কানামাছি

কানামাছি

শীতের সকাল। আমি চোখটা মেলে শুয়ে আছি। ঘুমটা ভেঙে গেছে অনেক আগেই। কিন্তু বিছানার উষ্নতা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করছে না। ড্রেসিং টেবিলটার দিকে তাকিয়ে দেখি নিলীমা ভেজা চুল আছড়াচ্ছে।

– এই নিলীমা এই উহু উহু
– বাচ্চাদের মত উহু উহু করতেছো কেন? বিম্রতি ধরছে? (নিলীমা)
– হুম। একটু উষ্ণতা দিবা?
– কিসের উষ্ণতা মিঃ নিলয় সাহেব?
– তুমি কি কিছুই বুঝনা ? আমি যে প্রেমকুমার। প্রেমের উষ্ণতা খুজঁছি। তোমার রুপের ঝলকে আমি শিক্ত।
– তো এখন কি করতে হবে আমায় ? মিঃ নিলয় সাহেব?
– তেমন কিছু না তোমার লাজুক ঠোটে আমার শুকনো ঠোটে একটি মিষ্টি চুমু দিলেই হবে।
– আমার চুমুতে মিষ্টি নেই। আছে শুধু আগুন।
– ওই আগুনটাই এখন দরকার। দেখতেছো না আমি এই শীতে কাপতেছি। দাও না একটু আগুন। আমার শরীরে কাপুনি উঠেছে। তোমার উষ্ঞতায় আমি গরম হতে চাই
– না পারব না । যাও তো এখন, অনেক কাজ আছে।

এই বলে নিলীমা সোজা হাটতে লাগল। আমি হাবার মত চেয়ে আছি। কি হয় একটু গরম ধার দিলে? এই শীতে কি বউ ছাড়া চলা যায় নাকি? ধুরর বোঝে না একটুও..

নিলীমার সাথে আমার পরিচয় হয় দুই বছর আগে। মেয়েটা দেখতে একে বারে পুষ্পের মত। আমি যে এলাকায় থাকি তখন ও নতুন এসেছিল। ওর একটা ছোট ভাই আছে মানে আমার সালা। ওদের ফ্যামিলির সংখ্যা চারজন।

ওরা যে বিল্ডিং এ থাকে ওই বিল্ডিং এর ছাদ থেকে আমাদের ছাদে লাফ দিয়ে আসা যায়। একদিন ছাদে উঠে দেখি নিলীমা কানামাছি খেলছে তার ভাইয়ের সাথে। আমি ভ্যাবলার মত তাকিয়ে থাকলাম।

একথায় মেয়েটার উপর ক্রাস খাই। নিলীমার চেহারা যখন নয়নে ভেসে উঠত তখন নিজে নিজেই হাবলার মত খিলখিলিয়ে হাসতাম। তো ক্রাস খেলে তো চলবে না ওকে প্রেমের ঝাল দিয়ে ধরতে হবে। মানে পটাতে হবে।

কতবার কথাবলার চেষ্টা করেছি কিন্তু কোন পাত্তাই দেয় না। ওর ছোট ভাইকে মিষ্টি কথা বলে আদর করে চকলেট দিয়ে ওর ফোন নং সংগ্রহ করলাম। কিন্তু ফোন দেয়ার মত কোনো সাহসই পেতাম না। সুন্দর চেহারার মাঝে কেমন যেন রাগি রাগি ভাব দেখা যায়। তাই এতদিন ভয়ে আর কিছু বলি নি। একদিন ফাইজলামি করে ফোন দিয়ে বলি

– কিরে দোস্ত আক্কাস কেমন আছিস? (আমি)
– এখানে আক্কাস বলতে কেউ থাকে না। আপনি ভূল নাম্বারে ডায়াল করেছেন। (নিলীমা)
– ওই তুই আমার সাথে ফাইজলামি মারোস ? আর তোর কণ্ঠ মেয়েদের মত হইলো কেমনে?
– দেখুন আমি আক্কাস নই। এটা রং নাম্বার। যত্তসব। টুট টুট টুট।

তারপর আবার ফোন করলে ফোন অফ পাই। কিন্তু মাঝে মাঝে কখনো ফোন করে ওর কণ্ঠটা শোনার চেষ্টা করতাম। একদিন ধরা খেয়ে যাই। কিন্ত নিলীমা কিছু বলে নি।

তিন মাস ওর পিছন ঘুরাঘুরি করলাম তেমন কোন সফলতার গ্রান পেলাম না। মনে মনে ভাবলাম শুধুই শুধুই টাইম নষ্ট করতেছি। ও তো আমায় ভালোবাসে না তাহলে আমি কেন ওর পিছন পিছন ঘুরাঘুরি করতেছি। কোনো পাত্তায় পেতাম না। দুর থেকে দেখে যেতাম। আমার দিকে ফিরেও তাকায় না। কিছু বলতে গেলে না শুনেই চলে যায়। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম শেষ বারের মত একটা চেষ্টা করে দেখি।

সন্ধ্যার আগে, ছাদে উঠলাম। পড়ন্ত বিকেলও বলা চলে। সূর্য টা অস্তি যাচ্ছে। লাল রঙা সূর্য আর মৃদু বাতাস উপভোগ করতে বেশ লাগছে। বিশেষ করে আজো নিলীমা কানামাছি খেলছে। আমি চুপ করে দাড়িয়ে দেখছি। হুট করেই
আমাদের ছাদ থেকে ওদের ছাদে লাফ দিয়ে গিয়ে ওর সামনে গেলাম। ভুল করে আমাকে ধরে বললো..

– এইবার তোকে ধরেছি। এখন তোর চোখ বাধবো।
– আমাকে এভাবেই ধরে রাখুন। যেন কখনও চলে না যায়।

আমার কথা শুনে চোখ থেকে বাধন খুলে চমকে উঠে আমাকে দেখে।
– আপনি?
-……..
– আপনি এখানে কেনো?

আমি চুপ করে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছি। নিলীমা কিছু বলতে যাবে, তার আগেই বললাম..

– দেখো পথের একদম শেষ প্রান্তে পৌছে গেছি। কাল থেকে হয়ত তোমার ওই মিষ্টি হাসির দর্শন না ও দেখতে পারি। নিরবে স্মৃতির দরজা একটার পর একটা খুলেছি। সেই চেনা মুহুর্তগুলো আকড়ে ধরে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি।
তোমার এই চাঁদবদনখানি আমার স্বপ্নে উজ্জল নক্ষত্র হয়ে আমার বক্ষে পদ্ম ফুলের মত ফুটে উঠে। আর সেই ফুলের শুভাস আমার শরীরে শিরায় শিরায় মিশিয়ে নেই। কারন তোমায় ভালোবাসি। হ্যাঁ বড় ভালোবাসি। জানিনা তুমি কি বলবে, হয়ত আমার বলার পর তুমি কি করবে। তবে আমি আমার মনের স্তব্দ অবহমান কথাগুলো আজ বলে দিলাম। তুমি সুন্দর, তোমাকে অনেক ছেলেই ভালোবাসতে পারে। সে তুলনায় হয়ত আমি কিছুই না। তবে তোমাকে বড্ড ভালোবাসি নিলীমা। তোমার কানামাছি খেলা হয়ত আর দেখাও হবে না। ভালো থেকো..।

এই বলে চলে আসলাম। ভাবলাম ও পিছন থেকে ডাক দিবে কিন্তু দেই নি। আসতে আসতে হেটে বাসায় এসে নিরবে চোখ দিয়ে বেদনার অশ্রু বেয়ে পড়ল। আর ওর সামনে যাইনি। ওকে ভুলে থাকার চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু পাশাপাশি বিল্ডিং থাকি বিধায় কয়েকদিন পরপর দেখা হত। কিন্তু আমি না দেখার ভান করে চলে আসতাম। আর ছাদে ও যেতাম না।

ঠিক ২০ কি ২২ দিনের মাথায় নিলীমা আমাদের বাসায় হাজির তার ভাইকে নিয়ে।
আমি হতবাগ হয়ে যাই। ভাবলাম আম্মুর কাছে নালিশ দিবে। কিন্তু দেই নি।

– আসসালামু আলাইকুম আন্টি আমি নিলীমা। আর ও আমার ভাই রাফি। আপনার পাশের বিল্ডিং এ থাকি। কয়েক মাস হয়েছে এসেছি ভাবলাম আপনার সাথে পরিচয় হই।

এই কথা সেই কথা বলে প্রায় একঘন্টার মত সময় কাটালো আমাদের বাসায়।
এর পরের দিন বিকেল বেলায় রুমে শুয়ে গান শুনছি। তখনি ফোন বেজে ওঠে। নাম্বার টা দেখে অবাক হলাম। ফোন রিসিভ করলামম,,অপর পাশ থেকে বলে

– তোমার সাথে কিছু কথা আছে তুমি কি ছাদে আসতে পারবে?
– নিরব কণ্ঠে বললাম আসতেছি।

অতপর ছাদে গেলাম। ছাদে যেতে না যেতেই আমাকে ইচ্ছে মত বকা দিল। আমার দাতঁ ফালায় দিবে থাপ্পর মেরে হাবিজাবি। আমি চুপ করে দাড়িয়ে বকাগুলো শুনলাম। রাগি ভাবটার মাঝেও যে মাদকতা লুকিয়ে থাকে তা কেবল কাছের মানুষটাই বুঝতে পারে। কিন্তু সে কেনো আমাকে বকা দিচ্ছে? আমি বললাম..

– দেখো নিলীমা আমি তোমাকে আগে ভালোবাসতাম কিন্তু ভালোবাসি না। তাছাড়া একাতরফা ভালোবেসে যাওয়াকে ভালোবাসা বলে না।
– বললেই হইলো ভালোবাসি না। গতকাল তোমাদের বাসায় গিয়েছিলাম তুমি একটি বারো আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করো নি। আর যদি ভালো নাই বা বাসো তাহলে এই স্বপ্ন দেখিয়েছিলে কেন? আমি তোমাকে ভালোবাসে ফেলছি।

তারপর দুজনেই নিরবতা পালন করছি। কখন যে নিলীমা আমার বুকে তার মাথাটি গুজে দিল তার অস্তিত্ব একটু পর টের পেলাম। সেদিন সারা বিকেলটা ছাদে দাড়িয়ে সূর্য অস্ত দেখেছি।

।।

ওমা আপনাদের কিচ্ছা কাহিনী শুনাইতেছি কি জন্য এদিকে আমার নিলীমা চলে যাচ্ছে। হুটট করে দৌড়ে ওর কাছে গেলাম। বা হাত ধরে বললাম..

– আরে পাগলি কোথায় যাচ্ছো ?
– জানি না, যে দেখি দুচোখ যায় সেদিখে যাব। আমার আজ জন্ম দিন এটা তোমার মনে আছে?
– ওমা থাকবে না কেন? আমার পরীকে আলোতে বসিয়ে সাজাঁব দুষ্টু মিষ্টি দিয়ে। যত আলো রং আছে তোমার চোখের সম্মুখে এনে চুমুর সংমিশ্রনে জড়িয়ে নিব আমার আলিঙ্গনে। আমার স্বপ্ন জুড়ে যে তোমার মিষ্টি চেহারা। তোমার রাগি মুখটা যে আমার ভাবনায় প্রতিনিয়ত মাদকতার যুদ্ধ করে চলে। তোমার কালো কেশের গন্ধ আমাকে সবসময় মাতাল করে দেয়। কি চাও তুমি বলো?

নিলীমা আমার দিকে খানিক্ষন তাকিয়ে রইল। আমি মাথাটা আরেকটু আগিয়ে নিয়ে নিলীমার দিকে তাকালাম। সে বললো..

– আমি কিছু চাই না। শুধু চাই তোমার ভালোবাসা। যে ভালোবাসায় সারাজীবন সিক্ত থাকব। তোমার নয়নে নয়ন রেখে রং ছড়াব। ভালোবাসি নিলয় তোমায় অনেক অনেক ভালোবাসি। চুমু নিবে না?

নিলীমা লাজুক হেসে আমার দিকে তাকিয়ে শেষের কথাটি বললো..
নিলীমা আমার পায়ের উপর পা দিয়ে দাড়িয়ে আমার চোখের দিকে তাকালো। কখন যে ঠোটের উষ্নতা ছড়িয়ে পড়লো আমার মাঝে বুঝতেই পারলাম না।

………………………………….(সমাপ্ত)……………………………………

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত