ক্যাম্পাস থেকে বেড়িয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে আছি রিকশার জন্য।হঠাৎই বৃষ্টি পড়তে শুরু করে দিল।
সামনে একটা রিকশা দেখে, সাত পাঁচ না ভেবেই উঠে পড়লাম।
তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে আগে থেকেই বসে আছে রিকশায়।আমি তাড়াহুড়ায় খেয়ালই করিনি।
যাই হোক বৃষ্টি হচ্ছে রাস্তার আর কোন রিকশা নেই,তাই এইটা দিয়েই যেতে হবে।
মেয়েটি ফোনে কথা বলছিল অন্যদিকে ফিরে,তুমুল ঝগড়া চলছিল,ফোনের বিপরীত পাশের লোকের সাথে।তাই হয়ত খেয়ালই করেনি।
তবে যখন লক্ষ করল তখন,
মেয়েটি বলে উঠল এইইইইই,আপনি এখানে কেন???
তো কোথায় থাকব শুনি???
আর আপনি এমন ষাড়ের মত চেচাঁচ্ছেন কেন??
রেগে বলল,কি আমি ষাড়??মাইন্ড ইউর লেংগুয়েজ।
আমি বললাম,ইসসসসসস,আপনি চেচাঁচ্ছেন আর আমার বললেই দোষ??
আবার ও বলল,নামুন বলছি।
আমিও ভাব দেখিয়ে বললাম,কেন আমি কি ভাড়া দিব না নাকি,নেমে কেন যাব?
মেয়েটি মুখ বেকিয়ে বলল, ইসসসসসস,চোরের মায়ের বড় গলা।
–
আমি দাতঁ কেলিয়ে হাসি দিয়ে বললাম,আমি মা না তবে চাইলে আপনার বেবির বাবা হতে পারি।
–
চেচিঁয়ে বলল,কি,,,,,,?????
বেশি কথা বললে রিকশা থেকে ফেলে দিব বুজলেন???
আমি ভয়ে কাচুমাচু হয়ে,ওরে বাবা।পরে সত্যিই চুপ করে রইলাম।
বলা যায় না যেই মেয়ে,সত্যিই যদি ফেলে দেয়।
এখন দুজনই চুপচাপ,মনে হচ্ছে কেউ মারা গেছে আমরা নিরবতা পালন করছি।
ততখনে বৃষ্টি থেমে গেছে। মেয়েটি ফোন হাতে নিল।মনে হচ্ছে কাউকে কল করবে। কিন্তু ফোনটা বন্ধ হয়ে গেল। আমি তো মনে মনে মহা খুশি।
আমি ভাব নিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে মনে মনে হাসছিলাম।
তখনই এইযে,আমি তানি। আপনার নাম কি???
মনে মনে ভাবছি,হঠাৎ হলটা কি,রাক্ষসীর মুখ দিয়ে মধু ঝড়ছে। হুম জি,আমি ফারাবি।
কিসে পড়েন? এইতো অনার্স ফাইনাল ইয়ার।
আর আপনিতো এইবার সেকেন্ড ইয়ার তাইনা???
চোখ বড় করে বলল,মানে কি??তার মানে আপনি আমাকে ফলো করছেন??
আমি বললাম,আরেরেরে,না না।কি বলছেন,ফলো কেন করব?? এক কলেজে পড়ি যেহেতু জানতেই পারি। ওকে ওকে বাদ দিন।
আপনার ফোনটা কি একটু দিতে পারবেন?১মিনিট কল করব।
এতখনে ভালো ব্যবহারের কারন টা বুজলাম।
বললাম, অবশ্যই অবশ্যই, এইযে নিন।
ফোনটা নিয়ে মনে হল বিএফ কে কল করল।
বাবু আমার ফোনটা বন্ধ হয়ে গেছে।
তুমি টেনশন করোনা।অন করেই তোমাকে কল করব।বলেই ফোনটা রেখে দিল।
এইযে নিন আপনার ফোন।
নম্বরটা ডিলিট দিতেই ভুলে গেল।
বাসার সামনে চলে আসলাম তাই
ভাড়া মিটিয়ে চলে আসলাম।
সন্ধার পর ওই নম্বর থেকে কল আসল।
আমি রিসিভ করতেই,তানি তুমি কি করো?আর ফোনটাই বা অন কেন করো নি?
এইযে ভাইয়া আসি তানি না।আসি ফারাবি।
মানে বিকেলে তো তানি এই নম্বর থেকেই কল করছিল।
হুম আসলে উনার ফোনটা অফ হয়ে গিয়েছিল তো তাই।আমার ফোন দিয়ে ই কল করছিল।
মানে আপনার দুজন একসাথে ছিলেন নাকি???
আমি কিছু বলতে নিব, তখন কল কেটে দিল।
আমার ফোনে তখন কোন টাকা না থাকাতে আর কল দিতে পারলাম না।
রাতে খেয়ে শুয়ে পড়লাম ঘুমাব ঠিক তখনি একটা অপরিচিত নম্বর থেকে কল আসল।
আমি রিসিভ করতেই মনে হলো,ফোনের উপর দিয়ে সুমানি মহাপ্রলয় ঘটে গেল।
এইযে,মিঃনিজেকে কি মনে হয় হুম?
মানুষের ক্ষতি না করলে ভালো লাগেনা নাকি?
আমি আপনাকে জোড় করে রিকশাতে উঠাইছিলাম নাকি?
আপনার সাথে কি আমি প্রেম করি নাকি হুম?
কেন ইনিয়ে বিনিয়ে বলে আমার বিএফের সাথে ঝগড়া বাধালেন বলেন??
কিছুই বুজতেছিনা।কিছুই তো করলাম না।
আমার মেজাজটা খুবই খারাপ হয়ে গেল।
বললাম,ওই ফাজিল মেয়ে একদম চুপ।আর একটা কথা বলবে তো চড় মেরে দাতঁ গুলো সব ফেলে দিব।বলা মাএই চুপ করে গেল।
ওফফফ,শান্তি পেলাম।
এইযে শুনেন,তেমন কিছুই বলিনি আপনার বিএফ কে।
মিথ্যা কথা বলছে উনি আপনাকে বুজলেন।
পরক্ষনেই জি না।ও মিথ্যা বলেনা।
আমি বললাম,
ইসসসস রে, সত্যবাদী যৌতিষ্যের সাথে প্রেম করে রে উনি।
এইযে শুনেন কাল ভার্সিটিতে দেখা করেন।পরেই প্রমান করে দিব কে সত্য কথা বলে আর কে মিথ্যা।
আর আপনি আমার ফোন নম্বর কোথায় পেলেন??
কোথায় পেলাম আবার,আমার বিএফ দিয়েছে।
পরের দিন কলেজে গিয়ে দেখি তানি ক্যান্টিনে বসে আছে।
আমাকে দেখতেই সামনে এগিয়ে এলো।
এইযে ম্যাডাম তানি,দেখুন আমার ফোনে রেকর্ড আছে।কে সত্য কথা বলেছে আর কে মিথ্যা বলছে।ভাগ্য ভালো আমার ফোনে অটো রেকর্ড চালু ছিল।
রেকর্ডটা শুনে ও আমার উপর দোষ দিয়েই বলল,কাল যদি আপনি আমার সাথে এক রিকশায় না যেতেন আজকে আমাকে ভূল বুঝে আমার বিএফ চলে যেতনা।
সে আমাদের এক রিকশায় দেখে নিয়ে ছিল।আর রাতে আপনাকে ফোন করে,আপনার ব্যাপারে জানতে চেয়েছেন।
ওফফফ,সরি।আমি বুজতে পারিনি।
আপনাকে আর বুজছে হবেনা।
আপনার জন্য আজকে আমার বিএফ আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
আমিও দেখেব আপনি কি করে রিলিশন চালিয়ে যান।
সাথে সাথে আমিও দাতঁ কেলিয়ে বললাম নো প্রবলেম,আমার কোন রিলেশনশীপ নেই হি হি হি।
সাথে সাথেই চলে আসলাম।
শত্রুতা টা কেমন যানি গভীর হয়ে গেল।
তানি কে দেখলেই গা জ্বলত।
আর তানিও আমাকে সহ্য করতে পারতনা।
–
আমাদের ভার্সিটির রিতু মেয়েটাকে আমার হেব্বি লাগতো।এইবার অনার্স ফাস্ট ইয়ারে পড়ে।
১সপ্তাহ সময় ব্যয় করে কিছুটা রাজি করলাম।
যেদিন প্রপোজ করব ভাবলাম সেদিনই সব স্বপ্নে পানি ঢেলে দিল তানি রাক্ষসী।
রিতুর সাথে বসে আছি প্রপোজ করব করব ভাবছি,তখনই কোথা থেকে যানি ওই রাখশীর আবির্ভাব।
এসেই বলা নেই, কওয়া নেই, আমার হাতটা ধরে বাবু তুমি এখানে বসে আছো?তোমার না আজকে আমার সাথে রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়ার কথা ছিল??
আমি তোতলে কি কি,কখন কথা হয়েছিল তোমার সাথে??
একটু ধমকে বলল,কাল রাতেই তো বললে এরই মধে ভূলে গেলে??
কি আর করার।শেষে এইছিল কপালে।তাকিয়ে দেখি,ততখনে রিতু চোখ বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
সাথে সাথে আমাকে অনেক গুলো কথা শুনিয়ে চলে গেল।
রিতু চলে যাওয়ার সাথে সাথেই তানি ও উধাও।
মন খারাপ করে বাসায় চলে আসলাম।
পরে খোজ নিয়ে জানতে পারলাম,তানির ক্লাশের কয়েক জন তানিকে পছন্দ করে।
এর মধ্যে একজন কে তানি ও পছন্দ করে।
ভাবলাম এইবার এক ঢিলে দুইটি না তিনটে পাখি মারবো।
সুতরাং যেই ভাবা সেই কাজ।
সবাই ক্লাশে বসে আছে।ক্লাশ শুরু হওয়ার ১০মিনিট আগে।
সোজা ক্লাশে ঢুকে গেলাম।ঢুকেই বলতে শুরু করলাম,তানি জান পাখি তুমি এখানে?
আর আমি তোমাকে সারা কলেজ খুজেঁছি।
তোমার ফোনেও কতবার কল করেছি,তুমি রিসিভ করোনি।তুমি কি ভূলে গেছ আজকে আমাদের পার্কে দেখা করার কথা ছিল।
বলেই একটু ভাব নিয়ে তানির হাতটা ধরে বাহিরে বের করে নিয়ে আসলাম।
ওর ও কিছুই করার ছিলনা।
বাহিরে এনে ভিলেন মার্কা একটা হাসি দিয়ে হাতটা ছেড়ে দিয়ে বললাম,মিস তানি,আপনি যদি চলেন ডালে ডালে।তবে আমি চলি পাতায় পাতায় হা হা।
সামনে থেকে চলে গেলাম।
পরের দিন কলেজে এসেই একা পেয়ে আমাকে ধরল, এইযে মিঃ ফারাবি।সমস্যা কি আপনার?কি শুরু করছেন আপনি?
একটু কি শান্তিতে থাকতে দিবেন না নাকি??
–
এইযে মিস তানি,আস্তে কথা বলুন,কে আগে শুরু করছে হুম??
আমি রিতুকে কতই না ভালোবাসতাম।আপনার জন্যই সে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
ইসইসসসসসস,আমার বিশ্ব প্রেমিক রে।
আপনি কি জানেন,কাল আপনার কথা গুলো আমার বাড়ি পর্যন্ত চলে গেছে?
আমি আস্তে করে বললাম,কেন আমার কথাগুলোর বুজি হাত পা ছিল?যে হেটেঁ হেঁটে চলে গেছে??
ও আরো একটু বেশি রেগে বলল,জি না।কথা গুলো যারা শুনছে,তাদের সবার ই হাত পা ছিল।এরই মধ্যে কেউ গিয়ে বাসায় আম্মুর কাছে বলে দিছে।
সকালে আম্মু কত গুলো কথা শুনিয়ে দিয়েছে।
কি আর বলব,বললাম ঠিক আছে ঠিক আছে আপনি বন্ধ করে দিন তবে আমি ও বন্ধ করে দিব।
বলেই সেদিনের মতো চলে আসলাম।
সালার মেয়ে সোজা কথার মানুষ না,আমার সারা বন্ধু মহলে বলে বেরিয়েছে আমি নাকি তার পিছনে পিছনে ঘুড়ি,ও নাকি পাত্তা ই দেয় না।আর সে পাত্তা দেয়না বলেই নাকি তার পিছনে লাগছি।
মান সম্মান একেবারেই শেষ করে দিল।
আর বদমাশ বন্ধু গুলো তার কথা বিশ্বাস করেই আমাকে আড্ডা দেওয়ার সময় সবাই মিলে খুব পচাঁলো।
ধূর রাগ দেখিয়ে বাসায় চলে যাচ্ছি অার ভাবছি,পাই আজ কোথাও ওই মেয়েকে এক চড়ে সব গুলো দাঁত ফেলে দিব।
রাস্তা দিয়ে হাটঁছি আর রাগে গজ গজ করছি।
–
একটু দূরেই লক্ষ্য করলাম কিছু মানুষেরর ভীড় লেগে আছে।
কি হয়েছে ব্যাপারটা জানার জন্যই সামনে এগিয়ে গেলাম।
ভীড় ঠেলে ভিতরে ঢুকেই দেখি তানি রাস্তায় পড়ে আছে।
কোন গাড়ি তাকে এক্সিডেন্ট করে চলে গেছে।মাথা থেকে প্রচুর রক্ত বেরুচ্ছিল।
সাত পাচঁ না ভেবে নিয়ে গেলাম হসপিটাল।
ওর ফোন থেকে ওর বাসার নম্বর নিয়ে কল করে তাদের কে জানিয়ে দিলাম।
ততখনে তারাও এসে পড়ছে।
ডাক্তার বলল,আরো একটু দেরি হলেই নাকি রক্তক্ষরনে তানি মারা যেত।
কথাটা শুনেই বুকের ভিতরটা কেমন হু হু করে উঠল।
হয়ত আমার সাথে ঝগড়া করে,তবে মেয়েটি খুব ভালো। দেখতেও বেশ কিউট। যে দেখবে সে ই প্রেমে পড়ে যাবে।
মনে মনে ভাবলাম,আমার সাথে ঝগড়া করার জন্য হলেও তোমাকে বেচেঁ থাকতে হবে তানি।
একটু পর ডাক্তার এসে জানালো জরুরি ভিওিতে রক্ত লাগবে।তানির রক্তের গ্রুপ AB+.
এই গ্রুপের রক্ত নাকি হসপিটালে নেই।সহজে পাওয়া ও যায়না।
তানি তার বাবা মায়ের প্রথম সন্তান।তানির ছোট্ট একটি ভাই আছে।ঠিক সময়ে রক্ত দিতে না পারলে নাকি তানি মারাও যেতে পারে।
কথা শুনেতো তানির বাবা- মা পাগল প্রায়।
ভাবলাম,এখন যা করতে হবে আমাকেই করতে হবে।
আমিও রক্ত দিতে পারবনা,কারন আমার রক্ত A+.
কি যে করি ভেবে পাচ্ছিনা। তখনই মনে পড়ল এক বন্ধুর কথা।যার রক্ত AB+.
সাথে সাথে তাকে কল করলাম।সে মাএ কিছুদিন আগে একজন কে রক্ত দিয়েছে।২মাস হবেনা।
এক ব্যাগ রক্ত পাওয়া গেল।কিন্তু আরেক ব্যাগ লাগবে।
বন্ধুর হাতে পায়ে ধরলাম।বললাম এইবারের মতো আমার তানি কে বাচিঁয়ে দে।
প্রয়োজনে যা বলবি তাই করব।
অনেক অনুরোধ করার কারনে সে রক্ত দিতে রাজি হলো।
ঠিক সময়ে রক্ত দেওয়ার কারণে তানি সূস্থ হয়ে গেল।
তানির মা আমাকে ডেকে বলল,বাবা তুমিই কি ফারাবি??
আমি বললাম জি আন্টি।
আমি বুজলাম উনি কিসের ভিওিতে আমাকে চিনতে পেরেছেন। তানি আগেই বলেছিল,কে নাকি বাসায় গিয়ে আমার কথা বলে দিয়েছে।
তানির জ্ঞান ফিরেছে,ভয়ে ওর কাছে যাইনি।কারন তানি তো আমাকে সহ্যই করতে পারেনা।
চলে যাবার জন্য পা বাড়ালাম পিছন থেকে তানির মা ডেতে বলল,যার জন্য এতকিছু করলে,তার সাথে দেখা না করেই চলে যাবে বাবা?
পরে উনি একপ্রকার জোর করেই তানির কাছে নিয়ে গেল।
সবাই বেরিয়ে গেল,শুধু আমি আর তানি বসে আছি।
আমি আপনার সাথে এত ঝগড়া করি,আর আপনি কিনা আমাকে বাচাঁতে এত কিছু করলেন??
শুধু মাথা নাড়িয়ে সায় দিলাম। তানি বলল,ভাবছি এখন থেকে ঝগড়া করবনা,শুধু প্রেম করব।
আমার আপনাকে ভালো লাগে,সেজন্যই কারো সাথে প্রেম করতে দেইনি।
আমিও পরক্ষনেই বলে ফেললাম আমিও সেইম।
তানি হেসে বলল তাই বুঝি।
আমি বললাম হ্যা।অনেক ভালোবাসি তোমায়।
তানিও আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,এইভাবেই সারাজীবন বুকে জড়িয়ে রাখতে হবে,না হলে রাক্ষসী হয় খেয়ে ফেলব হুম।
আমিও মাথা নাড়িয়ে সায় দিলাম হুম।
:
………………………………………. সমাপ্ত …………………………………
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা