পাগল

পাগল

সকালে হাঁটতে বের হয়েছিলাম। বাসায় ফিরে এসে পেপারে চোখ বুলাতে বুলাতে বউকে বললাম, এক কাপ চা দাও। বউ বললো, চিনি নাই। চিনি ছাড়াই চা দেও। চা পাতি নাই। চা পাতি ছাড়াই দেও।সামান্য চা পাতা ছাড়া চা বানাতে পার না, কেমনতরো মহিলা তুমি, শুনি? বউ ঝট করে পেপারটা হাত থেকে কেড়ে নিয়ে বললো, মাথা ঠিক আছে তো? চিনি, চা পাতা ছাড়া চা বানাবো কীভাবে? ওহ! তাই তো!! চিনি, চা পাতা ছাড়া চা হবে কেমনে? অনেকদিন হয় বাজারে যাওয়া হয় না। বাজারে যেতে আমার অসম্ভব বিরক্ত লাগে। বাজারে যাওয়া আর যুদ্ধে যাওয়া একই কথা! জিনিসপত্রের দাম শুনলে মাথায় রক্ত উঠে যায়!!

বউ ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, কেন যে তোমার মতো একটা অকর্মাকে বিয়ে করতে গেলাম! আমি নিরীহ গলায় বললাম, পৃথিবীর নব্বই পারসেন্ট মহিলা মনে করে তার জামাইটা অকর্মা!যদি জামাই পাল্টাপাল্টি করার সিস্টেম থাকতো তবে পৃথিবীর প্রায় সব মহিলা তার জামাই পাল্টে ফেলতো!! বউ আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, আহা!কেন যে এই সিস্টেমটা চালু হলো না! তাহলে প্রতিদিন তোমার এই হাঁড়িমুখ খোমাটা দেখতে হতো না!! এই হাঁড়িমুখ খোমাটা দেখার জন্য তো এক সময় পাগল ছিলে,কলেজ জীবনে ,,,,,, তখন কী আর জানতাম, উপরে ফিটফাট ভিতরে লালমনিরহাট !!

মহিলাদের সাথে কথায় পেরেছে কে, কবে, কোথায়? অতএব রণভঙ্গ দিয়ে ব্যাগ হাতে ছুটলাম বাজারের দিকে। বউ তিন মাইল লম্বা বিশাল এক ফর্দ ধরিয়ে দিয়েছে।রাস্তায় দেখা হলো মতি মিয়ার সাথে। ছেলেটা সবেমাত্র গ্রাম থেকে শহরে এসেছে গাড়ির ড্রাইভারী শেখার জন্য। এখন একটা গাড়িতে হেলপার হিসেবে কাজ করছে। আমি বললাম,খবর কি মতি মিয়া।আজ গাড়িতে যাও নাই? ঠিক মতো কাজ না শিখলে ড্রাইভার হবে কীভাবে?

আমি হেলপারের কাজ করুম না,স্যার। কেন? সরকার আইন পাশ করছে হেলপার ফাইভ পাশ,ড্রাইভার এইট পাশ।আমি তো ফাইভ পাশ দিছি,কয়েক বছর পর আমি ড্রাইভার হমু কেমনে? তখন কী স্কুলে ভর্তি হমু? তাই তো! সরকার এমন গাঁজাখোরী মার্কা আইন কীভাবে করলো? পাঁচ ছয় বছর পর একজন হেলপার যখন ড্রাইভারী শিখবে তখন সে আটকে যাবে না? যারা সরকারে থাকে, তাদের বোধবুদ্ধি এতো কম থাকে কেন?

মতি মিয়া চলে যেতেই একটা চায়ের দোকানে ঢুকলাম।চায়ের তৃষ্ণা পেয়েছে। আমি একটা চায়ের দোকানে ঢুকে পরলাম। চায়ের অর্ডার দিয়ে ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে ফেললাম। চা চলে এসেছে। চায়ের কাপে আস্ত একটা মাছি ভাসছে।আমি ওয়েটারকে বললাম, চায়ে মাছি ভাসে কেন? ওয়েটার বললো, স্যার,মাছির ওজন একেবারে হালকা এজন্যই ভাসে।ওজনে ভারী হলে ডুবে যেতো! তাছাড়া চায়ের কাপ আকারে ছোট, মাছিও আকারে ছোট, সহজেই পরতে পারে।বিড়াল, ইদুর হলে কী আর পরতো, স্যার?

অকাট্য যুক্তি। আমি বেড়িয়ে এলাম। বুঝতে পারছি না ওয়েটার রসিকতা করলো কিনা!! বাজারের সামনে আসার পর মনে হলো, এই সেরেছে! পানি খেয়েছি, এখন তা নিষ্কাশন করতে হবে। তল পেট জানান দিচ্ছে। আমি একটা পাবলিক টয়লেটে চলে এলাম। পানি নিষ্কাশন করে বেরুতেই একটা ছেলে বললো, ছোট কাজ, না বড় কাজ?বড় কাজ দশ টাকা, ছোট কাজ পাঁচ টাকা। আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই ছেলেটা বললো, হাগছেন,না মুতছেন? হাগলে দশ টাকা, মুতলে পাঁচ টাকা! লে হালুয়া! এক গ্লাস পানি পেটে ঢোকালাম মাগনা, আর তা বের করতে লাগে পাঁচ টাকা! এর নাম ঢাকা শহর!!

বাজারে চলে এসেছি।দোকানদার ডিমের হালি চাচ্ছে বত্রিশ টাকা। দুই হালি ডিম কিনলাম। পেঁয়াজ চাচ্ছে দেশিটা দুইশো বিশ টাকা, পাকিস্তানি পেঁয়াজ দুইশো টাকা।আমাদের দুঃখ দূর্দশা দেখে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইমরান খান সাহেব পেঁয়াজ পাঠিয়েছেন। সাইজ ডিমের চেয়েও বড়ো,একেকটা আপেলের মতো। আমি আধা কেজি পাকিস্তানি পেঁয়াজ কিনলাম একশো টাকা দিয়ে। বড়ো হওয়ায় চারটা পেঁয়াজ আধা কেজি হয়ে গেল।

মাছের বাজারে ঢুকবো, বউ ফোন দিয়ে বললো, বাজার করা হয়েছে? আমি বললাম, ডিম কিনেছি দুই হালি, পেঁয়াজ কিনেছি এক হালি। বউ রেগে গিয়ে বললো, আমি তোমার সম্পর্কে কি হই? আমি নিরীহ গলায় বললাম, বিয়ের সময় তো কাজি সাহেব কলমা পড়িয়ে বলেছিল, আমরা সম্পর্কে স্বামী স্ত্রী হই!এই কথা জিজ্ঞেস করছো কেন বউ? যেহেতু আমি তোমার বেয়াইন হই না, স্ত্রী হই,অতএব ফালতু রসিকতা আমার সাথে করবে না! পেঁয়াজ কি কখনো হালি হিসেবে বিক্রি হয়?

বিশ্বাস কর বউ, কথা সত্যি। ডিমের হালি। বত্রিশ টাকা। পেঁয়াজের হালি একশো টাকা। আমি মোটেও মিথ্যা বলছি না,,,, তোমার মাথাটা বোধ হয় গেছে।তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আস।তোমার বাজার করার দরকার নাই। আমি একজন পাগলের ডাক্তারের আ্যপয়েন্টমেন্ট নিচ্ছি, তুমি কুইক বাসায় চলে আস,,,, আমি বুঝলাম না, বউ আমাকে পাগল ভাবছে কেন!!!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত