জীবনসঙ্গী

জীবনসঙ্গী

ঘরে বউ থাকা সত্বেও আমাকে অন্য মেয়েদের সাথে রাত কাটাতে হয়। পেশাসূত্রে ঢাকাতে থাকি। আর বউ থাকে গ্রামে। বউ আমার খুব ভালো। আমাকেও ভালোবাসে খুব। আমাকে খুব বিশ্বাস ও করে। আমাদের বিয়ের বয়স দুইবছর হলো প্রায়। বড় বড় ছুটি ব্যতীত দুই/তিন মাস পরপর অল্পকয়েকদিনে জন্য বাড়িতে যাওয়া পড়ে। আমার এক বছরের একটা মেয়ে সন্তান আছে। দেখতে একদম পুতুলের মতো হয়েছে। তাই ওর নামটা ও রেখে দিয়েছি পুতুল। আমার বাবা গত হয়েছেন সেই কত আগে। মা, জয়া(বউ) আর পুতুল থাকে সে গ্রামের ছোট বাড়ীটিতে।

– কেমন আছো গো? (বউ)
– হুম ভালো, তুমি কেমন আছো?
– ভালো, বাড়িতে আসবা কবে?
– এই কিছুদিন আগেই তো আসলাম। আর ছুটি পেয়ে নেই তারপর যাবো।
– ওহ পুতুলটা তোমার জন্য কান্না করে।
– এইবার আসার এত্তোগুলা খেলনা নিয়ে যাবো আমার পুতুলটার জন্য, আর কান্না করবে না। ওকে?
– আচ্ছা, একবার বলো না গো!
– কি বলবো?
– ভালোবাসো যে!
– ধুর বোকা এভাবে বলতে হয় নাকি? আই লাভ ইউ আমার সোনা বউ।
– আই লাভ ইউ টু।
– আচ্ছা এখন রাখি, কেমন?
– হুম বাই।

দিনে কয়েকবার এই রোমান্টিক ভাবে কথা হয় আমাদের। জয়া অল্পতে খুশি থাকতে পারলেও আমি খুশি থাকতে পারিনি। প্রত্যেকদিন আমাকে সঙ্গ দেয়ার জন্য যেতে হয় নতুন নতুন কোনো মেয়ের কাছে। মাঝেমধ্যে কাজের বিরতিতে যাই নাইটক্লাবেও। সেখানে গিয়ে সুন্দর রমণীদের সাথে রোমান্স করা তো আছেই।

আমি যে এসব করি, জয়া কখনো ভাবতেও পারবে না। জয়া আমার জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করে। যার কারণ, জয়া আমাকে খুব বিশ্বাস করে। দিনশেষে একটু ফোনালাপেই জয়ার মন ভরে যায়। জয়া আমাকে খুব ভালোবাসে। আমিও তাকে খুব ভালোবাসি। আর সেই ভালোবাসার পিছনে বিশ্বাসটাই একমাত্র খুঁটি। অন্য মেয়েদের সাথে রাত কাটানোর ব্যাপারটা জয়া কখনো জানতে পারবে না এটা আমি শিওর। কারণ আমি কাজের বাহানায় এসব কাটিয়ে দিতে পারবো। দিনে কাজ, রাতে অন্য মেয়ে এসব নিয়ে সবসময় প্রায় ভালোই চলছে আমার দিনকাল।

– কেমন আছো গো?
– হুম ভালো, তুমি কেমন আছো? (চলতে থাকে উপরের মতো ফোনালাপ) “কালকে আমি আমার পুতুল আর সোনা বউটার কাছে ফিরছি।” ফোনে জয়াকে এটা বলতেই সে একপ্রকার (হয়তো)লাফিয়ে উঠে বলে, “সত্যি!”

– হুম গো সত্যি।
– আচ্ছা আসো।
– রাখি বাই।

বলেই কল কেটে দেই। আমার পুতুলটার জন্য একটা পুতুলসহ আরো অনেক খেলনা কিনে নিলাম আজ। মায়ের জন্য একটা শাড়ী আর বউয়ের জন্য কয়েকটা থ্রী-পিছ কিনে নিলাম। খালি হাতে বাসায় গেলে কেমন যে মনে হবে তাই। জয়াকে আজ একটা মিথ্যা বলেছি সারপ্রাইজ দিবো তাই। ফোনে বলেছি কাল ফিরবো, কিন্তু তা না। আমি আজ ফিরে বাসার সবাইকে অবাক করে এক বিশাল সারপ্রাইজ দিবো এই উদ্দেশ্যে।

সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ট্রেন ছাড়লো আমার গ্রামের পথের দিকে। ট্রেনে থাকা রুমে এক সন্দরির আগমন। ওকে দেখেই আমার খুব ভালো লেগে যায়। ইচ্ছে হলো, ইশ! আজ যদি ওকে পেতাম? সময়ক্রমে বুঝতে পারলাম মেয়েটা প্লেগার্ল। অপরূপা সুন্দরী হলেও টাকার কাছে সে পতিতা। টাকার বিনিময়ে ট্রেনে চলাকালীন সময়টা ওর সাথেই কাটালাম। প্রতিদিনের মতো ট্রেনে ভ্রমণ করা সময়টা ও কাটলো কোনো না কোনো এক মেয়ের সাথে। যা আমার বউয়ের চোখে কখনো ধরাই পড়বে না। কারণ, বউ আমাকে বিশ্বাস করে।

মাঝরাত।বাসার এককপি চাবি আমার কাছে থাকার ফলে কোনো আওয়াজ না করে চুপচাপ গেটের তালা খুলে বাসায় প্রবেশ করলাম। বাসায় ঢুকামাত্র লক্ষ করলাম এতো রাতেও পুতুল কান্না করছে। কোনো আওয়াজ না করে জয়ার রুমের দরজাটা খুললাম আমার কাছে থাকা চাবি দিয়ে। রুমের লাইট বন্ধ করা। রুমে ঢুকতেই শুনতে পাচ্ছি অদ্ভুত একরকমের আওয়াজ, সাথে পুতুলের কান্না ও। লাইট অন করতেই আমার চোখ ছানাবড়া হবার পালা। পরপুরুষের সাথে জয়া অবাধ সঙ্গমে ব্যস্ত। খালি শরীরে ওরা দুজন খাটের উপর। আমার মেয়ে পুতুলটাকে সোফায় শোয়ানো। পুতুল যে কান্না করছে তার দিকে একটু ও ভ্রুক্ষেপ ছিল না জয়ার।

আমাকে দেখে জয়ার রুমে ডাকা পরপুরুষ পালাতে ব্যস্ত, সেদিকে আমার কোনো তোয়াক্কা নেই। কারণ, পরপুরুষটা আমার পাশের বাসার চাচাতো ভাই। যে কিনা জয়ার দেবর। পুতুলকে কোলে নিয়ে সোফাতে বসে পড়লাম আমি। সবাইকে সারপ্রাইজ দিতে এসে নিজেই এক বিশাল সারপ্রাইজ পেয়ে গেলাম আজ। ” আমার ভুল হয়ে গেছে, আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ।” পুতুলকে কোলে নিয়ে সোফায় চুপচাপ বসে আছি। জয়া তার কাপড়গুলো কোনোভাবে পড়ে এলোমেলো হলেও আমার পায়ে ধরে কথাটি বলে।

আমি কিছু না বলে বারান্দায় চলে আসলাম ছোট্ট পুতুলটাকে নিয়ে। তখনি লক্ষ করলাম আমার মা বের হয়ে এসেছে, হয়তো তাঁর ছেলের উপস্থিতি টের পেয়ে। মায়ের ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে ছাদে চলে আসলাম। পুতুল কোলে থাকার কারণে সিগারেট জ্বালাতে পারলাম না। ভাবতে লাগলাম যদি আমি কোনো মেয়ে ছাড়া রাত কাটাতে না পারি, তাহলে জয়া কোনো পুরুষ ছাড়া কিভাবে রাত কাটাবে? সব ছিল মিথ্যে ভালোবাসা, আর ভালোবাসার আড়ালে মিথ্যে বিশ্বাস। আমি যেমন আমার বউ তো তেমনই হবে। ভালো কিছু আশা করাটাও বোকামি।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত