সাদিয়া আমার প্রেম

সাদিয়া আমার প্রেম

সাদিয়াকে বিয়ের প্রস্তাব দিতেই সাদিয়া নাকের উপর ঠাস ঠুস দুইটা দিয়ে চলে গেলো। একটা করে ঘুষি দিচ্ছিলো, আর আমি ও বাবাগো বলে চিতকার দিচ্ছিলাম। নাক দিয়ে গলগলা রক্ত পড়তে লাগলো। শ্লা মেয়ে না জন সিনার চাচাতো বোন। এতো শক্তি ক্যা শরীরে হ্যা?

সাদিয়াকে আমি খুব পার্সোনাল ভাবেই চিনি। একদম গভীর থেকে। সেই কলেজের প্রথম দিন থেকেই তার সাথে পরিচয়। তার চোখ প্রথম দেখেই তার দিওয়ানা হয়ে গেছিলাম। চোখের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, আহ তার যে কত চাহনি। কত কিছু চাই সে। আমি ওর এসব চাওয়া পূরণ করতে চাই বলে ঠিক করলাম। সে প্রথম দিন থেকে তার পিছু লাগি। পরে একদিন এমন দেখে আমাকে বললো,”এই, তুমি আমার পেছনে কেন আসো? পেছনের কি এমন আছে? আমার সাথে সাথে চলো। ভালো লাগবে।”

আহ কি চাহনি মাইরি। মিয়া খলিফা ফেইল। পরে শুরু হলো আমাদের পথচলা। কখনো পথের মাঝে পার্ক চলে এসেছিলো, কখনো বা লিটনের ফ্ল্যাট। কিন্তু আমাদের ভালোবাসা অটুট রয়েছে। আহ আমি নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করি। একদিন তার ভাইয়ের সাথে আমার প্রচুর মারামারি হয় কোন কারণে। সেদিন ও আমাকে বলেছিলো,

“এই, তুমি ভাইয়াকে কিভাবে মেরেছিলে? আমাকে যেভাবে মারো ওইভাবে? ” আমি তখন লজ্জা পেয়ে বলেছিলাম,

” সবাইকে সব ভাবে মারতে নেই তো জানু। ওইটা শুধু তোমার জন্য। স্পেশাল বাবুতা, যা তোমাকে ছাড়া কাউকেই মারবো না।” সাদিয়া আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বুকে টেনে নিয়েছিলো। সেদিন আমার চোখে জল আসতে গিয়েও আসেনি। সাদিয়া আমাকে এতো ভালোবাসে আমি জানিইনি কখনো। ওর ভাই কে মারলাম, তাও আমার উপর কোন রাগ নেই।

সাদিয়ার সাথে এভাবেই চলছিলো আমার। কত ভালোবাসা, কত প্রেম। কখনো ঝগড়া হয়নি এক মিনিটের জন্যেও। ভালোবাসা দিবসের দিন দেখা হয়নি আমাদের। সাদিয়ার কি জানি ইম্পর্ট্যান্ট কাজ ছিলো। ভালোবাসা দিবসের দিনেও তার ইম্পর্ট্যান্ট কাজ দেখে অনেক খুশি হয়েছিলাম। তার কর্মের প্রতি অসম্ভব টান রয়েছে। তাই আমরা ভালোবাসা দিবস হিসেবে এই একুশে ফেব্রুয়ারি টাই বেছে নিলাম। আজ কে তাকে ভালোবাসা দিবস ভেবেই বিয়ের প্রস্তাব টা দিয়েছিলাম। কিন্তু সাদিয়া আমাকে ঘুষি দিয়ে নাক ফাটিয়ে দিলো। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো এই জীবনে সাদিয়া ছাড়া আমি আর কিছু বুঝিই না। সাদিয়াকে ছাড়া আমি বাচতে পারবো না। সাদিয়া এমন কেন করলো? সাদিয়া এমন করতেই পারে না। আমি ডিপ্রেশনে চেলে গেলাম। দুই মিনিট পর ফিরে এলাম। ফিরে এসে ওর ফ্রেন্ড মিম কে ফোন দিলাম।

” হ্যালো মিম”

” বলেন ভাইয়া। কেমন আছেন?”

“ভালো না রে মিম। আমার জীবন ডা বেদনার হয়ে গেছে রে ” (কানতাছি আর কইতাছি।)

” কেন ভাইয়া? কি হয়েছে?” ” সাদিয়াকে ছাড়া আমি বাচবো না। সাদিয়াকে বিয়ের কথা বলতেই সাদিয়া আমাকে নাক ফাটিয়ে চলে গেছে। এখন আমি কি করবো রে? ” মিম এক মিনিটেই তার রূপ পাল্টে রাবণের রূপ ধারণ করলো। ” হাহাহাহহাহাহাহাহা সাদিয়া কি আপনার একার নাকি? আপনার মনে হয় আর বাচা হবে না ভাইয়া।” “মানে কি বলো এইসব? হ্যা কি বলো? ” আমি মনে হয় নোয়াখালীর ভাষা শুনতাছি।

” হ্যা ভাইয়া, সাদিয়া তো সবার। ও তো কারো একার না। যেদিকেই দেখিবে সাদিয়া নামের ক’জন, যাকেই দেখিবে তাকেই ভাবিবে এলাকার বারোভাতারি সেজন।” মিম এতো সুন্দর কবিতা পারে আগে জানতাম না। ক্রাশ খেলাম আমি।” তুমি অনেক সুন্দর কবিতা পারো তো মিম। তোমার উপর ক্রাশ খেলাম। ” আহা ভাইয়া, চান্স নিয়ে লাভ হবে না। তোমরা ওই বারোভাতারি দের জন্যই, আমাদের জন্য তো অনেক কিউট স্মার্ট ছেলে অপেক্ষা করছে। তাই দ্বিতীয় বার আর আমাকে কল দিবেন না।”

বলেই কেটে দিলো লাইন। এখন আমি সাদিয়াকে ছাড়া কিভাবে থাকবো। কোন উপয় নেই। এখন আমি সুসাইড করমু। বিদায় পৃথিবীর মানুষ। মরার আগে একটা শখ আছে আমার। সাদিয়া আর আমার ভিডিও ভাইরাল কইরা দিমু। আমার মতো যেনো সাদিয়ারও এমন কষ্ট হয়। এমন বারোভাতারি যেনো আর পৃথিবীতে জন্ম না নেই। আমার মতো হাজার ও ছেলের জীবন নিয়ে যেনো না খেলতে পারে এরা। ভিডিও টা ফেবুতে পোস্ট কইরা, দুই চারটা ঘুমের ওষুধ খাইলাম। খাইয়া রানু মন্ডলের গান ছাইড়া, হেডফোন কানে দিয়ে শুয়ে পড়লাম। আর গাইতে লাগলাম সামজ ভাইয়ের সেই গান, “আমি ঘুম ভালোবাসি রে,আমি ঘুম ভালোবাসি রে।”

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত