থার্টি-ফাস্টে নাইট লাভ

থার্টি-ফাস্টে নাইট লাভ

বছরের শেষরাইত আজকে। বহুত আকুলি,বিকুলি কইরা কুলসুম বিবিকে বিছানায় আনলাম।নইলে নাতিপুতি, বউ, ছেলে, কাজের লোকদের, সামলিয়ে প্রতিদিন সে ঘুমাতে আসে বারোটার পরে।মানে একদিন শেষ কইরা আরেকদিনের শুরুতে।দরজা বন্ধ করতে গেলেই কুলসুম বিবি হালকা ঝাঁঝে চেঁচিয়ে উঠে বলল, এই আফনের হইছে কি? দুয়ারে সিটকিনি দ্যান ক্যা? আমি নরম গলায় বললাম,আইজ তোমার একদিন কি আমার শেষদিন বউ। সে তার বড় চোখের সাইজকে আরো বড় করে বলল, আজব কি হইছে?

আমি শুরু করলাম।দেখ বিয়ের পর থেইকা তোমারে কাছে পাইতে আমার যুদ্ধ করা লাগছে।আমি কি জোর কইরা সাদি করছি?নানা অজুহাতে ৪০ বছর পার কইরা দিলা।তখন বলতা আমি বালিকা।নরম গাল আমার।আপনের শলার মত দাঁড়ি আমার গালে লাগলে ব্যথা পাই।গাল লাল হয়।সকালে সবাই নানান কথা কয়।আমার শরম লাগে।এই ভুয়া ছুতোয় ৫ বছর শেষ করলা।সবার বালিকা বয়েস শেষ হয় ১৯ এ। আর তোমার শেষ হইছে ২৩শে।মাইনা নিলাম।কারণ তোমার কচি দেহখানি বুকে চাইপা ধরলেও বেশ আরাম পাইতাম।মনে হতো হাজীর বিরিয়ানি আর কুমিল্লার রসমলাই খাইতাছি।

তারপর শুরু করলা, বাচ্চাদের নিয়া রাইত জাগি।ওদের যত্ন নিতে নিতে আমি ক্লান্ত।দয়া কইরা দূরে থাকেন।মাইনা নিলাম।কারণ সন্তানের এতটুকু অযত্ন হোক তা আমিও চাইনাই।তাদের ভালোথাকাই আমার ভালো থাকা।এভাবে আরো কয়েক বছর গেল।

তারা যখন আলাদা শোয়ার মত বড় হলো।তখন দুজনেই রুমের দরজা খোলা রাখতাম।কারণ তারা যদি রাত জেগে ভয় পায়।তারা ঘুমালে তোমারে ধরতে গেলে, বলতে ওরা এসে পড়বে।এতবছর পর আর কিসের চুমাচুমি,জড়াজড়ি?দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাইবার সুযোগ ও দাওনি।আমার যৌবনকাল বৃথা যাওয়ার জন্য তুমিই দায়ী।তবুও মাইনা নিলাম।তোমার গলার স্বর তো নয়।যেন মাইক।ধরতে গেলেই চিল্লাইয়া উঠতে।তখন তারা এসো বলত,কি হইছে আম্মু?আব্বু ঝগড়া করে তোমার সাথে?তোমার নিরবতায় তারা বুঝে নিত তাই।এভাবে নানাভাবেই আমাকে বাঁশ দিয়ে আসছো।নিরবে মাইনা নিতাম। কারণ আমি শান্ত আর শান্তিপ্রিয় মানুষ।

তারপর তারা বড় হওয়ার পর, বলতে আপনি এত্ত বেশরম ক্যান?বিয়ের এত বছর হইছে,তবুও বউকে ধরতে চান।বদস্বভাব বদলান।কি ভাববে তারা?হু।চুপ থাকতাম ছেলেমেয়ে শুনবে বলে। এরপর তাদের বিয়ে হলো। তখন বলতে,আমার শরীরে নানা রোগ দেখা দিয়েছে।এসব পিরিত ভালো লাগেনা।আর ছেলেবউ এখন রঙ ঢঙ করবো।সেইখানে আপনে এমন করা মানায়?আক্কেল থাকা লাগে।মাইনা নিলাম সম্মানের দিকে তাকাইয়া।

তারপর শুরু হইলো তোমার আরও শত বাহানা।নাতি হইছে।আমার খেয়াল রাখা লাগে।আর আলাদা ঘুমাইতে এই ছুতায়,আপনে ঘুমাইলে এত জোরে নাক ডাকেন,মনে হয় গ্রামে আমাদের উত্তর পুকুরপাড়ে কেউ করাত দিয়া বাঁশ কাটতাছে। তোমার নানা বাহানার জাঁতাকলে আমার জীবনের রোমান্টিক ইচ্ছাগুলোর কোরবানি হইছে।আইজ মানামানি নাই।একবছর গত হইল মানে আমার মরনের সময় এগিয়ে আসছে।আমাদের খানদানে সব পুরুষ বউদের আগে মরে আর বেশী আয়ুই পায়না।

তোমার গালে চুমু দিমুই বলে, কুলসুম বিবিরে ঝাপটাইয়া ধরার সাথে সাথেই,ছোবল মারা সাপের মত ফোঁসফোঁস করতে করতে, আআয়ায়ায়ায়া….এইটা মাইনষের হাত না লোহা?ছাড়েন কইলাম।নাতি নাতনিরা ছুটে এসে দরজা ধাক্কা দিতে লাগল।আমি খুলে দিলাম।তারা চোখ বড় বড় করে জানতে চাইলো,দাদু কি হউছে? দিদা এমন চিল্লালো কেন?কুলসুম বিবি চুপ হয়ে আছে।ছেলের বউ এসে ও জানতে চাইলো,বাবা কোন সমস্যা? আমি লজ্জায় মরে গেলাম।নিজের বউর দিকে কড়মড় কইরা চাইয়া, মনে মনে কইলাম,বছরের শেষ রাইতেও একটু সুখ পাইতে দিলানা।জীবন বিরহময়।

একি!খানিকপর দেখি বউ আমার বুকের সাথে লেপ্টে শুয়ে আছে।তাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসার নিদিষ্ট কোন সময় নেই।বয়স নেই।সে মিষ্টি হেসে দিল।যাক এই মাঝবয়সে আইসা কুলসুম বিবি বুঝল কিছু। জীবন আসলেই আনন্দময়।সুখময়।রোমাঞ্চময়।ভালোবাসাময়।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত