ভালোবাসা

ভালোবাসা

বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে নেহা। বৃষ্টি দেখতে কে না পছন্দ করে। নেহারও পছন্দ বৃষ্টি দেখা। তার থেকে বেশি ভালো লাগে বৃষ্টি তে ভিজতে আর তার মন ও চাইছে একটু ভিজতে। কিন্তু দু দিন বাদে নেহার বিয়ে। তাই এই বাচ্চামি অভ্যাস গুলো বাদ দিতে হবে। অবশ্য এই অভ্যাস গুলো বাদ দিতেও নেহার কোনো সমস্যা নেই। কারণ নেহা আর দশটা মেয়ের মতো না। সে অনেক চাপা স্বভাবের একটি মেয়ে। নিজের সব ইচ্ছে গুলো মনের ভেতর মাটিচাপা দিয়ে ফেলবে কিন্তু তার মুখ দেখে এটা কারো বোঝার সাধ্য নেই। হাঠাৎ দরজায় কলিংবেলের শব্দ শুনে তার মনোযোগ সরে গেল। নেহার মা দরজা খুলেছে আর কার সাথে যেন কথা বলছে। একটু পর নেহার মা নেহার রুমে এলো আর বললো…

মা : একটা শুখবর আছে !!!

নেহা : কি মা ?

মা : আমাদের নিরব এর না চাকরি হয়ে গেছে।

নেহা : সত্যি ?? কে বলল মা ?

মা : নিরব এর মা এসেছিলো মিষ্টি নিয়ে। এই নে ধর মিষ্টির প্যাকেট। আমার যে কি ভালো লাগছে। যাই, আমি ওকে একটু দোয়া করে দিয়ে আসি।

নেহা : …….

নেহা মিষ্টির প্যাকেট টা খুলে একটু মিচকি হাসি দিলো। কারণ ভেতরে শুধু কালো মিষ্টি। নেহা ভাবে নিরব পাগল একটা আসলে। কারো বাসায় দেওয়ার জন্য কেও কখনো শুধু কালো মিষ্টি কেনে ? কিন্তু নেহার আবার কালো মিষ্টি অনেক পছন্দ। এজন্যই হয়তো নিরব শুধু কালো মিষ্টিই দিয়েছে। কে কি ভাববে তাও দেখলো না।

মিষ্টির প্যাকেট টেবিল এ রেখে নেহা আবার বৃষ্টি দেখায় মনোযোগ দিলো। নেহা আবার ভাবছে নিরব এমন কেনো ? জীবন টা কি এতই সহজ বিষয় যে কোনো কিছু নিয়েই তার কোনো চিন্তা করতে হয় না। দুনিয়ায় সব নিয়ম একদিকে আর এই নিরব একদিকে। নিরব কে নেহা ছোটবেলা থেকেই চেনে। নেহা নিরব এর থেকে ৩ বছর এর ছোট। নিরব আর নেহাদের বাসাও পাশাপাশি। আবার তাদের পরিবার এর সম্পর্ক ও অনেক ভালো। নেহা ছোটবেলা থেকেই ছিলো একটু চাপা স্বভাবের। তাই প্রতিবেশী বাচ্চাদের সাথে খেলার সুযোগ একটু কমই হতো। কিন্তু একমাত্র নিরব ই ছিলো যে ঠিকমত সুযোগ পেলে নেহাকে সারাদিন জ্বালাতে পারবে।

নেহা কথা কম বলুক বা চুপ থাকুক এতে নিরব এর কোনো রকম মাথাব্যাথা ছিলোনা। ওর কাজ হচ্ছে শুধু নেহাকে জ্বালানো। নেহা যখন স্কুল যাওয়া শুরু করে তখন নিরব আর নেহা একসাথে স্কুল এ যেতো। যখন তারা একটু বড় হতে লাগলো তখন মাঝে মাঝে স্কুল ছুটি দিলে নিরব নেহাকে তার ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বলতো “যা আমার ব্যাগ টা বাসায় দিয়ে দিস আমার খেলা আছে। হা হা হা” নিরব ভালো করেই জানতো যে নেহা যেতে পারবে না একা একা। নেহা ব্যাগ নিয়ে চুপ চাপ দারিয়ে নিরব এর খেলা দেখতো। মনে মনে সে বিরক্তও হতো। এমনটা প্রায় ই হতো তবুও নেহা রাগ করে একা একা বাসায় চলে যেত না।

খেলা শেষ হলে নিরব এর সাথেই বাসায় আসতো। এজন্য অবশ্য মাঝে মাঝে বকাও খেতে হতো নেহাকে। তবুও সে নিরব এর দোষ দিত না আর চুপচাপ সব বকা শুনতো। বেশি চাপা স্বভাবের হলে যা হয় আর কি। কিন্তু বিষয়টি ঠিকি নিরব এর মাথায় থাকতো। তাই তো বিকেলে নিরব নেহাকে চকলেট দিয়ে সরি বলতো। নেহা কোনো উত্তরও দিতোনা কারন, সে ভালো করেই জানতো নিরব এই কাজ আবার করবে। নিরব বিরক্ত হয়ে নেহার মাথায় আস্তে করে একটা টোকা দিতেই নেহা ক্ষেপে নিরব কে চলে যেতে বলতো রাগ করে। নিরব তখন হাসতে হাসতে চলে যেতো। এটা দেখে নেহার প্রচুর রাগ ও হতো আর ভাবতো “এই ছেলেটার শুধু নাম টাই নিরব।

আসলে সে একটা বদের হাড্ডি”। তবে নিরব যথেষ্ট ভদ্র ছিলো। সে সবসময় বড়দের সম্যান করতো আর সবার মন জয় করে ভালোবাসা কেরে নিতো। এইজন্যই সবাই নিরবকে খুব ভালোবাসে আর ভরসাও করে। তবে সমস্যা শুরু হয় যখন নিরব এস এস সি পাশ করে স্কুল থেকে বেরিয়ে যায়। কারন, ততোদিনে তাদের মধ্যে বড় রকম একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে যায়। একজন যুবক আর যুবতির বেশি ঘনিষ্টতা কখনই আমাদের সমাজ ভালো চোখে দেখবেনা এই জিনিসটা ভেবেই নেহা নিরব এর থেকে দূরে দূরে থাকতো। প্রথমে বিষয়টা মাথায় না নিলেও নিরব পরে ঠিকি বুঝতে পারে আর তাদের দূরত্বও বজায় থাকে। কিন্তু মনের দূরত্ব ?

১০ম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে নেহাকে একটা ছেলে ফুল দিয়ে প্রেম নিবেদন করেছিলো। নেহা সরাসরি না করে দিয়ে ছিলো। কিন্তু ছেলেটা অনেক ব্যাস্ত ছিলো নেহার মনে যায়গা বানানোর জন্য। যদিও কিছুদিন পর ছেলেটা কার হাতে যেন বেধড়ক মার খেয়ে আর জীবনেও নেহার সামনে আসলো না। তাই নেহার মনেও সে যায়গা পেলো না। কিন্তু নেহা ঠিকি বুঝে গিয়েছিলো যে তার মনে শুধু নিরবের বিচারন। কারন চোখ দুটো শুধু নিরবকেই খুজতো। সময় যেতে যেতে নেহার বিয়ের বয়স হয়ে গেছে। এদিকে নেহার বাবা চাকরি থেকে রিটায়ার্ড নেবে। নেহার বিয়ের জন্য ছেলে দেখা শুরু হয়ে গেছে ।

কিন্তু এতদিনে লেখাপড়ার পাশাপাশি নিরব ভালো মানের লাফাঙ্গার হয়ে গেছে। যার না আছে কোনো কাজের টেনশন না আছে ভবিষ্যতে টেনশন। সারাদিন শুধু ঘুরে আর খায় আর সুযোগ পেলে শয়তানিতে মেতে ওঠে। নিরবের বাবা মা তাকে বোঝাতে বোঝাতে রুচি হারিয়ে ফেলেছে তাই আর কিছুই বলেন না। নেহার মা ও তো কম বোঝায় নি কারন ছোটবেলা থেকে ছেলেটাকে দেখে এসেছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। এইজন্যই নেহার জন্য পাত্র খোজা হলেও নিরবের উপর কারোই নজর পরে নি। তখন সিয়াম নামের এক ছেলে নেহার মামার মাধ্যমে নেহাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলো । ছেলে বিদেশে লেখাপড়া শেষ করে এখন দেশে তার বাবার ব্যাবসা দেখাশোনা করে ।

এই সুযোগ তো আর কেও হাতছাড়া করে না। তাই নেহার বাবা মা নেহার মতামত জানতে চাইলো। নেহা আর কি করবে। সে তো বড়ই চাপা একটি মেয়ে। তাই মনের সকল ইচ্ছা কে মাটিচাপা দিয়ে মাথা নারিয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিলো। সবায় খুশিতে মেতে উঠলো আর বিয়ের আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হলো। এদিকে নেহার মনের ভেতর ঝড় হচ্ছে সবসময় কারণ, সে যে নিরবকে হারিয়ে ফেললো। বিয়ের মাত্র এক সপ্তা বাকি নেহা ছাদে দারিয়ে ভাবছে নিরবকে ভুলে কিভাবে থাকবে আর এর মধ্যেই কোথা থেকে নিরব এসে হাজির।

নিরব : কিরে, কি খবর তোর। এই সন্ধায় এখানে কি করিস ?

নেহা : . . . . . .

নিরব : কিরে চুপ ক্যান ? খুশিতে নাকি টেনশনে ?

নেহা : . . . . . .

নিরব : বুঝছি তুই খুশিতেই চুপ আছিস। কারন ওই বাড়িতে গিয়ে তুই সারাদিন গরুর মতো চুপ চাপ কাজ করেই যাবি। তোর তো সমস্যা নেই।

নেহা : . . . . . .

নিরব : আমি টেনশনে আছি তোর জামাই রে নিয়া কারন গরুর সাথে সংসার করবে আর বাহিয়ে গিয়ে অন্য কাউকে খুজবে প্রেম করার জন্য। গরু তো আর কথা বলতে পারেনা।হা হা হা, Crime Petrol এ দ্যাখস নাই ?? এটা বলে নিরব নেহার মাথায় আস্তে করে একটা টোকা দিলো। (অগ্নিগিরি বিস্ফোরণ)

নেহা : নিজেকে কি ভাবিস তুই ????? জীবন কি এতই সহজ যে যা ভাববি তাই হবে ?? খাস তো বাপের হোটেলে তুই কি বুঝবি। মানুষ কে তো গুরুত্ব দুতে শিখিস নি। যদি শিখে থাকতি তাহলে লাইফে সিরিয়াস হইতি। ভালো কোনো চাকরি করতি। ভালোবাসা আর বিয়ের কথা তো বাদই দিলাম অন্তত বাবা ম এর শুখের চিন্তা করতি সব কথা গুলো একসাথে বলে ভেজা চোখে ছাদ থেকে চলে গেলো নেহা যা দেখে নিরব অবাক।

আর আজকে নিরব এর চাকরি হলো। তারমানে সেদিন নিরব নেহার কথা টায় গুরুত্ব দিয়েছিলো। কিন্তু অনেক দেরি করে ফেলেছে নিরব। আর তাছাড়া নিরব তো নেহাকে নিয়ে কিছু ভাবে না কখনো। তাই নেহাও আর এসব ভাবতে চায় না। বারান্দা থেকে ভেতরে এসে বারান্দার দরজা, জানালা লাগিয়ে জানালার পর্দা লাগিয়ে দিলো। বিছানায় বসে তাকালো মিষ্টির প্যাকেটের দিকে। হঠাৎ চোখ থেকে এক ফোটা পানি নেহার গাল বেয়ে বিছানায় পরলো। আর নেহা চোখ বন্ধ করে ফেললো।

আজ নেহার বিয়ে। বাসায় সবায় খুব ব্যাস্ত মেহমান দের নিয়ে। নেহা বউ সেজে বসে আছে আর মনে মনে নিরব কে দেখতে চাচ্ছে শেষ বারের মতো। আর গায়ে হলুদ এর দিনও নিরব কে সে দেখতে পায় নি। এর মধ্যে নেহা বাসার সবার ভেতর কেমন যেন আজব আচরণ লক্ষ করলো। হঠাৎ নেহার বাবা নেহার মামা কে বকা শুরু করলো। আর নেহার মা শুরু করলো কান্না। নেহার মা নেহার বাবা কে দোষারোপ করতে থাকলো..

নেহার মা : তোমার জন্য আজকে আমার মেয়ের কপাল পুরলো। আজকে এই পরিস্থিতির জন্য তুমিই দায়ি ।

নেহার বাবা : আমি কি আগে জনতাম নাকি যে ছেলে এমন করবে। আর এখন একে অন্যকে দোষ দিয়ে লাভ আছে? বিয়ে বাড়ির সব মানুষের মধ্যে কানাকানি শুরু হয়ে গেছে। কারো আর বুঝতে বাকি রইলো না যে ছেলে এই বিয়ে করবে না। বাসা থেকে পালিয়েছে একটা চিঠি লিখে যে সে অন্য কোনো মেয়েকে ভালোবাসে আর তার কাছেই গেছে। নেহা চুপ করে সব শুনছে পাথরের মতো।

নেহার মা : আল্লাহ আমার মেয়ের কি ক্ষতি হয়ে গেলো।

নেহার বাবা : তোমার ভাই ই তো এই সম্যন্ধ টা নিয়ে এসেছিলো। আমি তো কিছু জানতাম না।

নেহার মা : এখানে জানার কি আছে। আমি কতবার করে বলেছিলাম কোনো ছেলে দেখার দরকার নেই নিরব এর সাথেই আমাদের নেহাকে ভালো মানাবে আর তুমি তো আছো ওই এক কথা নিয়ে “নিরব কোনো কাজ করেনা , বেকারের হাতে মেয়ে দেবো না”।

নেহার বাবা : এখন এসব বলে কি আর হবে। এতোগুলো মানুষের সামনে আমার মান সম্মান সব চলে গেলো…

নেহার মা : হায় আল্লাহ, আমার মেয়ের এতো বড় সর্বোনাশ হয়ে গেলো এর মধ্যে হঠাৎ করে নিরব কোথা থেকে হাজির হলো

নিরব : আন্টি সমস্যা কি ? এখন ও তো (কথার শেষ করার আগেই নিরব এর বাবা থামিয়ে দিলো নিরব কে)

নিরবের বাবা : চুপ কর বেয়াদব। বাবা উপস্থিত থাকতে বাবার মুখের উপর কথা বলে। শোনেন আপা, আপনার মেয়ের কিচ্ছু হয় নি। নেহার বিয়ে হবে , আজকেই হবে আর এখনি হবে। আর নিরবই করবে এই বিয়ে।

নিরব : (মাথা নিচু করে) আমি তো এইটাই বলতাম।

এবার নেহার নিরবতা ভাঙলো আর কান্না শুরু করলো কিন্তু এটা দুখেঃর নয় সুখের কান্না। হ্যা সেইদিনই নেহার বিয়ে হয়েছিলো। নিরব বাচিয়েছিলো নেহার বাবার মান সম্মান বাড়ি ভর্তি লোকের সামনে। আর নেহা যে কি পরিমান খুশি হয়েছিলো তা ঘোমটা থাকা সত্বেও বোঝা যাচ্ছিলো। কিন্তু নেহাকে এখন নিরবদের বাসায় তুলে নেওয়া হয় নি। গ্রাম থেকে নিরবের কিছু আত্মীয় আসবে আর খুব তারাতারি বড় অনুষ্ঠান করে নেহাকে তুলে নেওয়া হবে। নেহার রুম এর বারান্দায় দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছে নেহা আর নিরব। নেহাদের বাসায় নেহার মামা এসেছে। এসে বলছে…

নেহার মামা : দুলাভাই !!!!!

নেহার বাবা : না চিল্লায়া বলে ফেলো ।

নেহার মামা : আসলে ভালো ছেলেটাই হাতছাড়া হয়ে গেলো। সিয়াম কে নাকি গায়ে হলুদ এর রাতে কেও একজন চোখ বেধে নিয়ে গিয়ে প্রচুর মারধোর করে আর চিঠি টা নাকি সিয়াম লিখেও নাই। কালকে বাসার সামনে হাত পা ভাঙ্গা অবস্থায় ফেলে দিয়ে গেছে তখন সিয়াম এসব বলেছে।

নেহার বাবা : চুপ করো মিঞা। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। আমার মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনেক বড় পাপ করতে যাচ্ছিলাম কিন্তু আল্লাহ নিজে হাতে বাচিয়ে দিয়েছে।

নেহার মামা : কিন্তু ছেলে টা ভালো ছিলো।

নেহার মা : ওই, তুই তো চুপ ই থাক। আমার জামাই আবার খারাপ কোন দিক দিয়ে ? আর আমার মেয়ে নিরব এর কাছে আজীবন ভালো থাকবে। আর ওই ছেলের সাথে বিয়ে হলে আমার মেয়েটা হয়তো সারা জীবন কষ্ট পেতো।ঘর থেকে এসব শুনে নেহা লজ্জায় নিরব এর বুকে মুখ লুকোলো আর নিরবও এক হাতে নেহাকে জরিয়ে নিলো তার বুকের মাঝে। তখন নিরব মনে মনে বললো..

নিরব : কিভাবে হতে দিতাম ? নেহা যখন ক্লাস ১০ এ পড়ে তখন একজন শুধু ওকে প্রপোজ করেছিলো আর নেহা তো রাজি ও হয় নাই তাতেই ওকে মেরে এলাকা ছাড়া করেছিলাম আর এই শালা চু ি*য়া তো নেহাকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে, ওকে কিভাবে ছেড়ে দেই ? কিন্তু পরের দিন আবার আমার বিয়ে তাই শুধু তুলে নিয়ে গিয়ে হাত পা ভেঙ্গে বেধে রেখেছিলাম। বাবা মা এর এক ছেলে তাই মায়া করে কলকে বাসার সামনে ফেলে দিয়ে এসেছি। আহা রে, বেচারা!!!! কিন্তু কি আর করার “Everything is fair in love and world”

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত