বিয়ে বাড়ি মানে মেয়েদের মেলা।ডানে বামে চারিপাশে শুধু মেয়ে আর মেয়ে। কিছুদিন আগে মামাতো বোন নাবিলার বিয়ে ছিলো। নাবিলার বিয়েতে গিয়ে আমি খুঁজে পেয়েছিলাম আমার জীবন সঙ্গী।
সেদিন মামাতো ভাইয়ের সাথে ফুল দিয়ে গায়ে হলুদের স্টেজ সাজাচ্ছিলাম।হঠ্যাৎ করে আরো ফুল আনতে গিয়ে ফেরার পথে একটি মেয়ের সাথে ধাক্কা লেগে যায় আমার।একদম কোনো রোমান্টিক মুভির সিনের মতো।সাথে সাথে আমার হাতের ফুল ফেলে আমি এক হাতে মেয়েটাকে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করি।দুজনের চোখে চোখ পড়ে,আর আমার পেছনে ব্যাকগ্রাউন্ডে গান বাজে, ‘পড়ে না চোখের পলক, কি তোমার রুপের ঝলক’ আমি তার প্রেমে পড়ে যাই। এ যেনো কোনো মেয়ে নয় আমার স্বপ্নে আঁকা অপ্সরী।মায়াবী চোখ-মুখ,উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণী,ঠোঁটের উপর তিল,দীঘল কালো চুল,দু গালে দুটো টোল। “এভাবেই ধরে রাখবেন নাকি উপরে তুলে হাত ছাড়বেন!” মেয়েটির কথায় আমার মুগ্ধতা কাটলো।মেয়েটির আওয়াজ শুনে আমি আবারো তার প্রেমে পড়ে গেলাম।এরকম একটি মেয়েই আমি খুঁজছিলাম।
মেয়েটি আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে যাচ্ছিলো। কিন্তু আমার কি সৌভাগ্য, এ যেনো নাটকের চেয়েও নাটকীয় কিছু।মেয়েটির চুল আমার শার্টের বোতামে আটকে আছে। আমি আস্তে করে তার চুল গুলো ছাড়িয়ে দিলাম।চুল ছাড়ানোর সময় মেয়েটির চোখের উদ্বিগ্নতা দেখে আমি আবারো তার প্রেমে পড়লাম। মেয়েটি চুল ছাড়িয়ে দেওয়ার পর মুখে ভেংচি কেটে চলে গেলো। আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম। বিয়ে করলে এই মেয়েটিকেই করবো।সাথে সাথেই মামাতো বোন কে খুঁজে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম তার নাম বুশরা।সে নাকি তার ফ্রেন্ড।বোনের থেকে তার নম্বর টা ও নিয়ে নিলাম।
বেশ ভালো ভাবেই বিয়েটা কেটে গেলো।কিন্ত বিয়েতে আমি একদম মজা করতে পারিনি, কারণ আমার মাথায় শুধু বুশরার আর আমার বিয়ের কথাই ঘুরছিলো। আজ মামাতো বোনের বিয়ের এক সপ্তাহ কেটে গিয়েছে।বুশরার সাথে এখন অব্দি পাঁচ থেকে ছয়বার আমার ফোনে কথা হয়েছে।এখন সে মোটামুটিভাবে আমার পরিচিত। কিন্তু আমি বিয়ে করবো কিভাবে সেই ভাবনায় পড়ে গেলাম।বুশরার কোনো বড় ভাই নেই এই দিক দিয়ে রেহাই পেলাম।কিন্তু তার বাবা নাকি শিক্ষক।
বুশরাকে কিভাবে বিয়ে করা যায় এবং আমার ফ্যামিলিতে ও কিভাবে আমাকে শিগগির বিয়ের জন্য উতলা করা যায় এই ফন্দি আটতে শুরু করলাম।আমি একেবারে বেকার নই,একটি বেসরকারি কোম্পানিতে আইটি ডিপার্টমেন্টে এ কাজ করি। মাসিক বেতন সব মিলিয়ে পঞ্চাশ হাজার।কিন্তু তবুও বাকি দশ বারোটা পরিবারের মতো আমার বাবা-মা আমার বিয়ে নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না।তাদের এমন নিশ্চিত ভাব দেখে আমার মনে হচ্ছে উনারা বোধহয় নাতি পুতির মুখ দেখতে চান না। নানা ভাবে ফন্দি করে মায়ের কাছে প্রকাশ করলাম আমি একটি মেয়েকে পছন্দ করি এবং তাকেই বিয়ে করতে চাই।মা বাবা দুজনেই রাজি হয়ে গেলেন কিন্তু শর্ত দিলেন উনারা বিয়ে নিয়ে কোনো আলাপ করতে পারবেন না।
এমন শর্ত শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। কিন্তু বিয়ে করতে পারবো ভেবেই খুশিতে মন ভরে গেলো।
এদিকে বুশরার আর আমার প্রেমের গাড়ি নড়তে শুরু করেছে।বুশরা এখন আমাকে অনেকটা পছন্দ করে এটা আমি জানি,যদিও সে মুখ ফুটে বলে নি, কারণ মেয়েদের বুক ফাটলেও মুখ ফুটে না। বুশরার আর আমার প্রেমের বয়স এখন এক মাস এক দিন।এই এক মাসেই আমাদের প্রেম টা এতো মজবুত হয়েছে যে আমরা দুজন একই সময় খেতে বসি,রাতে ফোনে আধঘণ্টা কথা না বললে আমাদের ঘুম ই আসে না।
এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছে আর আমার মাথার টেনশন ও বাড়ছে।এতোদিন হয়ে গেলো কিন্ত এখন পর্যন্ত আমি সাহস করে বুশরার বাবার কাছে গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারলাম না। হঠ্যাৎ একদিন মাথায় বুদ্ধি এলো কোনো ভাবে যদি বুশরার বাবার সাথে কিংবা পরিবারের অন্য কোনো আত্নীয়ের সাথে একটা ভালো সম্পর্ক করে নিজেকে ভালো ছেলে হিসেবে তুলে ধরতে পারি তাহলেই আমার আর বুশরার সংসার গড়ে উঠবে।
সেদিন বুশরার বাবার স্কুলের সামনে প্রায় তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকলাম। উনি স্কুল থেকে সোজা বাজারে গেলেন।বাজার থেকে ফেরার পথে উনার ব্যাগ টা টেনে ধরলাম। “স্যার স্যার আপনি কেনো কষ্ট করছেন,আমি থাকতে আপনি কেনো কষ্ট করবেন?” হঠ্যাৎ করে এমন ভাবে ব্যাগ নিয়ে সাহায্য করাতে বুশরার বাবা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলেন। চশমা টা ঠিক করে বললেন, “কে তুমি বাবা, তোমাকে তো চিনতে পারলাম না” “রফিক স্যার আপনি আমাকে চিনতে পারেন নি? আমি রাজ। মনে নেই ছোট বেলায় সব সময় ক্লাসে দেরিতে আসতাম” “অহ আচ্ছা তাই নাকি!” “জ্বি স্যার।আসেন স্যার চলতে চলতে কথা বলি,আমি আপনাদের বাড়ির ওদিকে ই যাচ্ছি আমার এক ফ্রেন্ডের বাসায়” “তা বাবা তুমি কি করো এখন!”
বুশরার বাবার কিছু পুরাতন ছাত্র দের থেকে খোঁজ নিয়ে একটি ছাত্রের খোঁজ বের করে বুশরার বাবার কাছে নিজের পরিচয় তুলে ধরলাম। আর এমনিতেই শিক্ষকেরা ছাত্রদের চরিত্র মনে রাখে নাম চেহারা এসব তাদের মনে থাকে না। এভাবে প্রতিদিন বুশরার বাবার সাথে নানা বাহানায় আমি দেখা করতে শুরু করি। এখন স্যারের সাথে আমার বেশ ভালো পরিচয়। স্যার আমাকে অনেক সময় ই নিজের সুখ দুঃখের কথা বলতেন। আর ওদিকে আমার আর বুশরার প্রেমের গাড়ি দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এভাবেই কেটে গেলো কয়েক মাস।বুশরা ভর্তি হলো অনার্স এ। আমি ভাবলাম এটাই উপযুক্ত সুযোগ। স্যার কে কথার ছলে একদিন বললাম, “স্যার আমি বিয়ে করবো ভাবছিলাম, কিন্তু কোনো মেয়েই খুঁজে পাচ্ছিনা” এভাবে আমি স্যার কে নিজের মেয়ের ব্যাপারে ইঙ্গিত দিলাম।এখন আমার মাঝেমধ্যেই স্যারের বাসায় ও যাওয়া হয়। একদিন বেশ সেজেগুজে, টাই-কোর্ট পরে বাথরুমের আয়নায় অনেকবার রিহার্সাল করে স্যারের বাসায় গিয়ে বলেই ফেললাম, “স্যার আমি আপনার মেয়েকে পছন্দ করে ফেলেছি।আপনার মেয়েকে আমি বিয়ে করতে চাই?”
স্যার চশমার নিচ দিয়ে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন।আমার গলা তখন শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছিলো।বার বার ভয় হচ্ছিলো স্যার না উঠে গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেন। কিন্তু সেটা হলো না।স্যার ওভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হেসে দিলেন। আমি স্যারের হাসির কারণ খুঁজে পেলাম না। আমি একটু কেশে নিজেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে এনে বললাম, “স্যার আপনার মেয়ের অনেক খেয়াল রাখবো,সাধ্য অনুযায়ী সব কিছু দেওয়ার চেষ্টা করবো” স্যার হাহাহা হাহাহাহ করে আবারো হেসে উঠলেন।বুশরা ও আমার আসার বিষয়ে জানতো না।সে পর্দার আড়ালে লুকিয়ে টুকির মতো তাকিয়ে ছিলো।
স্যার নিরবতা ভেঙে এবার উঠে দাড়ালেন।তারপর বললেন, “ওগো বুশরার মা শুনছো, মিষ্টি কিছু আনো মেয়ের বিয়ে হতে যাচ্ছে” এভাবেই মেয়ে পটানোর পাশাপাশি মেয়ের বাবাকে ও পটিয়ে আমি বুশরাকে বউ করে ঘরে তুলে ফেললাম। এ গল্প থেকে আমরা কি শিক্ষা পাইঃ- যদি কখনো কোনো মেয়েকে পছন্দ হয় এবং তাকে বিয়ে করতে চান তাহলে মেয়েটাকে পটানোর পাশাপাশি তার পরিবারের সদস্য দের ও পটান তাহলেই আপনার বিয়েতে আমাকে দাওয়াত দিতে পারবেন।