সেই তুমি

সেই তুমি

—তুমি কে?
—আমি আমিই,,,
—এমন কেনো কর তুমি,,,?
—চিনে কেনো এমন কর?
— তো কি করবো, তুমি যানো সেই এক ঘন্টা ধরে তোমার জন্য অপেক্ষা করে বসে আছি, । ‘আর মহারাজের এখন আশার সময় হলো , ।

—আরে রাগ কর কেনো, তুমিতো যানো আমি কেনো ঠিক সময়ে আসতে পারি না, তারপর ও কেনো এমনো কর, ?
—হু জানি জানি, এতই যখন কাজ থাকে তাহলে কোনো দেখা করতে চাও প্রতিদিন, ?
—কি করবো বলো , তোমাকে না দেখলে যে আমি কিছুতেই মন বসাতে পারি না, ।
—থাক আর পাম দিতে হবেনা, ।
—আমি যে পাম দিচ্ছি না সেটা তুমি ভালো করেই যানো, ।

—হু জানি বলেই তো প্রতিদিন লেট করে আসার পরেও, তুমি যখন আসতে বল তখন না এসে পারি না, ।
—‘হু হু ধন্যবাদ বউ, ।
—‘হইছে হইছে, এখন ওখানেই দাড়িয়ে থাকবা নাকি আমার পাশে এসেও বসবা, ।
—‘হ্যাঁ বসবই তো, । ‘কথাটা বলেই “নিলয়” গিয়ে “তিথির” পাশে ধপ করে বসে পরে, ।
—‘আর তিথি নিলয়ের হাতের ভেতরে হাত দিয়ে নিলয়ের কাঁধে মাথা রেখে সামনের “নদীর” জলের দিকে তাকিয়ে থাকে, ।

‘এটা তাদের রোজকার কাজ, প্রতিদিন নিলয় তিথিকে দেখার জন্য ফোন করে তাদের এই প্রিয় জায়গাটাতে আসতে বলে, আর তিথিও প্রতিদিন নিলয় আসার এক ঘন্টা আগে এসে বসে থাকে, যদিও নিলয় তাকে বলে দেয় তার আসার সময় টা তবুও তিথি এক ঘন্টা আগে এসেই বসে থাকে, । ‘কারণ নিলয়ের জন্য অপেক্ষা করতে ভালো লাগে তার, এই একটা ঘন্টা শুধু নিলয়ের ভাবনাতেই বিভোর থাকে মেয়েটা, ।

‘একটা গরীব ঘরের ছেলে নিলয়, । ‘দেখতে তেমন ভালো নাহলেও তার মধ্যে একটা বাচ্চা টাইপের ভাব আছে সেটার কারণে তিথি নামের মেয়েটা নিলয়কে অনেক ভালোবাসে, । ‘বাবা, মা আর তার ছোটো বোনকে নিয়ে নিলয়ের ছোটো পরিবার, । ‘নিলয়ের বাবার শরীরটা অনেক খারাপ, যে কারণে তেমন কাজ করতে পারেনা তিনি, । ‘আর নিলয় ও পড়াশোনা শেষ করার পরে চাকরি পাইনি, । ‘কি করে পাবে বাবার যে টাকা নেই, চাকরি পেতে গেলে যে টাকার দরকার হয়, । ‘তাই পরিবারের খরচ চালাতে সে একটা ফ্যাক্টরিতে দিন মজুরি করে, । ‘তাতে যা পাই তাই দিয়েই কোনো রকমে পরিবারের খরচ চালায়, । ‘

‘আর অপরদিকে “তিথি” এক ধ্বনি ঘরের মেয়ে , । ‘দেখতে শুনতে অনেক ভালো , । ‘তাকে দেখে যে কোনো ছেলে তার প্রেমে পরতে চাইবে, । “তিথি” তার বাবার এক মাত্র মেয়ে ছোটো বেলা থেকে অনেক আদর যত্নে বড়ো হয়েছে, । ‘মেয়েটা নিলয়ের সম্পর্কে সব কিছুই জানে, তবুও সে নিলয়কে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসে , । ‘কিন্তু এই সম্পর্কের শেষটা যে কি হবে তা দুই জনের কেউ জানেনা, । ‘তবুও তিথির বিশ্বাস তার বাবা তাকে আর নিলয় কে আলাদা করে দেবেনা , । ‘অনেকটা সময় নদীর পাড়ে বসে আছে দুই জনে কেউ কোনো কথা বলছেনা, ।হঠাৎ “তিথি বলে উঠলো , ।

—‘আর কতক্ষন, ?
—‘কি, ? ‘যদিও নিলয় জানে পাগলিটা কি চাই, ।
—‘এই ভাবে এখানে বসে থাকব, ??
—‘কেনো ভালো লাগছেনা, ??
—‘বসে থাকতে ভালো লাগছেনা।চলো একটু হাটি, ।
—‘হুম চলো, ?

— ‘উঠে দাড়িয়ে তিথি বলল, ।’হাতটা বাড়িয়ে দাও,।
—‘কেনো, ?
—‘তোমার হাত ধরে হাটব তাই,।

‘নিলয় কিছু না বলেই তার হাতটা বাড়িয়ে দিলো তিথির দিকে। ‘শান্ত বিকেলের দক্ষিনা বাতাসে, নদীর পাড়ের কাশবনের মাঝ দিয়ে একেবেকে বয়ে চলা মাটির রাস্তা দিয়ে হাটছে দুজন,। ‘আসলে নিলয় একটু লাজুক, । ‘সে কখনোই তিথির চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারেনা, । ‘তিথি সামনে থাকলে সবসময়ই মাথা নিচু করে থাকে, ।

‘নিলয়ের হাত কাপছে থর থর করে।আসলে তাদের দেড়বছরের সম্পর্ক আর এই দেড়বছরের সম্পর্কে প্রতিটা দিন তিথি নিলয়ের হাত ধরে হেটেছে, তারপর ও নিলয়ের এখনও তিথির হাত ধরতে লজ্জা পাই, তাই যখনি মেয়েটা নিলয়ের হাত ধরে তখনি নিলয়ের হাত এমন থর থর করে কেঁপে ওঠে আর এটা দেখে তিথি নিলয়ের হাতটা আরও শক্ত করে চেপে ধরে নিজের হাতের মধ্যে , । তাদের পরিচয়টা কলেজ থেকে।

‘নিলয় একটু শান্ত স্বভাবের। কারো সাথে তেমন একটা কথা বলতনা ,,সব সময় চুপ চাপ ক্লাসে বসে থাকতো , যেটা কারোর চোখে না পড়লেও, “তিথির” চোখে ঠিকি পরেছিল, । ‘প্রতিদিন ক্লাসে যখন নিলয় একা একা লাস্ট বেঁচে বসে থাকতো , তখন “তিথি” ক্লাস না করে নিলয়ের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতো , । ‘যে কারণে “তিথিকে” অনেক বার স্যার দের কাছে বকা শুনতে হয়েছে, এমন কি কয়েকদিন ক্লাস থেকে বারও করে দিয়েছিল স্যার তাকে, । ‘কিন্তু তবুও “তিথি” ক্লাসে বসে সারা ক্লাস নিলয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতো , । ‘মাঝে মাঝে তিথি নিজেও এটা ভেবে অনেক অবাক হতো যে সে কেনো ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকে , । ‘কোনো সেটা উত্তর পেতনা সে, ।

‘তিথির তাকিয়ে থাকাটা কখনো নিলয় লক্ষ করনি , তবে তিথির বান্ধবীরা ঠিকি লক্ষ করেছে, । ‘এর আগে তিথি কোনো দিন এমন করেনি , যে কারণে তার বান্ধবীরা তাকে ব্যাপারটা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, ।

‘কিন্তু তিথি কিছু বলতে পারেনা, এক পর্যায়ে সে নিলয়ের সাথে কথা বলতেও চেষ্টা করে কিন্তু কি যেনো ভেবে আর কথা বলতে পারতো না, । ‘দেখতে দেখতে দিন যেতে থাকে , । ‘দ্বিতীয় বর্ষে ওঠার ছয় মাস পরে “তিথি” বুঝতে পারে যে লাস্ট বেঞ্চে চুপচাপ বসে থাকা ছেলেটাকে সে নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছে, । ‘আর তার এই অজান্তেই ভালোবাসাটা তাকে কোনো ভাবেই ভালো থাকতে দিচ্ছে না , যে কোনো ভাবে সে ওই ছেলেটাকে নিজের মনের কথাটা জানতে চাই, আর সেটা যতো তারাতারি সম্ভব, ।

‘নিলয় ও ততো দিনে বুঝতে পেরেছে , ক্লাসে একটা মেয়ে তারদিকে সব সময় তাকিয়ে থাকে , । ‘মেয়েটা দেখতে অনেক সুন্দরী আর ধ্বনি বলেও মনে হয়, । ‘কিন্তু নিলয় ব্যপারটা দেখেও না দেখার ভান করে থাকে, । ‘নিলয় জানে যদি সে নিজেকে আবেগের কাছে আজ বিলিয়ে দেয়, তাহলে তার বিনিময়ে শুধু কষ্টই পাবে, । ‘সেই ভয়ে সে কখনো মেয়েটাকে বুঝতে দেইনি যে সেও মেয়েটাকে পছন্দ করে, ।

‘নিলয় একদিন কলেজ ক্যাম্পাসে একটা কোনে গাছের নিজে বসে ছিল, তখনি সে খেয়াল করে তার পাশে কেউ বসে আছে , । ‘হঠাৎ লক্ষ করাতে নিলয় একটু ভয় পেয়ে যায় , । ‘কিন্তু সেটা তিথিকে বুঝতে না দিয়ে নিজেকে সামলে নেই, ।

—‘কি আমাকে দেখে ভয় পেয়ে গেছিলে বুঝি , । ‘মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে নিলয়কে কথাটা জিজ্ঞেস করে তিথি, ।

—‘নিলয় ও সাথে সাথে তার কথার উত্তর দেয়, । ‘না না ভয় পেতে যাব কেনো, আপনি বাঘনা ভাল্লুক, ।

—‘হু তা ঠিক, কিন্তু তোমাকে দেখে মনে হলো তাই বললাম, । ‘আর তুমি আমাকে আপনি করে বলছো কেনো, ? ‘আমরা তো একই ক্লাসে পড়ি , তুমি আমাকে তুমি করে বলবে, ।

—‘ঠিক আছে , । ‘আচ্ছা আমি আজকে আসি , বাড়িতে অনেক কাজ আছে, ।

—‘আচ্ছা ঠিক আছে , ।

‘আজ প্রথম একে অপরের সাথে কথা হলো তাদের দুজনের, তাই নিলয় আর তিথি দুইজনই লজ্জা পাচ্ছিল, কিন্তু নিলয় একটু বেশি লজ্জা পাচ্ছিল, । ‘আজ প্রথম কথা হলো তাই বেশি কথা বলতে পারেনি তারা, ।’কিন্তু তিথি আজ নিলয়ক নিজের মনের কথা বলতে এসেছিল কিন্তু কথাটা বলার আছে ছেলেটা চলে গেলো, । ‘কিন্তু কাল যে করেই হোক সে ছেলেটাকে তার মনের কথা বলবেই, ।

‘পরের দিন আবার ক্যাম্পাসে দেখা হয় নিলয় আর তিথির, । ‘তখন তিথি নিলয় কে বলে, ।

—‘ওই ছেলে শোনো তোমার সাথে একটা কথা বলার ছিলো , একটু আমার সাথে আসবে , ?

—‘না মানে এখন ক্লাস করতে হবে, অন্য এক সময় শুনবো, । ‘কথাটা বলেই নিলয় ক্লাস রুমের দিকে যেতে থাকে , । ‘নিলয় বুঝতে পারছে মেয়েটা কি বলতে চাই , । যে কারণে
সে এখন ক্লাসের নাম করে পালাতে চাইছে, । ‘কিন্তু তিথি সেটা বুঝতে পেরে নিলয়ের সামনে জেয়ে দাড়ায়, ।

—‘কি হলো আমার পথ আটকালেন কেনো, ?

—‘আমি যেটা বলছি এখন সেটা করবা, আমার সাথে যেতে হবে এখনি, ।

—‘কিন্তু আমার ক্লাস, ?

—‘এক দিন ক্লাস না করলে কোনো সমস্যা হবেনা, । ‘এখন চলো আমরা সাথে, । ‘কথাটা বলে তিথি নিলয়ের হাত ধরে টানতে টানতে কলেজের একটা গাছের নিচে নিয়ে আসে , ।

—‘আমাকে এখানে আনলেন কেনো, ?

—‘আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই, ।

—‘কি কথা, ?

—‘দেখো আমি বেশি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে পারিনা তাই সোজা সুজি বলছি আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি , আর আমাকেও তোমার ভালোবাসতে হবে, ।

—‘কি বলছেন এই সব, ।

‘কথাটা বলতেই তিথি নিলয়ের কলার চেপে ধরে আর নিলয়ের মুখের কাছে মুখ এনে বলে, । ‘ওই ছেলে তোমাকে না আপনি বলতে মানা করেছিলাম, । তারপর ও কেনো বলো, ?

—‘এমনি, ।

—‘আর একবার বললে খুন করে ফেলব, ।

—‘আচ্ছা আর বলব না, এখন আমি যাই,?

—‘ওই যাই মানে কি, আমার উত্তর চাই, ।

—‘কিসের, ?

—‘আমি তোমাকে ভালোবাসি , । ‘আর তুমি আমাকে ভালবাসবা কিনা সেটা জানতে চাই, ?

—‘না আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারবোনা , ।

—‘কেনো,? আমি দেখতে খারাপ, ? নাকি অন্য কাউকে পছন্দ করো, ?

—‘না তুমি দেখতে খারাপ না, অনেক ভালো দেখতে তুমি, আর আমি কাউকে ভালোবাসিনা, ।

—‘তাহলে তোমার সমস্যা কি, ?

—‘আমি গরীব ঘরের ছেলে, আমাদের মতন গরীব দের ভালোবাসতে নেই, । সেই কারণেই, ।

—‘ওই গরীব তাতে কি, সারাজীবন তো আর গরীব থাকবেনা, ।

—‘কিন্তু যদি গরীব থেকে যায় তাহলে, ?

—‘সে তখন কারের কথা কখন দেখা যাবে, ।

—‘না তা হয় না,। ‘আমার মতো গরীব কে তোমার পরিবার কখনো মেনে নেবেনা, ।

—‘সেটা আমি বুঝে নেবো , ।

—‘দেখো এত আবেগ ভালো না, নিজের আবেগ টাকে নিয়ন্ত্রণ করো, । ‘কথাটা বলেই নিলয় সেই দিন সেখান থেকে চলে আসে, ।

‘কিন্তু তিথি নামের মেয়েটা নাছোড় বান্দা , সে নিলয়ের পেছনে পরে থাকে সব সময়, সব সময় একটা কথা তার মুখে।

‘নিলয় ও আর তিথির থেকে দূরে থাকতে পারছিল না,নিলয় নিজেকে আবেগ কাছে বিলিয়ে দিতে চাইছিল না, কিন্তু আবেগটা এমনি একটা জিনিস যেটা কখনো বিবেক দিয়ে আটকে রাখা যায়না , আর ঠিক সেটাই হয়েছিলো নিলয়ের সাথে , । ‘সেও যে মেয়েটাকে নিজের অজান্তেই অনেক ভালোবেসে ফেলেছিল, । ‘তাই সে একদিন তিথিকে নিজের মনের কথাটা বলে দেয়, । ‘আর তারপর থেকে আজ দেড় বছর কেটে গেলো তাদের সম্পর্কে , । আচ্ছা এবার বর্তমানে ফেরা যাক,” ।

—‘আচ্ছা তিথি আর কতটা হাটতে হবে, ?

—‘কেনো আমার সাথে হাটতে ভালো লাগছে না বুঝি, ?

—‘আরে তা না আমি তোমার হাত ধরে সারাজীবন এমন ভাবেই হাটতে পারি , । ‘কিন্তু সন্ধ্যা তো হয়ে আসছে , এখন তো বাড়িতে যেতে হবে তাই না, ?

—‘হু যাবো কিন্তু তার আগে একটা জিনিস চাই আমার, ?

—‘কথাটা শুনে নিলয় ভ্রু কুঁচকে তাকায় তিথির দিকি, তারপর জিজ্ঞেস করে, ।, কি চাও?

—‘যেটা চাই সটা আমি নিজে নিয়ে নেবো , তুমি শুধু চোখ বন্ধ করো, ।

—‘জিনিস নিবা তাতে চোখ বন্ধ করার কি দরকার, ?

—‘উফ যা বলছি তাই করোনা একটু, ।

—‘আচ্ছা তবে শুধু দুই মিনিটের জন্য, ।

‘তিথি হেসে ওঠে , আর মনে মনে বলে “দুই মিনিট কেনো আমি যেটা চাই সেটা তুমি সারাজীবন দিতে চাইবে” ।হিহিহিহিহিহিহিহি

‘নিলয় তার চোখ বন্ধ করে, আর তিথি আসতে করে এগিয়ে যায় নিলয়ের দিকে, তারপর একটু উঁচু হয়ে নিলয়ের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট টা লাগিয়ে দেয় ,। ‘নিলয় এটা আসা করেনি, তাই তিথির ঠোঁটের স্পর্শ পেতে নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করে , তখনি তিথি নিলয়কে শক্ত করে জরিয়ে ধরে , । ‘পাঁচ – সাত মিনিট পরে নিলয়ের ঠোঁট থেকে নিজের ঠোঁট টা সরিয়ে নেই তিথি , । ‘আজ প্রথম এমন হলো , দুই জনেরি ভালো লাগছে, ।

‘তিথি নিলয়কে ছেড়ে নিয়ে নিলয়ের থেকে একটু দূরে সরে জায় , দুই জনে হাঁপাছে, কিন্তু হয় তো নিলয় একটু বেশি হাঁপাছে, হয় তো ভয়ে ছেলেটা এই সময় টুকুতে ভালো ভাবে শ্বাস নিতেই পারেনি , ।

—‘নিলয় নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বলে, । ‘ওই এটা কি করলে তুমি, ?

—“কখন কি করলাম, ?

—‘এইতো এখুনি , মনে পরছে না তোমার, ?

—‘নাতো, ।

‘নিলয় বুঝতে পারছে তিথি ওর সাথে শয়তানি করছে তাই সেও মনে মনে ঠিক করলো ও এখন কি করবে, ।

—‘আচ্ছা দাড়াও আমি দেখাছি কি করলে, ? ‘কথাটা বলে নিলয় তিথিকে নিজের কাছে টেনে নেই, ।

—‘ওই একটা কি করছো, ।

—‘কেনো একটু আগে তুমি যেটা করলে, ।

—‘ওই না না এটা ঠিক না , ছেড়ে দাও বলছি, ।

—‘উমহু তা হবেনা, তুমি করলে ঠিক আর আমি করলে ভুল, এটা কেমন কথা, ?

—‘এটা কথা, । ছেড়ে দাও প্লিজ, ।’একটু করুণ স্বরে কথাটা বলল তিথি, । ‘কিন্তু এত বার করে ছাড়তে বলছে , তবে নিজে এক বারও ছাড়াবার চেষ্টা করছেনা, সেও চাই সময়টা যেনো এখানেই থেমে যায়,।

—‘নিলয় আস্তে করে তিথির ঠোঁট টাকে নিজের দখলে নিয়ে নেয় , । ‘তিথিও এটা উপভোগ করতে থাকে, । ‘আর এটা জিনিস ভেবে খুশি হয় যে কিছুটা হলেও নিলয়ের লজ্জা টা কম হয়েছে, ।

‘কিছুটা সময় পরে নিলয় তিথিকে ছেড়ে দেয় , । ‘তারপর কিছু টা সময় একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে, ।

—‘ওই নিলয় সন্ধাতো হয়ে এলো বাড়িতে যেতে হবেনা, ?

—‘হ্যাঁ চলো, ।

‘নিলয় আর তিথি সেই আঁকাবাঁকা পথে দিয়ে হাটতে থাকে বাড়ির পথে, নিলয় আসার সময় একটা কাশফুল নিয়ে এসেছিল, তিথিকে দেবার জন্য, । ‘মেয়েটা কাশফুল অনেক পছন্দ করে, ।

‘বাড়ির জাবর সময় নিলয় তিথির খোপাতে ফুলটা গুজে দিয় , । ‘তারপর তারা দুই জন যে যার বাড়িতে চলে যায়,।

‘এমন ভাবেই চলছিল তাদের দিন গুলো, অনেক খুশি ছিলো তারা , । ‘কিন্তু সুখের দিন গুলো বেশি দিন থাকেনা , আর ওদের দুই জনের ও ছিলো না, ।

‘একদিন তিথি নিলয় কে খুব জরুরী ভাবে আসতে বলে তাদের সেই প্রিয় জায়গা টাতে,। ‘সেইদিন তিথি নিজে আসতে বলেছে সেই কারণে নিলয়ও খুব তারাতারি চলে আসে , ।

‘এসে দেখে তিথি বসে আছে , তবে আজ তার মুখে কোনো হাসি নেই, কেমন যেনো মন মরা হয়ে বসে আছে সে, । ‘নিলয় যেয়ে তিথির পাশে বসে পরে, ।

—‘কি হলো তিথি , আজ তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো, ?

‘তিথি কিছু না বলে নিলয়ের দিকে একটা কার্ড বাড়ি দেয়, নিলয় কার্ড হাতে নিয়ে দেখে এটা বিয়ের কার্ড, । ‘কার্ড টা হাতে নিয়ে নিলয় তিথিকে জিজ্ঞেস করে, ।

—‘কার বিয়ের কার্ড এটা, ?

—‘পড়ে দেখো, ?

‘নিলয় কার্ডটা খুলে পড়তে শুরু করে, কার্ড টা পড়ে নিলয়ের চোখ দিয়ে দুই ফোঁটা জন গড়িয়ে পরে , ।

—‘এটা কি , ? ‘তুমি মজা করছো তাই না, ?

—‘না আমি মজা করছি না, । ‘আমার বিয়ে আর তিন দিন পরে , । ‘কথাটা বলতে গিয়ে তিথির বুকটা ফেটে যাচ্ছে , কিন্তু এটাই সত্যি , তিনদিন পরে তিথির বিয়ে , ।

—‘কিন্তু তুমি বলেছিলে আমাকে কখনো ছেড়ে যাবেনা , । ‘তাহলে কেনো এমন করলে, ?

—‘আমি কিছু বলতে পারবো না, আমাকে মাফ করে দিয়ো , । ‘কথাটা বলেই তিথি কাঁদতে কাঁদতে চলে চলে যায়, । ‘আর নিলয় ওখানেই পাথরের মত বসে থাকে , ।

এই টুকু বলেই থেমে যায় ছেলেটা , আর মেয়েটা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকে , পরের টুকু জানার আশায়, ।’কিন্তু ছেলেটা আর কিছু বলছেনা তাই মেয়েটা আবার জিজ্ঞেস করলো , ।

—‘তারপর কি হয়েছিল, ওদের দুইজনের, ?

‘একটা ক্যাফেতে বসে আছে দুইটা ছেলে মেয়ে ,। ‘আজ তাদের প্রথম দেখা হয়েছে , । ‘কারণ টা তাদের পরিবার তাদের বিয়ে ঠিক করেছে, । ‘কিন্তু মেয়েটা ছেলেটাকে এখানে ডেকেছে বিয়েটা ভাঙ্গার জন্য, । ‘কারণ সে একটা ছেলেকে পছন্দ করতো কিন্তু ছেলেটা তাকে বিয়ে না করে পরিবারের চাপে অন্য কাউকে বিয়ে করেছে,।’তাই সে আর অন্য কাউকে বিয়ে করবেনা , । ‘মেয়েটা এসেই তার নিজের কথাটা বলে ফেলে, । ‘আর মেয়েটার কথাটা শুনে ছেলেটার মুখে হাসি ফুটে ওঠে , । ‘ছেলেটাকে হাসতে দেখে মেয়েটা হাসির কারণ জিজ্ঞাসা করে, । ‘তখন ছেলেটা বলে সেও বিয়ে করতে চাই না, । ‘কারণ জিজ্ঞেস করতে ছেলেটা নিলয় আর তিথির গল্পটা বলা শুরু করে, ।

—‘ছেলেটা কফির মগে একটা চুমুক দিয়ে , আবার বলা শুরু করে, । ‘নিলয় কিছু বুঝতে পারছিলনা যে কি করবে, সে পাগলের মতো আচরণ করছিলো , । ‘পরপর দুটো দিন কি করে যে সে কাটিয়েছে সে নিজেও বুঝতে পারছিলনা, তিথির সাথে কোনো কথা হয়নি তার দুই দিন, অনেক চেষ্টা করেছে কথা বলার কিন্তু তার ফোন অফ, । তাই সে সোজা তিথির বাড়িতে চলে যায়, । ‘সেখানে যেয়ে তার বাবার সাথে কথা বলে জানতে পারে তিথির বাবা নিলয় কে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে ছিলো, । তাই তিথি তার বাবার দেখা পাত্র কে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলো , কিন্তু ‘কথাটা বলেই আবার থেমে যায় ছেলেটা, । ‘এবার থামার কারণে মেয়েটা একটু বিরক্ত হয়, । ‘একটু বিরক্তি নিয়ে বলে,।

—‘ওই থেমে গেলেন কেনো, তারপর কি হলো বলেন, ?

—‘ছেলেটা বড়ো একটা নিশ্বাস ছেড়ে আবার বলে, । ‘কিন্তু নিলয়ের সাথে সেই দিন শেষ কথা বলে বাড়িতে ফেরার পথে তিথির এক্সিডেন্ট হয়, । ‘আর সেই খানেই তার মৃত্যু হয় , । ‘কথাটা শুনে নিলয় নামের ছেলেটা পাগলের মতো আচরণ করতে শুরু করে, এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, । ‘যখন তার জ্ঞান ফেরে তখন সে পুরো পাগল হয়ে গেছিলো , ।

‘পুরোটা বলে ছেলেটা মেয়েটার দিকে তাকাই, দেখে মেয়েটার চোখের কোণে দুই ফোটা জল জমেছে , । ‘তাই ছেলেটা মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করে, ।

—‘কি হলো আপনি কাঁদছেন কেনো, ?

—‘মেয়েটা চোখের জল মুছে ছেলেটাকে বলে , কই কাঁদছি নাতো, । ‘আচ্ছা একটা কথা বলুন নিলয় আর তিথি আপনার কি হয়, ?

‘কথাটা শুনে ছেলেটা হো হো করে হেসে ওঠে , । ‘হাসি দেখে গা জ্বলে যাচ্ছে মেয়েটার, । ‘তাই সে ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করে, ।

—‘কি হলো হাসছেন কেনো, ?

—‘না এমনি, । ‘আচ্ছা আমাকে একটা জায়গায় যেতে হবে, এখন উঠি তাহলে , । ‘আর চিন্তা করবেন না আমাকে বিয়ে করতে হবেনা আপনার, আমি ম্যানেজ করে নেবো সব কিছু , ।

—‘আচ্ছা, তবে বললেন না কিন্তু ওরা দুই জন আপনার কি হয়, ?

—‘সেটা না হয় না বলাই থাক, ।

‘কথাটা বলেই ছেলেটা উঠে পরে , সাথে মেয়েটাও, ক্যাফের বাইরে বেরিয়ে , ছেলেটা তার গাড়িতে উঠতে যাবে , তখনি মেয়েটা ছেলেটাকে পেছন থেকে ডাক দেই, ।

—‘এই ছেলে শুনুন, ?

‘ডাকটা শুনে ছেলেটা থেমে যায়, পেছনে তাকিয়ে দেখে মেয়েটা তার দিকে আসছে , । ‘মেয়েটা কাছে আসতেই ছেলেটা জিজ্ঞেস করে, ।

—‘কিছু বলবেন, ?

—‘হ্যা আসলে এত সময় কথা বললাম কিন্তু আপনার নামটা তো জানা হলোনা, ? ‘আমি “সুমি রয়” , আর আপনি?

—‘হ্যাঁ তাই তো, । আমি নিলয় চৌধুরী , ।

‘নামটা শুনে মেয়েটার সব কিছু এলোমেলো লাগতে শুরু করে, । ‘সে অবাক দৃষ্টিতে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে আছে , । ‘কিন্তু এখন সেটা দেখার সময় নিলয়ের নেই, । ‘তাকে এখন যেত হবে সেই পরিচিত জায়গাটাতে যেখানে তার জন্য তার ভালোবাসার মানুষটা ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে থাকতো , । ‘তাই সে আর কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠে চলে যায় যেই জায়গাতে, ।

‘প্রতিদিন এই সময় নিলয় এখানে আসে, ঠিক আগে যে সময় আসতো, (এক ঘন্টা দেরিতে ) , । ‘সব আগের মতো আছে, । ‘সেই ঢেউ খেলানো নদী, কাশবন, আর কাশবনের মাঝ দিয়ে একেবেকে বয়ে চলা মাটির রাস্তা , ।

‘তবে এখন এখানে দুটো জিনিস নেই, ? ‘সেই কাশবন আলোকিত করে ফুটে ওঠা সুন্দর সাদা ফুলগুলো , আর ওই কাশবনের মাঝ দিয়ে একেবেকে বয়ে জাওয়া মাটির রাস্তায় হাটার সময় তার হাত দুটো শক্ত করে ধরে থাকার মানুষটা, । ‘খুব মিস করে নিলয় এই দুটো জিনিস কে, । ‘অনেক কষ্ট হয় তার, । ‘সে আজ ও তিথিকে পাগলের মতোই ভালোবাসে, । ‘আজ ও নিলয়ের হৃদয় জুড়ে তিথিই থাকে, ।

‘নিলয় পাগল হয়ে গেছিলো তিথির মৃত্যুর কারণে, । ‘তার পরিবারের সামর্থ্য ছিলোনা তাকে ভালো করার, । ‘কিন্তু তার পরিবারের সামর্থ্য না থাকলেও এক জনের ছিলো , হ্যাঁ তিথির বাবার সামর্থ্য ছিলো নিলয়ের চিকিৎসা করাবার, আর তিনিই তার চিকিৎসা করিয়েছেন, ।’কিন্তু সেটা কাউকে বলেনি, । ‘কারণ উনিই নিজের মেয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিলো , । ‘কেউ না জানলেও উনি জানেন ওনার মেয়ের এক্সিডেন্ট হয়নি, সেই দিন নিলয়ের সাথে দেখা করতে আসার সময় তার বাবাও এসেছিলো , । ‘আর বাড়িতে ফেরবার সময় তিথি তার বাবার সামনেই নিজেই ইচ্ছে করে গাড়িথেকে ঝাঁপ দিয়েছিল,। ‘নিজের মেয়েটাকে তো উনি বাঁচতে পারেনি তাই তার ভালোবাসা টাকে ভালো করার চেষ্টা করে , আর উনি সফল ও হয়েছে, । ‘কিন্তু নিলয় ভালো হয়ে গেলেও তার অতীত তাকে ভালো থাকতে দেইনা, । ‘অতীত সব সময় তাকে কাঁদাই, ।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত