রাত তখন পনে এগারো’টা।রুমে পায়চারি করছি!ডাইরী’তে লিখতে বসছি তোরিও নামের একটা ছেলেকে নিয়ে।কিন্তু কেন জানি মনটা বসছে না কোথাও,লিখতে বসে সবটা হাঁড়িয়ে যাচ্ছে!গুলিয়ে ফেলছি সব অক্ষরগুলো। রাত গড়াচ্ছে মিহি শীতলতার আভায়।হঠাৎ’ই মনে পড়ে রাতের খাবার খাওয়া হয়নি।পরক্ষনেই আবার মনে পড়ে ডায়েট করছি! সবটা উল্টে যাচ্ছে আমার,চার-পাঁচটা ভাবনা যেন জড়সড় হয়ে আসছে ভেতরে।এসব ভাবতেই তোরিও’র কথা মনে পড়ে!যদিও এতোক্ষণ তাঁকে নিয়েই ভাবা হচ্ছিলো। বিছানা থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে ভাবি ছেলেটাকে এখন ফোন দিয়ে কথা বললে কেমন হয়?মনটা ধরফর করে এসব ভাবতেই!মনটা সায় দেয় কিঞ্চিৎ ভয় নিয়ে।একবার ফোন দিয়ে কেটে দেই।নিমিষেই মিহি হাঁসি ফুঁটে ঠোটের এক কোণে।আবার ফোনের ডায়াল লিষ্টে গিয়ে ‘তোরিও’ নামের সেইভ করা নাম্বার’টায় ফোন দেই।এবার আর কাটি না,ফোনটাও কানে নেই না।
রিং হয় কিন্তু ফোনটা রিসিভ হয় না!এবার একটু সাহস পাই ভেতরে।আবার ফোন দেই।রিসিভ হয় না আবারও।রাগ হয়,আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াই।মনে মনে বলি,আমাকেও পাত্তা দেয় না এমন ছেলেকে দেখেই নিব।কি নেই আমার ভেতরে?পঞ্চাশটা ছেলেকে পেন্ডিং রেখেছি;একসেপ্ট করছি না।আর এই ছেলে আমার ফোন রিসিভ করে না।এসব ভাবতে ভাবতেই ফোনের নোটিফিকেশন টোন টং করে বেঁজে উঠে।আয়নার সামনে থেকে উঠে গিয়ে ফোনটা বিছানা থেকে হাতে তুলি।হাতে নিতেই আরেকটা ম্যাসেজ আসে,লক স্ক্রিনে তোরিও নামের নাম্বার থেকে ম্যাসেজ আসে।কেন জানি সবটা ভুলে একটা ভালো লাগা চলে আসে ভেতরে নিমিষেই। ফিঙ্গার দিয়ে লকটা তাড়াতাড়ি করে খুলে ম্যাসেজ বক্সে যাই। তোরিও লিখেছে,
-“ক্ষমা করবেন,ঘুমিয়ে পড়েছিলাম!আর রাতে কথা বলা নিষেধ!” ছেলেটার কথায় হাঁসি মৃদু!ভেতরটা হাল্কা হয় নিমিষেই।বিছানায় বসে বালিশটা দু’পায়ের মাঝখানে রেখে জবাব দেই,
-“আরে এসব ব্যাপার না!দিনে কথা বলে নিব।” ম্যাসেজটা সেন্ড করেই প্রত্যুত্তরের আসায় থাকি!সবটা সুখ যেন ফোনের কতগুলো কথায় আবদ্ধ এখন।স্ক্রিনের আলো নিভে যেতে চায়,নিভতে দেই না।বার বার ম্যাসেজগুলো দেখি;পড়ি।টং করে উঠে আবার,তাতে লেখা থাকে,
-“সময় সাপেক্ষ বলে দেবে।আচ্ছা ফোনেই কেন কথা বলতে হবে?ম্যাসেজিং,চিরকুটে হতে পারে না কথা বলা?”
আমি হেঁসে জবাব দেই,
-“আজব হয় না ব্যাপারটা?তাছাড়া মানুষ কি বলবে কখনও জানলে?” ম্যাসেজটা সেন্ড করে ভাবি কেমন জানি অদ্ভুত ছেলেটা।এই যুগে এতগুলো মাধ্যম থাকতে কথা বলব না?ম্যাসেজিং করে কথা বলতে হবে? ভাবতে ভাবতে আবার টং করে উঠে।তাতে লেখা থাকে,
-“আমার ইচ্ছেগুলো এমনই!হোক না কিছুটা অসম্পূর্ণ; আলাদা!”
আমি ছেলেটার কথায় কেন জানি নতুন কিছুর আভাস পাই।বুকে শতো সহজ ইচ্ছেগুলো জবাই দিয়ে রাজি হয়ে যাই নিশ্চুপ কথা বলার জন্য।তবে এটা কতো দিন মনটা মানবে তা আমার জানা নেই। ঘুমটা ভাঙ্গে সকাল দশটায়।ফোনটা পিঠের নিচে লেপটে আছে।ফোনটা হাতে পেয়েই মনে পড়ল রাতের কথা।ম্যাসেজিং করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। লাস্ট ম্যাসেজের রিপ্লাই দেখলাম আমি নিজেই না দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি।রাগ হচ্ছে কিছুটা;কতো করে বললাম ফোনে কথা বলি।ছেলেটা ঢং করে,ম্যাসেজিং করে কথা বলবে। এগারেটার মধ্যে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া-দাওয়া শেষ করলাম।গা’টা এখনও হাল্কা ম্যাচ ম্যাচ করছে।ফোনটা হাতে নেই;অনলাইনে বসি।তোরিও’কে এক্টিভ পাই।তিনশো ছেলের ম্যাসেজ আন সিন করা।সবটা ফেলে রেখে তোরিও’কে ম্যাসেজ করি,
-“ঘুম থেকে কখন উঠলেন?” ম্যাসেজটা সেন্ড করে অপেক্ষায় থাকি রিপ্লাইের জন্য।ভাবি তাড়াতাড়ি রিপ্লাই পাব;কিন্তু এক মিনিট চলে যায় রিপ্লাই আসে না।রাগ হয়,অভিমান হয়।ইনবক্সে ঢুকে আবার ম্যাসেজ করি,
-“কুত্তা তাড়াতাড়ি রিপ্লাই দিতে পারিস না?” যেন অনেকটা আপন মনে হয়,তাই মনে যা আসে বলে দেই!পরক্ষণে বকা দিয়ে মনে সঙ্কোচ তৈরি করি।কি ভাববে ছেলেটা! অতঃপর সিন করে ম্যাসেজ,রিপ্লাই আসে পরপরই!
-“বড় লোকের মেয়ের ধৈর্য্য এতো কম হলে চলে?আমি প্রায় টং দোকানে বসে যখন সিগারেট চাই;পাঁচ মিনিটও লেইট হয় সিগারেট দিতে দোকানি মামার।কই তখন তো আমার বিরক্ত লাগে না।মাঝে মধ্যে তাঁর সিগারেট দেবার কথা মনেই থাকে না।” তোরিও’র কথায় বেশ অবাক হই আমি।সিগারেট খায় সেটা আমাকে বলে কি করে?ছেলেটা কি জানে না তাঁকে আমি ভালোবাসি প্রচন্ড!বুঝতে পারে না? এসব ভাবতে ভাবতে তোরিও আবার ম্যাসেজ করে।টং করে উঠে,তাতে লেখা থাকে,
-“সিগারেট খাওয়া নিয়ে কোন প্রশ্ন?” আমি এবার চটপটে জবাব দেই,
-“নাহ্!কিছু সময় সবটা জেনেও মানিয়ে নিতে হয়!নয়তো সবটা পাওয়া যায় না;চাওয়া জিনিসগুলো হাঁড়িয়ে যায়।”
কথাগুলো লিখে দীর্ঘশ্বাস নেই।জানিনা কি করতে চলেছি আমি।তারপরও মনটা যেন খারাপ ভালো বোঝে না। ছেলেটাকে প্রায় ক্যাম্পাসে দেখি!কিন্তু বন্ধুদের সাথে থাকায় কথা বলার সাহস নিয়ে আগাতে পারি না।চুপি চুপি কিছু সময় খুঁজি;যদি হুট করে একা পাই কথা বলে নেব। চোখে কালো ফ্রেমের চশমা,শার্ট পড়া ছেলে;চুলটা বেশ গুছানোই।তবুও অগোছালো লাগে।তারপরও মায়া জন্মে,কথা বলার আগ্রহ বাড়ে। হঠাৎ নিরু’র থাক্কায় বাস্তবে ফিরি!
-“কিরে ক্যাম্পাসের ওদিক তাকিয়ে কি ভাবিস?” তোরিও’কে দেখে এমটা করে মাঝে মধ্যেই ভাবনায় হাঁড়াই।বুঝিনা কেন এমন হয় আমার।আবার ভাবনায় পড়ি!নিরু আবার ধাক্কা দিয়ে বলে,
-“কিরে সালা মরলি কোথাও নাকি?” এবার চটপট করে নিজেকে ভাবনা থেকে সড়িয়ে নিয়ে জবাব দেই,
-“কি বলিস না,আরে মাথা ব্যাথা করছে তাই চুপ করে আছি।” কথাটা বলে পাশের বেঞ্চে তাকাই।তোরিও নেই।হয়তো উঠে চলে গেছে কোথাও। নিরু আর কিছু বলে না।সব কয়টা বান্ধবী চুপ থাকি। কিছুক্ষণ পর মুঠো ফোনে নিরু একটা সুন্দর,হ্যান্ডসাম ছেলের ছবি দেখিয়ে বলে,
-“এটা আমাকে প্রপোজ করেছে দোস্ত,রাজি হবো?” নিরু’কে যে প্রপোজ করেছে তাকে দেখি ফোনের স্ক্রিনে।ভালো লাগে হুট করেই,অনেক হ্যান্ডসাম,বেশ দেখতে কিন্তু বান্ধবী’কে যেহুতু প্রপোজ করেছে তাই ভালো লাগাটা দুলাভাই এর খাতায় রেখে জবাব দেই,
-“অনেক ভালো মানাবে,রাজি হয়ে যা জলদি।” নিরু আমার প্রত্যুত্তর নিয়ে ফোন টেপায় ব্যস্থ হয়ে যায়। আমার কেন জানি বিরক্তি লাগে!এটা আসলে বিরক্তি না;হিংসে যাকে বলে।পার্স থেকে চুপি চুপি ফোনটা বের করি তোরিও’র সাথে কথা বলব বলে। ফোনটা বের করেই ম্যাসেজ করি,
-“জলদি অনলাইনে আসেন।” ম্যাসেজটা সেন্ড করে অনকাইনে ঢুকি।বার বার রিফ্রেস করি।কখন ছেলেটা আসবে।এদিকে দশ-পনেরো’টা ম্যাসেজ আসে নানা মানুষের।চার মিনিট পর তোরিও’র ম্যাসেজ আসে,
-“এতো তড়িঘড়ি কেন অনলাইনে আসার?” আমার কেন জানি রাগ হয়,কারণ লাগেনা।তাই রেগে গিয়ে উওর দেই ম্যাসেজের,
-“নেকামি করেন কেন?আসতে বলছি আসবেন।আর কথা বলতে ইচ্ছে করছে তাই অনলাইনে আসতে বলছি।”
কথাগুলোতে কোন ব্যাকস্পেস ব্যবহার করি না;ভাবি না একটুও!বলে দেই যা মন চায়।দেড় মিনিট চলে যায়,সিনও হয়।কিন্তু রিপ্লাই আসে না।রাগ হয় প্রচন্ডহারে আবারও।রাগে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলি।তারপর ইনবক্সে গিয়ে লিখি,
-“প্রায় তিনশো খানেক ম্যাসেজ ঝুলানো,সিন করি না।আর তুই ভাব নিস?ম্যাসেজের রিপ্লাই করিস না।”
এই বলে ডাটা বন্ধ করেই চটপট করে উঠে পরি।তারপর বাসায় চলে আসি গজগজে রাগ নিয়ে। রাত এগারো’টা,ডাইরী নিয়ে আবারো লিখতে বসেছি।কিন্তু তোরিও’কে নিয়ে লিখতে বসলে সব অক্ষরগুলো অচেনা হয়ে যায়।লেখাগুলো শেষ করে পৃষ্টা ছিঁড়ে ফেলি।মনে হয় লেখাটা আরো গুঁছিয়ে লিখলে ভালো হবে।কিন্তু লেখাগুলো আরো অগোছালো হয়,অক্ষরগুলো যেন থমকে যায়।মনে পড়েনা কি লিখব।লেখাটা বাদ দেই। অনাইলে যাবার আগেই তোরিও’কে ম্যাসেজ করি অনলাইনে আসতে। ডাটা অন করেই ছেলেটাকে এক্টিভ পাই।কিঞ্চিৎ ভালো লাগায় বামপাশটা শীতল অনুভূতি হয়।নিজে থেকেই চটপট করে ম্যাসেজ দেই,
-“তখন যে ম্যাসেজের উওর দিলেন না!আর ক্ষমা করবেন,রাগ হয়েছিলো তখন তাড়াতাড়ি উওর না পাওয়ায়।” ম্যাসেজগুলো সেন্ড করার পরপরই নিরু’র ম্যাসেজ আসে!
-“কাল আসতে পারবি?”
-“কোথায়?”
নিরু কিছু ছবি পাঠায় ওর বয় ফেন্ডের।ছবিগুলো দেখে অনেকটা অবাক হলাম।সেই তো কাল দুপুরে প্রপোজ করলো ছেলেটা।আর সেদিন বিকেলেই ঘুরাঘুরি? ছবিগুলো নিয়ে ভাবতে ভাবতে বড় করে দেখছি এপাশ ওপাশ চেপে চেপে।নিরু’র আরেকটা ম্যাসেজ আসল এরিই মধ্যে,
-“কাল আমাকে অনেক বড় করে প্রপোজ করবে ছেলেটা,তুই কিন্তু কাল থাকবি কেমন।” কেমন জানি রঙের বন্য বয়ে যেতে থাকে আমার ভেতর দিয়ে।ছেলেটা সত্যিই অনেক হ্যান্ডসাম,চুলটাও বেশ।নিশ্চই কাল ছেলেটার ফেন্ডও আসবে।নিশ্চই ছেলেটার ফেন্ডগুলোও অনেক হ্যান্ডসাম হবে।এসব ভাবতে বেশ ভালো লাগছে কেন জানি!ফোনটা আবার টং করে উঠল নিরু’র ম্যাসেজে।
-“কিরে তোর কিন্তু আসতে হবে,আমি অন্য কিছু জানতে চাই না।”
-“ছেলেটার কোন ফেন্ড আসবে না?”
আমার কথায় নিরু ছেলেটার কিছু গ্রুপ ছবি দিল।তিনটা বন্ধু এক সঙ্গে।সত্যিই অনেক সুন্দর ছেলেগুলো। ছবিগুলো দেখে মনে একরাশ ভালো লাগা নিয়ে রিপ্লাই দিলাম,
-“আমি একশ পারসেন্ট আসব কথা দিলাম।”
নিরু অফলাইন হলো আমার জবাব পেয়ে।মনে মনে ভাবতে লাগলাম কাল ছেলেগুলোর সামনে কি পড়ে যাব!নীল শাড়ী পড়লে মানাবে?নাহ্ শাড়ী পড়লে কেমন দেখাবে।ভালো কোন দামি ড্রেস পড়তে হবে।এসব ভাবতে ভাবতে ডাটা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ি আগামি দিনের ভাবনাগুলো নিয়ে। রাত এগারোটা গড়িয়েছে!স্বাভাবিক ভাবেই রাত তিন’টার আগে ঘুমাতে পারি না।বিষন্ন রাতগুলোর আগে সঙ্গি না থাকলেও এখন পায়েল নামের মেয়েটা মাঝে মধ্যেই বুকের বাম পাশটা ধুক ধুক করায়।ডাইরী লিখি মেয়েটাকে নিয়ে প্রায়ই।তবে তাঁকে জানানো হয় না।বেশ বড় ঘরের মেয়ে,রূপবতী।হাঁসলে টোল পড়ে গালের ডান পাশটায়।তিনটা মাস হলো মেয়েটা আমাকে নক করে;নাম্বার জোগার করে কথা বলে।তবে ভয়েসে কথা বলি না।ইচ্ছে হয় না।তারপরও ইচ্ছে হয়,কিন্তু বলি না।
ডাইরী লিখতে লিখতে ফোনটা বেঁজে উঠে বিছানা থেকে।এতো রাতে কে ফোন করে সেটাই ভাবি!হয়তো সিম কোম্পানির অফিস থেকে।কারণ সচারাচর কল আসে না আমার ফোনে।ফোনটা বেঁজে বেঁজে চুপ হয়।আমি ডাইরী লেখায় মন দেই।মেয়েটাকে লিখতে বসলেই পৃষ্টা শেষ হয়,ফুরায় না লেখার আগ্রহ তবুও।ভাবনায় চলে যাই,ভাবি কবে কথা বলব!কি বলব সেটাও ভেবে রাখি।আবার ভাবি,না যেদিন কথা বলব সেদিন যা মন চায় বলব।তারপরও ভাবি পরের দিন কি কথা বলব,কথাগুলো ধাপে ধাপে সাঁজাই আবারও বেহায়ার মতো।ফোনটা থেমে যাওয়ার পর আবার বেঁজে উঠে।বিরক্তি লাগে,ডাইরী লেখায় মনটা যেন ডুব দিয়েছে!ইচ্ছে করেই উঠি না।ফোনটা বেঁজে আবারো চুপ হয়ে যায়।ডাইরী লেখাটা বন্ধ করি,পৃষ্টা শেষ হয় প্রতিদিনির নিয়ম মাফিক;দুই পৃষ্টা। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি পায়েল ফোন করেছে।নিমিষেই বুকের ভেতরে একটা ভালো লাগা সৃষ্টি হয়।ফোনটার প্যার্টান খুলে ফোন দেই।রিং হবার আগেই কি ভেবে কেটে দেই।কেন জানি ভেতরটা বাধা দেয়।ম্যাসেজ করি মেয়েটাকে,
-“ক্ষমা করবেন,ঘুমিয়ে পড়েছিলাম!আর রাতে কথা বলা নিষেধ!” ম্যাসেজটা সেন্ড করে চুপ থাকি!কেন জানি মিথ্যেটা বলে ফেলি।কারণ ভালোবাসা’টা হয়তো তাঁর কাছে তুচ্ছ!পরক্ষণেই ভাবি,হয়তো তার মায়া আমি।এসব ভাবতে ভাবতে টং করে উঠে,ওপাশ থেকে উওর আসে!
-“আরে এসব ব্যাপার না!দিনে কথা বলে নিব। ”
আমার কেন জানি কথা বলার আগ্রহ’টা ভালো লাগায় গেঁথে দিলেও ভয় হয়।সহজে সবটা হয়ে যাওয়া মেনে নিতে কষ্ট হয়। আমি আবার ট্রাইপিং করি,
-“সময় সাপেক্ষ বলে দেবে।আচ্ছা ফোনেই কেন কথা বলতে হবে?ম্যাসেজিং,চিরকুটে হতে পারে না কথা বলা?”
কথাটা শেষ করেই একটা দীর্ঘশ্বাস নেই।চাওয়াগুলো কাছে পেয়েও ছেড়ে দেই।ভয় হয় ভেতরে অজানা একটা।এসব ভাবতে ভাবতে টং করে উঠে ম্যাসেজ!ওপাশ থেকে জবাব আসে,
-“আজব হয় না ব্যাপারটা?তাছাড়া মানুষ কি বলবে কখনও জানলে?” আমার কেন জানি খারাপ লাগে কথাগুলো স্ক্রিনে দেখে।মানুষকে নিয়ে ভাবে মেয়েটা।আমার অনুভূতি গুলো কেন জানি বাম পাশ থেকে মোচর দিয়ে উঠে।আমি এসব ভাবতে ভাবতে লিখি,
-“আমার ইচ্ছেগুলো এমনই!হোক না কিছুটা অসম্পূর্ণ; আলাদা!”
ম্যাসেজটা সেন্ড করে ভাবি কি রিয়েক্ট করবে মেয়েটা।চনচল,পেছনে ফিরে তাকাতে হয না কখনও।সেই মেয়েটা কি এসব নিশ্চুপ অনুভূতি খুঁজবে;বুঝবে?রাতটা শেষ হতে চলে।মেয়েটার আর কোন প্রত্যুত্তর পাই না। ঘুমটা আমার সকাল সাতটায় প্রায়ই ভাঙ্গে।তারপর একটা টিউশনি শেষ করে ভার্সিটি যাই।ভার্সিটি শেষ করে শুয়ে অনলাইনে মেয়েটার জন্য অপেক্ষা করছি।ম্যাসেজ করতে ভয় হয়;দশ হাঁজার পার ফলোয়াড় তাঁর।দিনে শতো শতো ম্যাসেজ আসে।একটা দিক পজেটিভ লাগে,মেয়েটা অনলাইনে ঢুকেই আমাকে ম্যাসেজ করে।আর আমি ম্যাসেজ করি না তাঁর কারণ!আমি ম্যাসেজ করলে হয়তো পনেরো-সতেরো জনের নিচে পরে থাকবে ম্যাসেজটা।তাই অপেক্ষায় থাকি মেয়েটা কখন ম্যাসেজ করবে।এসব ভাবতে ভাবতে টং করে উঠে,
-“ঘুম থেকে কখন উঠলেন?” ম্যাসেজটা যখন ওপর থেকে টং করে ভেষে উঠে!সব ভালো লাগা যেন ওই ছোট কথাগুলোয় জড়সড় হয়।পাগলামি করে লিখতে শুরু করি,
-“এই যানেন আপনার কথাই ভাবছিলাম!আপনাকে নিয়ে কেন জানি ভাবতে বেশ লাগে।তবে বলার সাহসটা পাই না কেন জানি।” এসব লিখতে লিখতে আবার ম্যাসেজ আসে পায়েলের!
-“কুত্তা তাড়াতাড়ি রিপ্লাই দিতে পারিস না?” পায়েলের ম্যাসেজটা পেয়ে কেন জানি লেখাগুলো ব্যাকস্পেস দিয়ে মুছে দিয়ে এবার চটপট করে লিখে সেন্ড করি,
-“বড় লোকের মেয়ের ধৈর্য্য এতো কম হলে চলে?আমি প্রায় টং দোকানে বসে যখন সিগারেট চাই;পাঁচ মিনিটও লেইট হয় সিগারেট দিতে দোকানি মামার।কই তখন তো আমার বিরক্ত লাগে না।মাঝে মধ্যে তাঁর সিগারেট দেবার কথা মনেই থাকে না।” সিগারেটের কথা উল্লেখ করি কেন জানি!সবটা জানিয়ে রাখতে চাই।আপন ভাবতে শুরু করেছি মেয়েটাকে।জানি ভালোওবাসি।তবে জানতে দেই না।সময়ের অপেক্ষায় থেকে শুধু কিছু অনুভূতি জানান দেই। মেয়েটা ভাবছে কিছু আমি জানি।তাই আবার ম্যাসেজ করি,
-“সিগারেট খাওয়া নিয়ে কোন প্রশ্ন?” পরপরই জবাব আসে,
-“নাহ্!কিছু সময় সবটা জেনেও মানিয়ে নিতে হয়!নয়তো সবটা পাওয়া যায় না;চাওয়া জিনিসগুলো হাঁড়িয়ে যায়।”
মেয়েটার জবাবে যেন বুকের জমাট বাধা কৌতূহলগুলো সড়ে যায়।বড়সড় একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি।এই দীর্ঘশ্বাসেও কেন জানি ভালো লাগা থাকে।
ক্যাম্পাসে পায়েল বরাবরই আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।আমিও চুপিচুপি দেখি;লুকিয়ে হাঁসিটা দেখা বরাবরই আমার প্রিয়।কিন্তু কথা বলা হয়ে উঠে না কখনও!আমি কথা বলার সাহস খুঁজে পাই না,দু বছরের জুনিয়র মেয়েটা।তার ওপর সে সবার ক্রাঁশ।সুযোগ পেলেও পায়েল এড়িয়ে যায় দেখেছি।তারপরও মেয়েটা কথা বলার জন্য একা আমাকে খোঁজে,এদিকে আমি একা থাকলেও মেয়েটা থাকে না।কারণ সে রূপবতী!তাকে ফলো করার মানুষের অভাব হয় না বন্ধু বান্ধবী’র অভাব হয় না।পায়েল বন্ধু-বান্ধব থাকলে সঙ্কোচ করে কথা বলতে।সাহস নিয়ে কথা বলে না। নিজেই চুপচাপ থাকি,আবার নিজেই কথা বলার জন্য ব্যকুল হই। ক্যাম্পাসে পায়েলের সামনের বেঞ্চ বসলেও কথা বলেনা মেয়েটা;তাকিয়ে থাকে।আমার একটা অজানা ভয় কাজ করে!দূর্বল হয়ে গেছি বুঝতে পারি মেয়েটার ওপর,বুকটা ব্যাথা করে ওঠে।আমি আর থাকি না আশা নিয়ে।চলে আসি মেয়েটার সামনে থেকে। কিছুক্ষণ পরই পায়েলের ম্যাসেজ আসে।
-“জলদি অনলাইনে আসেন।” আমি স্বাভাবিক ভাবে জবাব দেই,
-“এতো তড়িঘড়ি কেন অনলাইনে আসার?” মেয়েটা পরপরই রেগে প্রত্যুত্তর দেয়,
-“নেকামি করেন কেন?আসতে বলছি আসবেন।আর কথা বলতে ইচ্ছে করছে তাই অনলাইনে আসতে বলছি।”
কথাগুলো স্বাভাবিক কি না জানি না!বাম পাশটায় থাক্কা লাগে।বুঝতে পারি ভালোবেসে ফেলিছি মেয়েটাকে।এসব ভাবতে ভাবতে রিপ্লাই দেওয়া হয়না!পায়েলের আরেকটা ম্যাসেজ আসে কিছুক্ষণ পরই,
-“প্রায় তিনশো খানেক ম্যাসেজ ঝুলানো,সিন করি না।আর তুই ভাব নিস?ম্যাসেজের রিপ্লাই করিস না।”
কথাগুলো বলে মেয়েটা অফলাইন হয়। কেন জানি বুকটা ব্যাথা করে কথাগুলো দেখে।ভয় হয় অযথাই হাঁড়িয়ে যাবে,কথা বলবে না। রাতে ডাইরী লিখতে বসি আবারো!দিন দিন কেন জানি শব্দগুলো বিষন্নতার ছাঁপ নিচ্ছে।বুক ব্যাথা কাজ করে লিখতে বসলেই।হঠাৎ ফোনটা টেবিলের ওপর থেকে টং করে কেঁপে উঠে।পায়েলের ম্যাসেজ করে,অনলাইনে আসতে বলে।ডাইরী’টা আর লেখা হয় না। ডাইরী’টা রেখে অনলাইনে যাই।পরপরই মেয়েটার ম্যাসেজ আসে!
-“তখন যে ম্যাসেজের উওর দিলেন না!আর ক্ষমা করবেন,রাগ হয়েছিলো তখন তাড়াতাড়ি উওর না পাওয়ায়।” মেয়টার এমন ক্ষমা চাওয়ায় যেন সবটা ভুলে হাঁসি ফোটে মুখে।নিমিষেই ভালো লাগে।বদলায় বুক ব্যথাটা। এবার পায়েলের ম্যাসেজের তড়িঘড়ি করে রিপ্লাই দেই!
-“ভালোবাসায় এমন ভুল থাকবেই।তাছাড়া আমি তখন আপনাকে নিয়েই কিছু লিখছিলাম;আমার অনুভূতির কথা।কিন্তু আপনি রাগ করে চলে গেলেন আবার একটা ম্যাসেজ করে।তাই ওগুলো ব্যাকস্পেস দিয়ে কেটে ভেবেছিলাম তাড়াতাড়ি উওর দিব।কিন্তু অফলাইন ততক্ষণে।” ম্যাসেজটা সেন্ড হলো।কিন্তু সিন আর হলো না।ভাবলাম হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে।কিন্তু এক্টিভ দেখাচ্ছিলো পায়েলকে।অপেক্ষা করতে শুরু করলাম।সেকেন্ড থেকে মিনিটে গড়ালো অপেক্ষায়!তবুও রিপ্লাই নাই।অতঃপর আধা ঘন্টা গড়ালো।ভাবলাম কাল বলেই দিব মনের কথাটা। অতঃপর ইনবক্সে গিয়ে লিখলাম,
-“কাল নীল শাড়ী’টা পড়ে একটু দিয়াবাড়ি আসবেন?জায়গায়’টায় কাঁশফুল ফুটেছে নাকি অনেক।বিকেল বেলায় একটু হাঁটব আপনার পাশাপাশি।” ততক্ষণে মেয়েটা অফলাইন হয়েছে।তারপরও ভাবলাম হয়তো সকালে দেখবে।তখন নিশ্চই আমার অনুভূতি’টা বুঝবে।
দেড় মাস কেটে গেছে।পায়েল সেদিনের ম্যাসেজটা সিন করেনি আর।পর দিন গেল কোন উওর এলো না!সেদিন রাতেও এলো না। সেদিনই নিউজফিড ঘুরতে গিয়ে পায়েলের কিছু ছবিতে চোখটা আটকে গেলো।একটা ছেলের সাথে বেশ ভালো ভাবে কাছে গিয়ে ছবি দিয়েছে।প্রায় হাজার খানেক লাইক,চারশো কমেন্ট।কেন জানি এগুলো দেখে বুকের বামপাশটা মোচর দিয়ে উঠল।সেদিন প্রথম ম্যাসেজ করেছিলাম ওপর দিয়ে!কিন্তু সিন হয়নি;হয়তো’বা একশো ম্যাসেজের নিচে চাপা পড়েছিলো।সময় কই দেখার।আইডি’টা ডিলিট করে দিয়েছি পর দিনই।
এর পর থেকে নানা জায়গায় পায়েলকে ছেলেটার সঙ্গে মিশতে দেখেছি।পরে জানতে পারলাম প্রিয় মানুষ সে এখন।
ডাইরী’টা লেখা তারপর থেকে ধিরে ধিরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।মায়া কাটিয়ে বেশ শক্ত হয়ে উঠেছি।তারপরও মাঝে মধ্যেই ডাইরীটা’ লিখি।অব্যাক্ত কথাগুলো লিখে আবার বন্ধ করে রাখি।মাঝে মধ্যেই গভীর রাতে ফোনটা বেঁজে ওঠার অপেক্ষায় থাকি।কিন্তু ফোনটা আর বাঁজে না।ম্যাসেজও আর আসে না টং শব্দ করে। দেড় মাস কাটিয়ে ক্যাম্পাসে হঠাৎ করেই পায়েল’কে দেখলাম।চোখের নিচে কালো দাগ।হাঁসি’টা আর উজ্জল নেই।হাঁসেও না দেখলাম।বেহায়ার মতো এটাও লুকিয়ে দেখেছি। ক্যাম্পাস দিয়ে লাইব্রেরী তে যাবার সময় পায়েল সামনে পড়াতে পাশ কাটিয়ে চলেই যাচ্ছিলাম বরাবরই আগের মতো।হঠাৎ পায়েল বলে উঠল,
-“তোরিও,একটু দাঁড়াবে?” আমি থমকে দাঁড়িয়ে পড়লাম।তারপর পায়েলে’র সামনাসামনি হয়ে জবাব দিলাম,
-“বলে ফেলেন জলদি!সময় কম।”
মেয়েটা যেন আজ আর কোন বাধা মানল না জবাব দেবার সঙ্গে সঙ্গে।সবার সামনে আমার হাতটা ধরে ক্যাম্পাসের শেষে নিয়ে আসল। বট গাছের নিচে দাঁড়িয়ে দুজন,সামনে পকুর।তখন রোদটা মাথার ওপরে।নদীর পানিতে রোদগুলো পড়ে হাল্কা ঝিলিক কাটছে।
-“ক্ষমা করতে পারবে?” হঠাৎ পায়েলের মুখে এমন শব্দে স্বাভাবিক ভাবে জবাব দিলাম,
-“ভুল করলে তো ক্ষমা করব,কই ভুল তো করেন নাই!তাছাড়া অনেক দিন হলো কথা হয় না।ভুলে গেছি সবটা।”
পায়েলের কথা এখন আটকে আসে।ঘনঘন শ্বাস নিয়ে কথা বলে।
-“বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে দামি কিছু খুঁজতে গিয়েছিলাম!এখন আমার দামি জিনিসটাই যেন অমূল্য করে দিয়েছে সেই দামি শব্দটা।”
-“এমন কিছু নয়,দেহটা হাঁড়িয়েছেন!রূপবতী আছেন!বেশ করে আরেকটা পেয়ে যাবেন।অদামি আপনাদের সাথে বড্ড বেমানান।”
-“সুযোগ দাও না আরেকটি বার!” পায়েল কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে উঠে কথাগুলো।আমি মনটাকে শক্ত করে রেখে,একটা বড়সড় দীর্ঘশ্বাস নিয়ে জবাব দেই।
-“আমার কালো ফ্রেমের চশমাতে আপনাকে একদমই মানাবে না!একদমই না।তাছাড়া,রঙিন ফ্রেমের চশমার সাথে কালো ফ্রেমেটা একদমই যায় না।ক্ষমা করবেন।” এই বলে হাঁটা দেই ক্যাম্পাসের দিকে।ফিরে তাকাই না আর।কারণ ফিরে তাকালেই আমি মিথ্যা মায়ায় আটকা পড়ব।দামি কিছুতে আবার স্বপ্ন আকতে চাইবে বেহায়া মন।হয়তো পায়েল কাঁদছে মুখ ডুমরে।কিন্তু আমার তাঁর সাথে একদম যায় না,একদমই না….
“সমাপ্ত”