বাসর ঘরে ঢুকে যদি দেখেন আপনার স্ত্রী জ্বলন্ত সিগারেট ঠোঁটে রেখে একমনে টানছে আপনার কেমন লাগবে? জানি না আপনার কেমন লাগবে; কিন্তু আমার স্ত্রীকে এই অবস্থায় দেখে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে গেলো।বাবা মা’র ইচ্ছেতেই শ্রাবণীকে বিয়ে করলাম।আমার জানা মতে শ্রাবণী খুব শান্ত স্বভাবের মেয়ে ছিলো কিন্তু ওর যে এত বড় বদ অভ্যাস আছে তা জানতাম না। আমি শ্রাবণীর পাশে গিয়ে একটু রাগের স্বরে বললাম,
–আমি তো জানতাম তুমি খুব ভালো মেয়ে। তাছাড়া আমার বাবা মাও তোমার বিষয় খুব ভালো বলেছে। তা এটা কি ভালো মেয়ের নমুনা? শ্রাবণী কিছু বললো না।সে একমনে সিগারেটে আরো দুটো লম্বা টান দিলো। তারপর সিগারেটের আগুনটা নেভাতে নেভাতে আমায় বললো,
-আমার আগে সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস ছিলো না।যবে আমাদের বিয়ে ঠিক হলো আর আমি জানতে পারলাম তুমি সিগারেট খাও তবে থেকেই খাওয়ার অভ্যাস করে নিলাম।আমি যদি সিগারেট খাওয়া না শিখতাম তাহলে তোমার সাথে সংসার করতে পারতাম না কারণ তোমার মুখ থেকে সিগারেটের গন্ধ বের হতো আর আমার বমি চলে আসতো কিন্তু এখন আর এই সমস্যা হবে না কারণ তুমি আমি ২ জনেই সিগারেট খাই। তুমি তো আর সিগারেট খাওয়া ছাড়বে না তাই আমিই সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস করে নিলাম শ্রাবণীর কথা শুনে আমি মাথা নিচু করে বললাম,
–আমি আর সিগারেট খাবো না
তারপর থেকে কখনো আমি শ্রাবণীর সামনে সিগারেট না খেলেও শ্রাবণীর আড়ালে বাহিরে ঠিকিই সিগারেট খাই। আর শ্রাবণী যেন কিছু বুঝতে না পারে সে জন্য বাসায় ফেরার আগে দাঁত ভালোভাবে ব্রাশ করে মুখে আদা চিবিয়ে বাসায় আসি সকালের দিকে বাজার করতে আমি আর পাশের ফ্ল্যাটের ২ জন আংকেল একসাথে বাসা থেকে বের হলাম। তখন শ্রাবণী বেলকনি থেকে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে , ও গো শুনছো, ১প্যাকেট বেনসন সিগারেট এনো তো গোল্ডলিপ সিগারেট খেতে আর ভালো লাগে না।” শ্রাবণীর কথা শুনে আমি শ্রাবণীর দিকে হা করে তাকিয়ে রইলাম আর ২ আংকেল আমার দিকে তাকিয়ে রইলো আমি বাসায় এসে রাগে চিৎকার করে শ্রাবণীকে বললাম,
— আমি তোমার কথা মতো সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি কিন্তু তুমি তারপরেও ২ জন মুরব্বির সামনে এইসব ফালতু কথা বললে? উনারা কি মনে করবে একটাবার ভেবে দেখেছো? শ্রাবণী খুব শান্তভাবে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-পিয়াস, তুমি বাসায় সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছো কিন্তু বাহিরে খাওয়া ছাড়ো নি। তুমি হয়তো ভুলে গেছো তোমার কাপড় ছোপড় আমি ধুয়ে দেই আর যখন তোমার কাপড় ধুতে যায় তখন তোমার প্যান্টের পকেট থেকে সিগারেটের গন্ধ পাই। তোমায় আমি সিগারেট খাওয়া ছাড়তে বলেছিলাম, তোমার মিথ্যাবাদী হতে বলি নি সেদিনের পর থেকে শ্রাবণীর হাত ধরে আমি ওয়াদা করেছিলাম আমি আর সিগারেট খাবো না। তবুও যেন ও লোকের সামনে আমাকে এইভাবে লজ্জা না দেয় আমার আর শ্রাবণীর চলাচলের সুবিধার জন্য আমি ১৭ লাখ টাকা দিয়ে নতুন গাড়ি কিনলাম।আর গাড়ি কিনার উপলক্ষে বাসায় কয়েকজনকে ডেকে একটা ছোট খাটো পার্টি দিলাম। পার্টির এক পর্যায়ে দেখি শ্রাবণী পাশের বাসার ভাবীকে বলছে,
-” দেখলেন ভাবী, আমার স্বামী ৩০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করেও ১৭ লাখ টাকা দিয়ে ঠিকিই প্রাইভেটকার কিনে ফেলেছে আর আপনার স্বামী ৫০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করার পরেও ১ লাখ টাকা দিয়ে এখন পর্যন্ত একটা মোটরসাইকেল কিনতে পারে নি। আপনার স্বামীকে বলবেন আমার স্বামীর কাছ থেকে শিখতে; কিভাবে অল্প বেতনের চাকরি করেও বেশি টাকা ইনকাম করা যায়” শ্রাবণীর মুখে এইসব উল্টো পাল্টা কথা শুনে আমি ওরে টেনে সবার সামনে থেকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে বললাম,
— তুমি এইসব কি উল্টো পাল্টা কথা সবার সামনে বলছো? লোকে কি ভাববে বলো তো? শ্রাবণী তখন আমার চোখে চোখ রেখে বললো,
-তুমি ঘুষের টাকা দিয়ে গাড়ি কিনেছো সেটাই ভাববে। আমি শ্রাবণীকে কিছু বলতে যাবো কিন্তু তার আগেই শ্রাবণী আমায় থামিয়ে দিয়ে বললো,
-পিয়াস, তুমি অসৎ কাজ করেছো এটা যেমন সবার সামনে মুখ ফুটে বলেছি তেমনি তুমি যদি সৎ কাজ করতে সেটাও আমি সবার সামনে গর্ব করেই বলতাম। আমি লাখ টাকা দামের গাড়ি দিয়ে আরাম আয়েশে চলতে চাই না। তুমি সৎ উপায়ে অল্প টাকা রোজগার করো আমি দশ টাকা দিয়ে বাসের হেন্ডেল ধরে আরামে চলাচল করতে পারবো
আমি বুঝে গিয়েছিলাম আমার ভুলটা কি। তাই আমি ওর হাত ধরে ওয়াদা করলাম আর কখনো অসৎ উপায়ে ইনকাম করবো না। কয়েকদিন ধরে খেয়াল করছি শ্রাবণী বাসার নানা কাজে ব্যস্ত থাকলেও আযানের ঠিক আগ মূহুর্তে টিভির সামনে বসে আর পুরো ভলিউম দিয়ে 9xm চ্যানেলে হিন্দি গান শুনে।আর এজন্য পাশের ফ্ল্যাটের একজন আমায় বলে গেলো, “আপনাদের কি মরণের ভয় নাই? আযানের সময় ফুল ভলিউমে গান বাজান।” আজ যখন শ্রাবণী আযানের সময় পুরো ভলিউম দিয়ে গান বাজাচ্ছিল তখন আমি ওর হাত থেকে রিমোট কেড়ে নিয়ে টিভিটা অফ করে বললাম,
–তুমি এইসব কি শুধু করলে? আযানের সময় কেউ এত জোরে গান বাজায়? শ্রাবনী আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-কেন? আযানের সময় গান বাজালে সমস্যা কি? আমি রেগে গিয়ে বললাম,
— আরে তুমি পাগল হলে না কি? আমরা তো মুসলমান না কি।তাছাড়া আযানের সময় জোরে গান বাজালে লোকে খারাপ বলে শ্রাবণী এইবার আমার আরো কাছে এসে বললো,
– তুমি যদি আযানের সময় মসজিদে না গিয়ে ঘরে বসে থাকতে পারো তাহলে আমি গান বাজালে সমস্যা কি? আমি আযানের সময় গান বাজালে পাশের ফ্ল্যাটের লোক রাগ করে আর তুমি আযানের সময় মসজিদে না গিয়ে ঘরে বসে থাকলে আল্লাহ তালা রাগ করেন না? আমি বুঝে গিয়েছিলাম শ্রাবণী কি বুঝাতে চাইছে। তাই সেদিনের পর থেকে আমি ৫ ওয়াক্তই নামাজ পড়তে চেষ্টা করি।
আমরা মানুষ তাই আমাদের ভুল হবে সেটাই স্বাভাবিক। যদি ফেরেশতা হতাম তাহলে হয়তো ভুল হতো না।
এই পৃথিবীতে কোন মানুষ খারাপ না। শুধু খারাপ তার অভ্যাস গুলো। সেই অভ্যাসগুলো পাল্টাতে একজন মানুষের দরকার যে চোখে আঙুল দিয়ে ভুল গুলো দেখিয়ে দিবে। আমি সেই মানুষটিকে পেয়েছি। আর সে হলো আমার জীবনসঙ্গী আমার স্ত্রী। হয়তো ও এইভাবেই আমার প্রতিটা খারাপ অভ্যাস গুলো পাল্টিয়ে আমায় একজন প্রকৃত মানুষ বানাবে…