“ভাইয়া কাল বাড়ি যাচ্ছি।” অপর প্রান্ত থেকে কোনো সাড়া শব্দ পেলাম না। আমি আবার বললাম, ভাইয়া কাল বাড়ি যাচ্ছি। কিছুক্ষণ পর অপর প্রান্ত থেকে ভাইয়া বললেন, পঁচিশ তারিখে তোকে বললাম চল একসাথে যাই। তখন তো আসলি না। এখন একা একাই আয়।
– অফিস থেকে ছুটি না নিয়ে কিভাবে যাই?
– তো এখন কিভাবে আসবি?
– ছুটি নিয়েছি আজ। কাল সকালে রওনা দিবো।
– ওকে, দেখেশুনে আসিস।
– হ্যাঁ। তাহলে দেখা হচ্ছে আগামীকাল সন্ধ্যায়।
– ইনশাল্লাহ।
– ইনশাল্লাহ।
গত কোরবানির ইদের পর ঢাকায় এসে আর বাড়ি যাওয়া হয়নি। পড়ালেখা আর একটা পার্টটাইম জব নিয়েই খুব ব্যস্তময় দিন কাটে আমার। বাড়ি যাওয়ার আর সময় হয়ে ওঠে না। আজ নভেম্বরের ৩০ তারিখ। ভাইয়া গত পঁচিশ তারিখে বাড়ি গিয়েছেন। তিনি বাড়ি যাওয়ার আগে আমাকে বেশ কয়েকবার বলেছিলেন, চল একসাথে যাই। একসাথে গেলে তোর যাওয়ার ভাড়াটা আমি দিয়ে দেবো। আমি এমন একটা অফার পেয়েও না করে দিয়েছিলাম। কেননা অফিস থেকে ছুটি না নিয়ে কিভাবে যাই? তাছাড়া অফিসেও কাজের চাপ বেড়েছে।
এদিকে, মেসে আমি আর ডাক্তার আংকেল ছাড়া কেউ নেই। সবাই বাড়ি চলে গিয়েছেন। ডাক্তার আংকেল সকাল সাতটা নাগাদ বাসা থেকে বের হয়ে যান। আবার রাত ন’টার পর বাসায় ফিরেন। মাঝখানে আমাকে একা একা বাসায় থাকতে হয়। অবশ্য আমি দিনের মধ্যে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা বাসায় থাকি। তাছাড়া বাকি সময়টা বাইরেই কাটে আমার। সকালে কলেজ, কলেজ থেকে ফিরতে ফিরতে দুপুর একটা কিংবা দুইটা। তারপর একটু বিশ্রাম নিয়ে সাড়ে তিনটায় অফিস। পুরো বিকেল, সন্ধ্যা, অফিসে কাটিয়ে রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ বাসায় ফিরি।
পুরো মেস জুড়ে নিরবতা। কোথাও কোনো টু শব্দ নেই। এমন পরিবেশ আমার মোটেই পছন্দ না। মেসে যদি হৈ হুল্লোর না থাকে। তবে মেসে থাকার কোনো মানেই হয় না। বোরিং ফিল হচ্ছিল খুব। আর তাই আমার এই সিদ্ধান্ত। আগামীকাল বাড়ি যাবো। তাছাড়া মনও চাচ্ছিলো না আর থাকতে। আজ অফিস থেকে বের হওয়ার আগে স্যারের থেকে কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে বের হয়েছি। বলেছি, পাঁচদিন পরেই ঢাকাতে ব্যাক করবো। তিনি কিছুক্ষণ ভেবে বললেন, আচ্ছা যাও। তবে বেশিদিন থেকো না আবার। দেখছোই তো কাজের চাপ কেমন!
বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছি। ঘুম আসছে না আমার। মনের মধ্যে ভীষণ উৎফুল্লতা বিরাজ করছে। আহা! কাল বাড়ি যাবো। কতদিন বাদে মায়ের মুখখানা দেখবো। আব্বার কোলে মাথা রেখে রূপকথার সেই রাক্ষসদের গল্প শুনবো। নানির কোলে শুয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে নেবো। আহা! ভাবতেই মনটা খুশিতে ভরে উঠছে। বাড়ি যাওয়ার আনন্দে ঘুম বাবাজিরা উড়াল দিয়েছে সেই সন্ধ্যারাতেই। আমি ফোনটা চার্জে লাগিয়ে আব্বার বলা রূপকথার সেই গল্পেগুলো মনে করতে লাগলাম। কেননা সেগুলো মনে করলে আপনাআপনিই আমার ঘুম চলে আসে।
পাবনার “দুলাইয়ে” একটা জমিদার বাড়ি আছে। আমি জমিদারের নামটা মনে করার চেষ্টা করলাম। “আজিম চৌধুরী” হবে হয়তো নামটা। এবার বাড়ি গিয়ে আব্বার থেকে এই জমিদারের পূর্ণ জীবনী শুনতে হবে। অবশ্য এর আগেও একবার শুনেছিলাম আব্বার কাছ থেকে। তখন ছোট ছিলাম বিধায় এখন সেই কাহিনীটা সম্পূর্ণরূপে স্মরণে আসছে না। রাতে কখন ঘুমিয়েছিলাম মনে করতে পারছি না। তবে এটুকু মনে আছে, পাবনার সেই জমিদারের সাথে এক জ্বিনের ছেলের বন্ধুত্ব হয় এবং জ্বিনের ছেলেটি তাকে তাদের রাজ্যে নিয়ে যায়। সকালে ডাক্তার আংকেল ডাক দিয়ে বললেন, রাব্বি তুমি না আজ বাড়ি যাবে? আমি ধড়ফড়িয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে বললাম, হ্যাঁ হ্যাঁ।
– তাহলে উঠে পড়ো।
– জ্বী, ধন্যবাদ আংকেল।
তিনি বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বললেন, দেখেশুনে যেও। আর বাড়ি পৌঁছে ফোন দিও। রাতেই ব্যাগপত্র মোটামোটি গুছিয়ে রেখেছিলাম। বাড়ি গেলে তেমন কিছু নিয়ে যাই না। তিন সেট কাপড়। আর সাথে ছোট ভাইটার জন্য কিছু বিস্কুট। গতাকল অফিস থেকে ফেরার পথে প্রিন্স বাজার থেকে সেই বিস্কুটও কিনে রেখেছিলাম।
ফ্রেশ হয়ে এসে টেবিলের উপর থেকে শরৎচন্দ্র স্যারের “চরিত্রহীন” উপন্যাসটি ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে নিলাম। বইটা এই সময়কার অল্পস্বল্প জনপ্রিয় লেখক জনাব, রুবেল মশাই মালদ্বীপ যাওয়ার আগে আমাকে গিফট করেছিল। বাসের মধ্যে এই বই-ই আমার একমাত্র সঙ্গী। নয়তো ঘুম বাবাজি তো আছেই। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় হেডফোন আর ফোনের চার্জারটা দেখে নিলাম, ঠিকমতো ব্যাগে ঢুকিয়েছি কিনা! বাসের মধ্যে যদি বই না পড়ি কিংবা ঘুমিয়ে না পড়ি। তাহলে হেডফোন কানে লাগিয়ে রবীন্দ্র সঙ্গীত ছেড়ে বাহির পানে তাকিয়ে থাকবো। বিশেষ করে “পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কিরে হায়, ও সেই চোখের দেখা প্রাণের কথা সে কি ভোলা যায়?” এই গানটা ছেড়ে।
মিরপুর-১ থেকে বাসে চড়লাম। গন্তব্য টেকনিক্যাল। বেশি দূরে নয়। এইতো সামনেই। টেকনিক্যাল নেমে “সি লাইনের” কাউন্টারে যাবো। ঠিক তখনই “পাবনা এক্সপ্রেসের” এক লোক ডেকে বললেন, ভাই কই যাবেন? পাবনা?
আমি ‘হ্যাঁ’ সূচক মাথা নাড়লে তিনি বললেন, আসুন আসুন। ভেতরে আসুন। একেবারে সামনের সিট দেবো।
আমি বললাম, বাস ছাড়বে কখন?
তিনি বললেন, দশটায়। আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম, ঘড়িতে এখন সময় ন’টা বেজে সাতচল্লিশ মিনিট। ভেতরে ঢুকে একটা টিকিট কাটলাম। দ্বিতীয় সারিতে আমার সিট। জানালার পাশে পরেনি, তবুও মন্দ লাগছে না। দশটার বাস দশটা বেজে পনেরো মিনিটে ছাড়লো। এই প্রথম এতো দেরি হতে দেখলাম বাস ছাড়তে। কেননা এতদিন যাতায়াত করেছি। কখনো পাঁচ সাত মিনিটের বেশি সময় লাগেনি। অথচ আজ পুরো পনেরো মিনিট!
রাস্তা ফাঁকা। শোঁ শোঁ গতিতে বাস চলছে। এভাবে চলতে থাকলে ঠিক পাঁচ ঘণ্টায় পাবনা পৌঁছে যাবো, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আর পাবনা এক্সপ্রেসের বাসে সচরাচর আমি টিকিট কাটি না। কেননা, মাঝপথে গিয়ে এই বাসের ইঞ্জিনে সমস্যা হয়। কিন্তু দেখলাম, এরা নতুন বাসের আমদানি করেছে। তাই এটাতেই টিকিট কাটা। পাশে বসা লোকটির জন্য বই পড়ার সুযোগ হয়ে উঠলো না। বাড়িতে কল করলাম। বেশ কয়েকবার রিং হলো। কিন্তু রিসিভ হলো না। পরে ভাইয়াকে কল করলাম। তিনি রিসিভ করলে বললাম, আমি রওনা দিয়েছি। আপনি একটু আম্মুকে বলে দিয়েন।
তিনি আমার আপন খালাতো ভাই। বাড়ির পাশেই বাড়ি। বাড়ির পাশে বলতে আমাদের বাড়ি থেকে উনাদের বাড়ি যেতে আট থেকে দশ মিনিট লাগে। ঢাকাতে অবস্থান করে ভাইয়ার বাড়ি আর আমার বাড়ির দুরুত্ব পরিমাপের ক্ষেত্রে “বাড়ির পাশে বাড়ি” কথাটি একদমই অগ্রহণযোগ্য নয়। ঘুমিয়ে পরেছিলাম। বাসের কন্ট্রাক্টরের ডাকে ঘুম ভাঙে আমার। তিনি বলছেন, বাস ফুড ভিলেজে চলে এসেছে। সকলের জন্য যাত্রা বিরতি ২০ মিনিট। আমি নেমে পরলাম বাস থেকে। নামার আগে দেখলাম পাশের লোকটি তখনো ঘুমিয়ে আছেন। আমি তাকে মৃদুস্বরে ডেকে বললাম, দাদা বাস যাত্রা বিরতি দিয়েছে।
ফুড ভিলেজের ভেতরে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে একটা কফির অর্ডার করলাম। ঘুম দূরীকরণে কফির বিকল্প কিছু নেই বলে আমি মনে করি। তারপর একটু এদিক সেদিক হাঁটাহাঁটি করে বাস ছাড়ার কয়েক মিনিট আগে বাসে চড়ে বসলাম। ক্রমান্বয়ে বাসের সকল যাত্রীই তাদের নিজ সিটে আসন গ্রহণ করতে লাগলো। বাস আবারো যাত্রা শুরু করলো পাবনার উদ্দেশ্যে। বিকেল চারটা নাগাদ বাস “পাবনা বাস টার্মিনালে” এসে থামলো। আমি বাস থেকে নেমে রাস্তার পাশে থাকা টিউবওয়েল থেকে মুখ ধুয়ে নিলাম। তারপর একটা অটোতে চড়ে শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। যদি এই বাস জার্নিটা রাতে হতো, তবে বাস সরাসরি শহরেই নামিয়ে দিতো। দিনের আলোয় হওয়াতে টার্মিনালে নামালো। শহরে যেতে মিনিট কয়েক লাগবে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম। আহ! আমার সেই চিরচেনা শহর। কতকাল কাটিয়েছি এই শহরে।
শহরে নেমে আরেকটা অটোতে চড়ে মানসিক হাসপাতালের রোডটা অতিক্রম করে বাড়িতে পৌঁছালাম। আম্মু তখন রাতের জন্য রান্না করছিলেন। আমাকে দেখে রান্না ফেলে উঠে এলেন। তারপর জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন। আমি আম্মুর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম, কাঁদলে কিন্তু আর আসবো না। একদম কাঁদবেন না আপনি, একদম না। কেমন?
আম্মু শাড়ির আঁচলে চোখ মুছলেন। আব্বা কাজে গিয়েছেন। রাতে ফিরবেন। ততক্ষণ পর্যন্ত আমাকে অপেক্ষা করতে হবে। ছোট ভাইটা কোথায় যেন খেলতে গিয়েছিল। কে যেন তাকে বলেছে, দেখ তোর বড় ভাই এসেছে। অমনি সে ছুঁটে চলে এসেছে। তার জন্য আনা বিস্কুটের প্যাকেটটা তার হাতে দিলাম। রাতে আব্বা বাড়ি ফিরলে অনেক কথা হলো। একসাথে বসে চারজন রাতের আহার সারলাম। আহ! কতদিন বাদে আবার চারজন একসাথে বসে খেলাম। এই একসাথে বসে খাওয়াটা যেন অমৃতকেও হার মানাবে। আম্মু বললেন, এই নে। মাছের এই মাথাটাও নে। ঠিক তখনই ছোটভাই পাশে থেকে বলে উঠলো, তোর বড় ছাওয়ালেক পাইয়ে তুই আমাক ভুইলি গিলু। আম্মু মুচকি হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, দেখছিস বাপ দেখছিস? কী রহম করে ও?
সেদিন আর ভাইয়ার সাথে দেখা হলো না। সন্ধ্যায় একবার কল করে বলেছিলাম, আগামীকাল দেখা হবে। রাতে আব্বার পাশে শুয়ে অনেক গল্পই করলাম। আব্বাকে বললাম, আব্বা কতদিন আপনের মুখে রূপকথার সেই রাক্ষসদের গল্প শুনি না। আব্বা বললেন, এখন বড় হয়েছিস। এখন আর ওসব গল্প শুনতে ভালো লাগবে না। আমি বললাম, কেন? তিনি বললেন, সময়ের সাথে মানুষের রুচির পরিবর্তন হয়। আর তাছাড়া তুই এখন বড় হয়েছিস। ওসব গল্প শোনার দিন কি এখন আর আছে? তবুও যখন শুনতে চাইলি, তাহলে একটা সত্য গল্পই বলি। আব্বা তখন দুলাইয়ের সেই আজিম চৌধুরীর গল্প বলতে আরম্ভ করলেন। আমি যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পেলাম। আমিও তো এই গল্পটাই শুনতে চাচ্ছিলাম। আব্বা গল্প বলছেন। আর আমি শুনছি। একসময় চোখে তন্দ্রাভাব চলে এলে ঘুমিয়ে পরলাম।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে হালকা খাবার খেয়ে আম্মুকে বললাম, নানিকে কতদিন দেখি না। যাই একবার দেখে আসি। নানির বাড়িও বেশি দূরে নয়। আগে আমাদের বাড়ি থেকে এক বাড়ি পেছনেই নানির বাড়ি ছিল। এখন ওখান থেকে ভেঙে গিয়ে মাঠের ঐ পাশে গিয়ে বাড়ি করেছে। আর মাঠের ঐ পাশেই আমার ভাইয়ার বাড়ি। মানে খালাতো ভাইয়ের বাড়ি। আমাদের সবার বাড়ি এতো কাছে কাছে হওয়ার পেছনে অনেক বড় একটা গল্প রয়েছে। যে গল্পে আমার নানার জমিদারিসহ সকল ঘটনা বিদ্যমান রয়েছে।
হাঁটতে হাঁটতে নানির বাড়িতে গেলাম। বাড়িতে ঢুকে দেখলাম ছোট মামানি তখনো রান্না করছেন। আমি মামানির সাথে কথা বলে বললাম, নানি কোথায়? তিনি বললেন, দ্যাখ রুমেই আছে। আমি নানির রুমে গিয়ে নানিকে ডাক দিলাম। তিনি জানালার পাশে বসে বাইরে তাকিয়ে ছিলেন। আমার কণ্ঠ শুনে উনার যেন খুশি আর ধরে না। আমি বললাম, কেমন আছেন নানি? তিনি বললেন, এই আছি য্যামন দেকছিস। চোহেও দেকতি পাইনি ঠিকমতো।
তারপর নানির কোলে শুয়ে নানার জীবনের গল্প শুনতে লাগলাম। তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। আর নানার জীবনের গল্প বলছেন। কখনো কখনো কাঁদছেন। কখনো আবার হাসিতে ফেঁটে পড়ছেন। আমার জীবনের যেই পাঁচজন ভালোবাসার মানুষ রয়েছেন, তার মধ্যে নানির অবস্থান সর্বপ্রথমে। নিজের আব্বা আম্মুর চেয়েও আমি আমার নানিকে বেশি ভালোবাসি। আবার নানিও তার সকল নাতি নাতনিদের মধ্যে আমাকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন।
মাঝখানে মামানি এসে বললেন, খাওয়া দাওয়া কইরি যাস। আমি বললাম, না মামানি। আজ না। আরেকদিন খাবো। তিনি খাওয়ার কথা বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে গেলেন। তবুও আমি খেলাম না। কেননা ওদিকে আম্মু রান্না করছেন। নানিকে বললাম, নানি আজ আমাদের ওখানে আপনার দাওয়াত রইলো। রস পিঠা, ভাজা পিঠা, রুটি পিঠা, পোলাও ভাত, সাথে মুরগীর মাংস। আমি আপনার সামনে বসে থাকবো। আর আপনি খাবেন, কেমন? নানি বললেন, আমি ঐসব খাতি পারিনি ভাই। মিষ্টি টিষ্টি হলি এ্যাকটু খাতি পারি। আমি বললাম, ঐযে রসপিঠা আর ভাজা পিঠা আছে!
নানি বললেন তিনি নাকি ওগুলোও খেতে পারেন না। পরে বললাম, তাহলে কী খাবেন? তিনি তখন বললেন, ছোট ব্যাটাডা মাঝেমদ্যি দুকান তিন মিষ্টি টিষ্টি আইনি দেয়। ঐ খাই। আমি একটু হেসে বললাম, আপনি বসুন। আমি যাবো আর আসবো। নানির বাড়ি থেকে বের হয়ে ভাইয়াদের বাড়িতে ঢুকলাম। তারপর ভাইয়ার ছোট ভাইয়ের মুসলমানিতে উপহার হিসেবে পাওয়া “ভেলোস ২০৬” বাইসাইকেলটা নিয়ে মোড়ের দিকে রওনা দিলাম। সেখানে রাজভোগ, চমচমসহ সব ধরনের মিষ্টি পাওয়া যায়। নানির জন্য আপাতত একটা রাজভোগ আর তার সাথে বেশি করে রাজভোগের ঝোল নিলাম।
ফিরে এসে নানির হাতে মিষ্টিটা দিয়ে বললাম, নানি মিষ্টিটা খান। তিনি বললেন, তুই কি কামাই শিখছিস নাহি যে, তোর কেনা মিষ্টি খাবো। আগে কামাই শেখ ভাই। তহন খাবো। আমি বললাম, আরে আরে এসব নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। খেতে বলেছি খান। একদম কথা বলবেন না। তিনি না না করলে আমি বললাম, নানি একদিন আমি ঠিকই কামাই শিখবো। অনেক অনেক টাকা ইনকাম করবো। কিন্তু, হয়তো সেদিন আপনি থাকবেন না। হয়তো সেদিন আপনাকে এইরকম মিষ্টি খাওয়ানোর সুযোগটা আর পাবো না।
নানি আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন। আমার চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় জল গড়িয়ে পরছে। আমি নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম আমার ভালোবাসার মানুষটাকে। নানি গো, বড্ড বেশি ভালোবাসি তোমায়। হয়তো কখনো মুখে বলতে পারিনি। কিন্তু বিশ্বাস করো, তোমায় বড্ড ভালোবাসি আমি, বড্ড ভালোবাসি।