আমি তখন ৭ম পর্বে পড়ি।পড়ালেখার পাশাপাশি টুকটাক গল্প লেখার চেষ্টা করতাম। আমার রবীন্দ্রনাথ হুমায়ুন আহমেদ এদের মতো এতো ভয়ংকর প্রতিভা ছিলোনা, তাই বেশি বেশি উপন্যাস পড়তাম যাতে করে কিছুটা হলেও হুমায়ুন আহমেদ এর ছোঁয়া পাই। সালটা ছিলো ২০১৭, পলিটেকনিক লাইফের স্বর্নযুগ কাটাচ্ছিলাম তখন। কারন তখন কেউ আমাদের কিছু বলতে পারতোনা। কারন আমরাই তখন বড় ভাই ছিলাম স্বর্নযুগ বলার আরো অনেক কারন আছে সেগুলা নাহয় নাই বলি।। বিকেলে রুমে শুয়ে শুয়ে ফেসবুক চালাচ্ছিলাম হঠাৎ একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে মেসেজ আসলো, আপনি এমন কেনো আপনি কি ছ্যাকা খেয়েছেন কিংবা বউ মারা গেছে? এতো মন মরা হয়ে থাকেন কেনো? অপরিচিত একটা নাম্বার থেকে এরকম একটা মেসেজ আসা সত্যিই ভাববার বিষয়! কিন্তু আমি না ভেবে আমার কাজ করতে লাগলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আরো একটা মেসেজ সেই নাম্বার থেকেই। শুভ সকাল কেমন আছেন আপনাকে রাতে ওইরকম একটা মেসেজ করলাম তবুও রিপ্লাই দিলেন না কেনো?? আমি এবারো তার মেসেজ এর রিপ্লাই দিলাম না কারন হিমু পড়ে হিমুর মতো হয়ে গেছি কারো কাছে ধরা দিতে মন চায়না।। ১০ দিন পর আবার একটা মেসেজ আসলো এর মাঝে অনেক মেসেজ এসেছে যেই মেসেজটা আসলো সেটা দেখে যেনো আমার পৃথিবী থেমে গেলে। মেসেজটা ছিলো আমি অবন্তিকা সেই অবন্তিকা যার জন্য আপনি আমি ভাবতে লাগলাম এটা কি সেই অবন্তিকা যাকে প্রথম দেখার পর আমি বলেছিলাম তুমি কি আমার বাচ্চার মা হবে?
তখন আমি কি লজ্জা পাবো তার চেয়ে বেশি লজ্জা পেয়েছিলো মেয়েটা লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছিলো। যেখানে অন্য কোনো মেয়ে হলে চড় মারার সম্ভাবনা ছিলো বাট সে কিছু না বলে চলে গিয়েছিলো অবন্তিকার সাথে আমার দেখা হয় একটা বিয়ে বাড়িতে আমি সাধারণত বিয়ে বাড়িতে যায়না কিন্তু অবন্তিকা দেখে আমার মনে হয়েছিলো আমার বিয়ে বাড়িতে আসা সার্থক। তারপর দ্বিতীয় বারের মতো অবন্তিকার সাথে দেখা হয়ে যায় আমি বললাম ওটা আসলে মজা করে বলেছিলাম আপনি কিছু মনে করবেন না সে কিছু না বলে চলে গেলো রাতে ভালো লাগছিলোনা তাই একা একা হাটতেছিলাম হঠাৎ অবন্তিকা এসে বললো আপনি আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকেন কেনো? আমি তখন বললাম আপনার থেকে চোখ সরিয়ে নেওয়ার অধিকার আমার নেই।
সেই ক্ষমতাও আমাকে কেউ দেয়নাই আর আপনি এতোতোটা নিষ্পাপ যে আপনার দিকে তাকিয়ে না থাকাটা অন্যায় তখন সে বললো আপনি অনেক মেয়ে পটানো কথা বলতে পারেন আমি কিছু বললাম না শুধু একটু হাসলাম জিজ্ঞেস করলাম আপনি কোন ক্লাসে পড়েন? সে বলল আমি এখন আর পিচ্চি নেই আমি ভাসানি নিতে চান্স পাইছি অভিনন্দন জানাতে ভুল করলাম না তারপর আর ওই রাতে কথা হয়নি। বিয়ে বাড়িতে ৭ দিন ছিলাম, কারন বিয়েটা আমার এক নিকট আত্মীয়ের। ৭ দিনে অবন্তিকার সাথে অনেক কথা হয়। আমি আর অবন্তিকা একদিন পাশাপাশি বসে কথা বলছিলাম অবন্তিকা বলল জানেন!
আপনার সাথে আমার খুব কথা বলতে ইচ্ছে করে। আপনার হাতে হাত রেখে কবিতা শুনতে ইচ্ছে করে। কিন্তু কেউ একজন বাঁধা দেয় আমাকে, যাকে আমি আমার সবকিছু দিয়ে ভালোবাসতে চাই তখন মনে হলো পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ কাউকে না কাউকে মন থেকে চায় আমি যেমন অবন্তিকাকে নিজের মতো করে নিজের স্বর্বস্ব দিয়ে ভালোবাসতে চাই অবন্তিকাও হয়তো কাউকে চায়। তারপর আর সেদিন কথা হয়নি ওইদিন অবন্তিকার চোখে কারো জন্য সত্যিকারের ভালোবাসা দেখেছিলাম। যেদিন চলে আসি সেদিন আমার নাম্বারটা চেয়েছিলো আমি না করতে পারিনি।আমার মনে হয় অবন্তিকা আমার কাছে কোনো কিছু চাইলে না করার ক্ষমতা আমার নাই।চলে আসার সময় বলেছিলাম অবন্তিকা আমি নিশ্চিত আমি যেমন করে আপনাকে চাই। পৃথিবীর কেউ কাউকে ওভাবে চায়না।
জবাবে সে বলেছিলো আমি ঠিক আপনার মতো করে কাউকে চাই তখন কিছু বলার ইচ্ছে করছিলোনা তখন চলে আসি তারপর আর তার সাথে আমার কোনো যোগাযোগ হয়নি ৬ মাস পর সে মেসেজ করে। তারপর আমি আমার ভাবনা থেকে বের হয়ে আসলাম।আমি অবন্তিকার কাছে ধরা না দিয়ে থাকতে পারলাম না।আমি মেসেজ করলাম আমি কি আপনার সাথে ২ মিনিট কথা বলতে পারি?? তারপর সে ফোন দিলো আমি ২ মিনিট এর জায়গায় ১০ মিনিট কথা বললাম ওইদিন আর কথা হলোনা।পরের দিন আবার মেসেজ করে অবন্তিকা, আপনাকে রিকুয়েষ্ট দিছি কনফার্ম করেন।
এভাবে আমাদের অনেক বেশি কথা হতে লাগলো এক তরফা ভালোবাসাটার পরিবর্তন হতে লাগলো সেও আমার সাথে ঠিক ওরকম ভাবেই কথা বলে যেমন একজন মেয়ে তার ভালোবাসার মানুষের সাথে বলে। যখন আমার মনে হচ্ছিল আমি পরিপূর্ণ একজন মানুষ পেয়েগেছি যে আমাকে চায়, আমার খোঁজ খবর নেয়, আমার সাথে কথা বলতে চায় আমাকে ভালোবাসার কথা বলে। ঠিক তখনি অবন্তিকা ১ সপ্তাহের জন্য উধাও, কোনো কথা হলোনা তার সাথে। এই সাতটা দিন খুব কষ্টে কেটেছে হয়তো পাঠকদের বুঝাতে পারবোনা কতোটা কষ্টে কেটেছে। তারপর ৮ দিনের দিন অবন্তিকা ফোন দিলো, ফোন ধরে কিছু বললাম না ওপাশ থেকে আওয়াজ আসলো কেমন আছো??
আমি তখনো কিছু বললাম না ২ মিনিট পর বললাম এতোদিন কোথায় ছিলে?সে কিছু বললনা শুধু বললো ভালো ছিলাম না ভালো না থাকার কারনটা জানতে চাইলাম না। তারপর বললাম অবন্তিকা আমার এই ছোট্ট জীবনে ভালোবাসা, ভালোলাগার অনেক গল্প আছে যেই গল্প গুলো আজ পর্যন্ত কাউকে বলিনি সেগুলো আমি তোমাকে বলতে চাই সে চুপ করে রইলো তারপর বললো হুম শুনবো তবে আমার সামনে দাড়িয়ে বলতে হবে। আমি একটু দুঃখি হলাম কারন কারো সামনে দাড়িয়ে ওতো সুন্দর করে রোমান্টিক মুড নিয়ে কথা বলার সামর্থ বা ক্ষমতা কোনোটাই আমার নেই।
আমি ফোনে কিংবা মেসেজই শুধু খুব সুন্দর করে কথা বলতে পারি এটা হয়তো অবন্তিকা জানেনা ওইদিন আর কথা হলোনা আমার ৭ম পর্বের সেমিস্টার পরীক্ষা শুরু হলো তখন অবন্তিকার সাথে প্রেম করার পাশাপাশি একটু বই দেখার চেষ্টা করতাম তারপর সেমিস্টার পরীক্ষা শেষ হলো, বাসায় চলে আসলাম। অবন্তিকার সাথে এখন আমার খুব একটা কথা হয়না কি কারনে জানিনা তবে আমার মনে হয় অবন্তিকা ভালো নেই আমি তার সাথে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। শীতের সকালে বসে আছি আর ভাবছি অবন্তিকার সাথে দেখা হলে কি বলবো প্রথমে কি এমন আছে যা দিলে সে মুগ্ধ হবে? কি এমন যা অবন্তিকাকে দেওয়া যায়?
ভাবতে ভাবতে আম্মু ক্ষেতে ডাকলো আজকে আর অবন্তিকার সাথে কথা বললাম না কারন কাল তার সাথে দেখা হচ্ছে আমি জানিনা তাকে দেখার জন্য আমি এতো উত্তেজিত কেনো?? প্রথম যে তাকে দেখতেছি তা কিন্তু না কোটি কোটি বার আমি তাকে দেখেছি আমার মনের চোখ দিয়ে। ওইদিন রাতে আর কিছু ভাবলাম না সকালে বাসা থেকে টাংগাইল যাবার জন্য বের হলাম। আমার বাসা থেকে ২০ কিলো তাই বেশি সময় লাগলো না অবন্তিকা যে বাসায় থাকে সে বাসার সামনে দাড়িয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। তারপর অবন্তিকার রুমের সামনে গিয়ে দাড়ালাম।
কলিং বেল ছিলো বাট আমি সেটা না বাজিয়ে দরজায় টোকা দিতে লাগলাম ২ মিনিট পর ওপাশ থেকে অবন্তিকা আসছে। আমি তার পায়ের শব্দ শুনতে পাচ্ছি সে দরজা খুললো আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম সেও আমার দিকে বিশ্বাস করেন তখন কোনো কিছুর পরিবর্তন হয়নি। আলো, বাতাস, ওখানকার পরিবেশ সব কিছুই আগের মতোই ছিলো শুধু পরিবর্তন হয়েছিলাম আমরা।তারপর ২ মিনিট পর অবন্তিকা আমার নীরবতা ভাঙলো বললো ভিতরে এসো সে আমাকে খাটে বসতে বলে চলে গেলো বললো ২ মিনিট পর আসতেছি আমি খাটে বসতে যাবো তখন দরজায় খুলে একটা ছেলে ভিতরে আসলো দেখতে অনেক সুন্দর, লম্বা,স্মার্ট।
আমার কাছে এসে বললো তুমি নিশ্চয়ই আমিনুল, তোমার কথা অনেক বলে অবন্তিকা। বাইরে অনেকটা শীত আমি আমার জ্যাকেটটা নিতে এসেছি আমার গার্লফ্রেন্ডকে ১ দিনের জন্য ভালোভাবে দেখে রেখো। এই কথা বলে সে চলে গেলো অবন্তিকা দাড়িয়ে আছে আমি কিছু বলার মতো অবস্থায় ছিলাম না।অবন্তিকা বললো ও আবির, আমার ক্লাসমেটস। আমার যখন খুব মন খারাপ থাকতো, ভালো লাগতোনা। তখন আবির আমার পাশে থেকে সবসময় আমাকে ভালো রাখতো একদিন আবির আমার হাত ধরে ফেলে।বিশ্বাস করো আমার সেদিন কি হয়েছিলো জানিনা, আমি না করতে পারিনি। ৭ দিন পর যখন তোমাকে ফোন দেই তখন আমি বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি।
আমি মূর্তি হয়ে দাড়িয়ে আছি অবন্তিকা বললো আমি তোমাকে ভালোবাসি সে আবার বললো আমার ভালোবাসা তোমার কাছে সত্য মনে হয়না??বিশ্বাস করো সেদিন আমি ইচ্ছে করে কিছু করিনি আমি শুধু বললাম ভালোবাসলে এমনটা হতোনা।অবন্তিকা অনেক কিছু বলতেছে কিন্তু আমি শুনতে পাচ্ছিলাম না হয়তো বা শুনার ইচ্ছে নেই। আমি চলে আসলাম, পেছনে অবন্তিকা হয়তো আমাকে ডাকছে,আমার জন্য কান্না করছে কিন্তু আমি চাইলেও নিজেকে থামাতে পারবোনা। আমাকে চলে যেতে হবে অনেক দূরে। আমি চলে যাচ্ছি অবন্তিকাকে ছেড়ে, কিন্তু তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বাঁচতে চায় আজীবন,হোক সেটা কল্পনায়। সেও হয়তো আমাকে ভালোবাসবে সারাজীবন কল্পনাতেই