সাত বছরের প্রেম

সাত বছরের প্রেম

অনেক দিন পর নক আসলো–

-দোস্ত কেমন আছিস?

– এইতো এখনো বেচে আছি।

-দোস্ত গুড নিউজ আছে।

-তো বলে ফেল।

– আমার বিয়ে। আগামী শুক্রবার, তুই আসবি তো?

-বলিস কি!! কার সাথে?

-জানি না বাসা থেকে ঠিক করছে, আমি এখোনো দেখিনি।

-এটাই তোর গুড নিউজ, ভাই কি জানে?

– জেনে যাবে হয়তো।

(ভাই হলো মেয়েটার প্রেমিক আর মেয়েটা আমার বন্ধু) একে অপরকে ভালোবাসতো খু্ব ওরা। শুধু ভালোবাসতো না খুব বেশি ভালো বাসতো। আমি হলাম মেয়েটার বন্ধু। সম্পর্কে অন্য কিছু ও হই বটে, তবে সম্পর্কটা ছিলো বন্ধুতের। হঠাত একদিন আমার এক আত্মীয়দের বাসায়, কিছু মেহমান বেড়াতে আসে, আর তাদের মাঝেই ছিলো রুমু। এখান থেকেই পরিচয়। মেয়েটা খুব মিশুক তাই অল্পদিনে এতো ঘনিষ্টতা। বন্ধু বলে কথা খোচাতে থাকতাম, একসময় বলে ফেললাম–

-দোস্ত প্রেম করিস?

– তরে কমু ক্যান?

তুই করিস? আরে না? আমার দ্বারা ওসব হয় না, তাছাড়া কারো ভালোবাসা পাওয়ার মত যোগ্যতা আমার নাই। বাদ দে, তোর কথা বল আমরা আমরাই তো।

-হুম করি, আর সে জন্যই আজ এখানে আসা।

-কি বলিস?

-হুম–

-কেনো কেনো.????

আসলে পরিবার থেকে মেনে নিচ্ছে না, আমাদের সম্পর্ক টা। আর অন্য যায়গা থেকে আমাকে দেখতে আসতেছে বার বার, তাই কিছুদিনের জন্য এখানে চলে আসলাম।

-ভালো করছিস, তা তোর প্রেমের বয়স কতো.?

-সাত বছর →

– সাত-বছর!!!! (বলতে গিয়ে বারকয়েক ঢোক গিললাম)

-হুম।

ওদের সাত বছরের প্রেম শুনে অবাক হয়েছিলাম আমি। মেয়েটার ফোন বেজে উঠলো।

-কার ফোন ভাইজানের নাকি????

-হুম চুপ।

ওরা ফোনে কথা বলছে বলছে হঠাৎ ঠাডা পড়লো। উফ্-স আকাশের বজ্রপাত না তো। এটার মানে ঝগড়া শুরু হলো, একপর্যায়ে ঠান্ডা হলে বায় বলে রেখে দিলো। আমি প্রশ্ন করলাম-

-এটা কি হলো দোস্ত?

-ঝগড়া-

-ঝগড়া তো বুঝলাম তবে সে টা কি নিয়ে ছিল??

-ছিলো যানবহন নিয়ে।

ভাইজান ট্রেন জার্নি পছন্দ করে না, অতপর আপুজান ট্রেনে করে আসলো কেনো? যদি ট্রেন লাইনচ্যুত হইয়া যাইত। ওদের গভীর প্রেম দেখে বললাম-

-দোস্ত এরকম ঝগড়া হয় নাকি?

-হুম অনেক।

-বলিস কি এতো ভালোবাসা বাসি তার পর ও ঝগড়া, মিস্টি ঝগড়া নিশ্চয়ই??

– আরে নাহ ও আমাকে সময়ই দিতে চায় না একদম, ও খুব বিজি থাকে সবসময়। বড় পরিবারের ছেলে, পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যবসায় জড়িত আমারে সময় না দিয়ে সময় দেয় তার বন্ধু বান্ধবীদের,যেটা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ থাকে না। মেয়েটি নিরবে কষ্ট সহ্য করে। কিছু বলতে পারে না। কারন সে ছেলেটার কষ্ট টাকে নিজের কষ্ট বলে মনে করে। ওদের দেখা করার সময় টা খুব বেশি লম্বা ছিলো না। ছয় মাস পরও দেখা হতো আবার এক বছর পরও হতো।

তাতে ও রুমোর কষ্ট ছিলো না। কষ্ট ছিলো সেখানে যেখানে ভালোবাসার পাশাপাশি অবহেলা তাড়া করতো তাকে। রুমো যখন ফোন দিত ভাই হয় আড্ডায় থাকতো না হয় কাজে থাকতো না হয় বাইকে থাকতো। রুমো কষ্টটা নিরবে সহ্য করতো। রুমোর ভালোবাসার প্রতিটা সময় কাটতো অবহেলায়। সে তার অপেক্ষায় অপেক্ষায় কখন যে সকাল হয়ে যেত নিজেই বুঝতো না। রুমো ভাইকে যদি বলতো তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না, ভাই বলতো হুম ভালোবাসি। কি ছিলো তার ভালোবাসায় বুঝতে পারতো না রুমো। তবুও ভায়ের প্রতি তার ভালোবাসা ছিলো অটুট।

ফেসবুকে ও তাদের কথা হত, সেখানে ও ফলাফল একই। যখনি ভাইকে ফোন দিতে যেত, তখনই তার কস্টটা নাড়া দিয়ে উঠতো। কি আর করার। তার সাথে কথা না বললে রুমোর রাত কাটতো না। এদিকে রুমোকে বিয়ের কথা বলতে থাকে বাসা থেকে কতদিন আর ঠেকাতে পারবে তার পরিবারকে??? ভাইকে কে বিয়ের কথা বললে, ভাই বলতো আমার পরিবারের একটা সম্মান আছে। তুমি বললেই আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না। তাছাড়া আমি তোমাকে আলাদা ভাবেও বিয়ে করতে পারবো না। রুমো যেন বেচে থেকেও মরে গেছে। মাঝে মাঝে আমাকে বলতো তাদের গভীর ভালোবাসার কথা।

-কি করবো দোস্ত,??

আমি বলতাম সব ঠিক হয়ে যাবে দোস্ত, নিজেকে কষ্ট দিস না। নিজেকে বোঝা সে যদি তোকে ভুলে থাকতে পারে তুই কেন পারবি না। কি আর বলার ছিলো আমার। ওপাস থেকে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসতো আমার কানে। তখন একটা কথাই বলেছি কাদিস না দোস্ত।

শুরুটা বেশ ভালোই ছিলো, তবে মাঝ থেকে এগুলো তাদের সাত বছরের প্রেম। আমি শুধু একটা কথাই ভাবতাম, সাত বছর ধরে যে ছেলে কে তার মনের চিলে কোঠায় যত্ন করে সাজিয়ে রেখেছে, ওই মনে কি অন্য কাওকে বসাতে পারবে?? রুমোর বিয়ের আজ ৮ম দিন। তবে সেই ছেলের সাথে নয়, অন্য জনের সাথে। আমি তো তোমাকেই সাজিয়ে রেখেছিলাম, আমার মনে তবে অন্য কারোর আগমন কেন বলতে পারো? নিজেকে শেষ করে দিতে পারে নি রুমো তার পরিবারের কথা ভেবে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত