ভালোবাসা দিবস

ভালোবাসা দিবস

টং দোকানে বসে চা খাচ্ছে হিমেল, সৌরভ আর হাসান। অন্তরঙ্গ বন্ধুত্বের সম্পর্ক তাদের তিনজনের। সৌরভ দোকানদার মামাকে তিনটা সিগারেট দিতে বলে হাসান আর হিমেলের উদ্দেশ্যে বলে, আগামীকাল তোদের প্ল্যান কী? প্রত্যুত্তরে হাসান কিছু বলে না। অপরদিকে হিমেল বলে, কাল সারাদিন ঘুমাবো।

– এই নাও বাবা সিগারেট। দোকানদার মামা সিগারেট এগিয়ে দিলেন তাদের দিকে। সৌরভ সিগারেটে টান দিতে দিতে বলে, আমি আগামীকাল আমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে থাকবো। চাইলে তোরাও আসতে পারিস। সৌরভের কথা শুনে হিমেল বলে,

– এবারও একট জুটিয়ে ফেলেছিস?
– আরে বেটা এসব জোগাড় করা আমার কাছে কি অসম্ভব কিছু?
– তা না, তবে প্রতিবার কিভাবে জোগাড় করিস?
– সে বিষয়ে তোদের ভাবতে হবে না। বল গতবারের মতো এবারও যাবি নাকি!

হিমেল আর হাসান দু’জনে কিছুক্ষণ চোখাচোখি করে বলে, হ্যাঁ যাওয়া যায়। ফুর্তি করলে মন মেজাজ দু’টোই ভালো থাকে। কিন্তু…..

– কিন্তু কী? (সৌরভ)
– গার্লফ্রেন্ড তোর। আর আমরা সবাই মিলে ভাগ করে নিলে তোর সমস্যা হবে না তো? (হিমেল)
– আরে ধুর, এ তো কেবলই টাইম পাস আর মজা। ওর সাথে আমার রিলেশনের আজকের দিনটাই শেষ দিন। প্রতিবারই তো তোরা যাস। এবারও যাবি।

– হ্যাঁ, তা ঠিক। তা মেয়েটা দেখতে কেমন?
– তোদের মাথা ঘুরিয়ে যাবে দেখলে।
– বলিস কি? তবে তো এই মেয়েকে পেতেই হবে।
– কালকে কল করলে চলে আসিস।
– ওকে দোস্ত।

হিমেল আর হাসান বাড়ি চলে যায়। সৌরভ বসেই থাকে টং দোকানে। সন্ধ্যা হলে সেও বাড়ির দিকে রওনা দেয়। রাতে হিমেল নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে ফেসবুকিং করছে। মাস খানেক ধরে সে একটা মেয়েকে পটানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু মেয়েটা কিছুতেই পটছে না। মেয়েটাকে অনলাইনে দেখে সে ইনবক্স করে।

– হাই অধরা কেমন আছো?
– এই তো ভালো, তুমি কেমন আছো?
– তুমি ছাড়া কেমন থাকি সেটা তো তুমি জানো। তা আগামী দিনের প্ল্যান কী তোমার?
– বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরবো ফিরবো।
– তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে?
– হ্যাঁ, কেন?
– না, এমনিই।
– হু।

হিমেল ফেসবুক থেকে বের হয়ে আসে। মুহূর্তেই তার উচ্ছ্বাসিত মনটা খারাপ হয়ে যায়। কিছুদিন আগেও মেসেন্জারে কথা বলার সময় মেয়েটি বলেছিলো, তার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই। কিন্তু আজ? আজ মেয়েটে বলছে, আগামীকাল সে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে বের হবে।

– ভাইয়া আসবো? (হঠাৎই তার বোন তার রুমে নক করে)
– আয়।
– ভাইয়া দেখতো এই শাড়িটা কেমন? হিমেল এক ঝলক শাড়িটার দিকে তাকিয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে বলে, অনেক সুন্দর।
– কালকে পড়বো শাড়িটা, কেমন মানাবে বলতো!
– একদম কাউয়ার মতো লাগবে। যা এখান থেকে।

তার বোন চলে যায় রুম থেকে। পরদিন অর্থ্যাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে সৌরভ কল দেয় হিমেল আর হাসানকে। সে বলে, দোস্ত ঘণ্টা খানেকের মধ্যে চলে আয় আমাদের বাসার পাশের আমবাগানটার কাছে। হিমেল যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে থাকে। নীল পাঞ্জাবি, পায়জামা, জুতা সবকিছু পড়ে। তবুও কী যেন নেই, বলে মনে হয় তার। ঠিক তখনই তার বোন তার রুমে প্রবেশ করে বলে…

– কী? ঘড়ি খুঁজছিস?
– হ্যাঁ, কিন্তু….
– কিন্তু আমি জানলাম কী করে তাই না?
– হ্যাঁ।
– এই যে তোর ঘড়ি আমার কাছে।
– দে, ঘড়িটা দে।
– দিতে পারি, তার আগে বল আমাকে কেমন দেখাচ্ছে?
– একদম পেত্নীর মতো।
– হুহ, তাহলে আর ঘড়িটা পেলি না।
– না না, তোকে একদম পরীর বাচ্চার মতো লাগছে।
– না হয়নি, ভালো করে দেখে বল। মন থেকে বল।

হিমেল তার নিজের শরীরে সেন্ট মারতে মারতে বলে, হ্যাঁ অনেক সুন্দর লাগছে তোকে। হিমেলকে ঘড়িটা দিয়ে তার বোন রুম থেকে প্রস্থান করে। এদিকে সৌরভ কয়েকবার ফোন দিয়েছে হিমেলকে। হিমেল বলেছে, দোস্ত আরেকটু অপেক্ষা কর, চলে আসছি আমি। বিকেল চারটার দিকে হিমেল আমবাগানে পৌঁছে যায়। গিয়ে দেখে সৌরভ আর হাসান তার অপেক্ষাতেই দাঁড়িয়ে আছে। তাকে আসতে দেখেই তারা বলে উঠে, দোস্ত মজা হবে আজ।

– মেয়েটি এসেছে? (হিমেল)
– হ্যাঁ, ও রুমের মধ্যে আছে।
– চল তাহলে।
– হুম চল।

রুমের সামনে গিয়ে হিমেল সৌরভকে বলে, দোস্ত তুই আগে ভেতরে গিয়ে মেয়েটাকে রেডি করে রাখ। তারপর আমরা ঢুকছি। সৌরভ ভেতরে ঢুকে যায়। হিমেল আর হাসান বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছু সময় পর সৌরভ হিমেলের ফোনে ফোন করে বলে, আয় ভেতরে আয় তোরা।

হিমেল আর হাসান দরজা খুলে ভেতরে ঢোকে। রুমটা অন্ধকার। মৃদু মৃদু আলো জ্বলছে রুমে। মৃদু আলোতে হিমেল দেখতে পায়, একটা অর্ধ নগ্ন মেয়ে খাটের সমীপে দাঁড়িয়ে কাউকে জড়িয়ে ধরে আছে। পাশে থেকে হাসান সৌরভের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে, দোস্ত রুম তো অন্ধকার। লাইটটা জ্বালিয়ে দে। সৌরভ লাইটটা জ্বালিয়ে দেয়। লাইটের আলোয় অর্ধ নগ্ন মেয়েটার দিকে চোখ পড়তেই হিমেল চমকে ওঠে। এসব কী দেখছে সে! মেয়েটা যে তার বোন। পাশে তাকিয়ে দেখে ফ্লোরে তার বোনের সেই শাড়িটা পরে আছে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত