স্ত্রীর প্রেমে

স্ত্রীর প্রেমে

-শুনছো বউ, আজকে রাস্তায় একটা মেয়েকে দেখলাম ৷ ইশ! এত সুন্দরী মেয়ে আমার জীবনে এই প্রথমবার দেখলাম ৷ আগে কখনই এতো সুন্দরী মেয়ে দেখিনি ৷ গোলাপী রঙের শাড়ি পরা ছিল, মাথায় ছিল বেলীফুল ৷ একদম সাক্ষাৎ পরীর মত লাগছিল ৷ নিশ্চয় স্বর্গ ভেদ করে মাটিতে নেমে এসেছিল আমাকে দর্শন দিতে স্বর্গের ঐ অপ্সরীটা ৷ এখনো আমার চোখে তার চেহারাটা ভাসছে! আমার কথা শুনে সাদিয়ার মুখটা ছোট হয়ে গেল ৷ কথাগুলো শোনার পূর্বে তার মুখবয়ব ছিল হাস্যজ্জ্বল ৷ কিন্তু এখন বিবর্ণ রুপ ধারণ করেছে ৷ সে আমার কথার জবাবে কিছুই বললোনা ৷ মুখটা বেজার করে রইলো ৷ ফের যখন বললাম,

-তুমি তো শাড়িই পরতে পারোনা ঠিকমত ৷ সারাক্ষণ সালোয়ার কামিজ পরে থাকো ৷ প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার সময় মনে মনে ভাবি আজকে বাসায় গিয়ে নিশ্চয় বউকে শাড়িতে দেখতে পাবো ৷ কিন্তু নিরাশ হই! সাদিয়া এবার উচ্চস্বরে বলল,

-আপনাকে দুটা গ্লাস কিনে আনতে বলেছিলাম, এনেছেন?
-ও নো! ভুলে গেছি ৷ অফিসের কাজের চাপে গ্লাস কেনার কথা ভুলে গেছিলাম ৷
-ভাল করছেন ৷ আজকেও জগে করে পানি খাবেন ৷

গ্লাসই আনেন নি, আমার ব্লাউজ, পেটিকোট টেইলার্সের দোকান থেকে আনবেন এটা অবিশ্বাস্য! জিহ্বায় কামড় দিলাম ৷ কপালে হাত দিয়ে অপরাধীর অভিব্যক্তিতে লাজুক হেসে বউকে বললাম,

-সরি বউ, আজকেও ব্লাউজ, পেটিকোট আনতে ভুলে গেছি ৷ সাদিয়া মুখটা পোড়াভাতের মত বানিয়ে তীক্ষ্ণকন্ঠে বলল,
-ব্লাউজ, পেটিকোট আনার কথা মনে থাকেনা, অথচ বউকে শাড়িতে দেখতে চান ৷ তো, আমি কি শুধু শাড়ি পরে আপনার সামনে দাঁড়াবো!
-সেটা করলেও মন্দ হয়না ৷
-চুপ করেন! নির্লজ্জ একটা! ফ্রেশ হয়ে খেতে আসেন!

খাচ্ছিলাম আর খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে বউয়ের দিকে নজর দিচ্ছিলাম ৷ রান্নাটা আজ বেশ ভালোই হয়েছে ৷ রান্নার প্রশংসা করতে ইচ্ছা করছেনা কেন যেন! নিজের বউকে এতো প্রশংসা করেই বা কি হবে! প্রশংসা করলেও সে আমার, না করলেও আমার ৷ চুপচাপ খেতে লাগলাম ৷ আচমকা সাদিয়া নিচুস্বরে বলে উঠলো,

-আপুকে আসতে বললে কেমন হয়? অনেক দিন হলো সে আমাদের বাসায় আসেনা, আমরাও যাইনা ৷ বউকে বললাম,

-না ৷ পরের মাসে আসতে বলো ৷
-ঠিকআছে ৷
-শোনো তোমার বোনের কথা থেকে মনে পরে গেল ৷ তার চুলগুলো এতো সুন্দর! ঝলমলে,চকচকে ঘণকালো চুল তার ৷ অথচ, তোমার চুল উসকো খুশকো! এমন কেন বলোতো? একটু মাথা আঁচড়াতে পারোনা? তোমার চুলগুলো তো লম্বাই, পরিপাটি করে রাখলেই তো পারো!

-কতদিন ধরে আপনাকে বলা হয়েছে চিঁড়ুনি কিনে আনতে ৷ পাশের ফ্ল্যাটের ভাবীর থেকে কয়দিন আর চিঁড়ুনি আনা যায় বলেন? আপনার কাছে তো ছোট্ট চিঁড়ুনি আছে, সঙ্গে রাখেন ৷ যখন মন চাই তখনই মাথা আঁচড়ে নিতে পারেন ৷ আমার কাছে সেরকম একটা চিঁড়ুনি থাকলেও হতো ৷ আর আপুর চুলের কথা বলছেন? সে শ্যাম্পু, সাবান ব্যবহার করে ৷ আর আপনি লাস্ট ৩মাসে শ্যাম্পু কিনে দিছেন কিনা মনে করেন তো? আমার নিকট যে কয়টা টাকা থাকে সেটা দিয়ে মাঝেমধ্যে সাবান শ্যাম্পু কিনি ৷ আর চুলে নিয়মিত তেল দিতে হয় ৷ নাহলে চুল আর চুল থাকেনা ৷ জানেন কতদিন ধরে চুলে তেল দিইনা? ৫ দিন ৷ ৫দিন আগে সুমি ভাবীকে চুলে তেল দিতে গিয়ে আমি একটু নিয়েছিলাম ৷

মাথায় না দিতে পারি শ্যাম্পু,সাবান- না দিতে পারি তেল ৷ এমনকি চুলটাও আঁচড়াতে পারিনা ৷ সেই আমাকে বলছেন বোনের মত আমার চুল নয় কেন? বিয়ের ২টা মাস পর্যন্ত আপনি কি মনে করে আমার যাবতীয় চাহিদা পূরণ করেছিলেন সেটা আপনিই জানেন, ২মাস পর আপনি সেসব চাহিদা মেটানোর কথা বেমালুম ভুলে গেলেন ৷ এটা সত্য যে মাসে দু একবার তেল, সাবান, ক্রিম কিনে এনে দিতেন! সাদিয়া গড়গড় করে এক নিশ্বাসে এতগুলো কথা বললো, অথচ আমি বিরক্ত হলাম না ৷ সে সত্যই বলেছে ৷ বিরক্ত হবার প্রশ্নই আসেনা ৷ সে খাওয়া বাদ দিয়ে চেহারাটা ঘুরিয়ে চোখ থেকে ঝরা দু ফোঁটা জল মুছতেছে ৷ সাদিয়ার বাম হাতটা ধরে বললাম,

-খাওয়া বাদ দিলে কেন? খাওয়া শেষ করো!

সাদিয়া আমার কথামত পুনরায় খেতে লাগলো! ঘুমানোর সময় বউয়ের কোমল নরম পিঠে আলতোভাবে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আদুরে গলায় মোলায়েম কন্ঠে বললাম,

-সাদিয়া তুমি তো গান গায়তে পারো ৷ আর গান গাওনা কেন? জানো, গতপরশু সুমি ভাবীর রুম থেকে সুমধুর কন্ঠে গান গায়তে শুনেছিলাম ৷ উফস! দারুণ গলার স্বর তার! বউ কপট রাগ দেখিয়ে বলল,

-গান গাইনা একারণেই, আপনি আমার নয় সুমি ভাবীর নিয়মিত শ্রোতা! আপনি তার গানই শুনুন! সাদিয়ার প্রতিত্তর শুনে বুঝতে পারলাম সে বেজায় রাগা রেখেছে ৷ মজা পেলাম তাকে রাগতে দেখে ৷ মিটমিট করে হাসলাম মুখ চেপে ৷ অতঃপর বউকে বললাম,

-সাদিয়া, আমার মাথাটা ধরেছে ৷ একটু টিপে দাও তো প্লিজ! সাদিয়া কোনো কথা না বলে আমার মাথা টিপতে শুরু করলো! পরেরদিন, রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে শুয়ে আছি ৷ সাদিয়া ওয়াশরুম থেকে এসে বিছানাতে গা এলিয়ে দিয়েই বললো,

-এই যে শুনছেন, আমার মাথাটা খুব ব্যাথা করছে ৷ একটু টিপে দিবেন মাথাটা? অফিসে ঝামেলা হওয়ায় মেজাজটা তখন থেকে বিগ্রে আছে ৷ সাদিয়ার আবদার শুনে রাগটা চরমে উঠলো ৷ তাকে রাগান্বিত স্বরে বললাম,

-কি বললে ফের বলো তো? আমি তোমাকে মাথা টিপে দিবো? তোমার চাকর আমি? আজকেই বললে, পরেরবার যেন এমন আবদারের কথা না শুনি! বউ ভয় পেলো আমার কথায় ৷ ভয়ে মুখটা সঙ্কোচিত করে অন্যদিক চেহারা ঘুরিয়ে শুয়ে রইলো ৷ বেশকিছুক্ষণ চুপ রইলাম দুজনে ৷ অকস্মাৎ, সাদিয়া নিচুস্বরে বলল,

-আমরা স্ত্রীরা কখনো স্বামীর আবদার ফেলে দিতে পারিনা, কোনোক্রমে না ৷ আমাদের মেজাজ বিগ্রে থাকলে, মন খারাপ থাকলে, শরীর খারাপ থাকলেও স্বামীর আবদার পূরণ করি ৷ আমরা বিরক্ত হইনা ৷ এমন পোড়া কপাল আমার যে মাথা ব্যথায় অসহ্য লাগছে, ভাবলাম স্বামীর হাতের পরশে অসহ্য ভাবটা কেটে যাবে, তাই একটু মাথাটা টিপে দিতে অনুরোধ করলাম ৷ অথচ, এমন হুমকী পেলাম যেন মনিবের নিকট দাসী আবদার জানিয়ে বিরাট ভুল করেছে, যে ভুলের ক্ষমা নেই ৷ তাই মনিব হুংকার মেরে সাবধান করে দিলো যাতে ভুলটার পুনরাবৃত্তি না হয়!

সাদিয়ার কথা শুনে মনে হলো আমার আজকের ব্যবহারটা মাত্রা ছাড়িয়েছে ৷ একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলছি ৷ স্ত্রী তার স্বামীর থেকে মাথা টিপে নিতেই পারে ৷ অথচ আমি বউকে হুমকী থামকী দিয়ে তাকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম ৷ সাদিয়ার মান, অভিমান কষ্ট দূর করতে হবে ৷ সেই মোতাবেক তাকে জড়িয়ে ধরে আমার দিকে এনে, একটা হাত দিয়ে তার মাথাটা টিপে দিতে লাগলাম ৷ সে শুধু নিচু শব্দে কান্না করছিল ৷ আমার বুকের সাথে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে অনবরত তার মাথাটা টিপে যাচ্ছিলাম ৷ একপর্যায়ে সাদিয়া ফিক করে হেসে উঠলো ৷ হাসতে হাসতে বলল,

-হয়েছে, এবার থামেন! কিন্তু আমি থামলাম না! পরেরদিন শুক্রবার ৷ অফিস বন্ধ ৷ ওয়াশরুম থেকে রুমের দিকে যাচ্ছিলাম ৷ আচমকা কিচেন রুম থেকে বউয়ের কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম ৷ সে ফোনে কথা বলছিল তার বোনের সাথে ৷ সে বলছিল,

-আমাকে ৫ হাজার টাকা দিতে পারবা আপু? বুঝতে পারলাম না সাদিয়া ৫হাজার টাকা দিয়ে কি করবে? সে টাকাগুলো আমার থেকেও তো চাইতে পারতো! কৌতূহল জাগলো, কিন্তু জানার ইচ্ছা জাগলোনা! ৩দিন পর, অফিস থেকে বাসায় ফিরেছি ৷ কলিং বেল বাজাতেই বউ দরজা খুলে দিলো ৷ দরজা খুলতেই দেখি বউটা উল্টো দিক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৷ বউয়ের ভাবতাল বুঝতে পারলাম না ৷ অবাক হয়ে বললাম,

-কি ব্যাপার আমাকে দেখে ঘুরলে কেন? আর গায়ে এই পুরোনো চাদরটা জড়িয়ে নিছো কেন? ঘোরো তো, তোমাকে দেখতে দাও! সাদিয়া ঘুরলো ৷ কিন্তু তার চেহারাটা চাদর দিয়ে ঢাকা ৷ আজকে তার কি হলো বুঝছিনা ৷ আশ্চর্যজনক ব্যাপার ৷ সাদিয়া চেহারা ঢেকেই বলল,

-চোখটা বন্ধ করেন একটু ৷

কিঞ্চিৎ বিরক্ত হয়ে চোখ বন্ধ করলাম ৷ কিছুক্ষণ পর সাদিয়া আমাকে চোখ খুলতে বললো! চোখ খুলে অবাক হয়ে গেলাম ৷ অবাকের উচ্চশিখরে পৌঁছে বিস্ময়ে বিস্মিত হয়ে বিমোহিত নয়নে সাদিয়ার বদনখানীতে চেয়ে রইলাম নিষ্পলকে ৷ সে লজ্জায় কাতর হয়ে লজ্জাবতীর মত চুপষে দাঁড়িয়ে আছে ৷ সাদিয়ার গায়ে গোলাপী রঙের শাড়ি ৷ চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া ৷ দীঘল কালো লম্বা চুলের একাংশ বুকের একপাশে রেখেছে ৷ তার চুলগুলো পরিপাটি ৷ মুখটাও ফ্রেশ ৷ স্নীগ্ধতায় তাকে প্রস্ফুটিত ফুলের মত লাগছে ৷ ক্রিম মেখেছে বুঝতে পারছি, যেকারণে তার দু গালের মাঝে লাল আভা টের পাচ্ছি ৷ এমনকি আজ সে চোখে সুন্দর করে কাজলও দিয়েছে ৷ তাকে আজকে এতটাই সুন্দর লাগছিল যা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয় ৷ যদিও আমার বউকে স্বাভাবিক অবস্থাতেও অনেক সুন্দর লাগে ৷ সেসময় ন্যাচারাল বিউটি আর এখানে কৃত্তিম! হাতের ব্যাগটা ফ্লোরে রেখে সাদিয়ার পিছে দাঁড়ালাম ৷ অতঃপর, তাকে পিছন থেকে ঝাঁপটে ধরে আদুরে গলায় বললাম,

-অনেক সুন্দর লাগছে মিষ্টি বউ আমার ৷ তবে, তোমাকে সাঁজগোজ ছাড়াও অনেক সুন্দর লাগে ৷ নিশ্চয় আমার ঐদিনের কথায় কষ্ট পেয়ে এমনটা করেছো? কিন্তু বউ, আমি ঐদিন যা বলেছি মিথ্যা বলেছি ৷ রাস্তাতে কোনো মেয়েকে দেখিনি ৷ সত্যি বলতে তুমি বাদে অন্যকোনো মেয়ের দিকে সেভাবে তাকাইনা ৷ তুমি ভাল করে জানো আমি তোমার দিকে তাকালে সহজে পলক ফেলিনা ৷ আজকে তুমি জেনে নাও যে, আমার চোখে সবচেয়ে সুন্দর মানুষটা অন্য কেউ নয়, তুমিই!

আমি আগের চাকরিটা হারানোর ফলে চাপের মধ্যে পরে যাই ৷ আগের চাকরিতে মাস শেষে বেতন পেতাম ২৫ হাজার, অথচ এটার বেতন মাত্র ১৬ হাজার টাকা ৷ যেকারণে, সংসারের ছোটখাটো চাহিদায় পূরণ করতে ব্যর্থ হই ৷ তোমার চাহিদাগুলোও পূরণ করতে পারিনা ৷ প্রায় ৩ মাস হলো আমি তোমাকে ঠিকমত পোশাক, প্রসাধনী কিনে দিতে পারিনা ৷ অথচ, তুমি ভুলেও এসবের জন্য জোর দাওনি ৷ আমাকে একবারও জোর দিয়ে বলোনি কেন এসব তোমাকে দিতে পারছিনা ৷ অনেকদিন ধরে ভাবছিলাম তোমাকে এমনভাবে কিছু কথা বলবো যাতে তোমার চাহিদাগুলোর কথা মুখ ফুটে বলো ৷ তাইতো সেদিন তোমাকে রাগিয়ে ঐরকম কথা বলেছিলাম ৷ আর তুমিও তোমার প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলোর কথা অকপটে বলে দিয়েছিলে ৷ তবে আমি খুশি হবো সবসময়ই তোমার চাহিদার কথা অকপটে বলে দিলে ৷ চেপে রাখবেনা কিছু ৷

তুমি সেদিন তোমার আপুর থেকে ৫ হাজার টাকা নিলে ৷ ঐ টাকা দিয়ে হয়তো এই শাড়িটা কিনেছো, সেইসঙ্গে তোমার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ৷ ভাল করছো ৷ তবে আমাকে বললে খুশি হতাম ৷ আমি চেষ্টা করতাম এসব কিনে দিতে ৷ আর কয়টা দিন পরই বেতন পাবো ৷ ভেবেছিলাম বেতন পেলে সব কিনে ফেলবো ৷ আগের মাসগুলোতে ঋণের চাপে পরেছিলাম, সেই ঋণ শেষ হয়েছে ৷ এখন আর কোনো সমস্যা নেই ৷ তুমি যা চাইবে তাই পাবে ৷ তাই কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে ভাই, বোনকে নয় প্রথমে আমাকে বলবে ৷ ঠিকআছে? সাদিয়া কাঁদছে ৷ শব্দ করে ৷ তার কান্নার শব্দ শুনে কৃত্তিম রাগ দেখিয়ে বললাম,

-আরে কাঁদছো কিসের জন্য? আমি কি কষ্ট দিয়ে কথা বলেছি? সাদিয়া কান্না ও হাসির সমন্বয়ে বলল,

-আনন্দে কাঁদছি ৷ আজকে আপনাকে আপনি করে নয় তুমি করে বলতে ইচ্ছা করছে ৷ এতদিন আপনাকে ভয় পেতাম, আজকে আর ভয় লাগছেনা ৷ তাই তুমি করে বলবো ৷ তুমি করে বলার অনুমতি দেন! খিলখিল করে হেসে উঠলাম বউয়ের কথা শুনে ৷ আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,

-ঠিকআছে, তুমি করে বলো ৷ তবে, আমি আজ থেকে তোমাকে আপনি করে বলবো ৷ ঠিকআছে? বউ তার হাতের কনুই দিয়ে আঘাত করে বলল,

-না ঠিক নাই ৷ তুমি করেই বলবে ৷ আর এখন আমাকে ছাড়ো ৷ সাজতে গিয়ে আজ রান্না করিনি ৷ ভেবেছিলাম আমাকে দেখে তোমার ক্ষুধা চলে যাবে! আজ রাতে না খেলেই চলবে! অবাক হলাম খানিকটা ৷ তবে জোর গলায় বললাম,

-ক্ষুধা কিন্তু সত্যিই চলে গেছে ৷
-নিশ্চয় বাইরে খেয়ে আসছো ৷ তাই এমনটা বলছো!
-না না, আসলে তোমাকে দেখে ক্ষুধা উধাও!
-কিন্তু আমার যে প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে ৷ অথচ, রাঁধতে মন চাচ্ছেনা ৷ এখন কি করবো?
-এটা কোনো ব্যাপার হলো? আমিই রান্না করবো আজ!
-পারবে?
-না পারলে একটা ডিম ভেজে দেখাবো! বউ খিলখিল করে হেসে বলল,
-থাক, লাগবেনা রান্না করা ৷ আজকে সুমি ভাবীর বাসায় খাবো ৷ তাদের বাসায় আজ আমাদের দাওয়াত রয়েছে!
-বাহ! তাহলে তো হলোই ৷ এরপূর্বে একটু রোমান্স করে নিই, কি বলো?
-খবরদার! ফ্রেশ হয়ে আসো ৷ মধ্যরাতের পূর্বে কোনো পাগলামী না! চমকে উঠে বললাম,
-মধ্যরাতের আগে পাগলামী করলে কি হবে? বউ পেটে শুরশুরি দিয়ে বললো,
-ঘোড়ার আন্ডা হবে!

কথাটি বলে সাদিয়া আমার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ভুবন ভুলানো হাসি হেসে আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে হাঁটতে হাঁটতে রুমের দিকে চললো ৷ তাকে পিছন দিক থেকে দেখতে নতুন করে মুগ্ধ হচ্ছি ৷ আসলে স্ত্রীর প্রেমে পরলে তার সবকিছুতে নতুন ভাবে বারংবার মুগ্ধ হতে হয়!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত