অপেক্ষা

অপেক্ষা

;- অণুর জন্মের সময় দাদু বাবা কাকা সকলে মিলে ঠিক করে রাখে অণু বড় হলে আমার সাথে বিয়ে দিবে। দাদুর ইচ্ছেতেই এমন সিগ্ধান্ত নেই আমার পরিবার।দাদু সব সময় বলতেন নিজের পরিবার নিজেদের মানুষ দিয়ে চালানো ভাগ্যের ব্যাপার।

ধীরে ধীরে অনু বড় হয়। আমি দাদ্বশ শ্রনিতে আর অণু ট্রেনে । ছোট বেলা থেকে দুজন এক সাথে বড় হয়েছি। বউ জামায় খেলা গুলো একসাথে করতাম। যদিও আমি তার থেকে কিছুটা বড় ছিলাম। খেয়া ঘাটে দাড়িয়ে মাঝির জন্য অপেক্ষা করছি। আজকে অণুর পরিক্ষা আছে। তাই তাকে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছি। যেহুতু আমার কলেজ আর অণুর স্কুল পাশা পাশি। মাঝি নৌকা ঠেলে পানিতে ভাসালো। দুর থেকে তাকিয়ে বিলের জলে ফোটা শাপলা গুলো দেখতে লাগলাম। তখন অণু বলল, আরাফ ভাই আজকে তো আমার পরিক্ষা শেষ হবে। চল না পরিক্ষা শেষে বিল থেকে শাপলা কুড়াবো দুজন। অণুর কথায় আমি সাড়া দিয়ে বলি, তুই জানিস না কাকা যে পরিমানে রাগী যদি তোকে নিয়ে বিলে যেতে দেখে তবে নির্ঘাত আমাদের পিঠে ছালা বাধতে হবে।

অণু মন খারাপ করে অন্য দিকে তাকায়। আমি বুজতে পারি সে অবিমান করছে। এই মেয়েটা বড্ড বেশি অভিমানি। সেদিন তো আমি যখন বাজারে মেলা দেখতে যাচ্ছি তখনি সেও বায়না ধরে তাকে নিয়ে যেতে হবে। সেদিন কাকার ভয়ে তাকে নিয়ে না যাওয়াই আমার ১সাপ্তাহ কথা বলে নি। পরে অনেক খুসামদ্ধ করে তার অভিমান ভাঙাতে হয়েছে। আজকেও মনে হয় অভিমান করেছে। সেই ভয়ে বললাম, ঠিক আছে যা তোর পরিক্ষা শেষে বিলে দুজন শাপলা কুড়াতে যাব। অণু আমার কথা শুনে মুচকি হাসে, আমার কপালে চুমু খেয়ে বলে, এই তো আমার লক্ষী বরটা। আমি অণুর কথায় কিছুতা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে রাখি। অনু আগে কখনো ামাকে বর বলে নি। আজকে তার মুখে বর কথাটা শুনে একটু বেশি লজ্জা লাগছে।

ওই আরাফ ভাই নামবে না নৌকা থেকে। আমার যে দেরী হয়ে যাচ্ছে পরিক্ষার। অণুর ডাকে ধ্যান কাটে আমার।
নৌকা থেকে নেমে তাকে নিয়ে যায়। অণু পরিক্ষা দিতে গেল। আমি আমার কলেজে চলে যায়। কলেজ থেকে ফিরতে ফিরতে একটু লেট হলে গেল। বন্ধুদের সাথে দুষ্টামি আর মজা করে লেট হয়ে গেল। অণু নিশ্চয় আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমাকে সময় মতো না পেয়ে হয়তো গাল ফুলিয়ে আছে। তাড়াতাড়ি অণুর স্কুলের সামনে আসি। অণু স্কুলের সামনে বড় বট গাছটার নিচে বসে আছে। আমি তার পিছন দিয়ে তার কাধে হাত রেখে বললাম, স্যরি অনু আমার লেট হযে গেল প্লিচ রাগ করিস না। অণু আমার দিকে না তাকিয়ে উল্টো দিকে তাকায়। এবার আমি তার সামনে কান ধরে ওঠ বস করতে থাকি। আমার কান ধরা দেখে অণু ফিক করে হেসে দেয়। যাক বাবা তাহলে অণুর রাগটা কমেছে। অণুকে বললাম, চল জলদি। তুই না শাপলা কুড়াতে যাবি।বেলা শেষ হলে কিন্তু আমি যাব না।

অণু আমি নৌকায় বসে আছি, মাঝি কোথায় গেল কে জানে? মাঝি আসতে দেরী হওয়ায় অনু বললো
ও আরাফ ভাই তুমি না নৌকা চলাতে পারো। তবে বসে আছো কেন? নৌকা ছাড়। নৌকা ছাড়ব মানে মাঝির নৌকা। না বলে নিলে তো বাবার কাছে বিচার দিবে। আরে দুর কিছু হবে না তুমি ছাড়ো। এবার বেশি কিছু না ভেবে নৌকা ঠেলে পানিতে ভাসালাম। অণু গান ধরেছে। তার কন্ঠ কোকিলের কন্ঠের মতো মিষ্টি, মিষ্ঠি কন্ঠে গাইছে ভাটিয়ালি গান। যেন কোন শিল্পি আমার সামনে বসে গান গায়ছে। গ্রাম বাংলার সৌন্দর্য।

ও আরাফ ভাই নৌকা তো জঙ্গলের দিকে যাচ্ছে। অণু কথায় ঘোড় কাটে। তার কন্ঠে গান শুনে বৈইঠা মারতে ভুলেই গেছিলাম। তারাতাড়ি নৌকা ঠিক করি। নৌকা বায়তে বায়তে অনেক টা বিল পাড়ি দিলাম। এখানে বেশ শাপলা দেখা যাচ্ছে। অণু ফুল দেখে খুশিতে আত্নো হাড়া। আমাকে বললো নৌকা বাধতে। নৌকা বেধে অনেক শাপলা কুড়িয়েছি দুজন। অণু বলল, বাড়ি ফিরে এগুলো রান্না করে চুলপাতি খেলব। অণু শাপলা গুলো তার হাতে নিয়ে বসে আছে। আমি নৌকা বাড়ির খাটে দিকে ছাড়লাম। ঘাটে আসতে আসতে পায় সন্ধা গনিয়ে আসলো। তাড়াতাড়ি নৌকা ঘাটে বেধে বাড়ি চললাম।

আম্মু জিজ্ঞাস করলো, কোথায় ছিলাম এত দেরী হল কেন?. আম্মুকে মিথ্যা বলে ঘরে ঢুকি। ঘর থেকে আম্মুকে বললাম আম্মু বাবা আসে নি বাজার থেকে। আম্মু জবাব দেয়। না আসে নি। যাগ বাচা গেল। বাবা জানলে খবর খারাপ হতো। শান্তির দীর্ঘশ্বাস নেই। রাতে পড়ার টেবিলে বই পড়ছি তখনি বাড়ি উঠনে কিছু লোকের চেছামেচিতে পড়া বন্ধ করে কান পাতি সেদিকে। মনে হয় বাবা আর কাকা মিলে কার সাথে কথাকাটা কাটি করছে। মাঝির কে নিয়ে কথা কাটাকাটি করছে না তো । মাঝি যদি বলে দেই তার নৌকা আমরা নিয়ে বিলে গিয়েছি। তবে তো আজকে শেষ আমি। মনে ভেতর ভয় ঢুকে গেল মাঝি বাবার কাছে নালিশ করে নি তো। তার নৌকা নিয়ে আমরা বিলে গেছিলাম।

অনু হাঁফাতে হাঁফাতে আমার ঘরে ঢুকে। তা র হাঁফানি কিছুতে কমছে না। কিছু সময় বাদে তার হাঁফানি বন্ধ করে বললো আরাফ ভাই মাঝি বলে দিছে বাবা কে আমরা তার নৌকা নিয়ে বিলে গেছি শাপলা কুড়াতে। বাবার কাছে নালিশ করলো। আর বিচার না করলে নাকি গ্রামের মাতাববরের কাছে বিচার দিবে বলেছে। এখন কি হবে? বাবা অনেক টা রেগে জেঠু কাছে তাকে নিয়ে আসছে। আমি লুকিয়ে লুকিয়ে তাদের কথা শুনেছি। বাবা আর জেঠু লাঠি নিয়ে আসবে এখনি তোমাকে মারতে? কি করা যায়।

এক দমে বলে অনুর। অণুর কথা শুনে আমার হাত পা কাঁপানু শুরু। কাকা আমাকে আজকে মেরেই ফেলবে। এখন কি করবো। ভাবছি তখনি, বাবা আর কাকা ঘরে ঢুকে আমাকে মারতে লাগলো। অনু আমাকে ফেরাতে যাওয়ায় তার পিঠেও অনেক গুলো লেগেছি। অণু চিৎকার করে কাঁদছে। আমার মার খাওয়া দেখে। আম্মু আসলো রান্না ঘর থেকে দৌউড়ে। লাঠির শব্দে বাড়ি সবাই এসে হাজির। সবায় এসে আমাকে আড়াল করে নিল। ততক্ষনে অনেক আঘাত খেলাম আমি। তবু মাঝির স্বাদ মেঠে নি। তিনি সকালে গ্রামে সবার কাছে নালিশ করে এর বিচার চাইবে। তার নাকি অনেক ক্সতি হয়েছে। গ্রামের মৌল্লা ছেলে ঘাট থেকে ফিরতে দেরী হওয়া সে মাঝিকে ইচ্ছে মতো মেরেছে। ব্যাথায় চিৎকার করছি। অণু আর মা আমাকে তেল মালিশ করছে।

সকালে বাবা আর কাকা মিলে সিগ্ধান্ত নিলো আমাকে আর বাড়িতে রাখবে না। আমাকে বাড়িতে রাখলে নাকি আমি অনু কেউ ভাল মানুষ হবো না। সেই জন্য তারা আমাকে ফুফুর বাড়ি ঢাকায় পাটাবে বলে সিগ্ধান্ত নিল।আম্মুকে বলল আমার কাপড় বই খাতা সব রেডি করে রাখতে বিকালের ট্রেনে করে আমাকে পাঠিয়ে দিবে। বিকালে ব্যাগ কাধে নিয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিযে চলে যাব। তখন দেখি অণু নেই। তার কাছ থেকে বিদায় নিতে আবার তাদের বাড়িতে আসি। ঘরে বসে অণু কান্না করছে।

আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরে কান্না করে অণু। বলতে লাগলো আমাকে মাফ করো আরাফ ভাই আমার জন্য তোমাকে বাড়ি ছাড়তে হলো। আমি অণুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম দুর পাগলি, তোর কোন দোষ নাই। আমার কপালে যে এটায় লেখা। তবে দেখিস আমি ফিরে আসবো। তোর কাছে কেউ আটকাতে পারবো না। শুধু তুই আমার জন্য অপেক্ষা করিস একটু সময়। অনু কাদো কাদো গলায় বলে, তোমার জন্য আমি আজিবন অপেক্ষা করবো আরাফ ভাই। তোমাকে যে আমি ভালবাসি।

তখন বাহির থেকে বাবা ডাক দেই। ট্রেনের দেরি হয়ে যাচ্ছে। চলে আসতে। অণু কে আবার বুকে জড়িয়ে তার কপালে চুমু খায়। অণুকে বলতে পারি নি আমি তোকে ভালবাসি। চলে আসি ঢাকার ট্রেন ধরে ইট পাথরের শহরে। আজ ৬বছর নিজের গ্রামে আসার জন্য বাসে ওঠলাম । তখনি পুরনো সৃত্মি রা আকড়ে ধরে আমায়। আমার জন্য অপেক্ষায় আছে যে অণু। হ্যা অণু তোকে বলেছিলাম না আমি ফিরে আসবো। আজেই আমি আসছি। আর একটু সময় অপেক্ষা কর অণু। আমাদের ভালবাসা কে পূর্ণতা দিবো।আসছি আমি অণু আসছি।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত