ইফতারির জন্য আয়েশাকে বললাম খিচুড়ি করতে। কালোজিরা চালের খিচুড়ি আর মুরগির ঝাল করা ঝোল। সাথে লেবু কেটে দিবে। কিন্তু ইফতারে এসবের কিছুই এলো না আমার সামনে। আয়েশা প্লেটে করে চিঁড়ে আর দই দিয়ে গেল। সাথে আম কেটেও দিয়েছে।দেখে আমার মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে উঠলো। সারাদিন রোজা রেখে একটা কথা বললাম আমি আর এই কথা সে রাখতে পারলো না। মাগরিবের আজান হলে শুধু পানি খেয়েই মাগরিবের নামাজ আদায় করলাম ঘরে। আয়েশা বড় শঙ্কা ভরা কন্ঠে আমার কাছে এসে মিনতির সুরে বললো,’আমায় মাফ করে দিন আল্লার ওয়াস্তে। আমি কাল খিচুড়ি আর মাংস রাঁধবো।’
আমি চুপ করে রইলাম। আয়েশার কথার কোন প্রতিউত্তর দিলাম না। আয়েশা আমায় এমনিতেই খুব ভয় পায়।আজও দেখা যাচ্ছে তার চোখে মুখে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ।সে বোধহয় অপেক্ষা করছে তার চশমাটা দূরে ছিটকে পড়ে কখন ভাঙবে সেই সময়ের।তাই বোধহয় আগে ভাগেই টেবিলের উপর খুলে রেখে দিয়েছে চশমাটা।এ নিয়ে আয়েশার এগারোটা চশমা আমি ভেঙেছি। অবশ্য গত এক বছরে তার নতুন কোন চশমা ভাঙা হয়নি। পরপর এগারোটা চশমা ভাঙার পর আয়েশা স্বতর্ক হয়ে গেছে। এরপর থেকে যখনই সে আমার তিরিক্ষি মেজাজ দেখে তখনই সাবধানে চশমাটা খুলে টেবিলের উপর রেখে দেয়। ও ঘরে হঠাৎ করে ওমর কেঁদে উঠেছে। পাঁচ মাস বয়সী শিশুর ঘুমের কোন সময় বাঁধা থাকে না। আয়েশা তাড়াহুড়ো করে আঙুলে ও ঘরটা দেখিয়ে বললো,’ওমার উঠে গেছে ,আমি যাই!’
আমি তবুও চুপ করে রইলাম। আমার এমনই অভ্যেস।রাগ যত বাড়বে তত গম্ভীর হয়ে যেতে থাকবো। একটা কথাও বলবো না। গম্ভীর হওয়ার পালা শেষে ওর গাল খসে দু চারটে চড় মারবো। আমার হাতের চড় বড় শক্ত। আয়েশাকে চড় দেয়ার পর কত বার দেখেছি ওর গালে আমার পাঁচ- পাঁচটি আঙুল কীভাবে কলঙ্কের মতো বসে আছে।
ওমারের কান্নার গলা বাড়ছে। আয়েশা এবার পা বাড়িয়েই দিলো।বললো,’এই যাচ্ছি।দুধ দিয়েই আবার আসবো।’
আমার গম্ভীর হওয়ার পালা এবার শেষ হলো।
আয়েশার গাল খসে পরপর চারটে চড় বসালাম আমি। আয়েশার নাকের ডগায় তখন স্বর্দি।সারা মুখে লাল সিঁদূরের রং। চোখের পাতায় জল আর জল। তবুও শব্দ করে একটুও কাঁদলো না আয়েশা। যদি ও ঘরের কেউ জেনে যায় তাকে আমি মেরেছি!ও খুব পতিভক্ত যে! আয়েশা বড় বড় পা ফেলে ও ঘরে চলে গেল। গিয়ে ওমারকে বিছানা থেকে টেনে তুলে বোধহয় কাপড় পাল্টে দিয়েছে।পিচ্চিটা এমনই।দিন রাতে তার মোট চারটে কাজ।দুধ খাওয়া,ঘুমানো আর ঘুম থেকে প্রশ্রাব করে বিছানা ভিজিয়ে কাঁদতে কাঁদতে উঠা। ও ঘরে আয়েশার গলা স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। ছেলেকে নানান বোঝ দিচ্ছে ও। ‘তাই তাই তাই মামা বাড়ি যাই মামা দিলো দুধ ভাত গাপুস গুপুস খাই।’
ওমারটা যা ফাঁজি!কার ধাঁৎ পেয়েছে কী জানি!মার ছড়া কাটা শুনে তার চিকন একহাড়া গলাটা আরো বাড়ে। আমার মেজাজ আরো চটে যায় তখন। পেটে অসম্ভব ক্ষুধা। বাইরে গিয়ে কিছু কিনে টিনে খেতে হবে।ঘরে থেকে ছেলের চেঁচামেচি শোনার চাইতে বাইরে গিয়ে কিছু খেয়ে একটা সিগারেট ধরালে ভালো লাগবে।যেই ভাবা সেই কাজ।আলনা থেকে পাতলা শার্টটা নামিয়ে দু’ হাত গলিয়ে পড়তে পড়তে দরজা ঠেলে ঘর থেকে বেরিয়ে যাই আমি। ঘরে এখন কেয়ামত হোক,এতে আমার কী যায় আসে! আমি পথে চললাম।
রাস্তার পাশে একটা ভালো রেস্তোরাঁ আছে। খুব ভালো খিচুড়ি রাঁধতে পারে। মুরগির ঝোল ও করে ভালো।দেশি মোরগের ঝোলের দাম একটু ছড়া। তবুও ওখান থেকে পেট পুরে খাই আমি। রেস্তোরাঁ থেকে বিল চুকিয়ে বেরিয়ে এসে সামনের ছোট্ট দোকান থেকে এক প্যাকেট গোল্ডলিপ কিনি। তারপর প্যাকেট খুলে একটা সিগারেট ধরিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে খোলা রাস্তায় গায়ে বাতাস লাগিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দিব্যি ভুলে যাই ওমার আর তার মায়ের কথা। আমার হাঁটতে খুব ভালো লাগে। হাঁটতে হাঁটতে মনে হয় জগতে শুধু হাঁটার জন্যই জন্মেছি আমি। এভাবে জামার উপরের দুটো বোতাম খোলা রেখে সিগারেট টেনে মুখ ভর্তি ধোঁয়া ছেড়ে হাঁটার মজাই আলাদা। আমি তাই হাঁটি। হাঁটি আর হাঁটি। রাস্তার ও পাশ দিয়ে টুংটাং রিক্সার বেল,গাড়ির সাইরেন,কত ভালো লাগে যে আমার! মনে হয় এই বড় ভালো। সংসারের চেয়ে ভালো।
তারাবিটা করি দূরের এক মসজিদে। তারপর আরো অনেক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে ঘুমে টলতে টলতে ঘরে ফিরে বারান্দার কলিং বেল বাজায়।বেল বাজাতে দেরি হয় কিন্তু দরজা খুলতে দেরি হয় না। আমি ঘরে ঢুকতে ঢুকতে দেখি আয়েশা দরজার ওপাশে শঙ্কাভরা চোখে তাকিয়ে আছে। সেই চোখও লাল। চেহারাও খানিক নিভে গেছে।এটা আপনাকে অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে যে অতি সুন্দর মেয়েদের চেহারা দপ করে নিভে গেলে আপনার চোখে তাকে রোগা লাগবে। কিন্তু আমার তেমন কিছুই মনে হলো না। আমি ঘরে ঢুকলে আয়েশা দরজা সাঁটিয়ে দিয়ে বললো,’খাবেন না আপনি? আপনার জন্য টেবিলে ভাত বেড়ে রেখেছি।’ আমি কথা না বলে ওকে পাশ কাটিয়ে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। আমার তখন আধো আধো ঘুম। সেই ঘুম জড়ানো চোখে তবুও দেখতে পাচ্ছি তখনও দাড়িয়ে আছে আয়েশা।সে আমার জবাবের অপেক্ষা করছে আমি খাবো কিনা এই কথার। আমি তার কথার প্রতিউত্তর দিলাম না। ঘুমিয়ে গেলাম।ঘুমিয়েই গেলাম!
সেহেরির সময় ঘুম থেকে উঠে ফের আমার মেজাজ টা তিরিক্ষি হয়ে উঠে। ঘড়ির সময় বলছে দশ মিনিট পর সেহেরির সময় শেষ।অথচ আয়েশা আছে ঘুমে। আমি ডাকলাম। ভয়ঙ্কর গলায় ডাকলাম। আমার ডাকে চমকে উঠে আতংকিত চোখ নিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বিছানায় উঠে বসলো আয়েশা। তারপর ঠক ঠক করে বাজতে থাকা দেয়াল ঘড়ির কাঁটায় তাকিয়ে তার জিভে একটা কামড় দিয়ে বললো,’এই দেরি হয়ে গেল আবার।স্যরি! ভাত-তরকারি গরম করে দেই? মাত্র দশ মিনিট লাগবে!’ আমি কথা বলি না। আয়েশার গাল খসে চার চারটে চড় বসিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে ফের ওই রেস্তোরাঁর দিকে পা ফেলি। হাঁটতে হাঁটতে ভাবি, এমন অলক্ষ্মী আর অকর্মা মেয়ে হয়না জগতে আরেকটিও।ও আমায় দেখি ফতুর বানিয়ে ছাড়বে! বাইরের খাবারের যা ছড়া দাম!
তখন রোজার দশম দিন। সারাদিন অফিস করে ইফতারির আগে ঘরে ফিরে দেখি বাইরে থেকে তালা ঝুলানো দরজায়।তালার একটা চাবি অবশ্য আমার কাছে আছে, কিন্তু আমি ভেবে পাই না দরজায় তালা কেন? আয়েশা কোথায়?পাশের বাসায় গেল? না ও তো এমন মেয়ে না। কোনদিন আমার অনুমতি ছাড়া এই ঘর থেকেই বের হয় না।আজ তবে কোথায় গেল?নাকি আমার বিশ্বাস নিয়ে ও খেলা করে? আমি যখন অফিসে কর্মব্যস্ত থাকি তখন সে—- ছিঃ! আমার ভাবতে অবাক লাগে।পেট গুলায়। ঘেন্নায় বমি এসে যেতে চায়।ভাবি এর শাস্তি যে কত বড় তা নিজেও জানেনা আয়েশা। আমি ওকে হাড়ে হাড়ে টের পাইয়ে দিবো আজ!
দরজাটা খুলে ভেতরে ঢুকে দেখি ওমার শুয়ে আছে বিছানায়। শুয়ে শুয়ে দু’পা নাচিয়ে হাসছে। এবার সত্যি সত্যি আমার সীমাহীন রাগ পেয়ে বসলো। অতটুকু একটা ছেলেকে তালাবদ্ধ একটা ঘরে রেখে চলে যেতে পারলো আয়েশা?ব্যপারটা খুব সহজ ঠেকলো না আমার কাছে। তড়িঘড়ি করে কাঁধের ব্যাগটা নামিয়ে টেবিলের উপর রেখে ওমারের কাছে গেলাম আমি।আমায় দেখে ওমার ওয়াও ওয়াও করে কেঁদে উঠলো। আমি বললাম,’এই ছেলে কাঁদে না কাঁদে না!’ ওমার তো আর এসব শুনে না।বেটা হয়েছে খুব ফাজিল। আমি তাকে বিছানা থেকে টেনে কোলে নেই। এবার ওমারের গলা বড় থেকে বড় হয়। আমি কত কিছু তাকে বলি।কোলে নিয়ে নড়াচড়া করে ওর মায়ের মতো ছড়া কাটি। কিন্তু মোটেও কাজ হয়না। হয়তোবা ক্ষুধা পেয়েছে ওর। ছেলেকে ও কী খেতে দেয় কী জানি!
পকেট থেকে মোবাইল নিয়ে আয়েশার নম্বরে ফোন দেই আমি।ফোন বেজে উঠে ঘরের সোকেশের উপর। আমি ওর ফোন হাতে তুলতে গিয়ে দেখি ফোনের নিচে চাপা পড়ে আছে একটা চিরকুট। ওখানে ওর সুন্দর হাতের লিখায় কত কী লিখা।ও প্রথমেই আমায় প্রিয়তম বলেছে। তারপর বলেছে,’আমি জানি এভাবে লুকিয়ে চোরিয়ে আপনার বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া মোটেও উচিত হয়নি আমার।মা বলতেন,মেয়েরা বিয়ে হয়ে একবার স্বামীর ঘরে ঢুকে আর বের হয় একেবারে লাশ হয়ে। কিন্তু আমার কী দূর্ভাগ্য দেখুন, আপনার ঘরে লাশ হওয়া পর্যন্ত থাকতে পারলাম না।এর আগেই চলে আসলাম হুটহাট করে। আমার কলিজার টুকরা ওমারকে রেখে এসেছি।
ঘর ছেড়ে যখন বের হবো তখন সত্যি সত্যি আমার কলিজাটা ছিঁড়ে যাচ্ছিল। তবুও চলে এসেছি। আমার যে না আসলে চলে না তাই এসেছি। আমি যে আপনার অযোগ্য স্ত্রী। রোজার দিনে কীভাবে জেনে না জেনে আপনাকে অত কষ্ট দিয়েছি! আমার জন্য আপনি ইফতার করতে পারেননি ঘরে। রাতে সেহেরি করতে পারেননি এই আমার জন্যই। আপনাকে আমি মোটেও সময় দিতে পারি না ওমারটার জন্য।ও শুধু কাঁধে। ওকে খাওয়াতে হয়।ওর নষ্ট করা কাপড় চোপড় ধুতে হয়।দিনে একটু কুরান পড়তে হয়। নামাজ পড়তে হয়। টুকটাক অনেক কিছুই করতে হয়। এইসব করতে গিয়ে আপনার সেবাটাই আমার করা হয়ে উঠে না। দেখুন সেদিন ঘরে কালোজিরা চাল কিংবা মাংস নাই। আর আপনি কত শখ করে খিচুড়ি আর মুরগির ঝোল খেতে চাইলেন। তখন মাত্র একঘন্টা সময় ছিল ইফতারির।
এইসময় আবার ওমারটাও কেঁদে উঠলো ক্ষুধায়। ওকে শান্ত করতে করতে কিছুই আর করা হলো না আমার। আমি স্যরি আমার প্রিয়তম। সেদিন রাতে জ্বর আর ভীষণ মাথা ব্যাথার কারণে উঠতে দেরি হয়ে গেল। আপনি আমার জন্য ঘরে সেহেরি খেতে পারলেন না। আমি এতোটাই হীন। আমি এতোটাই তুচ্ছ যে নিজের কাছে নিজেকে ছোট মনে হচ্ছিল কেবল। মনে হচ্ছিল কেবল এমন একটা মাটির মানুষকে দিনের পর দিন আমি কষ্ট দিয়ে যাচ্ছি!অথচ স্বামীর প্রতি স্ত্রীদের কত দায়িত্ব! আমি কিছুই করতে পারিনি।এই জন্যই পাপি আমি চলে এসেছি নিরবে নিভৃতে চোরদের মতো করে। আর রেখে এসেছি আপনার কলিজার টুকরা সন্তানকে।ও যে আপনার আদরের ছেলে তাই!
অনেক কথা বলে ফেলেছি প্রিয়তম। আপনাকে আমি অনেক ভালোবাসি কিন্তু এই ভালোবাসা কোনদিন প্রকাশ করতে পারিনি।এটাই আমার অযোগ্যতা। একদিন জানি না যোগ্য হতে পারবো কি না।যোগ্য হলে কিন্তু ফিরে আমি আসবোই। আপনার ঘরে, ঘরের চৌকাঠে।’ পত্রখানা পড়ে আমার চোখ কেমন ঝাঁপসা হয়ে উঠলো।বোঝ হওয়ার পর কোন কারণেই কোনদিন কাঁদিনি আমি। কিন্তু আজ আমি কাঁদলাম।ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে মেয়েদের মতো করে কাঁদলাম।একটা বাচ্চা ছেলের কান্না থামানো কতটা কষ্টের তা মাত্র দশ মিনিটে আন্দাজ করতে পারলাম আমি।
এই বাচ্চা ছেলেকে রেখে বাহিরে যাওয়া যাবে না। এদিকে রান্নাও করতে হবে। রান্না না করলে খাওয়া চলবে না। রান্না করতে গিয়ে কী যে তালগোল পাকিয়ে বসলাম!এক জীবনে কোনদিন হাঁড়ির ধারে কাছেও ঘেঁষিনি আমি। একটু পর আবার আজান হবে।ওমার কেঁদে কেটে ঘুমিয়ে গেছে এবার। কিন্তু আরেকবার যখন জাগবে তখন তাকে না খেতে দিলে আর রেহাই নাই। কিন্তু কী খাওয়াবো? কোথায় দুধ চিনি? এই একটুখানি সময়েই আমার উপর দিয়ে যেন ঝড় বয়ে গেল। মাগরিবের আজান হলো অথচ আমার ইফতারির আয়োজন , রান্নাবান্না কিছুই আর হলো না।ওমার আবার কান্না শুরু করেছে।দম ফাটানো কান্না। এখন আমি কী করবো?’ আয়েশা? আয়েশা?’ মনের অজান্তেই ভুল করে ডেকে উঠলাম আমি।
একটা রাত আমায় হাজার রাতের অভিজ্ঞতা দেয়। বিবেকহীন আমি এখন ভাবতে পারি। ভাবতে পারি আয়েশার প্রতি করা আমার সকল অত্যাচারের কথা। আচ্ছা আয়েশা আমার কাছে আসলে কী চেয়েছিলো? একটু ভালোবাসা আর সহমর্মিতাই তো! আমি যদি ওর পাশে দাঁড়িয়ে ওকে সাপোর্ট দিতাম।ওই যে ওর কতশত কঠিন কাজ!অথচ আমার মনে হয়েছিল অফিসে আদালতে বুঝি আমরা পুরুষেরাই শক্ত শক্ত কাজগুলো করি,আর নারীদের কাজ নরম,অথবা কোন কাজের কোঠায়ই পরে না এসব কিছু! সারারাত চিন্তায় ঘুম হয়না আমার। অজস্রবার আল্লার কাছে তাওবা কাটি। ভাবি,এঅজীবনে আর কখনো ভুল করে আয়েশাকে একটা ধমকও দিবো না। ঘরের ওর শক্ত কাজগুলোতে ওর সাথে মিতালী দিবো আমি।এই প্রথম অথবা শেষ শুধুমাত্র একটা সুযোগ চাই আমি।
ফজরের নামাজ পড়ার পর খানিক চোখ লেগে আসে আমার।এই ঘুম থেকেই স্পষ্ট দরজার ঠকঠক ঠকঠক শব্দ শুনতে পাই।কে এসেছে? আয়েশা? আমার বিশ্বাস হয়না। সত্যি সত্যি বিশ্বাস হয়না। আয়েশা কী অত তাড়াতাড়ি চলে আসবে!ও তো আমার সাথে রাগ করে চলে গিয়েছে।অত শক্ত রাগ কী আর অত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে! ও পাশ থেকে আয়েশার গলা শুনতে পাই।ও বলে,’অনুগ্রহ করে দরজাটা একটু খুলতে পারবেন!’ আমি শোয়া থেকে ধড়মড় করে লাফিয়ে উঠে দরজার কাছে যাই। খুলে দেই দরজার ছিটকিনি। আমার মুখ বোধহয় বিষন্ন ছিল। সারারাত দুশ্চিন্তায় ঘুম না এলে তো চেহারা এমন দেখাবেই! আয়েশা আমায় দেখে আঁতকে উঠে।বলে,’চেহারার কী ছিরি হয়েছে একরাতে! আপনি আমায় মাফ করে দিন প্লিজ! আমার এভাবে চলে যাওয়া মোটেও উচিত হয়নি!’
আমি আয়েশার কথার কোন উত্তর না দিয়ে টুপ করে ওর নরম হাতটা ধরে ফেলি শক্ত করে। তারপর কাছে টানতে টানতে বলি,’আয়েশা,আমি বড় হতভাগা আয়েশা। এতো দিন তোমার মর্যাদা আমি তোমায় দিতে পারিনি। কিন্তু গত একটি রাত আমায় হাড়ে হাড়ে টের পাইয়ে দিয়েছে নারী ছাড়া একটা পুরুষ কতটা একা,কতটা কাঙাল!আমায় মাফ করে দাও প্রিয়তমা। প্লিজ মাফ করে দাও!তুমি এভাবে হুটহাট চলে গিয়ে ভুল করোনি আয়েশা। বরং আমার ভুল ভাঙিয়ে দিয়েছো। তুমি যদি এভাবে না যেতে তবে আমি আজীবন একটা অমানুষই থেকে যেতাম। কোনদিন আর শুধরাতে পারতাম না নিজেকে!’
আমার এই অতটুকু কথার ভেতর কী ছিল কে জানে? কিন্তু আয়েশা কেঁদে উঠেছে শুনে।সে কেঁদে কেঁদে আমার জামার বুক ভিজিয়ে বলে,’আপনাকে আমি ভালোবাসি প্রিয়তম, আপনাকে আমি খুব ভালোবাসি।’ আমার বুকের ভেতর কান্নার ঢেউ।গলার কাছে এসে আটকে আছে বাক্য। এখন আমি আয়েশাকে বুকে ঝাপটে ধরতে চাই একবার।ধরে বলতে চাই, ,’তোমাকেও আমি ভালোবাসি প্রিয়তমা। অনেক অনেক ভালোবাসি তোমাকে।’