ভুলে যাওয়ার জন্য ভালোবাসেনি

ভুলে যাওয়ার জন্য ভালোবাসেনি

আপনার কি এমন ক্ষতি করেছি যার জন্য আপনি এভাবে আমাকে এড়িয়ে চলেন?আমার দোষটা কোথায় একটু বলবেন? কি হলো কথা বলছেন না কেন? কলেজ ক্যাম্পাসের এক কোণে গাছের নিচে একা বসে ফোন টিপছে মুজাহিদ তখন কথাগুলো বলল ইসরাত। মুজাহিদ ছেলেটা বেশ অদ্ভুত কখনো প্রয়োজন ছাড়া কারো সঙ্গে কথা বলে না। তার কোন বন্ধু নেই এমন না সব সময় সবার থেকে নিজকে একা রাখে কোন এক কারণে। একা থাকার মধ্যে এক অন্য রকমের ভালো লাগা খুজেঁ পায় সে।

ইসরাত মেয়েটা দেখতে খুব সুন্দর সে অনেকটা চঞ্চল স্বভাবের বেশ রাগী আর জেদী। তবে মুজাহিদকে সে প্রচণ্ড ভালোবাসে যত বারই তাকে বুঝাতে চায় কিন্তু প্রতিবারই সে এরিয়ে যায় তার থেকে। কথাগুলো বলার পরেও মুজাহিদের মধ্যে পরিবর্তন নেই যেন সে কিছু শুনতে পায়নি শুনেও না শোনার ভান করে মোবাইলে গেমস খেলায় মনোযোগ দিল। রাগে,অভিমানে ইসরাত আবার বললো, আপনার সঙ্গে কথা বলতে আসা আমার ভুল হয়েছে আপনি খুব খারাপ আপনার সঙ্গে আর কখনো কথা বলবো না। এই বলে মন খারাপ করে চলে যাচ্ছিল তখন মুজাহিদ বলে উঠলো।

–আচ্ছা শুনুন বিকেলে ওই জায়গায় এসে দেখা করতে পারবেন তার পছন্দের একটা জায়গার কথা বলল। আর হ্যা এটা আপনার মোবাইল নাম্বার। মোবাইলটা ইসরাত দিকে দেখিয়ে বলল।

মাথা ঝুকে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিল ইসরাত তার অজানা এক অজানা ভালো লাগা কাজ করছে প্রিয় মানুষটা তার সঙ্গে কথা বলায়। বিকেলে অনেক আগে থেকেই অপেক্ষা করছে মুজাহিদের জন্য। অনেকক্ষন ধরে বসে আছে সে কিন্তু মুজাহিদ এখনো আসছে না। খুব কান্না পাচ্ছে তার তবুও মন খারাপ করে বসে রইল। অপেক্ষার প্রহর কাটিয়ে এক সময় মুজাহিদ এসে চুপচাপ তার পাশে বসে পড়লো। কেউ কোন কথা বলছে না। ইসরাত তার উপর অভিমান করে বসে আছে সে চায় মুজাহিদ তার অভিমান ভাঙ্গাবে কিন্তু না সেও চুপচাপ বসে আছে। ইসরাত আর তার অভিমান চেপে রাখতে পারলো না একসময় বলে উঠলো।

—আমাকে কেন আসতে বললেন।
— কথা বলার জন্য। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরে উত্তর দিল।
— কথা তো মোবাইলেও বলতে পারতেন এখানে আসার কি দরকার ছিল।
— উহু না সব কথা সব জায়গায় বসে বলা যায় না।
— কি এমন কথা বলবেন যার জন্য আমাকে এখানে আসতে হলো।
— আমি যদি অনেক দেরি করে আসতাম তাহলে কি চলে যেতেন।
— না অপেক্ষা করতাম।

— কতক্ষণ।
— যতক্ষণ পযর্ন্ত না আসতেন।
— যদি আমি একেবারেই না আসতাম তাহলে।
— এগুলো বলার জন্য কি আমাকে আসতে বলছেন। তাহলে আমি চলে যাচ্ছি।
— উহু একদমই না।
— কেন?
— আমার কথা বলা কি শেষ হয়েছে।
—না।
— তাহলে।
—তাহলে কি?
— আপনার চোখ বলছে আপনার যেতে ইচ্ছে করছে না। চোখের ভাষা কখনো মিথ্যা বলে না।

—আপনি কি চোখের ভাষা বুঝতে পারেন?
— না বুঝলে বললাম কিভাবে।
— ও হ্যা তাই তো। তবে কি সবারটাই?
— না শুধু।
— শুধু কি?
— কিছু না।
— আপনি বেশ অদ্ভুত কেমন ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলতে ভালোই পারেন।
— ঘুরিয়ে পেচিয়ে মানে?
— কিছু না।
— আমার মতো বলছেন?
— যদি ভাবেন তবে তাই।

— আপনাকে কালো শাড়িতে অসম্ভব সুন্দর লাগে। এতোক্ষন ভালো ভাবে খেয়াল করেনি তাকে যখন তার দিকে চোখ আটকে গেল কথাটা বলল তখন।
— হুম আমি জানি, অনেক সময় আমার আববু,আম্মুও বলে আমি নাকি দেখতে অনেক সুন্দর।
— আমাকে অদ্ভুত বলে অথচ সে কি অদ্ভুত রকমের মেয়ে নিজের প্রশংসা নিজেই করে মুজাহিদ এই ভেবে হেসে দিল।

— আপনি আবার হাসতেও জানেন নাকি জানা ছিল না?
— কিছু কিছু জিনিস জানার বাহিরে হয়ে যায় মাঝে মাঝে, ভেবে নেন এটাও তেমন কিছু।কেন আমাকে কি মানুষ মনে হয় না।

— না ঠিক তেমন না যেমনটা আপনি ভাবছেন। আপনাকে কখনো হাসতে দেখেনি তো সব সময় তো শুধু রোবটের মতো গম্ভীর ভাবে থাকেন। তবে আপনি হাসলে আপনাকে আরো অনেক সুন্দর লাগে।
— একটু বাড়িয়ে বলছেন কিন্তু।
— মোটেই না। হাসির মধ্যে দিয়ে মানুষের সৌন্দর্য অনেকটা প্রকাশ পায়। মানুষের সারা শরীরে যতটুকু সৌন্দর্য তার অর্ধেকটাই তার হাসিতে।

— হয়তো, আপনার মতো এতো কিছু জানা নেই আমার।
— আচ্ছা এসব কথা না হয় থাক। আপনি এমন গম্ভীর ভাবে থাকেন কেন।
— কারো তীব্র অবহেলা তার দেওয়া কষ্টগুলো অনেক আগেই হাসিটা কেড়ে নিয়েছে বলে আকাশের দিকে তাকিয়ে এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো মুজাহিদ।
— থেমে গেলেন কোন? বলুন না।

— আমিও ঠিক এমন ছিলাম না যেমনটা এখন আমাকে দেখছেন। সব সময় হাসি খুশী ভাবে থাকতাম। হঠাৎ করেই কেউ এলো আমার জীবনে পশলা বৃষ্টির মতো আবার হুট করেই চলে গেল। সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ভার্চুয়াল জগতে কিন্তু আমার ভালোবাসা ছিল নিঃস্বার্থ। তাকে যদিও কখনো দেখেনি তবুও সত্যিকারের ভালোবেসেছি। তার কেয়ার, রাগ,অভিমান, আবদার গুলো সব সময় আমার চেয়ে বেশি মূল্য দিতাম। কিন্তু শত চেষ্টা করেও আটকে রাখতে পারেনি। কেন যে আমাকে ছেড়ে গেল সে কারণটা খুজেঁ পাই না এই বলে দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিলো।

— এখন কি তাকে আগের মতো ভালোবাসেন?
— হুম। ভুলে যাওয়ার জন্য তাকে ভালোবাসেনি। সারাজীবন আপন করে পাওয়ার জন্য তাকে ভালোবেসেছি।
— সে যদি আবার আপনার শূন্য জীবন পূর্ণ করতে ফিরে আসে তবে কি তাকে আবার তাকে গ্রহণ করে নিবেন।
এতোক্ষন যার কথা বলছিল সে আর কেউ না ইশরাতই সে বুঝতে পারে তখন এই কথাগুলো বলল। তখন বুঝতে পারেনি তার সত্যিকারের ভালোবাসা। যখন বুঝতে পারে তখন আর সময় ছিল না সে চলে যায় বহুদূরে যখন আবার অনেকদিন পরে তার খোঁজ পায় সে তার একই কলেজে পড়ছে তারপর থেকে সব সময় পিছনে লেগে থাকে কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। যতবারই তার সঙ্গে কথা বলার জন্য যেতো ততই তাকে অবহেলা করে দূরে সরিয়ে দিতো। আজকে প্রথম তার সঙ্গে অনেক দিন পরে ভালো ভাবে কথা বলছে।

— হুম, তাকে ভালোবাসি তো। যদি ভালোই না বাসবে তবে কেন মিথ্যা আশ্বস্ত করলো কখনো ছেড়ে যাবে না।
—আজকে ইশরাতের কাছে কোন উত্তর জানা নেই এর সব ভুল যে তার।একজন তাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসে গেছে আর সে তাকে অনেক দূরে সরিয়ে দিয়েছে কিছু বলল না চুপ করে রইল।
— আচ্ছা আপনি বলেন তো আবেগ ছাড়া কি ভালোবাসা ফুটে ওঠে। আমি নাকি তাকে আবেগের কারণে ভালোবাসতাম সব সময় বলতো সে।

— যদি বলি আমিই আপনার সেই অযোগ্য ভালোবাসার মানুষটা ইশরাত জাহান তন্নী। তবে কি আমাকে ফিরিয়ে দিবেন কান্না জড়িত কন্ঠে বলল।

— আমি জানি। এইজন্যই এতোদিন শুধু অবহেলা করতাম আপন জনের দেওয়া অবহেলা তার দেওয়া কষ্ট গুলো কতটা একজন মানুষকে অনুভূতিহীন রোবটের মতো করে দিতে পারে সেটা আপনাকে বুঝানোর জন্য। এতোক্ষন মুজাহিদ খেয়াল করেনি সে কান্না করছে তার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলল সে।

— অনেকক্ষন চুপচাপ রইল দুজনে তারপরে ইশরাত একসময় সেখানে থেকে কান্না করতে করতে চলে যাচ্ছিল তখন মুজাহিদ তাকে বলল,
— এবার যখন খুব কাছেই পেয়েছি তখন আর কোন ভাবে ছেড়ে যেতে দিচ্ছি না। ছেড়ে যাওয়া যে বারন এইবার পবিত্র বন্ধনের মাধ্যমে আবদ্ধ করে নিবো সারাজীবনের জন্য।
— ইশরাত কান্না করছে কিছু বলছে না এ যে সুখের কান্না আপনজনকে আরো আপন করে ফিরে পাবার কান্না

( সমাপ্ত)

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত