয়েটাকে আমি পেজের অন্য গল্পে একটু আগেই কমেন্ট করতে দেখলাম।
নাহ, একদম ভালো লাগছে না। আমার সাথেই কেন এরকম হয়?
বন্ধ করে দিলাম ল্যাপটপ। ধুর, কি হবে এইসব ছাইপাশ ফেসবুক দিয়ে? বেহুদা সময় নষ্ট।
পরের দিন আবার ফেসবুকে ঢুকলাম। দেখি কোন মেসেজ নাই। বন্ধ করে দিলাম ল্যাপটপ।
ধুর, কি হবে এইসব ছাইপাশ ফেসবুক দিয়ে? বেহুদা সময় নষ্ট।
টানা তিন দিন পর আর সইতে পারলাম না। খুললাম ল্যাপটপ। ঢুকলাম ফেসবুকে।
প্রতিজ্ঞা করলাম, এবার যদি মেসেজ না পাই, নিজের আই ডি আমি ডিএকটিভেট করে দেব।
কিন্তু না। রিপ্লাই এসেছে! আমি তড়িঘড়ি করে চাপতেই মেসেজের পেজটা লোড হতে লাগলো।
আবার Loading…। ধুর, Loading হতে এত সময় লাগে কেন?
লেখিকার রিপ্লাই এসেছে, “ধন্যবাদ। আপনি এত সুন্দর করে ভেবেছেন এতেই আমি খুশি। আর আপনার প্রশ্নের উত্তরে বলব, না, গল্পটা সত্যি না।
তবে কখনও যে সত্যি হবে না তা কি নিঃসন্দেহে বলা যায়, বলুন?
হবেন আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড? অনুমতি দিলে অনুরোধ পাঠাব, একবার পাঠালে কিন্তু ফেলতে পারবেন না।”
একই সাথে দুই রকম অনুভূতি কাজ করতে লাগলো আমার ভিতরে।
এক, কোন অপরিচিত মেয়ের সাথে খাতির করার সাহস বা ইচ্ছা বা অভিজ্ঞতা, কোনটাই আমার নেই।
কিন্তু এত ভালো একজন লেখিকা, কথা বলে এত সুন্দর করে, আর চেহারাটা কত মায়াকাড়া…
অবশেষে লিখেই ফেললাম, “দিলাম অনুমতি। আপনার মত মেধাবী লেখিকার বন্ধু হলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করব।”
ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসল। একসেপ্ট করলাম। না করার কোন কারণ ছিল না।
আস্তে আস্তে মেসেজের মাধ্যমে আমরা পরস্পরের আরও কাছে আসতে থাকলাম।
একসময় এমন হল, ওর সাথে চ্যাট না করে একদিনও থাকতে পারতাম না আমি। অস্থির লাগত।
আমরা পরস্পরের অনেক কিছু জেনে গেলাম অচিরেই। ওর বাবা সরকারী অফিসার, মা গৃহিণী, একটা বড় ভাই আছে, বেকার।
ও পড়ে ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে। প্রিয় রঙ নীল। খেতে ভালোবাসে আলুভর্তা দিয়ে মাখানো ভাত, সাথে মরিচ আর লবণ।
কেক বানাতে শিখেছে, গত বার্থডেতে বান্ধবীরা ওর বানানো কেকের খুব প্রশংসা করেছে।
সাজতে পছন্দ করে না, ঝুম বর্ষায় একা একা ভেজা ওর খুব পছন্দের।
নিজের সম্মন্ধেও অনেক কিছু বললাম ওকে। আমি অনার্স ফার্স্ট ইয়ার। ফিজিক্সে পড়ি। দুইটা টিউশনি করাই।
একটা ক্লাস সিক্স, মেয়ে। আরেকটা নাইন, ছেলে। প্রিয় রঙ কালো। বই পড়ি অনেক।
গল্প লেখার অভ্যাস আছে, কিন্তু প্রকাশ করতে ভয় পাই। খালাতো বোনকে পছন্দ করি, কখনও বলি নি।
কিছুদিন পর আমি ওর মোবাইল নম্বর চাইলাম। দিল না। বলল, মোবাইলে কথা বলে নাকি ওর দম আটকে আসে।
যার সাথে কথা বলছে তাকে না দেখতে পেরে মন হাঁসফাঁস করে।
আমি বললাম, তাহলে দেখাই করা যাক। ও ধৈর্য ধরতে বলল। আমাদের বন্ধুত্ব নাকি এখনও দেখা করার পর্যায়ে পৌঁছায় নি।
আমি একা বিছানায় ছটফট করি। খাই কম, ঘুমাই কম। কেউ দেখে না।
পরিচয়ের এক বছরের মধ্যে আমি অন্তত পঞ্চাশবার বললাম, “এবার অবশ্যই দেখা করা উচিৎ।”
ও প্রত্যেকবারই বলল, “না। ধৈর্য ধর।”
“আর কত ধৈর্য ধরব? ধৈর্য ধরতে ধরতে তো বুড়ো হয়ে যাব!”
“আরে বাবা আরেকটু ধৈর্য ধর না। ফর মি। ওকে?”
“ওকে।”
এভাবে ধৈর্য ধরতে ধরতে আমি অনার্স পাশ করে ফেললাম। আমাদের সম্পর্কটা অনেক অনেক গভীর পর্যায়ে চলে গেল।
আমরা পরস্পরের অনেক কিছু জেনে ফেললাম।
আমি জানলাম, ওর বাম ঊরুতে একটা কাটা দাগ আছে, ছোটবেলায় খেলতে গিয়ে লেগেছিল।
বুকের মাঝখানে একটা তিল আছে ওর, তিলটার রঙ বাদামি লাল।
ও জানল, ছোটবেলায় খেলতে গিয়ে খালাতো বোনের গালে চুমু খেয়েছিলাম আমি। তিন দিনে তিন বার। তবুও ওর সাথে আর দেখা হল না আমার।
অবশেষে আমি বললাম, “আমি বোধহয় তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি। আমি তোমার জীবনসঙ্গী হতে চাই।”
ও বলল, “না দেখেই এগুলো বলছ?”
আমি বললাম, “হুম। তুমি যেই হও, তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না।”
ও বলল, “আচ্ছা, তাহলে বলি, আমার বড় ভাই কিন্তু ড্রাগ নেয়, বড় মাস্তান এখন সে।
এলাকার এম পির সাথে তার উঠাবসা। মানিয়ে নিতে পারবে?”
আমি বললাম, “তোমার জন্য আমি সব করতে পারি।”
ও বলল, “ওকে আমাদের দেখা হচ্ছে কালকে। আমাকে দেখে সহ্য করতে পারবে?”
ছ্যাঁত করে উঠল বুক। সহ্য করতে পারব না কেন? মেয়েটা কি বলছে এসব? তবে কি?…
আমি নিজেকে চ্যাটে লিখতে দেখলাম, “পারব। তুমি যেই হও, আমি তোমাকে এখনকার মতই ভালবাসব।”
অবশেষে আমাদের দেখা হল। আমি দারুণ অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো মাথা ঘুরে পড়ে যেত।
অথবা সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে তার গলা টিপে হত্যা করবার জন্য আলোর বেগে ছুটে যেত।
আমি ওকে বললাম, “কে আপনি?”
পঁয়ত্রিশ বছর বয়স্ক যুবকটি বলল, “সালেহ তিয়াস। ওর ভাই। ড্রাগখোর, মাস্তান ভাই।”
আমি বললাম, “ও? ও কোথায়? ওর আই ডি আপনি ব্যবহার করেন কেন?”
“ও?” যুবক বলে, “ও মারা গেছে। আপনার সাথে চ্যাট শুরুর এক বছর আগেই মারা গেছে ও। লিউকেমিয়া ছিল।
কিন্তু ব্যাপারটা আমি মেনে নিতে পারি নি।
একটা ফুলের মত ফুটফুটে মেয়ে এভাবে জীবনের রূপ রস গন্ধ কিছুই টের না পেয়ে মারা যাবে?
তাই আমি ভাবলাম, ওকে বরং ভার্চুয়াল জগতে বাঁচিয়েই রাখি।
ও গল্প টল্প লিখতে পছন্দ করত, এমনকি মৃত্যুশয্যায় শুয়ে শুয়েও দুই তিনটা গল্প লিখেছে সে।
সেগুলোকেই একটু সাইজ করে ওর ছবি দিয়ে একটা আই ডি খুলে আমি পাবলিশ করা শুরু করি। পাঠকেরা ওর গল্পকে গ্রহণ করে দারুণ ভালবাসায়।”
“আর আপনার সাথে আমার যা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা একটাই। বোনটা আমার জীবনে কারো ভালবাসা পায় নি।
তার খুব শখ ছিল এমন একজনের সাথে তার বিয়ে হবে যে তার সব গল্প বুঝবে, পড়বে, সমালোচনা করবে, উৎসাহ দেবে।
যখন দেখলাম আপনিই ওর প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন তখন ভাবলাম, মন্দ কি?
অন্তত ভার্চুয়াল জগতে হলেও কেউ আমার বোনটার প্রেমে পড়ুক, মিথ্যা হলেও কেউ তাকে জীবন দিয়ে ভালবাসুক, প্রচণ্ড ভালবাসুক।
আর সেজন্যেই আজ আমি আর আপনি মুখোমুখি।”
আমি কথা বলতে পারছিলাম না। প্রচণ্ড নিঃস্ব আর অসহায় লাগছিল নিজেকে।
যুবক বলতে লাগল, “ওর ভাইয়ের ড্রাগ নেবার ব্যাপারটা সত্যি। ও মারা যাবার পরপরই আমি ড্রাগের সাথে জড়িয়ে যাই।
কি করব, সহ্য করতে পারছিলাম না যে! সেই সূত্রেই আমার আন্ডারগ্রাউন্ডে ঢোকা।”
আমি হঠাৎ ঝরঝর করে কেঁদে ফেললাম। যুবক এগিয়ে এল। তার গা থেকে পচা তেলাপোকার গন্ধ আসতে লাগল।
আমার কাঁধে হাত রেখে যুবক বলল, “আমি কিন্তু তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি। আই লাভ ইউ। আই ওয়ানা বি উইদ ইউ।”
আমি চমকে উঠলাম, “কি? কি বলছেন?”
যুবক বলল, “তোমার সাথে প্রেম করে আমি খুব মজা পেয়েছি। তোমাকেই আমি লাইফ পার্টনার বানাতে চাই।”
“হোয়াট!” আঁতকে উঠে ঘাড় থেকে যুবকের হাত সরিয়ে নিলাম আমি।
যুবক বলল, “এতদিন আই প্লেড গার্ল পার্ট। প্যাসিভ পার্ট। নাউ আই উইল বি একটিভ। ইউ বি প্যাসিভ।”
আমি আর্তচিৎকার দিয়ে দৌড়ানো শুরু করলাম। পিছন থেকে যুবক হায়েনার মত হা হা করে হাসতে লাগল।
আমি আবিষ্কার করলাম, যুবকের কাছ থেকে আমি দূরে যেতে পারছি না। যতই চেষ্টা করছি ততই তার কাছে চলে আসছি।
যুবক হা হা করতে করতে চুমু দেবার মত মুখভঙ্গি করল। তার মুখ থেকে কাঁচা পেঁয়াজের গন্ধ আসতে লাগল।
..দুপুর ২ টা বেজে ৪৮ মিনিট
বাসা…
আমার কার্সর পাগলের মত একবার Send message, আরেকবার Cancel এর উপর ঘোরাফিরা করতে লাগল।
অবশেষে শান্ত হলাম আমি। শান্ত হল মাউস পয়েন্টার। অবশেষে Cancel এ ক্লিক করেই ফেললাম আমি।
ধুত্তেরিকা! কি হবে এইসব অজানা অচেনা মেয়ের সাথে খাতির করে? যদি ফেইক হয়? ধুর!
আমি হোমপেজ ওপেন করলাম। একটা পেজে দেখি বিশাল এক স্যানিটারি ন্যাপকিনের ছবি। পাশে মডেল শাকিব খান।
শাকিব বলছে, “পরতে আরাম, বিশ গুণ শোষণশক্তি সম্পন্ন”।
ছেলেরা দেখি লাইক কমেন্ট দিয়ে ভরিয়ে দিচ্ছে। যাই, আমিও একটা লাইক দিয়ে আসি।
(সমাপ্ত)……
(যারা যারা গল্পটা বোঝেন নাই তাদের জন্যঃ
২ টা ৪৫ থেকে ২ টা ৪৮ পর্যন্ত যা ঘটেছে সেটা আসলে নায়কের কল্পনা। মাত্র তিন মিনিটে সে অনেক কিছু কল্পনা করে ফেলেছে।
এবং সেটাই এই গল্পের মূল উপজীব্য। নায়কের কল্পনার স্থায়িত্বকাল তিন মিনিট ছিল বিধায় গল্পের নামও ‘থ্রি মিনিটস’।)