মায়া

মায়া

আজ মেস বদলে একটা ফ্ল্যাটে উঠলাম।আগের মেসে থেকে জবে যাওয়াটা অনেক কষ্টদায়ক। কারন প্রতিদিন বাথরুমের সিরিয়াল দিতে দিতে সময় চলে যায়।তাই একটু টাকা বেশি লাগলেও একটা ফ্ল্যাট নিলাম। সচরাচর ব্যাচেলারদের ফ্যামিলি থাকা বিল্ডিংয়ে ফ্ল্যাট পাওয়া মুসকিল কিন্তু আমার ভাগ্যটা ভাল থাকায় ২ তলা একটা বিল্ডিংয়ে একটা ফ্ল্যাট পেয়ে গেলাম। নিচ তলায় থাকে বাড়িওয়ালা আর ২ তলায় আমার বিপরীত পাশে থাকে একটা ফ্যামিলি। অবশ্য বাড়িওয়ালার ফ্যামিলি বাদে আমি এখানে কাউকেই দেখি নি। সকালে ৯টার মধ্যে অফিসের জন্য বের হয়ে যাই আর রাতে ৯টার দিকে বাসায় আসি তাই শুক্রবার ছাড়া আমি ফ্ল্যাটে থাকিই না। আর বলতে গেলে আমি বেশির ভাগ শুক্রবারে চেষ্টা করি নিজের বাসায় যাওয়ার জন্য।

বাড়িওয়ালার পরিবারে মাত্র দুইজন, আঙ্কেল আর আন্টি। আঙ্কেলের মুখে শুনেছি,ওনার একটা ছেলেও আছে। তবে সে নাকি ইতালি গিয়েছে প্রায় ৫ বছর আগে। পড়াশোনা করতে গেলেও সেখানেই নাকি বিয়ে করে সেটেল হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে নাকি টাকা পাঠিয়ে ছেলের দায়িত্ব পালন করে। এক শুক্রবারে আমি আমার কাপড় ভিজিয়ে বসে আছি। কারন ব্যাচেলারদের শুক্রবার হলো কাচাকুচির দিন। আমিও বা এর থেকে বাদ যাবো কেন? হঠাৎ কলিংবেল বাজতেই আমার ভ্রম কাটলো। হঠাৎ কে আসলো?গায়ে কোন রকমে একটা তোয়ালে গায়ে জড়িয়ে দরজা খোলতেই দেখি আঙ্কেল(বাড়িওয়ালা)দাড়িয়ে আছে।

— আরে আঙ্কেল ভিতরে আসেন?
— রাজ বাবা কি গোসলে গিয়ে ছিলে নাকি?
— না আঙ্কেল আজ তো শুক্রবার তাই ময়লা কাপড় গুলো ভিজিয়েছি।
— ও আচ্ছা। তা বাবা আজ কি তুমি গ্রামের বাসায় যাবে?
— না আঙ্কেল।
— তা বেশ। তা বাবা তোমার কাছে একটা অনুরোধ নিয়ে আসছিলাম।
— কি যে বলেন আঙ্কেল?আমি আপনার ছেলের বয়সী। কোথায় আপনি শাসন করে আদেশ করবেন,তা না করে কি অনুরোধ করছেন?

— শাসন করেছি বলেই তো, ৫ বছর ধরে মা বাবার কোল শূন্য করে ছেলেটা চলে গেছে।
— সরি আঙ্কেল,পুরনো কথা বাদ দেন। এবার বলেন আমার কাছে কেন আসছেন?
— বলছিলাম কি তুমি যদি আজকে রাতে আমাদের সাথে খাওয়া দাওয়া করতে। তোমার পাশের ফ্ল্যাটের ফ্যামিলিকেও দাওয়াত দিয়ে এসেছি।
— অবশ্যই আঙ্কেল আমি আসবো। আঙ্কেল কোন উত্তর না দিয়ে, মুখে একটা হাসি নিয়ে বিদায় নিলো। আঙ্কেল দরজার সামনে যেতেই আমি বললাম…
— আঙ্কেল আজ কি কোন অনুষ্ঠান নাকি?
— সেটা আসলেই বুঝাতে পারবে।

বলেই আঙ্কেল চলে গেল। আর আমি আমার কাজে মন দিলাম।আসলে,আমি এখানে আসার দিন থেকে আজ প্রায় ১ মাস হয়ে গেল। আঙ্কেল আন্টি নিজের ছেলের মত আমার খোজ খবর নেয়।এমন বাসায় ভাড়া পাওয়াটা অনেকটা ভাগ্য। উপরওয়ালা যেন সবই মিলিয়ে দিয়েছে। আমি প্রায় ২ বছর আগে মাকে হারাই। বাবা তো সেই ছোট থাকতেই মারা গিয়েছে। আর গতদুই বছর হলো মাও আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে।আমি এখন বাসায় যাই মা বাবার একটু অস্তিত্বের টানে। বলতে গেলে আমার এখন কাছের বলতে কেউ নেই। তবে এমন বাসায় ভাড়া হয়ে, আমি নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করছি। রাতে একদম ফিটফাট হয়ে নিচতলায় আঙ্কেলর রুমে নক করলাম। আন্টি এসে দরজা খুলল। আমি সালাম জানালাম।

— বাবা এত লেট করলে কেন,তোমার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে?
— আমার জন্য?

আমার জন্য অপেক্ষা করছে, কথাটা শুনে খানিকটা অদ্ভুত লাগলো। ভিতরে আসতেই দেখি মোটামোটি অনেক লোক। আমার পাশের ফ্ল্যাটের আঙ্কেল আন্টিও আসছে। তবে ওনাদের সাথে একটা মেয়ে আর ছোট ছেলেও আছে।হয়ত ওনাদের ছেলে মেয়ে হবে। সবাই আমাকে দেখে একটা হাসি দিলো। তখন বাড়িওয়ালা আঙ্কেল এসে আমায় গলায় জরিয়ে নিলো। আমি বুঝতে পারছিলাম না, কি হচ্ছে? তখন খেয়াল করলাম, আঙ্কেল আমাকে গলায় জরিয়ে কান্না করছে…

— কি হয়েছে আঙ্কেল আপনি কান্না করছেন করেন?
— আসলে বাবা,আজ আমার ছেলের জন্মদিন।সকাল থেকে ছেলেটাকে ফোন দিয়ে চলেছি কিন্তু ও ফোনই তুলছে। একটু আগে ফোনন দিয়ে ছিলাম। সে বলল,সে নাকি অনেক ব্যস্ত পরে কথা বলবে। তুমি যদি আজ এখানে কেক কাটো তাহলে কি তোমার কোন সমস্যা হবে?

— কি বলছেন আঙ্কেল?আমার কিসের সমস্যা হবে?আমি তো আপনার ছেলের মতই। একদম কান্না করবেন না।আমি আছি তো…

আঙ্কেলের চোখটা মুছে দিলাম।এইদিকে দেখি আন্টিও আচঁল দিয়ে চোখ মুছতেছে। আমি আঙ্কেল আর আন্টিকে পাশে রেখে কেক কাটলাম। আমি কাউকে বুঝাতে পারতে ছিলাম না আমার মনের অবস্থাটা তখন কেমন ছিল? কেক কেটে আঙ্কেল আন্টিকে খাইয়ে দিলাম। তারপর সবাইকে নিয়ে খাওয়া দাওয়া করে নিজের রুমে ফিরে আসলাম। আঙ্কেল আন্টির মুখের হাসিটা এখনো চোখে লেগে আছে। একটা সন্তান কেমন করে তার মা বাবাকে রেখে নিজের ভবিষ্যৎকে প্রাধান্য দিতে পারে। আসলে যার বাবা মা নেই,সেই একমাত্র বুঝে বাবা মায়ের মূল্য কতটা। যেমন গত কয়েকটা বছর ধরে এই কষ্টটা বুঝে চলেছি। কিন্তু আজকে আঙ্কেল আন্টির ব্যবহারে মনে হলো,আমি আমার বাবা মাকে ফিরে পেয়েছি। ভোরে ছাদে নিজের গাছ গুলোকে পানি দিচ্ছি। তখনই পেছন থেকে একটা মেয়েলী কণ্ঠ…

— গাছে পানি দিচ্ছেন বুঝি। পিছনে তাকাতে দেখি আমার বিপরীত ফ্ল্যাটের মেয়েটা।
— হুমম
— আপনি কি প্রতিদিন এই ভোরে উঠে গাছে পানি দেন।
— হুমম
— ও আচ্ছা

মেয়েটা আর কোন কথা না বলে চুপ হয়ে গেল। আসলে আমার নিজেরও ইচ্ছা করছে মেয়েটার সাথে কথা বলতে। কিন্তু ভয়ও করছে, কি থেকে না কি হয়ে যায়?আমি যখন দশম ক্লাসে ছিলাম। তখন একটা মেয়ে নিজেই এসে আমার সাথে কথা বলতো। আস্তে আস্তে মেয়েটার প্রতি একটা টান তৈরি হয়ে ছিল। আমি আমার বন্ধুদের সব বলতেই সবাই বলল প্রপোজ করে দিতে। আমিও তাই করে ছিলাম কিন্তু পরে মেয়েটা একসেপ্টও করে ছিল। তবে সময়ের তাগিদে আমাকে ছেড়ে দিয়ে ছিল। এরপর থেকে আর কোন মেয়ের সাথে তেমন একটা অতিরিক্ত কথা বলি না।

— আপনার নামে বাড়িওয়ালা আঙ্কেল আন্টির কাছে অনেক কথা শুনেছি জানেন।
–ও আচ্ছা।
— আচ্ছা আপনি কি আমার কথায় বিরক্ত হচ্ছেন।
— আসলে তা নয়,আমি একটু অন্য কিছু নিয়ে ভাবছিলাম।আচ্ছা আপনার নামটাই তো জানা হয় নি।
— ও আমি তনু।
— মিষ্টি নাম।
— ধন্যবাদ
— আচ্ছা আমি নিচে যাই,পরে নয়ত আমার অফিসের লেট হয়ে যাবে।

আর কোন কথা না বলে আমি নিচে চলে আসলাম। রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে হালকা খাওয়া দাওয়া করে অফিসের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। রিকশার জন্য গেটের বাইরে অপেক্ষা করছি। অনেক্ষন পর একটা রিকশা পেলাম। রিকশায় উঠতে যাবো তখনই পাশে থেকে ধাক্কা দিয়ে তনু এসে রিকশায় চেপে বসলো।

— এইটা কি হলো আমি রিকশাটা ডাক দিয়েছি।
— সরি,আমার আজ ভার্সিটিতে প্রেজেন্টেশন আছে। এমনি লেট হয়ে গেছে। আরেকটু ওয়েট করলে হয়ত পরে মিস করে যাবো।
— আচ্ছা ঠিক আছে,তুমি যেতে পারো।
— আপনার সমস্যা না থাকলে আপনিও আসতে পারেন।

প্রথমে ভাবলাম যাবো না কিন্তু আর রিকশা না দেখে উঠে বসলাম। এমনি প্রাইভেট জব করি, লেট করলে শুনতে হয় বকবকানি। রিকশা তার আপন গতিতে চলতেছে। আমি নরমাল ভাবে বসতে পারতে ছিলাম না। এমন মনে হচ্ছিল আমি পড়ে যাবো।

— এই যে রাজ সাহেব, একটু ঠিক ভাবে বসেন নয়ত পরে যাবেন তো।
–হুমম

আমার এই দিকে বসতে সমস্যা হচ্ছে আর মেয়েটা অন্যদিকে তাকিয়ে হাসছে। আমি কিছু বলতেও পারছি না।
কিছুক্ষন পর তনুকে ভাসির্টিতে নামিয়ে দিয়ে আমি অফিসের দিকে যেতে লাগলাম। মেয়েটা নিজেই ভাড়া দিতে চেয়ে ছিল কিন্তু আমিই নেই নি। একদিন ভোর প্রায় সাড়ে পাচঁটায় আমার রুমের কলিংবেল বেজেঁ উঠলো। আমি ভীষন রকম ভয়ে পেয়েই উঠে আসলাম। তারপর দরজা খুলতেই দেখি বাড়িওয়ালা আঙ্কেল আর তনু দাড়িয়ে আছে।

— আঙ্কেল এত সকালে।
— চলো বাবা হেটেঁ আসি। অনেক দিন যাওয়া হয় না। হাটলে মনটাও ফ্রেশ থাকবে।
— আচ্ছা ১০ মিনিট, আমি আসছি।

হালকা ফ্রেশ হয়ে ওদের সাথে বের হলাম। আঙ্কেল এইদিকে কথা বলছে আর আমি যেন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে হাটছি। আর ভাবছি আঙ্কেল তো আগে কখনো হাটতেঁ যাওয়ার জন্য বলি নি কিন্তু আজ কেন?

— আচ্ছা আঙ্কেল আজ হঠাৎ হাটতে বের হলেন কেন?
— কাল রাতে তনু আমাদের রুমে আসছিল। পরে বলল,সবাই মিলে সকালে যদি হাটতে বের হই। তেমার আন্টি তো অসুস্থ তাই আমি একাই বের হলাম।
— বুঝলাম।

আমি তনুর দিকে তাকাতেই মেয়েটা চোখ মারলো। আমি পুরো শকড, আরে মেয়ে চায় কি? আমি যথেষ্ট ফিট আছি, একটু ঘুমাতে কি দিবে না নাকি। নিজের ঘুমকে ঘুম পারিয়ে হাটতে লাগলাম ওদের সাথে। আঙ্কেল বাদে অন্য কেউ বললে এই ভোরে ভুলেও কোথাও যেতাম না। রাস্তা দিয়ে হাটছি, চার দিকে ঘন কুয়াশা।তনুর বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে। আঙ্কেল একটু আগেই হাটছে।

— ওই মেয়ে তোমার সমস্যাটা কি?
— আমার আবার কিসের সমস্যা? আর সমস্যা হলেও তোমাকে বলবো কেন?
–তার মানে?
— আমার মাথা তোমার মুন্ডু গাধা।

বলেই আগে হাটতে লাগলো। আরে এই মেয়ের প্রবলেমটা কি? কোন কথা ক্লিয়ার করছে না, আবার জানতে চাইলে উত্তর দিচ্ছে না। হাটতে হাটতে এক পর্যায় স্টেশনের দিকে চলে আসছি। আর এইদিকে লোক সংখ্যাও বাড়তে লাগলো। তখন আঙ্কেল বলল..

— চলো বাবা কোন হোটেল থেকে নাস্তা করে নেই। অনেক দিন পর ভোরে এতক্ষণ হাটলাম।
— আঙ্কেল নাস্তা করে রেল লাইন ধরে হাটবো কেমন?(তনু)
— না তার কোন প্রয়োজন নেই। পরে গিয়ে হাত পা ভাঙ্গবে।(আমি)
— কথাটা আমি তোমাকে না,আঙ্কেলকে বলছি। আমাদের মাঝে একদম কথা বলবে না।(তনু)
— আরে ঝগড়া করছো কেন তোমরা?চলো খেতে চলো।(আঙ্কেল)

আজব মেয়ে তো এটা,একটু আগে কিসের ইংগিত দিতে ছিল আর এখন কি বুঝিয়ে চলল?কথা শুনলে ভাল নয়ত ঝগড়া করবেই। এক সাথে নাস্তা করে রেল লাইনে গেলাম। তনু বার বার রেল লাইন থেকে পড়ে যাচ্ছিল। তখন বাধ্য হয়েই, ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলাম। এখন বেশ খুশি, যদি মানা করতাম তাহলেই ঝগড়া করতো। আসলে নারী চরিত্র ভেজায় জটিল। ভোরের হাটাঁ হাটতে হাটতে বাড়ি পৌছে গেলাম। তনু তার ফ্ল্যাটে যাওয়ার আগে ভেংচি কেটে গেলো। আর যাই হোক,মেয়েদের এই ভেংচিতেই জোশ লাগে। আজ বৈশাখের প্রথম দিন,তাই অফিসও বন্ধ আর আমার ঘুমানোটাই গুরুত্ব বেশি।কিন্তু আবার সেই সকাল সকাল কলিংবেলের আওয়াজ। কালকে কলিংবেলটাই ভেঙ্গে দিবো। রাগ নিয়ে দরজা খুলতেই দেখি তনু শাড়ী পড়ে দাড়িয়ে আছে।

— কি হয়েছে এত সকাল সকাল নক করছে কেন?
— চলো ঘুরতে যাই।আজকে তো বৈশাখ, জানো না।
— জানি বলেই তো ঘুমাচ্ছি।
–ঘুম বাদ দাও আর আমার সাথে ভার্সিটিতে চলো। দেখবে কত রকমে সেজেছে প্রতিটা মানুষ।
— তনু প্লিজ, তুমি একাই চলে যাও।
— প্লিজ প্লিজ প্লিজ,আমার লক্ষ্মী বাবু চলো না।
— কি??? ( তনু জিব্বায় কামড় দিয়ে দাড়িয়ে আছে)
— রাজ সাহেব যাও তো তারাতারি রেডি হয়ে আসে তো।
— ওকে তুমি অপেক্ষা করে আমি ১৫ মিনিটে আসছি।

অবশেষে তনুর সাথে বৈশাখে বের হলাম। বের হওয়ার আগে আঙ্কেল আন্টিকে সালাম করে এসেছি। আমারও বৈশাখ যে এমন ভাবে কাটবে ভাবতেই পারছি না। স্কুল লাইফের পর কখনো কোন উৎসবে এটেন্ড করেছি বলে মনে পড়ছে না। তনু তার ভার্সিটি টা আমাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে। ওদের ক্লাস,ওদের ল্যাব ওদের অডিটরিয়াম সব কিছু। হঠাৎ তনুর এক গুচ্ছ বান্ধবী এসে হাজির। সবাই আমার পা থেকে মাথা অবধি দেখতে লাগলো।মনে হচ্ছে পি. কের সাথে আমি অন্য গ্রহ থেকে এখানে এসেছি আর ফেরত যাই নি। হঠাৎ একজন বলে উঠলো…

— তাহলে এই সেই রাজ, যার কথা বলতে বলতে তনু আমাদের মাথা পাগল করে দিলো।
— মানে?
— আরে বলবেন না ভাই, ক্লাসে শুধু আপনাকেই নিয়ে কথা বলতো এই তনু।
— তাই নাকি,তো কি কি বলতো শুনি?
— বলতো আপনি নাকি ওকে অনেক ভালবাসেন।
— তাই নাকি।
— রাজ ভাই,আপনি আসলেই লাকি। তনু অনেক ভাল মেয়ে।
— হুম।

সবাইকে বিদায় দিয়ে তনু আর আমি হাটছি। কারো মুখেই কথা নেই। আমি প্রথমে আন্দাজ করলেও আসলেই মেয়েটা আমায় ভালবাসে। কিন্তু এটা ঠিক হবে না। যেখানে থাকি,ওই বাড়ির সবাই আমাকে অনেক বিশ্বাস করে কিন্তু সবাই যদি জানে তনুর সাথে আমার সম্পর্ক তাহলে হয়ত কেউ মেনে নিবে না। তাই তনুকে বুঝানো উচিত।

— তনু তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই?
— হা বলো(হাসি মুখে উৎসাহ নিয়ে)
— আমাদের সম্পর্কটা সম্ভব না।আসলে ওইবাড়ির সবাই আমাকে অনেক বিশ্বাস করে আর আমি কারো বিশ্বাস ভাঙ্গতে পারবো না। যদি সবাই জানো তোমার সাথে আমার রিলেশন তাহলে হয়ত ভুল ভাববে। এর থেকে ভালো হবে তুমি আমাকে ভুলে যাও।

— হুম ঠিক বলছো। কথাটা বলে তনু আর একটুও দাড়ায় নি। দৌড়ে চলে গেল। বাসায় আসতেই বাড়িওয়ালা আঙ্কেল নিচে দাড়িয়ে আছে। মনে হলো, ওনার মন খারাপ।

— কি হলো আঙ্কেল কিছু কি হয়েছে?
— যা হয়েছে তার দায় তো তোমারই। তুমি আমাদের কথা ভেবে এমন একটা মিষ্টি মেয়েকে কাদাঁলে।
— আসলে আঙ্কেল…
— চুপ করো।তোমাকে নিজের ছেলের জায়গা দিয়েছি।

আজকে রাতে আমি নিজে যাবো তনুর বাবার সাথে কথা বলতে। আরে বোকা, এই সম্পর্কটা হলে আমার চেয়ে বেশি খুশি কেউ হবে না। কথাটা শুনে কেন জানি মুখ দিয়ে কোন উত্তর বের হলো না বরং হাসি বের হলো। আমি দৌড়ে দুতলায় চলে গেলাম। তনুদের ফ্ল্যাটে কলিংবেল বাজাতেঁ দরজা খুলল,তনুর ভাই…

— আরে হাফ টিকিট তোর বোন কোথায়?
— ছাদে।(রাগ নিয়ে) ছাদে যেতেই দেখি তনু চোখ মুছতেছে আর কান্না করছে। আর কোন কথা না বলে ওর পাশে গিয়ে বসলাম।
— চোখের পানি একটু বেশিই তাই না।
— তুমি এখানে কি করছো? যাও এখান থেকে।
— বাসায় এসে আঙ্কেলকে সব বললে আর এখন আমাকে যেতে বলছো। তুমি তো ভাল মেয়ে না,একদম।
–হুমম আমি পচাঁ এবার যাও তো।
— আচ্ছা শুনো না,আজকে যে তোমার বান্ধবীদের দেখলাম তাদের মাঝে একটাকে না জোশ লাগছে।
— কি বললে? আর কোন কথা না বলে আমার চুল টানতে লাগলো।

— আরে থামো না,এভাবে চুল টানলে তো টাক হয়ে যাবো। তখন তো কেউ ফিরেও তাকাবে না।
–কারো তাকানো লাগবে না। তুমি আমাকে দেখবে আর আমি তোমাকে দেখবো।
— ভালবাসি ঝগড়াটে মেয়ে।
— তোমার থেকে বেশি ভালবাসি।
ভালবাসি বলল ঠিক আছে কিন্তু চুল টানতে টানতে। আরে টাক করে ছাড়বে নাকি।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত