তুমিহীনা শুণ্য এই আমি

তুমিহীনা শুণ্য এই আমি

-তাওহীদ ভাইয়া,কি করো?
-তোর জন্য ঘাস কাটি, খাবি??(বিরক্ত হয়ে)
-এহহ!তুমি খাও তোমার ঘাস!
-হুমম আমিই খামু তুই তো আর খাবিনা সুতরাং তুই যা!
-বিরক্ত হচ্ছো?
-হ্যা বিরক্ত লাগে তোকে যা!
-আচ্ছা

উল্লাসী যাওয়ার পর যেনো তাওহীদ স্বস্তি পেলো।মেয়েটা সারাদিন ওর পেছনেই লেগে থাকবে!10 এ পড়া মেয়ে সামনে যার পরীক্ষা তার বিন্দুমাত্র চিন্তা নেই,এইযে এখন গেলো আবার ৫ মিনিট পর “তাওহীদ ভাই, তাওহীদ ভাই”করতে করতে আসবে একটা ছুতো নিয়ে কথাগুলো মনে মনে বলে আনমনে আকাশের দিকে চেয়ে রইল,আকাশে বিন্দু বিন্দু আলোর ঝলক দেখা যাচ্ছে,হ্যা ওগুলো তারা! আর কিছুটা দূরেই চাদঁটা দেখা যাচ্ছে,চাদঁটাকে দেখে মনে হচ্ছে তার দিকে তাকিয়েই বাকাঁ হাসছে!!যেন চাদেঁর হাসিতে রহস্য খেলা করছে!

দীর্ঘ ২ঘন্টা তাওহীদ ছাদে আকাশপানে চেয়ে রইল!নাহ আজ আর উল্লাসী একটু পর পর আসেনি,ধমকে কাজ হয়েছে তবে প্রতিদিনই এমন ধমক দেয় আজকে অলৌকিকভাবে তা কাজে লেগেছে!নয়ত উল্লাসী এতক্ষণে এসে বকবক করত,উল্লাসী নামটার মতো মেয়েটা সারাদিন যেন উল্লাস করতে ঢাকে! এসব ভাবতে ভাবতে তাওহীদ তাদের ফ্লাটের কলিংবেল চাপলো! ফজরের আজান শুনে তাওহীদ উঠে পড়ল নামাজের যাবার জন্য প্রস্তুত হয়ে নেয় এরপর মসজিদ থেকে নামাজ শেষ করে সোজা শিউলী ফুলের গাছটার তললায় গিয়ে কিছু ফুল তুলে পলিথিনে নিলো এসব না নিলে তার যে উল্লাসীর অহেতুক বকবক শুনতে হবে তাই বাধ্য হয়েই নিলো আর সাথেতো তার মায়ের চোখরাঙানি!! এসব উল্লাসীর চাল তা তাওহীদ ভালো করেই জানে!

এইতো সেদিন,তাওহীদ উল্লাসীকে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলো সে কারো জন্য শিউলীফুল আনতে পারবেনা উল্লাসী এক দৌড়ে গিয়ে তার মায়ের কাছে বলে,”আন্টি শোনোনা আম্মু আমাকে ওই শিউলীতলায় যেতে নিষেধ করেছে,তাওহীদ ভাইয়া বলেছি নামাজ পড়ে আসার সময় পলিথিনে কতগুলো শিউলীফুল এনে দিতে সেটাও বলে সে পারবেনা যার লাগবে সে যেনো নেয় গিয়ে বলোতো আমি মেয়ে মানুষ ওত সকালে আম্মু যেতে দিবে??”সেদিন তাওহীদ মায়ের ভয়েই বলেছিলো এনে দেবে ফুল! কথা ছিলো উল্লাসী তাদের ফ্লাটের দরজার সামনে দারাবে আর তাওহীদ ফু্ল দিয়ে চলে যাবে, তাদের ফ্লাট পাশাপাশি প্রতিদিন উল্লাসীকে ফুল নেওয়ার জন্য দাড়িয়ে থাকতে দেখলেওআজ তাওহীদ তাকে দেখতে পেলো না!! তাই ফুলগুলোর পলিথিনটা দরজার সামনে ছুড়ে ফেলে দিয়ে তাদের ফ্লাটে ঢুকে গেলো,সময় হলে তার ফুল সে  নিয়েই যাবে!

সকালের নাস্তা করে অফিসের জন্য রেডি হয়ে যায় তাওহীদ,অনার্স শেষ করেই একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরী নিয়ে নেয় সে,পাশাপাশি মাষ্টার্স করছে! তাওহীদ তাদের ফ্লাটের দরজা খুলেই চোখ পড়ল উল্লাসীদের ফ্লাটের দরজার দিকে, চোখ পড়তেই দেখলো শিউলীফুলগুলো ওভাবেই পড়ে আছে দরজার সামনে,তাওহীদ ওসব তার আমলে না নিয়ে অফিসে চলে গেলো! অফিস থেকেে ফেরার পথে ছোটবোন তাইয়্যেবার জন্য কিটক্যাট নিলো সাথে উল্লাসীর জন্যও,কারন তাইয়্যেবা আর উল্লাসী বিকেলে একসাথেই থাকে!

বাসায় ঢোকার পূর্বেই তাওহীদের চোখ যায় ছাদের দিকে,প্রতিদিন উল্লাসী সেখানে চুল ছেড়ে দাড়িয়ে থাকে,সবার চোখে সুন্দর লাগলেও তাওহীদ নায়িকাদের মতো ওখানে দাড়িয়ে থেকে চুল বাতাসে ওড়ায় যা তার কাছে ঢং মনে হয়!আর কিছুই নয়!! তাওহীদ বাসায় ঢুকে গেলো তারপর তাইয়্যেবার হাতে কিটক্যাট দুটো দিলো। তাইয়্যেবা হাসিমুখে চকলেট নিলো আর বলল-উল্লাসী আপু আজ এখনো আসেনি,আপু আসুক একসাথে খাবো(বলেই টেবিলের ওপর চকলেট ২টো রেখে দিলো) তাওহীদ কি যেনো একটা ভেবে নিজের রুমে চলে গেলো। আজ রাতেও তাওহীদ ছাদে গেলো,আনমনে চাঁদ দেখছে,তবে সে কিসের যেনো একটা শূণ্যতা অনুভব করছে,কিছুক্ষন পরেই সে কারো পায়েয়ের আওয়াজ পেলো,পিছনে ফিরতেই দেখল উল্লাসীর মা,

-আরে আন্টি!এতো রাতে ছাদে!!
-আর বলো না তাওহীদ,

উল্লাসী সারাদিন রুমে দরজা বন্ধ করে আছে,খাবার সময়ে শুধু বের হয়য়,হয়তো পড়ে,ও তো আজ ছাদে আসেনি।তাই জামাকাপড় গুলো নিতে আসলাম,(বলে জামাকাপড় নিয়ে চলে গেলো,) তাওহীদ ভালো করেই জানে উল্লাসী পড়ে না,যাকগে!যাই করুক সে কেনো ভাবছে বাসায় যেতেই দেখলো টেবিলের ওপর চকলেট ২টো পড়ে আছে,উল্লাসী আসেনি বলেলে হয়তো তাইয়্যেবাও চকলেটের কথা ভুলে গেছে,তাওহীদ নিজের রুমে চলে গেলো পরেরদিনও তাওহীদ শিউলীফুল নিয়ে উল্লাসীকে দেখল না দরজার সামনে,তাওহীদ কলিংবেল চাপতে যাবে তার আগেই দরজা খোলার শব্দ পেলো পেছনে তাকাতেই দেখলো উল্লাসীর মা,উল্লাসীর বাবা অফিসের জন্য বের হয়ে গেলো।উল্লাসীর মা দরজা লাগাতে যাবে তার আগেই –

-আন্টি উল্লাসীর ফুল,ও তো এগুলো আনতে বলেছিলো তাই আর কি!
-ওই মেয়ের আর কাজ কি!শুধু শুধু মানুষকে কষ্ট দেয়।বাবা তুমি এগুলো আর এনোনা কষ্ট করে মেয়েটা বাদর হয়ে গেছে!
-না আন্টি থাক, আনতে প্রবলেম নেই আমার!

তখনই পেছন থেকে উল্লাসী বলে ওঠে- থাক ভাইয়া তুমি আর ফুল এনোনা এখন আর ফুল ভালো লাগেনা(বলেই চলে গেলো) তাওহীদ একদিন পর উল্লাসীর মুখটা দেখল তবুও মনে হচ্ছে সে যেন কত বছর পর উল্লাসীকে দেখলো।তাওহীদ একধরনের প্রশান্তি অনুভব করছে,কিন্তু কেন তা তাওহীদের অজানা!! সেদিনও তাওহীদ সারাদিনে উল্লাসীকে আর দেখতে পায় নি এক সপ্তাহ কেটে গেলো,,,সেতো উল্লাসীকে এক সপ্তাহ যাবত দেখেই না! তাওহীদ উল্লাসী মানা করার পরও শিউলীফুল তলায় ভুল করে চলে যায়। মনে পড়তেই চলে আসে!! আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে তাওহীদ,মনটা ভীষন খারাপ!এতোদিনে সে খুব শুন্যতা অনুভব করছে,সে তো এটাই চেয়েছিলোযেন উল্লাসী তার পিছু ছাড়ে,তাহলে এখন খারাপ লাগছে কেন? ভাবতে ভাবতেই তাওহীদ চাদঁটার তাকালো,চাদেঁর মুখে আজও সেই রহস্যময় হাসি!আজকে তাওহীদ বুঝলো সেদিন চাদেঁর রহস্যমাখা হাসির কারন!!!

-উল্লাসী আপু, কি করছো?
-আরে তাইয়্যেবা!বসো, এইতো একটু পড়ছি
-ছাদে যাবে?চলোনা আপু, একটু চাদঁ দেখব!
-না আপু,ভালো লাগেনা,ছাদে এখন যদি কেউ থাকে! তাহলে গিয়ে চাদঁ দেখে মজা নেই। একা একা চাদঁ দেখে অনেক ভালোভাবে অনুভব করা যায় (বলে দীর্ঘশ্বাস নিলো)
-কে বলল এমন উল্টাপাল্টা অনুভব এর কথা!!
-কেন?তাওহীদ ভাইয়াই তো একা দেখে!আর এখন, ভাইয়া ছাদে আছে মনে হয়!
-আরেহ আপু,কি বলো!

তাওহীদ ভাইয়া এখন নেই ছাদে সেতো ঘরে ঘুমোয়,চলোনা আপু(টানতে টানতে তাইয়্যেবা উল্লাসীকে ছাদের সিড়িতে নিয়ে গেলো) উল্লাসী সিড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে উপরে উঠলো, ছাদের দরজায় এসে পেছন ফিরে দেখলো তাইয়্যেবা নেই,উল্লাসী ডাকল-

-তাইয়্যেবা!কই আসোনা?!! হঠাৎ উল্লাসীকে কেউ হেচকা টান দিয়ে ছাদের ভিতরে নিয়ে গেলো।উল্লাসী ভয় পেয়ে “তাইয়্যেবা”বলে চিৎকার দিতে নিলে কেউ তার মুখ চেপে ধরলো! উল্লাসী সামনে তাকিয়ে দেখল আর বলল-

-তা-তাওহীদ ভাইয়া!!!!!!!!!!!!
-ভাইয়া!!থাপ্পর খাবি যদি আরেকবার ভাইয়া শুনি, বেদ্দ্দপ মেয়ে!!!
-সরি!

আমি ছাদে আসতে চাইনি, তাইয়্যেবা নিয়ে আসলো,আমিমি আর আসবো না,বিরক্ত করবোনা, এই যে আমি চলে যাচ্ছি(বলেই চলে যেতে নিলেই তাওহীদ শক্ত করে হাত চেপে ধরে।ছাদের রেলিং এর পাশে নিয়ে গেলেই উল্লাসী চিল্লিয়ে ওঠে বলে- ভাইয়াআআআ!প্লিলিজজ আমাকে ফেলে দিবেন না আমি আর আসবোনা প্রমিস,একদম চুপ থাকবো সত্যি বলছি!! তাওহীদ মুচকি হেসে পেছন থেকে জড়িয়ে নিলো উল্লাসীকে!তারপর সে চাদঁকে বললো- চাদঁমামা!আর রহস্যের হাসি হেসোনা,উল্লাসীকে সেই আগের মতো উল্লাস করতে বলোনা!ওকে আমার প্রয়োজন,ও ছাড়া যে আমি শুণ্য!!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত