আজব ভাবে শুরু

আজব ভাবে শুরু

~অফিসে বসে কাজ করছিলাম। তখনি কলিগ মিরা এসে বলে,
-অফিসের টাইম শেষ আপনি এখনো কাজ করছেন আরাফ সাহেব?

-না আসলে বাসায় কোন কাজ নেই তো, তাই এখানে বসেই আগামী সাপ্তাহের প্রজেক্টের কাজটা করছিলাম।

-সবাই চলে যাচ্ছে, আপনি এখানে একা একা কাজ করবেন। ব্যাপারটা কেমন না?

-সমস্যা নেই।

-চলুন না, কোথাও থেকে ঘুরে আসি?

-কোথা যাব? এখানেই বেশ লাগছে।

-আরে চলুন না। আজকে আমার এক বান্ধবীর বার্ড ডে। কিন্তু বস আমাকে ছুটিও দেই নি আগে। আর এখন একা একা যেতে মন চাইছে না? চলুন না দুজন মিলে সেখানে যাই।

-আসলে আমি..

-প্লিচ না করবেন না। চলুন যাই

বলেই মিরা আমার হাত ধরে করুনার দৃষ্টিতে তাকায়। আমি তার এমন তাকানোতে আর না করতে পারি নি। বলেই দিলাম চলুন। তবে জলদি ফিরে আসতে হবে আমাকে?

-ঠিক আছে যাব আর আসবো তবু চলুন।

বলেই আমার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে আসে অফিসের বাইরে। বাহিরে এসে দেখি রিক্মাও দাড়ানো। কি আজব ব্যাপার এমনি তে রিক্সার জন্য দাড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ব্যাথা হয়ে যায় আর আজকে রিক্সা আগে থেকেই রেডি। ব্যাপাড় টা কেমন যেন মনে হচ্ছে? তখনি মিরা বলে

-কি হল দাড়িয়ে আছেন কেন? উঠুন লেট হয়ে যাচ্ছে তো!

রিক্সাই উঠে গেলাম রিক্সা চলছে তার আপন গতিতে। হালকা হাওয়াই রিক্সায় বসে থাকতে ভাল লাগছে। যদিও কোন মেয়ের সাথে কখনো রিক্সাই উঠি নি। তাই এক ধরণের অস্বিরতাও লাগছে। তবে সেটা ভাল লাগাড় ন্যায়ে পরিণত করার চেষ্টা করছি। প্রায় ৩০ মিনিট পর আমরা একটা বড় বিল্ডিং এর সামনে রিক্সা থেকে নামি। বিল্ডিং টা সুন্দর করে সাজানো। দেখে বুঝা যাচ্ছে আজকে এখানে কোন অনুষ্টান হতে চলছে। এমন বড় বাড়ির জন্মদিনের অনুষ্টানে বিনা দাওয়াতে আসায় মনের ভেতর এক ধরনের দৃধা জন্ম নেয়। আমার কি এখানে আসা টা ঠিক হচ্ছে। নাকি ফিরে যাব?

-আরাফ সাহেব আসেন আমার সাথে।

মিরা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে বাসার ভেতর ঢুকতে থাকে। আমি তার পিছু পিছু হাটছি। বাসার ভেতর ঢুকে দেখি  অনেক মানুষের আনাগুনা। একটা জন্মদিনের অনুষ্টানে এত মানুষকে দাওয়াত করতে এই প্রথম দেখলাম। হয়তো খুব ধনী বলেই এমনটা।

ধনী বললাম কারণ বাসা টা দেখে মনে হচ্ছে অনেক বড় আর সুন্দর পরিপাটি করে সাজানো। আসাবাপত্র আর ফার্নিচারে ভরপুর তা দেখে বুঝা যাচ্ছে। কোন বড়লোক ফ্যামিলি হবে হয়তো। হঠাৎ খেয়াল করি একটা মেয়ে আসছে আমাদের দিকে। নীল শাড়ি পড়িধানে মেয়েটিকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে তার ওপড় চুল গুলোর খুপা খুলে এক পাশে রাখা। যেন কোন রাজকন্যা আমার সামনে দাড়িয়ে আছে। কোন ভাবেই চোখ দুটো কে সরাতে পারছি না তার থেকে। মেয়েটি এসে মিরাকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে।

-তুই মাত্র এলি জানিস কখন থেকে তর অপেক্ষায় আছি। একবার তো ভেবে নিয়েছিলাম হয়তো তুই আসবি না?

-দুর বোকা তোর জন্ম দিনে আমি আসবো না এমন কি হয় কখনো? বাই দ্যা ওয়ে এ হচ্ছে আরাফ আমার অফিস কলিগ।
-আর আরাফ এ হচ্ছে নিলা আমার সব থেকে কাছের বন্ধু বলতে গেলে সে আমার জীবণ। আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে মিরা। মিরার পাশে দাড়ানো মেয়েটা হাত নেড়ে বলে

-হাই আমি নিলা!

আমার সেদিকে বিন্দু মাত্র খেয়াল নেই আমি নিলা নামের মেয়েটার দিকে এখনও আগের মতোই তাকিয়ে আছে।
নিলা মেয়েটা বিষয় টা বুঝতে পেরে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। মিরা আমার গায়ে হাত দিয়ে হালকা ধাক্কা মেরে বলে

-আরাফ সাহেব! এবার আমার ধ্যান কাটে আমি মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলি
-হ্যা মিরা বল

আমার বলার সাথে সাথে মিরা আর নিলা একসাথে উচ্চস্বরে হেসে দেই। আমি বোকার মতো দাড়িয়ে তাদের হাসি দেখতে থাকি। আহা কি সুন্দর হাসি। যেন ফুটন্ত গোলাপ। মিরা এবার বলে

-চলুন উপরে যাই সেখানেই নিলা বার্ড ডে অনুষ্টানের আয়োজন হচ্ছে।

-হ্যা চল

নিলা সবার সামনে তারপর মিরা আর তার পিছন পিছন হাটতে লাগলাম। দুইতলা সিড়ি বেয়ে তিন তলায় গেলাম।
তিন তলার রুম টা বড় করে সাজানো। সেখানেই নিলার বার্ড ডে সেলিব্রেশন করা হবে। আমরা সেখানে পৌছাতেই কয়েকটা মেয়ে দৌড়ে আমার কাছে এসে বলে

-আপনিই দুলাভাই! কেমন আছেন?

আমি তাদের কথা শুনে হা হয়ে যায়। কি বলে মেয়েগুলো। আমি দুলাভাই মানে। মিরা দৌড়ে তাদের কাছে গিয়ে হাত দিয়ে মুখ আটকিয়ে ধরে। বলে

-ওরা মজা করছিল।

আমি আগের মতো দাড়িয়ে থাকি। এদিকে নিলা মিরা আর কিছু লোক মিলি কেক কাটার জন্য প্রস্তুুত হয়। কেক কাটার সময় মিরা এসে আমাকে নিলার সাথে দাড় করিয়ে দেয়। আমি বাধ্য ছেলে হয়ে দাড়িয়ে থাকি। নিলা কেক কেটে সবার আগে আমার মুখে দেয়। তার পর মিরা পরে এক এক করে তার সকল বান্ধবীদের খায়ে দেই।

আমিও নিলাকে কেক খায়ে দেই, যেহুতু সে আমাকে আগে খাওয়ে দিছে। । মেয়েগুলো মিলে হৈয় হৈললো করতে থাকে। এর ফাঁকে আমি সেখান থেকে সড়ে কিছুটা দুরে দাড়িয়ে তাদের আনোন্দ দেখতে থাকি। সবাই জন্মদিনের অনুষ্টানে মিলে মজা করছে। আমি হাতে থাকা ঘড়িটা দিকে তাকিয়ে দেখি রাত প্রায় ১০ টা বাজতে শুরু করলো।এখন আমাকে চলে যেতে হবে। মিরা কে বলে এখান থেকে চলে যাব। তাই মিরা কে খুজতে লাগলাম। কিন্তু এত লোকের ভিড়ে মিরাকে খুজে পাচ্ছি না। তখন দেখি আমাকে দুলাভাই বলা মেয়ে গুলোর একটা দাড়িয়ে আছে। আমি তার পাশি গিয়ে বলি

-হাই, মিরা কে দেখেছেন?

-মিরা কেখুজছেন? চলুন আমার সাথে আমি তার কাছে নিয়ে যাচ্ছি। বলে মেয়ে হাটা ধরলো আমি তার পিছু পিছু হাটছি। মেয়েটা আমাকে নিয়ে একে বারে ছাদের ওপড় চলে আসলো।
ছাদে এসে দেখি মিরা নিলা আর কিছু মেয়ে দাড়িয়ে কি জানি বলা বলি করছে। আমাকে দেখে সবাই চুপ করে যায়। মিরার সামনে গিয়ে বলি

-মিরা আমাকে চলে যেতে হবে। তুমি কি যাবে আমার সাথে নাকি থাকবে?

-আরে আমিও চলে যাবো আপনি দাড়ান এখানে আমি আসছি। এসেই চলে যাবো। এই সবাই আয় আমার সাথে।
বলে মিরা চলে গেল সাথে সকল মেয়ে গুলো শুধু নিলা ঠিক আগের জায়গায় দাড়িয়ে আছে। আমি নিলার দিকে একবার তাকিয়ে আবার অন্য পাশে তাকাবো তখনি নিলা আমার সামনে হাটু গেড়ে হাতে ফুল নিয়ে বলে

-আরাফ জানি না কখন কিভাবে মানুষ ভালবেসে ফেলে, তবে বিশ্বাস কর তোমাকে প্রথম দেখার পর থেকে আমি ভাল বেসে ফেলেছি। জানি না তুমি তাতে কি ভাববে? তবে আমি চাই তুমি ঠিক আমার মত করেই আমাকে ভালবাসবে। কি আমায় একটু ভালবাসা যাবে? আমি নিলার কান্ড দেখে হা করে দাড়িয়ে আছি। কি আজব আজকে আমাদের দেখা হল আর আজকে বলছে আমাকে ভালবাসে?

-কি বলছেন? আমাকে ভালবাসেন মানে? আজকেই তো আমাদের প্রথম দেখা হল। আপনি আমাকে ভাল করে দেখেন নি? ভালবাসবেন কি করে?

-কে বলেছে, আজকে তোমাকে প্রথম দেখেছি। তোমাকে আরো দু বছর আগে দেখেছি?

-কি আজব দু বছর আগে মানে?

-হ্যা দু বছর আগে যখন তুমি ইন্টারভিও দিয়ে অফিস থেকে বের হচ্ছিলে তখন। তুমি হয়তো খেয়াল করো নি। সেদিন তোমাকে দেখে আমার ভাল লেগে যাই। যখন জানতে পারি তুমি চাকরির ইন্টারভিয়ের জন্য আসছো তখন বাবাকে বলে আমি তোমার চাকরি কনফার্ম করি। এমন কি বাবাকে বলে মিরাকে তোমার সাথে চাকরি করতে ব্যবন্থা করে দেই। যাতে মিরার সাহায্যে তোমাকে প্রপোজ করতে পারি। আর আজকে মিরা কে দিয়ে তোমাকে এখানে আনিয়েছি। যা সব আমার প্ল্যান ছিল। আর এই সব কিছু তোমাকে ভালবেসে করেছি আরাফ।

-কি এসব প্ল্যান?

-হুম বিশ্বাস কর আরাফ তোমাকে আমি নিজের থেকে বেশি ভাল বাসি। তোমার জন্য এই দুই বছর কি না করছি।

-তবে আমাকে কেন বলেন নি?

-জানি না। কেন তোমাকে বলতে পারি নি আগে।

বলেই নিলা কান্না করতে থাকে আর বলতে থাকে প্লিচ আরাফ তুমি না করো না প্লিচ প্লিচ। আমি শুধু তাকিয়ে আছি নিলার চোখের দিকে। যে চোখ দিয়ে জল বের হচ্ছে ভালবাসার মানুষটির জন্য তা কখনো মিথ্যা হতে পারে না। চোখের জল যে ভালবাসার চিহ্ন।

আমি নিলাকে বসা থেকে তুলে তার চোখের জল মুছে দেয়। আমি তো এমনি একজন্য ভালবাসার মানুষের অপেক্ষায় ছিলাম এতদিন। হয়তো পেয়ে গেলাম তাকে অদ্ভুদ ভাবে। আজ থেকে শুরু হবে আমাদের প্রেমটা না হয়।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত