বাবুতাহ্

বাবুতাহ্

রাত ১১টার পর বউ ঘুমালে চুপিচুপি ফেসবুকে আসি। গতকালকেও রাত ১১.২৭ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডে বউ ঘুমালে ফেসবুকে ঢুকেছি। দেখি প্রাক্তন ম্যাসেজ দিছে,

– বাবু খাইছো?

বেচারী এখনো আমার বিয়ের খবর জানে নাই শুনে ভাল্লাগতেছে। কিন্তু আমারে তো সে দুই চোখে সহ্য করতে পারে না। হঠাৎ আমারে ম্যাসেজ দিল কেন? ঘটনার গভীরে যাওয়ার জন্য আমিও রিপ্লাই দিলাম,

– হ্যাঁ সোনা খাইছি। তুমি?

ম্যাসেজ সীন হয়েছে। আমি রিপ্লাইয়ের জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু হতাশ করে দিয়ে চোখের সামনে ভেসে উঠল,
you cann’t reply this……….

শিহরিত হলাম। আমাকেই নক দিয়ে আবার ব্লক দিলো? ঘটনা বুঝতে না পেরে হতাশ চোখে তাঁকিয়ে রয়েছি প্রাক্তনের ইনবক্সে। হঠাৎ টুং করে ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ এলো। ন্যাংটা কালের বন্ধু ম্যাসেজ দিয়েছে। ম্যাসেজে একটা স্ক্রিনশর্ট। স্ক্রিনশর্টে আমার প্রাক্তন ওরফে এক্সের এই মুহূর্তে করা পোস্ট। পোস্টে লিখেছে, ‘বফকে ম্যাসেজ করতে গিয়ে ভুল করে আক্কু বিলাইটার কাছে ম্যাসেজ গেছে। হারামী আবার আমারে কইছে সোনা ফিরে আসো। সব ভুলে যাও বাবু। তোমায় আমি গোল্ড নেকলেস গিফট্ করবো। মনে রাখিস আক্কু বিলাই, টাকা দিয়ে আমারে কেনা যায় না’। এটা দেখে পুরো শরীর শোকের আগুনে জ্বলে উঠলো। বাড়িয়ে বলে নিজের মুড দেখাইলো এক্স? ভাবা যায় না! ফোনটা রেখে ফ্যানের নিচে বসে শরীরে বাতাস লাগাইতেছি। হঠাৎ করে কে যেন বলে উঠল,

– বাবু খাইছো? আমি দেরি না করে তাড়াতাড়ি বললাম,
– হারামজাদী তোর নাক ফাঁটাবো।

কথাটা যে বউ বলছিল তা বুঝে উঠতে পারিনি। বউ টেবিলে ভাত রেখে ঘুমিয়েছিল। আমার খেতে খেয়ালই ছিলো না। ভয়ে ভয়ে পিছে তাঁকিয়ে দেখি বউয়ের হাতে ফ্লোর পরিষ্কার করা ঝাড়ু। আমার দিকে উঁচু করে রেখেছে।

– ওই হারামী কী বললি আমারে? আমি তোর খাই না পরি? আমারে হারামজাদী বলিস? তোর হাড্ডি আলাদা করমু আইজ। বিপদে পড়লে বউও ছাড় দেয় না। আমার খেয়ে পরে থাকে আবার বলে তোর খাই নাকি? আমার পিঠে দুমদাম খানিক ঝাড়ুর বাড়ি পড়লো। চুপচাপ হজম করে নিলাম। বউ আমায় উত্তম-মধ্যম দিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। আমি তাড়াতাড়ি ভাত খেয়ে এসে বললাম, ‘হ্যাঁ সোনা খাইছি।’ বউয়ের মুখ দেখে মনে হচ্ছে কোনো রিয়েক্টই করছে না। ফেইসবুকে একদল আছে পাঁচটা রিয়েক্টের যেকোনো একটাই চেঁপে দেয়। আরেক দল আছে কোনো রিয়েক্ট না দিয়ে চুপচাপ এড়িয়ে যায়। আমি শিওর আমার বউ দ্বিতীয় দলের পাবলিক। ধীরে ধীরে বউয়ের সামনে গিয়ে বসলাম।

কী বলবো ভেবে পাচ্ছি না। মুখ ফসকে বলে ফেললাম, ‘বউ, আসো ক্লোজআপের বিজ্ঞাপন দিই। কাছে আসো।’
কথাটা বলার সঙ্গে খাট থেকে নিচে ফ্লোরে পড়ে গেলাম। বউ লাথি দিয়ে ফেলে দিয়েছে। কোমরে তীব্র ব্যথা নিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। কোনোভাবেই বউয়ের খাটে স্থান পেলাম না। ফ্লোরে বসে টিভি দেখতে লাগলাম। রাত দু’টোর খুব খিদে পেল। ফ্রিজ খুলে দেখলাম দু’টো বার্গার আছে। এটা দেখে মনে মনে ইয়ো ইয়ো হানি সিং শুরু করে দিলাম। বউকে চরম একটা শিক্ষা দেওয়া যাবে। একটা বার্গার খেয়ে বাকিটা লুকিয়ে রাখলাম আমার ব্যাগের মধ্যে। খুশিখুশি মনে ফ্লোরেই ঘুমিয়ে রাত পার করলাম।

পরেরদিন সকালে বউয়ের সঙ্গে কথা বলছি না। বউও ভাব ধরে আমার সঙ্গে কথা বলছে না। বউ বাথরুমে ঢুকলে আমি লুকিয়ে ব্যাগ থেকে একটা বার্গার বের করে খেয়ে নিলাম। পেটটা ভরপুর হয়ে গেল। বসে টিভিতে কার্টুন দেখতে লাগলাম। খানিক্ষণ পর বউ বের হয়ে ফ্রিজের দরজা খুলল। ফ্রিজে কিচ্ছু না পেয়ে বউয়ের মুখটা দেখার মতো লাগছিল। আমি কোনো রকমে হাসি চেপে রাখলাম। আজ বুধবার। প্রতি সপ্তাহের বুধবারে বাজার করতে যাই আমি। নিয়ম মতো বউ একটা বাজারের ফর্দ দিল সামনে। আমি না দেখার ভান করে আছি। টিভিতে গভীর মনোযোগ দিয়ে কার্টুন দেখছি এমন ভাব করলাম। বাড়িতে খাওয়ার মতো কিছুই নেই। বউ কয়েকবার গলা খাঁকারি দিল। আমি ভ্রুক্ষেপ করলাম না সেদিকে।

খানিক্ষণ পর বউকে দেখলাম রেডি হয়ে বাজারের থলে হাতে বের হচ্ছে। এটা দেখে আমার আরও বেশি জোরে হাসি পেল। বউ বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালাম। এখান থেকে রাস্তা দেখা যায়। বউ রাস্তায় নেমে কিছুদূর যেতেই সেনাবাহিনী এসে পথ আটকাল। আমি উপরে দাঁড়িয়ে দেখছি। একজন মহিলা সেনাবাহিনী বউয়ের পিছে এসে দাঁড়িয়ে হাতে থাকা লাঠি দিয়ে ঠাস্ করে বাড়ি দিল। ধমক দিয়ে বউকে ফেরৎ পাঠাল। আমি দ্রুত ঘরে এসে কিছু না জানার ভান করে আবার টিভি দেখতে লাগলাম। বউ ঘরে ঢুকল। কিছুক্ষণ আমার আশেপাশে চক্কর দিল। অবশেষে উপায় না দেখে বলল, ‘আমি এখন আর কারো উপর রাগ করে নেই।’

আমি না শুনার ভান করে এক দৃষ্টে টিভির দিকে তাঁকিয়ে রয়েছি। বউ আবার বলল, ‘বাজার থেকে এলে ক্লোজআপের বিজ্ঞাপন দেব’। এবার আমার হাসি পেল। আমি হো হো করে হেসে উঠলাম। ঠেলায় পড়লে বউ ক্লোজআপের বিজ্ঞাপনও দেয় জানতাম না। তবুও আমি এমন ভাবে হাসলাম যেন মনে হলো কার্টুন দেখে হেসে উঠেছি। খানিক্ষণ পরে বউ আমার সামনে এসে নিজের কানে হাত দিয়ে বলল,

– এই দ্যাখো কানে হাত দিচ্ছি। আর অমন করবো না! আমি ভাব ধরে বললাম,
– কেমন করবা না?
– লাথি মারবো না। ঝাড়ুপেটা করবো না।
– সরো সামনে থেকে তুমি।
– সত্যি বলছি। প্রতিদিন ক্লোজআপের বিজ্ঞাপন দেব। মজা করার জন্য বললাম,
– আসো এখন বিজ্ঞাপন দিই। বউ অস্ফুট স্বরে বলল, ‘ঠেলার নাম সত্যিই বাবাজী।’
– কিছু বললা?
– না মানে তুমি বাজার থেকে এলে সব হবে। তুমি পেছনটা সামলে বাজারে যাও বাবুতাহ্।
– পেছন সামলে মানে? বুঝলাম না!
– সব কথা কি বলা যায়? কিছু কথা বুঝে নিতে হয়। যাও বাবুতাহ্ যাও।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত