অসমাপ্ত ভালোবাসার গল্প

অসমাপ্ত ভালোবাসার গল্প

~ আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে ফাহিম। রুপার মুখে তার বিয়ের কথা শুনে বুকটা ছ্যাঁত করে উঠে ফাহিমের। হাতে থাকা চাকরির ফাইলটা ধপাস করে মাটিতে পড়ে যায়। ছল ছল চোঁখে তাকিয়ে ফাহিম বলল

—” মানে! এসব কি বলছো তুমি?
—” হ্যাঁ! আমি ঠিকেই বলছি! বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলছে! দু সাপ্তাহের পর আমার বিয়ে।
—” তুমি কি এ বিয়ে রাজি আছো?
—” আমার কথায় রাজি থাকা না থাকা কি আসে যায়।
—” মানে বুঝাতে চাইছো তুমি এই বিয়েতে রাজি! আমাদের ৪ বছরের সম্পর্ক তুমি এক কথাতেই রাজি হয়ে গেলে!! এভাবে আমাদের সম্পর্কটাকে শেষ করে দিলে??

—” তো আমি করবো ফাহিম বলো! বাবার কাছে বলতে পারছি না আমাদের সম্পর্কের কথা আর কি করে বলবো! সে যোগ্যতা টুকু আছে তোমার। বাবা কি চাইবে তার মেয়েকে একজন বেকার, যার কোনো চাকরি নেই..তার হাতে তুলে দিবে।। ফাহিম মাথা নিচু করে চুপ করে আছে। রুপার কথার আন্সার দেওয়ার মতো কোনো জবাব নেই তার কাছে……..

—” কি হল চুপ হয়ে গেলে যে! বলো আমি এখন কি করবো?
—” বিয়েটা করে নাও রুপা। আমি চাই না আমার জন্য তেমার সুন্দর জীবনটা নষ্ট হয়ে যাক। বাবার কথায় রাজি হয়ে যাও। (নীচের দিকে তাকিয়ে)
—” কি বললে! রাজি হয়ে যেতে মানে! তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না? ৪ বছরের সম্পর্ক এভাবে শেষ করে দিবে।
—” এছাড়া আমার কিছু করার নেই।

রুপা ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। বার বার ফাহিম কে হাত জোর করে মিনতি করছে! এভাবে সম্পর্ক টাকে নষ্ট করে না দিতে। কিছু একটা করতে বলে কিন্তু ফাহিম যে নিরুপায়। ভার্সিটির ব্রিলিয়েন্ট স্টুডেন্ট হওয়া থাকার শর্তেও তার যোগ্যতায় ফাহিম কোনো চাকরি পাচ্ছে না। সব জায়গাতেই মোটা অংকের ঘুষ চায়ছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় ছেলে ফাহিম আর একটা ছোট বোন আছে। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। ফাহিম তিন চারটা টিউশনি পড়ায় বাবা স্কুল টিচার ছিলে এখন রিটায়ার্ড হয়ে বাসার থাকেন। অন্যদিকে রুপা হল ধনী পরিবাবের একমাত্র বাবা মায়ের খুব আদরের মেয়ে সে। ৪ চার বছরের সম্পর্ক সেই ভার্সিটির লাইফ থেকে। আজ রুপা ফোন করে ফাহিম কে বলে বিকেলে নদীর ধারে বটতলায় দেখা করতে । দুজনের খুব পছন্দের জায়গাটা তাদের। বিকেলে ফাহিমের সাথে দেখা হতেই রুপা এই কথা বলে বসে।

ফাহিম দেখে রুপা কাঁদছে। তারও যে খুব কষ্ট হচ্ছে রুপার এমন কান্না দেখে কিন্তু কিছু করার নেই তার কাছে কারণ সে যে বেকার। আর একজন বেকার ছেলের কাছে বড়লোক বাবার মেয়েকে কি করে হাতে তুলে দিবে। রুপার চোখ মুছে দেয় ফাহিম। দুজনার চোঁখে চোঁখ রেখে ফাহিম বলে

—” প্লীজ কান্না করো না! ঠিক আছে কাল সকালে তোমার বাবার সাথে আমি কথা বলবো। এখন প্লীজ কান্না বন্ধ করো! রুপা কান্না বন্ধ করে ফাহিম কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। ফাহিম ও জড়িয়ে ধরে! চোঁখ থেকে দু ফোটা নোনা জল গাল বেয়ে ঝড়ে পরে ফাহিমের।। পরের দিন সকালে,,,,,,, ফাহিম বসে আছে রুপার বাবার সামনে। ড্রয়িংরুমে দরজার কাছে দাড়িয়ে আছে রুপা! চোঁখে তার পানি চিকচিক করছে ভালোবাসার মানুষটি হারাবার ভয়ে। রুপার বাবা বলেন

—” তুমি কি যেনো বলতে চাইছো?
—” আসলে আঙ্কেল মানে বলতে চাইছিলাম যে (প্রচন্ড নার্ভাস ফিল করছে ফাহিম। বার বার কথা মুখে আটকে আসছে)

—” কি মানে মানে করছো! স্পষ্ট করে বল কি বলতে চাইছো?
—” আঙ্কেল, আমি রুপাকে ভালোবাসি। তাকে আমি বিয়ে করতে চাই। (মাথা নীচু করে একদমে বলে ফেলে ফাহিম।
এমন কথা শুনে রুপার বাবা হুংকার দিয়ে বলে
—” তোমার কত বড় সাহস, আমার সামনে আমার মেয়েকে বলো ভালোবাসি। কি যোগ্যতা আছে তোমার? আমার

মেয়ে একদিনের হাত খরচ জানো! আর তুমি তো এমনেতেই বেকার। কি করে ভাবলে আমার মেয়েকে তোমার মতো বেকার ছেলের হাতে তুলে দিবো।। জানো আমার মেয়ের জন্য কত বড় ঘরে ছেলে আসছে সম্মন্ধ করতে আর তুমি কি না আসছো আমার মেয়েকে বিয়ে করতে। বেড়িয়ে যাও আমার বাসা থেকে। ফাহিম তাকিয়ে আছে রুপার দিকে! কি জবাব দিবে রুপার বাবা কে? উনার একটা প্রশ্নের ও জবাব নেই ফাহিমের। রুপা নিজের ওড়না দিয়ে মুখে চেপে ডুঁকরে কেঁদে উঠে। এটা দেখে ফাহিমের একদম সহ্য হচ্ছে না। রুপার বাবার হাত ধরে জোর করে বলে

–” আমাকে ছয় মাস সময় দিন আঙ্কেল। আমি কথা দিচ্ছি ছয় মাসের মধ্যে আমি ঠিক আপনার মেয়ের যোগ্য হয়ে আসবো। প্লীজ আঙ্কেল আমাকে ছয়টা মাস সময় দিন….. করুণ ভাবে চেয়ে তাকে রুপার বাবার দিকে।
কিন্তু রুপার বাবা না করে দেয় তাকে কোনো সময় দিতে পারবে না। একথা শুনে রুপা দৌড়ে এসে তার বাবার পায়ে ধরে আকুতি মিনতি করে মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে রাজি হয়ে যায় তাকে সময় দেয় কিন্তু শর্ত দেয় ছয় মাসের মধ্যে তার মেয়ের যোগ্য হয়ে না আসলে রুপাকে তার পছন্দের ছেলের হাতে তুলে দিবে।

ফাহিম খুশিতে আত্মহারা! রুপার বাবা রাজি হয়েছে তাকে প্রাপ্য সময় টুকু দিয়েছে। অনেক কৃতজ্ঞতা জানায় রুপার বাবার কাছে তাকে সময়টুকু দেওয়ার জন্য। ফাহিম চলে যাওয়ার আগে রুপার অশ্রুমাখা চোঁখ দুটি মুছে দিয়ে বলে

—” আর কাঁদতে হবে না তোমায়, দেখো ঠিক আমি ছয় মাসের মধ্যে তোমার যোগ্য হয়ে আসবো।
—” দোয়া করি আল্লাহ্ তা’আলা যেনো তোমার আমার মনে আসা পূরণ করে দেয়।

সেদিনের পর থেকে রুপার সাথে আর দেখা হয় নি ফাহিমের । কারণ রুপার বাবা নিষেধ করে দিয়েছিল একে অন্যের সাথে দেখা বা কথা বলা টুকু করতে পারবে না।

ফাহিম চাকরি খুজতে লাগল! এক কঠিন জীবন সংগ্রামে নেমে পড়ে ফাহিম, উদ্দেশ্য একটাই তাকে চাকরি পেতে হবে! রুপার যোগ্য তাকে হতে হবে।

এদিকে প্রতিদিন রুপা জায়নামাজে বসে দু হাত তুলে কাঁদে ফাহিমের যেনো চাকরি পেয়ে যায়, তাদের সত্যিকারের ভালোবাসা যেনো পূর্ণতা পায়।

আজ ছয় মাস পূর্ণ হল ফাহিমের। এই ছয় মাসে সত পরিশ্রম কষ্ট সাধনা করে ফাহিম এখন প্রতিষ্টিত। একটা কোম্পানির ম্যানেজার সে।
কোম্পানির থেকে ফ্ল্যাট, গাড়ি সব দিয়েছে! টাকা পয়সার কোনো অভাব নেই তার।

আজ নিজের গাড়িতে বসে যাচ্ছে রুপাদের বাসায়। খুব দেখতে ইচ্ছে করছে রুপাকে । পাগলি টা তাকে একটা দিনে না দেখে থাকতে পারতো আর আজ ছয় মাস তাকে না দেখে অপেক্ষা করছে তার জন্য। শুধুমাত্র তাদের ভালোবাসার সম্পর্কটাকে পূর্ণতা পাওয়ার জন্য।

ফাহিম পৌঁছে গেছে রুপাদের বাসায়। গাড়ি থেকে নেমে দেখে রুপাদের বাড়িটা বিয়ের সাঁজে সাজানো হয়েছে। কার বিয়ে আজ..রুপার নয়তো?? বুকটা ছ্যাঁত করে উঠে ফাহিমের। চিনচিন করে বুকের বা পাশে ব্যাথা করতে শুরু করে দেয়। বাসার গেইটে ফাহিম ঢুকতেই চমকে দাঁড়ায়। সামনে তাকিয়ে দেখে নব বধূ সেঁজে গাড়ির দিকে এগিয়ে আসছে রুপা পাশে বর দাঁড়িয়ে। এটা দেখে ফাহিমের সাঁজানো স্বপ্নের পৃথিবীটা মুহূর্তেই ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। বৃষ্টির ফোটার মতো ঝড়ে পড়ছে চোঁখের জল।

ফাহিম কে দেখে রুপা থমকে দাঁড়ায়। তারও চোঁখ দিয়ে বেড়িয়ে আসে নোনা জল। চিৎকার করে বলছে চাইছে – আমি পারেনি ফাহিম জীবন সংগ্রামে ঠিকে থাকতে! পারেনি তোমার জন্য অপেক্ষা করতে! খুব কান্নাকাটি করে বলে ছিলাম বাবা কে তুমি আসবে কিন্তু যখন তুমি এলে তখন আমি অন্য কারো হয়ে গেলাম। রুপা একটি বার তার ভালোবাসার মানুষটাকে জড়িয়ে ধরে বলতে পারলো না – আমাকে ক্ষমা করে দিও ! চলে নিয়ে যায় রুপাকে বহুদূর কোনো দূর শহরে

সেদিন রুপাকে হারিয়ে ফেলায় সহ্য করতে পারেনি ফাহিম। মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পরে। রুপার জন্য পাগল হয়ে যায় ফাহিম। দীর্ঘ এক বছর পর মেন্টেল হসপিটাল থেকে ফিরে ফাহিম। প্রতিদিন মাঝ রাতে ফাহিমের ঘুম ভেঙ্গে গিয়ে নিঃশব্দে কান্না করে রুপার ছবিটা বুকে নিয়ে………

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত