আমার ভ্যালেন্টাইন্স ডে

আমার ভ্যালেন্টাইন্স ডে

-আচ্ছা মামা!এই আন্টির ফটোই তো তোমার ল্যাপটপে জান নাম দিয়ে সেইভ করা আছে।তাই না?

বিকেলে আমার ভাগ্নে অন্তুকে নিয়ে একটু শপিং করতে এসেছিলাম।আর সেখানে গিয়ে কাকতালীয় ভাবে মিলির সাথে দেখা হয়ে গেলো।আসলে ব্যপারটা যে কাকতালীয় তাও না!আমি আগে থেকেই জানতাম মিলি আজকে এখানে শপিং করতে আসবে।তাই অন্তুর শপিং এর নাম করে এখানে এসেছিলাম।যেমন পরিকল্পনা নিয়ে এসেছিলাম তেমনটাই হলো।মিলির সাথে দেখা হয়ে গেলো।দেখা হওয়ার পর এমন ভান করতে লাগলাম যেন আসলেই কাকতালীয় ভাবে দেখা হয়ে গেছে।কিন্তু তখনই আমার ভাগ্নে এই বেফাঁস কথাটা বলে ফেললো।মিলি অন্তুর কথা শুনে আমার দিকে কেমন যেন ভুরু কুচকে তাকালো।আর আমি অন্তুকে তখনো চোঁখের ইশারায় থামানোর চেষ্টা করছি।কিন্তু অন্তু একবার কথা বলতে শুরু করলে তাকে থামায় এটা কার সাধ্যি!অন্তু বলে চললো,

-জানো আন্টি মামার ল্যাপটপে তোমার হাজারখানেকের ওপর ছবি দেখেছি।অনেক সুন্দর সুন্দর ছবি। হায়রে হায়!এই পাজি ছেলে আমার ল্যাপটপ কবে ঘেটেছে!আমার ল্যাপটপ বাসায় কারো ছোয়াও তো বারণ।কিন্তু এতো দেখি রিতীমত সব ছবিও দেখে ফেলেছে।অন্তুর সাথে আমার সম্পর্ক সবসময়ই ফ্রেন্ডলি।আর এটা বোধহয় এই বেশি ফ্রেন্ডলি হওয়ারই সাইড ইফেক্ট।অন্তুর বাচ্চা আজকে তোরে খাইছি।মিলি বললো,

-তাই নাকি?
-হ্যাঁ আন্টি। এবার মিলি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-আচ্ছা হৃদয় সাহেব!এখন যাই।কাল অফিসে কথা হবে।

মিলি এটা বলেই আর এক মুহুর্তও দেরি না করে সেখান থেকে চলে গেলো।মিলি রাগ করলো নাকি?অবশ্য রাগ করারই কথা।একজনকে না জানিয়ে তার ছবি তোলা অবশ্যই অন্যায়।বিশেষ করে সে যদি মেয়ে হয়।সব দোষ এই পিচ্চি শয়তানটার।আমি শুধু অন্তুর দিকে একটু কটমট করে তাকালাম।কিন্তু ওকে ধমক দেওয়ার সাহস আমার নাই।কারণ ও যেহেতু আমার ল্যাপটপ ঘেটেছে তাই ও আমার অনেক সিক্রেট জানে।আর ও যদি এগুলা গিয়ে আপার কাছে বলে দেয় তাহলে তো আমার খবরই আছে। অন্তু এবার ক্লাস নাইনে উঠেছে।কিন্তু ওর আচরণে মনে হয় ও ইউনিভার্সিটিতে পড়ে।সবসময় ওর হাতে দুইটা ফোন থাকবেই।আর সেগুলা ও টিপতেই আছে।আমি এতোবড়ো হয়ে গেলাম আমার এ পর্যন্ত একটা গার্লফ্রেন্ড হলো না।কিন্তু এই বয়সেই ওর নাকি ৩ টা গার্লফ্রেন্ড।এটা আমি ওর এক বন্ধুর কাছে থেকে শুনেছিলাম।তা অন্তুকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাস করতেই ও বললো,

-জেনে যখন গিয়েছো তখন লুকানোর আর কিছু নাই।কিন্তু মামা বলে রাখি এর ভেতর সাদিয়া আর মিমি আমার রিয়েল লাভ।ওদের দুইজনকে আমি আমার প্রাণের থেকেও বেশি ভালবাসি।আর মারিয়া আমার জাস্টফ্রেন্ড।
ওরে বাবা এইটুকু ছেলে আবার জাস্টফ্রেন্ডও বোঝে!।বুঝতেই পারে।কিন্তু সমস্যা হলো একটা মানুষের রিয়েল লাভ দুইটা কিভাবে হতে পারে?আমার সেটাই বুঝ আসলো না!অবশ্য ডিজিটাল যুগের পোলাপান ওরা!একসাথে দুইজনের সাথে রিয়েল লাভ হতেই পারে। মিলি চলে যাওয়ার পরে আমি অন্তুকে বললাম,

-এটা তুই কি করলি?
-কি করলাম মানে?তোমার উপকারই তো করলাম।
-মানে?আমাকে এভাবে বাঁশ দেওয়ার পরে বলছিস আমার উপকার করেছিস তুই?
-আরে মামা আমিতো তোমাকে চিনি!তুমি আস্ত একটা ভীতুর ডিম।তুমি মিলি আন্টিকে জীবনেও প্রপোজ করতে পারতে না।তাই আজকে মিলি আন্টিকে দেখেই আমার প্ল্যানটা মাথায় এলো। আমি বললাম,

-তুই আমার ল্যাপটপে হাত দিয়েছিস কেন?
-আরে মামা তুমি জানোনা!নিষিদ্ধ জিনিসের উপর আমার আগ্রহ বেশি।তুমি মানা করেছো তাই বেশি করে ঘেটেছি।
-ফাজিল একটা।আচ্ছা এখন মিলি যদি কাল অফিসে আমাকে অপমান করে!
-আরে মামা করবে না।উনার মুখ দেখেই বুঝছি উনি মনে হয় আগে থেকেই জানতো যে তুমি ওনাকে পছন্দ করো।
আমি বললাম,

-হ্যাঁ তুই তো হয়েছিস পণ্ডিত।মনে হচ্ছে সব জানিস তুই। অন্তু হেসে বললো,
-মামা!আমি কিন্তু প্রেমের দিক দিয়ে তোমার থেকে সিনিয়র।তুমি এখনো প্রেম করতে পারো নাই।আর আমি তিনটা প্রেম করি অলরেডি। হায়রে হায়!এই ছেলে বলে কি!অবশ্য অন্তু কথাটা মিথ্যাও বলেও নাই।অন্তুই আবার বললো,

-মামা চান্স যেহেতু একটা পেয়েছো তাহলে কালকেই তোমার মনের কথা কিন্তু উনাকে খুলে বলো।সামনে ভ্যালেন্টাইন্স ডে আসছে।তাই কাল মিলি আন্টিকে যদি প্রপোজ করতে পারো তাহলে এবার অন্যসব কাপলদের দিকে তাকিয়ে আর দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হবে না।এবার তুমিও আরসব কাপলদের মতো মিলি আন্টির সাথে তোমার ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালন করতে পারবে।

নাহ!অন্তু মানুষ ছোট হলেও বুদ্ধিটা কিন্তু খারাপ দেয় নাই।কাল অফিসে যাই আগে।দেখা যাক কি হয়! মিলি আর আমি এই অফিসে একসাথেই যোগ দিয়েছিলাম।ওর আর আমার ডিপার্টমেন্টও ছিলো একই।তাই কাজের জন্য আমাদের সবসময়ই টুকাটাক কথা হতো।আর সেখান থেকেই আমার মিলির প্রতি ভালোলাগার শুরু।আমি অবশ্য মিলিকে এই কথাটা এখনও জানাতে পারি নাই।কারণ ছোটবেলা থেকেই আমি বেশ লাজুক প্রকৃতির।কিন্তু আজকে অন্তুর কারণে যেহেতু একটা সুযোগ চলেই এসেছে তাহলে সেটা আজ কাজে লাগাবো।আর কতোদিন লুকিয়ে লুকিয়ে মিলির ছবি তুলে ল্যপটপের স্টোরেজ বুক করবো।এবার আমার মিলিকেই চাই।আজকেই আমি ওকে প্রপোজ করবোই করবো।

মিলি অফিসে এলো আমি আসার আরো ১৫ মিনিট পরে।প্রতিদিনের মতো আবারও ওকে দেখে আমি ক্রাশ খেলাম।মিলির সাথে শুধু একবার চোখাচোখি হলো।কিন্তু কোন কথা হলো না।কথা হলো একদম লাঞ্চ আওয়ারের সময়। লাঞ্চ আওয়ারের সময় হয়ে গেছে।ততোক্ষণে অফিসের সবাই ক্যান্টিনে চলে গেছে।অফিস প্রায় ফাঁকা।আমি ভাবছি কি করবো!মিলি এখনো ওর কেবিনে আছে।ওকে ডাকতে যাবো নাকি?এসবই ভাবছি আমার কেবিনে বসে।এমন সময় দেখি মিলিই আমার কেবিনে হাজির।ওর হাতে একটা বিশাল টিফিন ক্যারিয়ার।আমাকে বললো,

-আসলে প্রতিদিনই বাইরের খাবার খাওয়া হয়তো।তাই ভাবলাম আজকে বাড়ির খাবার খাই। এটা বলেই ও আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে খাবার বেড়ে দিতে লাগলো।আমার তখন মনে হচ্ছিলো আমার বৌ আমার পাতে খাবার বেড়ে দিচ্ছে।আহ!অপূর্ব এক অনুভূতি সেটা।খাওয়ার সময় আমরা টুকটাক কথা বলছিলাম।রান্না বেশ ভালো হয়েছে।আমি মিলিকে জিজ্ঞাস করলাম,

-রান্না কে করেছে? মিলি বললো,
-আমি।কেন ভালো হয়নাই?
-আরে না।জোশ হয়েছে।আপনি যে এতো ভালো রান্না করতে পারেন তাতো জানতামই না।

আমার কথার প্রতিউত্তরে মিলি শুধু একটু হাসলো।খাওয়া শেষ করে যখন হাতমুখ ধুয়ে উঠলাম তখনোই মিলি আমাকে মোক্ষম প্রশ্নটা করলো।

-আচ্ছা আপনি কি আমাকে পছন্দ করেন? মিলি যে আমাকে এই প্রশ্নটা একদম সরাসরি করতে পারে তা আমি ভাবতেও পারি নাই।তাই ওর প্রশ্নটা শুনে একটু হকচকিয়ে গেলাম।কি বলবো সঠিক বুঝতে পারছিলাম না।আমার চুপ থাকা দেখে ও আবার বললো,

-কি ব্যপার চুপ করে আছেন কেন?বলেন? আমার এবার অন্তুর কথা মনে হলো।ও তো বলেছিলো আজকেই প্রপোজ করার সেরা সুযোগ।আমিও ভাবলাম,দেখিই না একবার ওর বুদ্ধি শুনে কি হয়!আমি সরাসরি ওর চোঁখের দিকে তাকিয়ে বললাম,

-হ্যাঁ।আমি তোমাকে পছন্দ করি।সেই শুরু থেকেই।আমি ছোটবেলা থেকে যেমন মেয়ের স্বপ্ন দেখে এসেছি তুমি ঠিক তেমনই একটা মেয়ে।তাই তোমাকে আমি পছন্দ করি বললে ভুল হবে।আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
আমি যে কখন ওকে তুমি করে বলা শুরু করেছি তা আমি নিজেও জানি না।ও আমার জবাব শুনে আর কোন কথা না বলে টিফিন ক্যারিয়ার গোছাতে লাগলো।আমিও অপেক্ষা করতে লাগলাম ওর উত্তরের জন্য।টিফিন ক্যারিয়ার গোছানো শেষ হলে মিলি বললো,

-চুরি করে ছবি তোলা আমার পছন্দ না।এখন থেকে ছবি লাগলে আমাকে বলবে আমি স্বেচ্ছায় ছবি তুলতে দেবো।ঠিক আছে? আমি খেয়াল করে দেখলাম মিলিও আমাকে তুমি করে ডাকছে।আমি বললাম,

-ঠিক আছে।তোমাকেই যদি পেয়ে যাই তাহলে আমার ছবির আর কি দরকার?কিন্তু উত্তরটা।
-আমার মনে হয় তুমি উত্তরটা পেয়ে গেছো।

এটা বলেই ও ওর কেবিনের দিকে প্রায় দৌড়েই চলে গেলো।তারমানে কি মিলি আমার প্রপোজে রাজী?অন্তুর থেকে ফোন দিয়ে শুনি।দেখি ও কি বলে?আমি অন্তুকে ফোন দিয়ে সব কথা জানালাম।অন্তু আমার কথা শুনে বললো,

-আরে মামা তুমি তো দেখছি আস্ত একটা গাধা।রাজিই যদি না হতো তাহলে মিলি আন্টি কি হঠাৎ করে তোমাকে আপনি ছেড়ে তুমি করে ডাকতো নাকি?আবার ফটো তোলার পারমিশন দিতো নাকি?
-তারমানে তুই বলতে চাচ্ছিস মিলি আমার প্রপোজে রাজি!
-১০০%

আমি আর কিছু না বলে ফোন কেটে দিলাম।আমার যা কনফিউশান ছিলো তা দূর হয়ে গেছে।আহা!তারমানে এই চমৎকার মেয়েটা আজকে থেকে আমার।ভাবতেই মনটা খুশিতে ভরে উঠলো।আমি তখনোই আমার ভাগ্নে অন্তু আর তার তিনটা গার্লফ্রেন্ড থুক্কু ২টা গার্লফ্রেন্ড আর একটা জাস্টফ্রেন্ডের নামে গিফট মানত করে দিলাম।ওর জন্যই তো আজ এতোকিছু সম্ভব হলো।আমিও এবার আমার ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালন করবো।এবার অন্য কাপলদের দিকে তাকিয়ে আমার বুক চিরে আর দীর্ঘশ্বাস বের হবে না।বরং আমাদের দুইজনকে দেখেই এখন অন্য অনেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলবে।আহা!আমার জীবনেও তাহলে আমার সেই প্রতিক্ষিত ভ্যালেন্টাইন্স ডে আসতে চলেছে।যার জন্য আমি এতোবছর ধরে অপেক্ষা করে আছি।এবারের ভ্যালেন্টাইন্স ডে হবে আমার।শুধুই আমার।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত