আমার সমস্যা হচ্ছে আমি টানা চার রাত ধরে ঘুমোতে পারিনা। চোখ বন্ধ করলেই মেয়েটির ছবি দেখতে পাই। আর তখনই অবচেতন মন আমাকে জানান দিয়ে যায় মেয়েটি আর আমার লাইফে নেই। আমি প্রচণ্ড যন্ত্রণায় ছটফট করি। প্রায় দুই সপ্তাহ পার হয়ে গিয়েছে মেয়েটিকে আমি হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের রিলেশনটা ব্রেকাপ করতে বাধ্য হয়েছি।
ডাক্তার খুব মনোযোগ দিয়ে আমার কথা গুলো শুনছেন। চেয়ার ডানে বামে দুলিয়ে গভীর ভাবে ভাবছেন।সাইকিয়াট্রিস্ট ডাক্তাররা রোগীর সাথে খুব সহজেই ভাব জমাতে জানেন। রোগীর মানসিক অবস্থা বুঝার জন্য আদি অন্ত সব খুঁটিনাটি জিজ্ঞেস করেন। তিনিও আমার নাম, পরিচয়, পেশা সব শুনে নিয়েছেন। কিছু ডাক্তার আছেন নিজেকে রোগীর স্থানে ক্ষণিকের জন্য বসিয়ে গভীর ভাবে ভাবেন। এই ডাক্তার সম্ভবত আমার কাহিনীর ভেতর ডুবে গিয়েছেন। যতই বলছি ততই তার আগ্রহ বেড়ে যাচ্ছে। খুঁটিনাটি প্রশ্ন করে যাচ্ছেন। তার উত্তর দিতেই উনাকে সবকিছু খুলে বলে যাচ্ছি মেয়েটির সাথে আমার প্রেম ছয় বছরের। মেয়ে আমাকে অনেক ভালোবাসে, আমিও তাকে মনে প্রাণে ভালোবাসি। তার জন্য নিজের এলোমেলো জীবনটা গুছিয়ে নিয়েছি৷ তাকে ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ। কিন্তু.. মেয়ের বাবা কোনো ভাবেই সম্পর্ক মেনে নেবে না।
– মেনে না নেওয়ার বিশেষ কোনো কারণ?
– উনিই ভালো জানেন
– মেয়ের পরিবারের সাথে কথা বলেছেন?
– না, যতটুকু শুনেছি মেয়ের বাবা ভয়ংকর মানুষ, রাগ উঠলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেন না। তার মেয়ে রিলেশন করে এটা শুনেই তিনি দুজনের উপর ক্ষেপে আছেন
– এটা কেমন কথা, আগে তো জানা প্রয়োজন ছেলে কি করে কোথায় থাকে এরপর না হয় মানা না মানা পরের সিদ্ধান্ত
– জ্বী স্যার, আমারো একই কথা, কিন্তু উনি প্রেম দুচোখে দেখতে পারেন না
– হুম, আজকাল যুগের প্রেম অনেকেই দেখতে পারে না
– কিন্তু স্যার বলুন তো এই ছয় বছর আমরা দুজন একত্রে কতটা স্বপ্ন বুনেছি তার কি কোনো মূল্য নেই?
– কি আর করার, মানুষের লাইফ কখনো থেমে থাকে না, আমি কিছু মেডিসিন লিখে দিচ্ছি নিয়মিত খেয়ে যাবেন, কিছুটা রিল্যাক্স অনুভব করবেন আশাকরি
– কিন্তু স্যার মেডিসিন দিয়ে কি মনের মানুষকে ভুলিয়ে দেওয়া সম্ভব?
– হয়তো না, তবে যন্ত্রণা কমিয়ে আনা সম্ভব।
– আমিতো কল্পনাও করতে পারিনা তাকে ছাড়া। মেয়ের অবস্থাও ঠিক আমার মতন কিন্তু সে তার পরিবারকে খুলে বলতে পারে না৷ আমি মেডিসিন খেয়ে সুস্থ থাকবো আর সে ধুকে ধুকে যন্ত্রণা পাবে এটা হতে পারে না।
– আপনি তাকেও কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখাতে বলুন, একটু হলেও উপকার পাবে
– আচ্ছা স্যার, আমিও ডাক্তার দেখাচ্ছি মেয়েও দেখাবে কিন্তু অসুস্থ কি শুধু আমরা দুজনেই? তার পরিবারকে কি ডাক্তার দেখানো উচিৎ নয়? ডাক্তার কিছুক্ষণ ভেবে বললেন..
– আমার যতদূর মনে হচ্ছে মেয়ের বাবার ভেতরেও সমস্যা রয়েছে। আসলে আমরা প্রতিটা মানুষই কোনও না কোনো মনোরোগে আক্রান্ত, আমরা নিজেরাও অনেক সময় বুঝতে পারি না। যখন খুব বেশি বেড়ে যায় তখন সেটা টের পাই। আপনার প্রেমিকার পিতা সম্ভবত অতিমাত্রায় ইগো সমস্যা ভুগছেন।
– স্যার এমন কোনো মেডিসিন নেই যা দ্বারা উনার আলগা জেদ সারিয়ে দেয়া যায়? ডাক্তার হেসে হেসে বলছেন..
– মেডিসিন থ্যারাপি সব কিছুই কমবেশি বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছে, কিন্তু উনাকে সুস্থ করার চেষ্টায় সময় ব্যয় না করে নিজেরাই বরং সুস্থ হয়ে যান, এটাই ভালো হবে। যে বাবা নিজের সন্তানের প্রেমের খবর শুনতে পারছে না, তাকে আবার না মানার কারণে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন এটা আপনাদের পক্ষে অসম্ভব ব্যাপার
– স্যার আপনি ওসব নিয়ে ভাববেন না, যদি আমরা তাকে চেম্বার পর্যন্ত আনতে পারে আপনি উনাকে ট্রিটমেন্ট দিতে পারবেন?
– জ্বী অবশ্যই। আপনি এখন ওসব চিন্তা না করে যা যা মেডিসিন দিলাম চালিয়ে যান। বুঝতে পারতেছি আপনার অনেক অনেক ঘুমের প্রয়োজন
– স্যার আমাকে কি পাগল মনে হচ্ছে?
– আরে ধ্যাৎ, কি যে বলেন, আপনি মানসিক প্রেসারে আছেন, আপনার রিলাক্স হওয়ার প্রয়োজন, এজন্য ঘুমোতে বললাম। আর হ্যা আপনি যাকেই নিয়ে আসেন আমি চিকিৎসা করে দেব এই নিয়ে কিচ্ছু ভাবতে হবে না। একদম রিল্যাক্স থাকুন। আপনি নিজের প্রতি একটু যত্নশীল হোন।
– ওকে স্যার। কিন্তু মেডিসিন ট্রিটমেন্ট নিয়েও যদি কাজ না হয় তখন কি উপায় হবে? আমার কি তখন উচিৎ মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করা?
– দেখুন পালিয়ে বিয়ে এটা কোনো সমাধান নয়। এতে করে মেন্টাল প্রেসার অনেক বেড়ে যায়, পরবর্তীতে সংসারে অনেক ঝামেলা দেখা দেয়। আপনারা দুজন একে অপরকে এতই যেহেতু চান তবে তার পরিবারকে সাহস নিয়ে সব বুঝিয়ে বলুন। অনেক সময় সামনা সামনি কথা বললে মন চেঞ্জ হয়ে যায়। কারো সম্পর্কে অন্যের মুখে শোনা আর নিজে উপস্থিত থেকে দেখে নেওয়া অনেক পার্থক্য রয়েছে। হতে পারে ফেস টু ফেস কথা বলে দুজনের চাওয়াটা উনাদের বুঝাতে পারলে মনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে।
– এক্সাক্টলি স্যার, আমিও আজ সকালে এটাই ভেবেছি। যা কিছু হোক আজ সব কিছু উনাকে খুলে বলেই দিব। তাই আর একমুহূর্ত দেরি করিনি, সরাসরি আপনার এখানে সাহস নিয়ে চলে এলাম!
ডাক্তার আমার দিকে ভ্যাবাচেকা খেয়ে তাকিয়ে আছেন! কোন মেয়েকে নিয়ে কথা হচ্ছিলো এতক্ষণে তিনি ভালোভাবে বুঝে গেছেন। আমি কথা না বাড়িয়ে প্রেসক্রিপশনটা হাতে তুলে নিলাম। যেতে যেতে বলে দিলাম… স্যার আপনি বলেছেন মেয়ের বাবাকে আপনার চেম্বারে আনতে পারলে আপনি উনার ট্রিটমেন্ট করে দিবেন। উনাকে আজ আপনার চেম্বারে রেখে গেলাম! শুধু উনাকে একটু বলে দিয়েন তার মেয়েকে আমি সত্যিই ভালোবাসি, আজীবন এভাবেই ভালোবেসে যাব।