নিলাশা আক্তার অপূর্ণা। নাম টা দেখে বেশ চমকে গেলাম। অনেকদিন হলো কোন কারনে চমকে যাই না। কিন্তু আজ চমকপ্রদ হলাম। ভার্সিটি ২য় বর্ষ হলে ৩য় বর্ষে যারা উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের নামের লিষ্ট টাঙিয়েছে, আর সেখানে ই আমার পরের স্থানটা দেখলাম এই মেয়েটার।
হঠাৎ করে তীব্র গতীতে এসে আমায় ঠেস মেরে চার্টের উপর আঙ্গুল বুলাতে লাগলো, নিজের স্থান টা ২য় দেখে একটু খারাপ লেগেছে হয়তো। ঠিক যখন ই আমার চোখে চোখ পড়লো তখন মনে হলো পৃথিবীর সব কিছুই শান্ত হয়ে গেছে, পাখি তার গান ভুলে গেছে, নদী সে নিজের ছন্দ হারিয়ে ফেলেছে, সূর্য হয়তো তার আলোকে মেঘের আড়ালে বন্ধি করেছে। পুরনো প্রেমিকাকে দেখে হয়তো সবার এমন ই হয়। হঠাৎ শান্তির নীড় কেটে এক শব্দ হলো, আর সাথে সাথে বৃর্থা গেল দুজনের চোখের বলা প্রেম গুলো। আমার দিকে তাকিয়ে অর্পূণা জিঙ্গাস করলো।
— কেমন আছো ইমু?
— ভালো,,
— জিঙ্গাস করবে না আমি কেমন?
— কেউ একজন তো সুখের কারনে ই কাউকে ছেড়ে চলে গেছে তাহলে সে তো ভালো থাকার ই কথা।
— খুব বদলে গেছ তুমি,,
— বদলে যাওয়া আমার চরিত্র না।হয়তো তুমার অনুধাবন করার ব্যাপার টাই বদলে গেছে।
— হয়তো, আমি ৫ মাস হলো এখানে ভর্তি হয়েছি তুমায় কখনো দেখিনি যে!
— আসিনি, একা মানুষ তো,তবুও নিজের পেট চলা এবং কুৎসিত সুন্দর জীবনের জন্য একটা জব করি, তাই।
— তুমার কথা গুলো কেমন যেন ধারালো তীরের মতো ভেতরে আঘাত করছে আজ।
— সত্য তো সবসময় ই এমন, চলি কেমন,,,
এটুকু বলে আর দেরি করলাম না, প্রায় দৌড়ে চলে আসলাম রাস্তায়। এই রাস্তাগুলোর সাথে আমার মিল টা পচন্ড। কেমন স্থির থেকে সকলের পা বা চাকার চাপায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে, তবুও তার একটাই কামনা পাশে থাকা কিছু সভ্য মানুষ আর কিছু মুখোসদ্বারি অমানুষরা যেন ভালো থাকে।
বাসায় এসে পড়েছি, কিন্তু ভাবনার স্থানটা এখনো সেই অর্পূণা মেয়েটাকে নিয়েই। প্রথম দেখাতে কারো উপর ফিদা হওয়া মেয়েটা ছিল সে। আমি ভাবতে পারিনি তার কিসের অপূর্ণতা। হয়তো অর্পূণ রয়ে যাবে সেই মানব যারা তার দৃষ্টি থেকে বন্চিত। কলেজে পড়াকালীন সময়ে বেশ লম্বা সময় তাকে ইমপ্রেস করার কাজে ব্যস্ত করেছি।কেন ই বা করবো না, নবজাতক বাচ্চাদের মতো সুন্দর এক ঠোট, নেশা ধরানোর মতো চোখ, মেঘের সাজে সজ্জিত তার অবাধ্য চুল, আর সবচেয়ে পাগল করা তার ঠোটের ১ ইন্ধি নিচের তিলক টি (বাস্তব জীবনে ও কিন্তু আমার তিলওলি খুব পছন্দের) তাই একদম পাগল হয়েছিলাম অর্পূণার উপর। হয়তো আমার পাগলপান তার ভেতরে নাড়া দিয়েছিল। তাই সে ও সামিল হয়েছিল আমার পাগলামিতে। ছোট ছোট জিনিসগুলো দিয়েছিলো ভালোবাসা আমাদের। চলছিল এমন ১ টি বছর। অফুরন্ত ভালোবাসার শেষে তার প্রশ্ন ছিল একটি।
— ইমু, তুমি কি সাড়াজিবন এভাবে ই আমায় ভালোবাসবে? আমার মিথ্যা বলার স্বভাব টা হয়ে উঠেনি। তাই বলে দিলাম
— কেউ কখনোই সারাজীবন এভাবে ভালোবাসতে পারে না। হয়তো অন্য কাপলদের মতো মন রক্ষাতে মিথ্যা কথাটা আমি বলতে পারবো কিন্তু মিথ্যা বলে আমি কাউকে সুখ দিতে চাই নি। সে এ কথা গুলো কখনোই বুজতো না। ঝগড়া লেগে যেত এসব কারনে। তারপর হঠাৎ কেউ তার জীবনে এলো, দিল মিথ্যা প্রতিশ্রুতি আর চলে গেল সে রেখে গেল আমার জীবনে অর্পূণতার ছোয়া। তারপর থেকে ওই জায়গা ত্যাগ করে চলে এসেছি এখানে।
পুরনো ভাবনায় ক্ষয়ে গেছি, আমার আমিত্ব থেকে নিজেকে হারাচ্ছি, অতল গহীনে আমি তলাচ্ছি, কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। তাহলে কেন? উওর টা অজানা আর জানতেও চাইলাম না। সকাল সকাল ক্যাম্পাসের বাইরের টং এ সিগারেটে ফুকছি, তখন ই অর্পূণার আগমন। আমার দিকে বেশ রাগি ভাবে তাকিয়েছিল। হয়তো অবস্থ নয় আমার এই নতুন রূপে। অনেক ছেলেরাই দেখলাম অর্পূনার সাথে সখ্যতা গড়ে তুলার চেষ্টা করছে কিন্তু আমার ভেতরে কষ্ট হচ্ছে কেন? কেন দেখতে পারছি না অন্যকারো সাথে তাকে। আসলে ছেলেদের মন আর কুকুরের লেজ যতই টানো না কেন কখনোই সোজা হবে না।
— তুমি কবে থেকে স্মোক শুরু করেছো?
— নিজের পারসোনাল ব্যাপারে আমি বলতে ইচ্ছুক না।
— এত এটিটিউট কেন তুমার?
— থাকতে হয়, নয়তো অনেকেই মধ্য রাস্তায় ছেড়ে চলে যায়।
— তুমি এমন ব্যবহার কেন করছো ইমু?
— আমি শুধু আমার বক্তব্য রাখছি, আর কিছুই না। দুজন ই চুপ করে আছি। মেয়েটি অল্প কাদতে শুরু করলো, আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। কেননা সয্য হবে না মেয়েটার চোখের পানি আমার।
— আমায় কি এখন আর ভালোবাসো না?
— তুমরা মেয়েরা জানো কেমন?
ফকির বাবার কাগজের ফুলের মতো, যতক্ষন ধোয়া থাকবে ততক্ষণ ই সুভাস দিবে।
এভার বেশ জোরে এক চিৎকার দিয়ে মেয়েটা দৌড়ে চলে যেতে লাগলো। অনেকেই আমাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে, আবার অনেক আশিক আমার দিকে তেড়ে এসে জানতে চাচ্ছে হয়েছে কি! হঠাৎ এক বড়ভাই সাথে সাঙ্গা পাঙ্গা নিয়ে এসে বললো
— কি বলেছিস ওকে?
— বলতে ইচ্ছুক না।
— আমি তর সিনিয়র। রেকস্পেট দিয়ে কথা বল।
— সময় করে একসময় চিপায় আইসেন, মন ভরে সম্মান দিবো।
— তুই জানিস আমি কে?
— জঙ্গলে এক বাঘ ছিল, সে অনেক রাগী আর ভয়ানক ছিল।
তো হঠাৎ করে একদিন অসুস্হ হয়ে পড়েছিল। তারপর অনেক দিন শিকার করতে বের হয় নি। তা দেখে এক ইদুর বাঘটার সামনে লাফাতে লাগলো, আর তখন বাঘটা ইদুরটাকে মেরে ফেলছো। মরাল হইলো এই যে বাঘ যতই দূর্বল হোক না কেন তার গর্জনে সবাই চুপ। আর এখানে আপনি শিকার আর আমি শিকারি। পাশ থেকে সবাই চুপ হয়ে গেল। হয়তো মনে পড়ে গেছে আগের কথা গুলো।
বের হয়ে পড়লাম ক্যাম্পাস থেকে। ডায়লগ গুলো তামিল মুভির মতো দিলাম মনে হইলো। বেশ হাসি ও পাচ্ছে।
তারপর থেকে আমি নিয়মিত ভার্সিটিতে যাওয়া শুরু করলাম। অনেক মেয়েদের সাথে ও আমার বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছে। তাদের সাথে ভালো সময় ব্যায় করতাম। কিন্তু আমার আসল লক্ষ ছিল অর্পূণাকে দেখা। কিন্তু এটা কখনোই বুজতে দিতাম না। দিন যাচ্ছে তার মতো, রাত্রি সে তার নিজ সময়ে আর্বিভুত হচ্ছে, চন্দ্র অন্যের আলোতে আমাদের আলোকিত করছে। আর আমি এই মনঃক্ষুণ্ণ জোৎনায় নিজের সব দুঃখ ধোয়াতে উড়াচ্ছি। রাত্রি পার হলো, নতুন সূর্যের উদয় হলো। এর ঠিক কিছুক্ষন পরেই দড়জায় কাড়া পড়লো। দড়জা খুলে দেখি আমার প্রাপ্তন।
— ইমু আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে,, ২য় বারের মতো আবার চমকালাম এবং বুকে তীব্র ব্যাথাও অনুভব করলাম। তবুও চুপ রইলাম।
— তা ভালো তো, কবে বিয়ে? মেয়েটি হয়তো এমন উওর আশা করে নি, তাইকান্না শুরু করলো
— তুমি কেন এমন করছো ইমু। আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো।
— ভুল জানো তুমি,,,
— তুমি চলে যাবার পর আমি বুজেছি তুমি ই ঠিক ছিলে। কিন্তু বুজতে দেড়ি করে ফেলেছি আমি। তাই তো তুমার কাছে ছুটে এসেছি।
— চলে যাও, আগে ই যেহেতু বাধা দেই নি এভার ও আটকাবো না।
— তুমি আমায় ভালোবাসো না?
— না
— বেশ,
মেয়েটা আমায় ঠেলে রুমে ঢুকে গেল। রুমের সব জানালা বন্ধ করে দিল। আমি তার ভাবমূর্তি বুজার চেষ্টা করছি।
হঠাৎ করে দেখলাম অর্পূণা তার সেলোয়ারের হাতের দু দিক থেকে টেনে ছিড়ে ফেললো, ঠোটের লিপস্টিক টা নষ্ট করে দিলো সাথে চোখের কাজল ও, ছুড়ি দিয়ে আরো বেশ কিছু জায়গায় কাপড় ছিড়ে ফেললো সাথে নিজের হাতে ও চাকু দিয়ে হালকা কাটতে লাগলো। আমি এখনও বুজতে পারছি না সে কি করতে চাচ্ছে।
— কি করছো এগুলো তুমি?
— আমি এখন চলে যাব, দড়জা খুল।
— মানে কি! তুমি এই ভাবে আমার রুম থেকে বের হবে?
— হুম,আর বাইরে গিয়ে চিৎকার করে বলবো তুমি আমায়……
— ও মাই গড,,, কি পাগলামি এগুলো? দেখতে দেখতে আবার সে তার হাতে চাকু বসিয়ে দিল।
— আমি তুমায় সত্যি অনেক ভালোবাসি। একবার হারিয়েছি আর হারাতে চাই না।
— অপূর্ণা পাগলামি করো না।
এভার আর কোন কথা ছাড়াই সে আমায় জড়িয়ে দরলো। আস্তে আস্তে কান্নার বেগ বেড়ে যাচ্ছে। আমার পাথুরে মনে ও প্রেমের গাছ টি বৃহৎ হতে লাগলো। এভার আমি ও জড়িয়ে নিলাম আমার বাহুতে। আবার সেই পাগল করা চুলের গন্ধে বেষ্টত হলো আমার মন পিন্জর, মোলায়েম শরীরের ছোয়ার সর্তক আমার এ জগৎ। আমি খেয়াল করলাম মেয়েটার কাটা জায়গা থেকে বের হওয়া রক্তে লাল হয়ে যাচ্ছে আমার কাপড়। ড্রেসিং করছি আর তাকিয়ে আছি মেয়েটার দিকে। কি অপরূপ সে।
— আচ্ছা, সত্যিই কি তুমার বিয়ে ঠিক?
— আরে না,,,
— তাহলে যে বললে!
— বারে তুমি অভিনয় করতে পারো আর আমি করলেই হরতাল?
— আজব মেয়ে,,,
— হু আজব ই,,, এখন আর অন্য মেয়েদের সাথে সখ্যতা গড়তে হবে না। আমি আছি তো!
— জ্বি হুকুম মহারানী।
— Listen,,, I wanna kiss you..
— what???
— I need a deep kiss bby…
— Noooo,,
— Yes,,
— আরে সকালে ব্রাশ করি নাই তো।
— ছি ইইই,,,
— ছি এর কি! তুমি তো সুজুক ই দিলানা। গুন্ডি মাইয়া।
— যাও ফ্রেশ হয়ে আসো,,,
আমি ওয়াশরুমে ঢুকে একটা শান্তির হাসি দিলাম।যাক যাই হয়েছে মন্দ হয়। সুখের নীড় আবার গড়ুক।
এখান থেকেই শুরু হবে নতুন এক ভালোবাসার গল্প। দুজন দুজনার গল্প। বেচে থাকুক এমন ভালোবাসা, হাজারো প্রেমিক -প্রমিকা তাদের ভুল স্বীকার করে ফিরে আসুক তাদের জীবনে।তাহলেই তৈরি হবে এক অসাধারণ গল্প।