সকালে ঘুমিয়ে আছি হঠাৎ বৃষ্টির পানির মতো কয়েক ফোটা পানি এসে আমার চোখ মুখে এসে পড়ল।সর্বনাশ!আমাদের বাসার সাদ ফুটা হয়ে গেলো নাকি?ভাবতেই চোখের পাতা মেলিয়ে দেখি,আমার এক মাত্র সুন্দরী বধূ সুকন্যা।গোসল করে এসে,তার ভেজা চুলের পানি আমার চোখঁমুখে ছিটিয়ে দিচ্ছে।ভেজা,লম্বা কালো চুলের নুয়ে পড়া পানিতে তার পিঠের শাড়ী ভিজে গেছে।আমার হা হয়ে তাকানো দেখে,সুকন্যা বললো,এই যে সাহেব অমন করে তাকিয়ে কি দেখছো শুনি?আমি তার ডান “হাত” বালিসে রেখে হাতের উপর মাথা রেখে ঘুমঘুম কন্ঠে বললাম,”জানু তোমার ঐ ঘন কালো চুলে আমি পাগল হয়ে যাই,কখনো ডালে,কখনো ভাতে,কখনো সবজিতে খুজে পাই”।ঐ কি বললে তুমি? আমার মাথার চুল ডালে,ভাতে,সবজিতে পাও? দারাও দেখাচ্ছি মজা বলেই আমার মাথার নিচে তার হাতটা দ্রুত টান দিয়ে টেবিলে রাখা,পানিতে ভরা জগের দিকে এগুতে লাগলো।
আমি ১০ নম্বর বিপদ সংকেতের পূর্বআভাস পেয়ে খাট থেকে দ্রুত নেমে ওয়াশরুমের দিকে দৌড় দিলাম।এবার ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে হতে আমার পরিচয় পর্বটা দেওয়া যাক(আমি আবির,আর আমার একমাত্র সুন্দরী বধূর নাম অলরেডি আপনারা জেনেগেছেন,আর আমাদের গ্রামে-মা,ভাইয়া-ভাবি ও ছোটো বোন মিলি থাকে,ভাইয়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক,আমি ঢাকায় এক কোম্পানিতে বেশ বড় পদে চাকরি করি) ফ্রেশ হয়ে এসে অবাক হয়ে গেলাম।সুকন্যা আমার সামনে দাড়িয়ে আছে।ভিশন সাজগোছ।পড়নে নীল শাড়ী,কাজল কালো চোখ,কপালে ছোট্ট নীল টিপ,মাথায় ঘন লম্বা কালো চুল কমর পযন্ত নেমে এসেছে।চুল থেকে আসা ঘ্রান আমার নেশা ধরিয়ে দিচ্ছে।আমার তাকানো দেখে বললো,অমন করে কি দেখছো শুনি। আমি কথা অন্য দিকে ঘোরানোর জন্য বললাম,
—কোথাও বের হচ্ছো নাকি?(জানি পাগলীটা আমাকে ছারা কোথাও বের হয় না)
—কোথায় যাচ্ছি মানে? তোমাকে আজ অফিস থেকে ছুটি নিতে বলেছিলাম।আজকে আমাদের ঘুরতে যাওয়ার কথা না?( চোখ মুখে রাগের ছাপ ফুটিয়ে উঠেছে)
— সরী জানু,তোমাকে বলতে ভুলে গেছিলাম।কাল রাতে অফিস থেকে ফোন এসেছিলো”একটা আর্জেন্ট মিটিং এ আমাকে উপস্থিত থাকতে হবে”।মিটিং এ আমি অনুপস্থিত থাকলে কোম্পানির বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে।
আমার কথা শুনে সুকন্যার চোখে পানি টলমল করছে।আমাকে বুঝতে না দিয়ে পিছনে ঘুরে চোখের পানি মুছে বললো,টেবিলে বসো নাস্তা দিচ্ছি। টেবিলে বসে নাস্ত খাচ্ছি,সুকন্যা আমার পাশে দারিয়ে প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছে।বললাম..
–তুমি খাবে না?
_তুমি খাও,আমার ক্ষুধা নেই।
সুকন্যাকে রাগিয়ে দেওয়া জন্য বললাম আমার আসতে একটু লেট হবে।অফিসের মিটিং শেষে, আমার কলিগ মিস মেঘার জন্মদিনের পার্টী তে যাবো।আড়চোখে তাকিয়ে দেখি সুকন্যার চোখের জ্বল টুপ করে গড়িয়ে পারলো। সঙ্গে সঙ্গে চোখের পানি শাড়ির আচল দিয়ে মুছে ফেললো।আমি না দেখার ভান করে,তারাতাড়ি খাওয়া শেষ করে অফিসে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পরলাম।কারন আর কিছুক্ষন থাকলে,তার চোখে পানি দেখলে নিজের উপর কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলবো।
আসলে আজ আমার অফিসে কোন মিটিং নেই,বরং এক সপ্তাহের ছুটি নিয়েছি।আজ আমাদের বিয়ের দুই বছর পর প্রথম বিবাহ বার্ষিকী।আজ ২৯ শে ফেব্রুয়ারি,প্রতি চার বছর পর এই দিনটা আসে।সুকন্যা ভেবেছে আমাদের বিবাহবার্ষিকীর কথা ভূলে গেছি।তাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই এমনটা করেছি।পাগলীটা আমার উপর অভিমান করে সারা দিন কান্নাকাটি করে, শেষে ঘুমিয়ে পরবে।মা ও ভাইয়া-ভবি ও মিলি অনেক আগেই গ্রাম থেকে রওনা দিয়েছে, আর জয় (সুকন্যার ছোট্ট ভাই) আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ির সাথে কথা বলে জানতে পারলাম তারা প্রায় চলে এসেছে।গেটের দারোয়ান কে বলে এসেছি সবাই এলে পিছনের দরজা দিয়ে দিয়ে যেনো ভিতরে যায়।পকেট থেকে ফোনটা বের করে আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড আশিক কে ফোন করলাম।
–কি রে কোথায় তুই?তোকে না আসতে বললাম?
–আর বলিস না দোস্ত,কেয়া(আশিকের বউ) জন্য দেরি হচ্ছে,সেই কখন থেকে বসে আছি।কিন্তু ওর সাজুগুজু শেষ হচ্ছে না।
–ওকে আমি ওয়েট করছি তোরা তারাতারি আয়।
আশিক আর কেয়া আর আমি এক সাথেই কলেজ এ পড়াশুনা করেছি।প্রেমের বিয়ে দুজনের। একটু পর দু’জন চলে এলো।আমরা ৩ জন শপিংমলে গিয়ে কেনাকাটায় ব্যাস্ত হয়ে গেলাম।দেখলাম কেয়া আশিক কে কি যেনো বলতেই ,আশিক মোবাইল কাকে যেনো রিং দিয়ে বলতো লাগলো…
-হ্যালো ভাবি কেমন আছেন।শুভবিবাহ বার্ষকী।
–(উপর প্রান্তে কি বলছে আমি শুনতে পাই নি)
–ভাবি আশিক কে দেখলাম,ওর কলিগ মিস মেঘার সাথে রেষ্টুরেন্ট এ বসে আছ। ফোন কেটে দিয়ে হারামি দুই জন আমার দিকে দাঁত বের করে হাসছে।আমার বুঝতে বাকি রইলো না যে সুকন্যার কাছে ফোন দিয়েছিলো।
_ আব্বে হালা এইটা কি করলি তুই।এখন মনেহয় সুকন্যা রাগে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে,বাসার জিনিসপত্র ভেঙ্গে চুরমার করে দেবে। ফোন বাজছে রিসিভ করতেই মিলি বললো,
–ভাইয়া আমরা সবাই চলে এসেছি।তোদের রুমে কি যেনো ভাঙ্গার শব্দ হচ্ছে।আমরা কি ভাবির কাছে যাবো?
–না না..তোরা উপরের ঘরেই থাক আমি যাচ্ছি।
আমরা তারাতাড়ি কেনাকাটা করে..বাসায় চলে আসলাম।আশিক আর কেয়াকে সব জিনিস পত্র নিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে চুপি চুপি উপরের ঘরে যেয়ে ১ ঘন্টা মধ্যে সব রেডি করে আমাকে সংকেত দিতে বললাম। আমি দরজার কাছে গিয়ে কয়েকবার ডাকলাম কেনো সাড়াশব্দ না পেয়ে বেশ ভয় পেয়ে গেলাম সুকন্যার কিছু হয়নি তো?দরজা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেলো তার মানে দরজা ভিতর থেকে লাগানো ছিলো না।ঘরে ঢ়ুকে দেখলাম সব জিনিসপত্র এলোমেলো হয়ে আছে।মেঝেতে কাঁচের টুকরো পড়ে আছে।খাটের দিকে চোখ পারতেই দেখলাম সুকন্য ঘুমিয়ে আছে।যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই হলো।পাগলীটা কান্না করতে করতে চোখমুখ ফুলিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে।চোখের পানিতে কাজল লেপটে গেছে,মাথার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে মুখের উপর পরছে।মনে হচ্ছে স্বর্গের অপশরী নেমে এসেছে আমার ঘরে।আমি সুন্যার পাশে বসে কপালে ভালোবাসার চুমু দিতেই ওর শরীর কেঁপে উঠল। মুখের উপরের চুলগুলো সরিয়ে দিতেই চোখমেলিয়ে আমার দিকে তাকাতেই আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে চোখমুখ অগ্নিমূর্তি করে বললো,আমাকে ছুঁবে না তুমি।
আমার কাছে আসার চেষ্টা করবে না বলে দিলাম।তেমার কলিগ মেঘার কাছে যাও বলেই,কান্না শুরুকরে দিলো।আমি কাছে এগিয়ে যেতেই হাতের কাছে যা পাচ্ছে ছুরে মারছে।টেবিলে চায়ের কাপ ছিলো ওটা হাতে নিয়ে ছুরে মারলো,আমার কপালে এসে লাগলো চা’র কাপটা।নাহ পাগলীটাকে কিছুতেই থামানো যাচ্ছে।শেষে উপায় না পেয়ে দ্রুত এগিয়ে গিয়ে দুই ঠোঁট এক করে দিলাম।আমার কাছ থেকে ছারা পাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করার পর। আমার শক্তির সাথে হার মেনে কিছুটা শান্ত হলো,প্রাই দুই মিনিট পর ছেরে দিলাম। মোবাইলে একটা ম্যাসেজের শব্দ হলো।আশিক ম্যাছেজ দিয়েছে।সুকন্যা বুঝে উঠার আগেই দু’হাত দিয়ে পাজা করে কোলে তুলে নিলাম।কোল থেকে নামার জন্য আমার বুকে কিল ঘুষি পরতে লাগলো সাথে বকাগুলো ফ্রি শয়তান,হুনুমান,ঢ়েরস,ছাগল ছেরে দে বলছি আমাকে।
আমি চুপচাপ সেগুলো হজম করতে করতে কোলে নিয়ে সিরি বয়ে উপরে উঠতে লাগলাম।দরজা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম সম্পূর্ণ ঘর অন্ধকার।হঠাৎ ই একটা স্পট লাইট জ্বলে উঠে।দেখে সুকন্যার বাবা হাতে প্লাকার্ড নিয়ে দারিয়ে আছে তাতে লেখা “শুভ” তারপর একটা লাইট জ্বলে উঠে সেখানে “ভাবি” হাতে প্লাকাড তাতে লেখা “প্রথম” আবার লাইট জ্বলে উঠে এবার কেয়া,হাতে প্লাকার্ড লেখা “বিবাহ” চতুর্থ লাইট জ্বলে উঠতেই মা কে দেখা গেলো,প্লার্কাডে লেখা “বার্ষিকী” এইবার রুমের সবগুলো লাইট এক সাথে জ্বলে ওঠে।পাশ থেকে মিলি,জয়,আশিক ও বাকি সবাই মিলে একসাথে চিৎকার দিয়ে বললো “”শুভ প্রথম বিবাহ বার্ষিকী””
আমি সুকন্যার কানের কাছে গিয়ে বললাম.শুভ বিবাহ বার্ষিকী আমার মায়াবতী। এবার সুকন্যা আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। আমি মজা করে বললাম কিছুক্ষণ আগেই তো আমাকে পিটাইলে এখন জরিয়ে ধরেছো কেনো?ছড়ে দাও আমাকে। সবার আড়ালে সুকন্যা আমারা বাম পাজরে জোরে একটা চিমটি কাটলো,নিরবে তার ভালোবাসার চিমটি হজম করে গেলাম। এবার ভাবি বলে বললো উঠল কি ব্যাপার এভাবে নিজেদের জরিয়ে ধরে থাকবে?নাকি কেকটা কাটবে হুম লজ্জায় সুকন্যা ফর্সা মুখ লাল হয়ে গেছে। রুমের সবাই মিটমিটিয়ে হাসছে। কেক কাটার সময় সবাই হাততালি দিতে এক সাথে বলে উঠল “হাজার হাজার তোমরা এভাবেই থেকো…