–‘আমরা তাহলে শুরু করতে পারি?’
কী যেন ভাবছিলাম। মাহবুব সাহেবের কথা শুনে বাস্তবে ফিরতে হলো। মেঘের দিকে তাকিয়ে অল্প হাসার চেষ্টা করলাম।
সে চেষ্টা খুব একটা সফল হল বলা যায় না। হাসিটা ফ্যাঁকাসে হয়ে ঠোঁটের কার্নিস ধরে ঝুলে থাকল।
মেঘ হাসল না। মেঘ অনেক দিন হাসে না।
সে একদৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে রইল। সেই দৃষ্টিতে একটা অস্পষ্ট ঘৃণা জ্বলজ্বল করছে। তাই বেশিক্ষন চোখে চোখ রাখা গেলো না।
নামিয়ে নিলাম। হালকা গলা খাঁকারি দেয়ার চেষ্টা করলাম। সেটাও খুব একটা ভালো হল না।
আজ কিছুই মনমতো হচ্ছে না। আজ সব বেঠিকের দিন।
মেঘ আর আমি বসে আছি এডভোকেট মাহবুব মোর্শেদের চেম্বারে। আজ আমাদের জন্য একটা বিশেষ দিন।
আজ আমি আর মেঘ ডিভোর্স পেপারে সাইন করব।
কুচকুচে কালো ছিমছাম টেবিলটার অন্য পাশে মাহবুব সাহেব বসে আছেন। এপারে আমরা; পাশাপাশি। তার হাতের নিচে একটা ফাইল খোলা।
নিশ্চয়ই আমাদের ফাইল। ফাইলটা সুন্দর। কালো টেবিলের সাথে বেশ মানিয়ে গেছে।
দেখে মনে হয় যেন তার জন্মই হয়েছিল এই টেবিলে আসার জন্য।
এডভোকেট মাহবুব সাহেবের চশমার কাচের পেছনের চোখ দু’টো শক্ত। বেচারা গম্ভীর হয়ে আছেন।
শশ্মানে মড়া পোড়াতে উদ্যত পুরোহিত যেন, এখুনি বিড়বিড় করে মন্ত্রপাঠ শুরু করবেন। তার ভ্রু কিছুটা কুঁচকে আছে।
অসাবধানে ছুঁয়ে দেয়া লজ্জাবতী গাছের পাতার মত কুঁচকে আছে। এটা বোধহয় তার পেশাগত দক্ষতা।
বিচ্ছেদ যেখানে স্বাভাবিক, শোকের বাজার সেখানে রমরমা।
আমি আর মেঘ পাশাপাশি বসে থাকলেও ততটুকুই দূরত্বে বসা যতটুকুতে স্পর্শের স্বাধীনতা নেই।
তবু পর্যাপ্ত পরিমান সাবধানতার অভাবে আমার হাতের সাথে মেঘের হাতের খানিকটা ছুঁয়ে গেলে মেঘ এমনভাবে চমকে ওঠে যেন তার গায়ে বিদ্যুৎ খেলে গেছে।
চমকে উঠি আমিও। আমরা এখন আমাদের ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে চলি।
নতুন মুখ পরিচিত হলে যতটা আপন লাগে, চেনা মানুষ অপরিচিত হলে তারচেয়ে হাজারগুন অচেনা হয়। এটাই সত্যি।
অথচ গল্পটা অন্যরকম ছিল। বিয়ের পরে আমাদের শুরুর দিকের মুহূর্তগুলো স্মৃতি হয়ে মনে আলতো করে টোকা দিয়ে যায়।
মাথার ভেতর এখনো কী জীবন্ত মৃত সময়গুলো। অনেক কয়টা বিকেলের বিনিময়ে সারা নিউমার্কেটে হেঁটে হেঁটে এটা-সেটা কিনতাম আমরা।
কেনাকাটা যেন শেষই হতে চাইতো না। এটা কিনি তো ওটা বাকী থেকে যায়। ওটা কিনলে সেটা ভুলে যাই।
হাঁটতে হাঁটতে পায়ে মরিচা ধরে যেতো সেইসব সন্ধ্যায়। তবু চারটি পায়ে কখনো ক্লান্তি আসেনি।
আমাদের একগুঁয়েমি দেখে একসময় সন্ধ্যাই বরং ক্লান্ত হয়ে রাত হয়ে যেত।
সেই সুদূর রাতের শহরটায় একরাশ স্বপ্ন ছিল; ছিল বেঁচে থাকার তীব্রতা।কোন কোন সন্ধ্যায় আমাদের স্বপ্নগুলো বৃষ্টি হত।
আর আমরা কাঁটাবনের ‘কফিহোম’-এর কাঁচে ঘেরা স্বচ্ছ দেয়ালে বৃষ্টিফোঁটার গড়িয়ে চলা দেখতে দেখতে আনমনা হতাম।
আমাদের হাত আর আঙ্গুলগুলো পরষ্পরকে ছুঁয়ে থাকত তখন। মাঝে মাঝে খুব চাইতাম কিছুক্ষণের জন্য সারা শহরে আঁধার নেমে আসুক।
ব্ল্যাক আউট হোক। মেঘকে খুব করে কাছে জড়িয়ে ধরে একটা গভীর চুম্বনের ইচ্ছায় বুঁদ হয়ে যেতাম।
সেই সমস্ত সময়ে কখনো কখনো ভীষণ অস্থির বোধ করতাম, অসহায় মনে হতো নিজেকে। মরে যেতে ইচ্ছা করত।
আমি একজন তুচ্ছ মানুষ; আমার অভাজন জীবনে এত সুখ থাকবে কেন? বুকের ভেতরটায় কেউ যেন পিন ফুটাতো। উফ। কি অসহ্য সুখ।
তাতে ডুবতে ডুবতে দমবন্ধ হয়ে আসতো। মেঘ মাঝে মাঝে অবাক হত। ‘কি ভাবো এত বলতো।’ হাসতাম।
ওর হাতটা আরো শক্ত করে ধরতাম। বলতে গিয়ে সময় নষ্ট করার ইচ্ছে হত না আমার।
একটা সেকেন্ডও হারানো যাবে না; প্রতিটা মুহূর্ত দরকার।
–‘সোহেল সাহেব?’
নিজের নাম শুনে চমকে উঠলাম। যদিও এতটা চমকে যাবার মতো কিছু হয়নি।
হয়ত উড়তে উড়তে অতীতের খুব কাছাকাছিই পৌঁছে গিয়েছিলাম গ্রীক সিসিফাসের মতো।
তবে প্রাথমিক চমক কাটতেই মনে পড়ে গেলো, আজ একটা বিশেষ দিন।
–‘জ্বি’
–‘আপনি রেডি?’
–‘হু’
টেকোমাথার উকিল আমার দিকে একটা কাগজ বাড়িয়ে দিলেন। নিশ্চয়ই ডিভোর্স পেপার। কেমন যেন একটা ঘোর ঘোর লাগে।
ঘোরের মাঝেই কাগজটা হাতে নিয়ে সামনে রাখলাম। এমন হচ্ছে কেন? ঘোর কাটানোর আপ্রাণ চেষ্টা করি। খুব একটা লাভ হয় না।
সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর সূর্যের আলোয় চোখ ঝলসালে যেমন হয়, চোখ বন্ধ করে ফেললে চোখ থেকে রোদ বিদায় নেয়, মন থেকে নেয় না, তেমন অনেকটা।
গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। প্রচণ্ড একটা পিপাসা হচ্ছে।
–‘পানি খাবো’
তিনি বেল টিপে পানি দিতে বললেন। না তাকিয়েও বুঝতে পারি মেঘ আমাকে দেখছে। সেদিকে তাকানোর সাহস হয় না। কেমন যেন অপ্রস্তত লাগে।
‘আজকে বেশ গরম’ বলে অপ্রস্তত ভাবটা প্রস্তত করতে চাই। লাভ হয় না। লাভ হওয়ার কথাও না।
খুব খেয়াল করে নিঃশ্বাস নিলে বাতাসে একটা মিষ্টি গন্ধের সূক্ষ্ণ অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। গন্ধটা আমার পূর্বপরিচিত।
মেঘের গায়ের গন্ধটা এত মিষ্টি। অনেকদিনের পরিচয় এর সাথে। জীবনের অনেকগুলো সকালের সাথে জড়িয়ে আছে।
ঘুম ভাঙ্গার পর রোজ এই বাতাসেই নিঃশ্বাস নিয়ে বেঁচে উঠতাম। ভাবতে ভাবতে বুকের ভেতর একটা অবুঝ দীর্ঘশ্বাস বিদ্রোহী হয়ে উঠতে চায়।
অতি সাবধানে জমিয়ে রাখি। আমি কি দীর্ঘশ্বাসের চাষ করছি নাকি, যে চাইলেই তারা বাতাস ছোঁবে?
সেই কবে একদিন এমন গন্ধেমাখা বাতাসে অভিভূত হয়েছিলাম। একপশলা ভালোলাগায় আক্রান্ত হয়ে মনের ঘরে হৃদয়ের শয্যাশায়ী হওয়া।
হাঁটি হাঁটি পা পা করে সময় গড়ায়, আর ভালোলাগা হয়ে যায় ভালোবাসা।
হায় কে জানত তখন যে এভাবে একদিন ধরাশায়ী হবে সে। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস।
আমাদের পরিচয়ের গল্পটা এখন আর অতোটা স্পষ্টভাবে মনে পড়ে না।
প্রিয় মানুষে মুগ্ধ হবার সাথে সাথে তাকে প্রথম দেখার স্মৃতি ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে আসে।
মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা বোধহয় আজীবন থেকেই পরিচিত। তবে আমাদের দেখা হয়েছিলো কোন এক রৌদ্রক্লান্ত সকালে।
তারপর সব কিছু যেন বেশি সুন্দরভাবে চলতে লাগলো।
ধীরে ধীরে আমরা সচেতনভাবেই নিজেদের ভেতরের মানুষটাকে বের করে একে অন্যের হাতে তুলে দিই। এভাবেই শুরু।
তারপর সময়ের নিয়মে সময় গড়ায়, আর তার সাথে সাথে সুখদের প্রজাপতি হওয়া, উড়ে চলা, ছুঁয়ে চলা। কিন্তু পরিণতি? দীর্ঘশ্বাস।
হায়। প্রজাপতি। তুমি যত রঙিনই হও, মৃত্যুকে ফাঁকি দেবে কিভাবে? মৃত্যুতো রঙ চেনে না। সকল সমাপ্তিই কালার ব্লাইন্ড।
আমরা নিজেদের আর বুঝতে পারছিলাম না। তবে এটা ঠিকই বুঝতে পারছিলাম যে আমাদের আর হচ্ছে না।
একসাথে থাকতে অস্বস্তিবোধ করছিলাম দু’জনই।
অশান্তি, সন্দেহ, জেদের স্রোতে আমরা শেষদিকে বড্ড বেশি অপরিচিত হয়ে গিয়েছিলাম বোধহয়।
তাই দু’জন মিলেই সিদ্ধান্ত নিলাম- ইনাফ ইজ ইনাফ। লেটস ফিনিশ দিস ব্লাডি মনস্টার।
আমাদের মধ্যকার চিনির দানার মতো মিঠি ভালবাসা তখন আসলেই একটা লাল দানব ছাড়া আর কিছুই না।
আর এখন আমাদের অসহায়ত্বের আগুনে ঝলসে কালো হয়ে যাওয়া ভালোবাসা আটকে গেছে কালো টেবিলের ওপর রাখা কালো ফাইলের ভেতর।
আমি কান পাতলে তার ডানা ঝাপটানোর শব্দ পাই। কিন্তু হাতটা কাঁপে।
সব খাঁচা খোলা যায় না, কিছু পাখি ডানা ঝাপটে যায় আজীবন। ফেরার পথ পায় না।
আমি আর মেঘ কি আর কখনো পাশাপাশি বসব? মনে হয় না। এটাই হয়ত শেষ। হোক, তাতে কি? মেঘ নিশ্চয়ই বিয়ে করবে।
অনিককেই হয়ত। করবে নাইবা কেন। ঐ ছেলেকে নিয়েইতো আমি সবসময় সন্দেহ করতাম ওকে।
আচ্ছা ওরা কি বৃষ্টিতে একসাথে ভিজবে? রাতটা যখন নীরব, তখন নিশ্চয়ই অনিকের বুকে মাথা রাখবে মেঘ।
তাদের গাঢ় নিঃশ্বাসে জন্ম নেবে হতাশপাখি। সেই হতাশপাখিটা তার বিরাট বিরাট ডানা ঝাপটে এসে আমার একাকী জানালায় আঁচড় কাটবে।
এই পাখির নখ খুব ধারালো। দৃঢ় আঁচড়ের শব্দে এক বুক হু হু করা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আমি মাঝরাতে জেগে যাবো হয়ত।
ফাঁপা বুকটা নিয়ে একগ্লাস পানি খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করব, কিংবা কিছুক্ষণ এঘর-ওঘর পায়চারি।
কোন কোন রাতে হয়ত আমি ফোন দিব, মেঘ ঘুমজড়ানো কন্ঠে জানতে চাইবে, কে?
আমি হয়ত নিঃশ্বাস বন্ধ করে চুপ করে থাকব। অথচ আমার হয়ত খুব বলতে ইচ্ছা করবে।
ঔষধগুলো ঠিকমত খাচ্ছ তো? তোমার আবার যেই ভুলো মন। কিছুই মনে থাকে না।
এত ভোলা মন নিয়ে ডাক্তারী কর কিভাবে? কিন্তু বলা হবে না।
কিছু কথা বুকে থেকে যায়, বুকের দেয়ালে আছড়ে পড়ে ঘুরপাক খায়, তা থেকে ঘূর্ণিঝড়, অতঃপর বৃষ্টি। এভাবেই বৃষ্টি হয়।
পানিচক্র আবিষ্কার করতে করতেই একটা শুকনা মত ছেলে এসে পানি দিয়ে গেল।
ঠাণ্ডা গ্লাসের চারিদিকে বিন্দু বিন্দু জলকণা জমে আছে, ঠিক যেভাবে আহত হৃদয়ের গা ছুঁয়ে থাকে বেদনার বাষ্প।
গ্লাসটা হাত দিয়ে স্পর্শ করলাম, আরামদায়ক শীতলতা।
আমি জানি এই পিপাসা পানির না, তবু এক চুমুকে অর্ধেক গ্লাস খালি হয়ে গেল।
এখন খুব অভিমান হচ্ছে। মেঘের উপর, নিজের উপর। ও কি জানে না যে ওকে ছাড়া আমি একমুহূর্তও থাকতে পারি না?
অফিসের কাজে কখনো ঢাকার বাইরে গেলে আমি যে পালিয়ে আসতে চাইতাম, ও কি ভুলে গেছে? মাঝে মাঝে… থাক।
কি হবে সেসব কথা মনে করে। তারচেয়ে বরং ভুলে যাওয়াটাই নিয়তি হোক। শুধু আমিই না হয় নষ্ট পড়ে থাকবো এককোণে।
আচ্ছা মেঘ কি ভাবছে? ওর কি কষ্ট হচ্ছে? কী জানি। হয়ত হ্যাঁ, হয়ত না। আমি ওর দিকে তাকানোর চেষ্টা করলাম। পারলাম না।
এই পুতুল পুতুল মেয়েটা এখনো আমার বৌ। সেই চোখ, সেই বোঁচা নাকটা, একপাশে পড়ে থাকা এলোচুল।
ভাবতেই বুকের ভেতর একটা কষ্ট গোখরা ফণা তোলে। মনে মনে বলি- ‘ছোবল বসাস না, বসাস না প্লিজ।
চোখ ভিজে গেলে খুব অপ্রস্তুত হয়ে যেতে হবে, এরচেয়ে মরন ভালো।’
মাহবুব সাহেবের দেয়া ফাইলটা টেনে নিলাম। মেঘ যেন আমার দিকে তাকালো। তবে শক্ত মেয়ে, ঠিক সামলে নিল।
কলম বসাতে বসাতে মনে একটা অবৈধ অযাচিত কথা মনে হয়।
নিশ্চিত মৃত্যুপথযাত্রীওতো আশা করে একদিন সকালে উঠে দেখবে যে সে সুস্থ হয়ে গেছে।
আমি কি একটু আশা করতে পারি না- মেঘ একেবারে শেষ মুহূর্তে কিছু বলবে। যা কিছু। শুধু একবার উচ্চারণ করুক।
যে কোনো কথা, যে কোনো কিছু। তাহলেই ফাইলটা ছুঁড়ে ফেলে বুকে নিয়ে নেব মেয়েটাকে।
একটা শব্দ অন্তত বলুক। আর কিছু না। প্লিজ কিছু বলুক। ও কি বলবে না? নিশ্চয়ই বলবে।
কিন্তু বোকা আমি। এমন মুহূর্তেও আমার হাসি পেয়ে যায়। কোন শব্দ কানে আসে না।
ক্ষীণতম ধ্বনিও না, এখানে এখন কবরস্থানের নীরবতা। সেই নীরবতা ভাঙ্গে এমন সাধ্য কার।
আমি স্লো মোশনে রোবটের মত কলম তুলে নিই। কখনো এতটা অসহায় মনে হয়নি নিজেকে।
ছোটবেলায় খুব শখ করে প্র্যাকটিস করা সাইনটা আত্নার মৃত্যু পরোয়ানায় এঁকে দেয়ার জন্য কলমটা আলতো করে কাগজে চেপে ধরি।
সময়টা যেন কোন এক মহাকালের বাঁকে পথ হারিয়েছে। সময় নড়ছে না।
মনে হচ্ছে আমি যেন অনন্তকাল ধরে নিঃশ্বাস আটকে আটকে আছি এখানে। এই চেম্বার, পৃথিবী সব যেন অস্পষ্ট হতে হতে মিলিয়ে যাচ্ছে।
আমার কলম আটকে গেছে কাগজে। বার বার মনে পড়ছে আজকে জ্যামে বসে থাকার সময়ে শোনা একটা গানের কথা।
চারিদিকে আটকে ছিলো গাড়ি। এর মাঝেই কোথাও থেকে ভেসে আসছিলো উঁচু ভলিউমের গানটা। গানের কথাগুলো খুব মিষ্টি।
গায়ক তাতে বলছে, যেতে চাইলেও সে যেতে দেবে না। বুকের মাঝে রাখবে। তবু যেতে দেবে না।
‘ওরে ছেড়ে দিলে সোনার গৌড় আর পাবো না
ক্ষ্যাপা ছেড়ে দিলে সোনার গৌড় আর পাবো না
না না না আর পাবো না’
কত সহজ-সরল; অথচ আশাবাদী আর সাহসী কথাগুলো। ভালোবাসা সেখানে কত সাধারণ, অথচ কত স্পষ্ট।
কোনো দুর্বোধ্যতা নেই। নেই কোনো মুখোশ। নিজেকে আড়াল করা নেই, আছে শুধু নিজেকে মেলে ধরা।
আর কী প্রচণ্ড শক্তিশালী সেই আত্নসমর্পন। ভণিতার বদলে নিবেদন।
এসব এলোমেলো কথা মনে আসতেই এক অদ্ভুত বিষণ্ণতা আমাকে গিলে খেতে চায়। কী এক অদম্য ঘোর চারিদিকে- কুয়াশার মতো।
যেন আধহাত সামনের কিছুও ঠিক মতো দেখা যাচ্ছে না। আমি ধীরে ধীরে সেই শতাব্দী প্রাচীন নৈঃশব্দে ডুবে যেতে থাকি।
আর কিছু বুঝে ওঠার আগেই আবিষ্কার করি যে, আমার কলম ধরা হাতটা গোটা গোটা অক্ষরে কাগজের ওপর অবুঝের মতো এগিয়ে চলেছে-
‘তোমায় হৃদমাঝারে রাখিব,’…….