আমাদের ভালোবাসা

আমাদের ভালোবাসা

সারাদিন বাসায় শুয়ে বসে থাকতে থাকতে অবস্থা প্যারালাইজডের রোগীর মতন হয়েছে। সময় কাটাতে ইউটিউবে গিয়ে হিন্দি সিরিয়াল দেখা শুরু করলাম। একটু পরই রুমে বউ হাজির। কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে খুন্তি, আমি তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিলাম। বউ রেগে গিয়ে বলল…

-কি করছো তুমি?

–ডিগবাজী দিচ্ছি, দিবা?

-ফাজলামো রাখো, তুমিতো ইউটিউব দেখছো।

–দেখছো তো জিগাও কেন।

-ঘাউরামি করবানা।

–তো কি করব?

-কি করবা মানে? ঘরের কাজ করবা। আর তা না করে সারাদিন মোবাইল টিপো, এত কি এই মোবাইলে?

–হিন্দি সিরিয়াল দেখছি যাওতো ডিস্টার্ব করোনা।

-তুমি মহিলাদের মতন সিরিয়াল দেখো?

–কেন সিরিয়াল কি পুরুষদের দেখা নিষেধ? তোমরা দেখলে আমরাও দেখব।

-মহিলারা প্রেগন্যান্ট হলে তুমিও হবা?

বউয়ের এমন লজিক শুনে আমি আহাম্মক হয়ে তাকিয়ে রইলাম৷ খাচ্চুন্নির লজিক দেখছনি। আমি কিছু বললামনা। সিরিয়াল দেখায় মনোযোগ দিলাম। বউ ছো মেরে মোবাইল নিয়ে রাগি চোখে তাকালো। আমি মুচকি হাসি দিলাম, বউ আরো রেগে গেলো। কিছুক্ষণ ওয়াজ করে রাগ করে চলে গেলো। বিছানায় শুয়ে পা দুলিয়ে দুলিয়ে গান গাচ্ছি। একটু পরই রুমে মেয়ের আগমন। আমি বললাম….

-কিছু বলবে টুম্পা মামুনি?

–তোমাল গান অনেক কিউত বাবাই।

-ত্যাংকু মামুনি…

অমনি পাশের রুম থেকে বউ জোরে বলল…

–গান না ছাই, গান গায় মনে হয় গুলিস্তান হকারু গিরি করে ঔষধ বিক্রি করছে।

কেমনডা লাগে। ঘরের শিল্পী ঘরে দাম পাইনা। নাহ! ইজ্জৎ পেলামনা। টুম্পা বলল…

-ককারু কি বাবাই? (টুম্পা)

–ককারু না মামুনি, ওটাকে হকারু বলে।

-এতা কি?

–এটা মানে অনেক বড় শিল্পী। (উল্টো বুঝালাম)

-তুমি অনেক বলো ককারু হবা।

মেয়ের এমন কথা শুনে আরেকদফা বোকা বনে গেলাম। বউ রান্না ঘর থেকে হাসতে হাসতে বলল…

–টুম্পা তোর বাবা অনেক বড় হকার হবে, হা হা হা…

-ঐ তুমি চুপ করো। (আমি)

–হা হা, এখন কেমন লাগে। আরো উল্টাপাল্টা শেখাও মেয়েকে।

-শেখানোর স্বাদ মিটে গেছে।

–এই এখানে একটু আসোতো….!

-কেন?

–আসতে বলছি আসো, এত কেন কেন করবানাতো।

আমি রান্না ঘরে গেলাম। কোমড়ে শাড়ির আঁচল পেঁচিয়ে বউ রান্না করছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। নাকের ডগা লাল হয়েছে। কপালে সামনে থাকা চুলগুলো বারবার কপালে আসছে আর বউ সেগুলো বাম হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে। আমি বললাম…

–সরানোর কি খুব বেশি দরকার?

-কি সরালাম?

–ঐযে তোমার কপালের সামনে থাকা আবদ্ধ চুলগুলো।

-তো কি করব মহাশয়?

–সরাবেনা, থাক ভালো লাগছে।

-রান্না করতে যে অসুবিধে হচ্ছে।

–আমি করছি রান্না দাঁড়াও…!

আমি বউয়ের হাত থেকে চামচ নিয়ে নিজেই রান্নায় হেল্প করার জন্য প্রস্তুত হলাম। বউ মুচকি হেসে সরে গিয়ে পাশে দাঁড়ালো। হাসতে হাসতে বলল…

–যাই বলোনা কেন লুঙ্গি পরে রান্না করায় তোমায় কিন্তু দারুণ লাগছে হি হি…!

-ধন্যবাদ মহারানী।

–উহুম উহুম, ধন্যবাদ তো নিবনা।

-তাহলে কি চাই?

–চুমু!

-এভাবে কেউ বলে নাকি? পাগলি…!

–তাহলে কি বলব শুনি? একটা চুমু দিবাগো জামাই?

বলেই বউ হাসতে থাকলো। আমিও হাসলাম। এরই মাঝে রান্না ঘরে টুম্পা হাজির৷ দেখেই বোঝা যাচ্ছে আমাদের হাসির শব্দ শুনে মেয়ে দৌড়ে এসেছে। টুম্পা একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে একবার ওর মায়ের দিকে। কিন্তু কেন হাসছি বুঝতে পারছেনা। মেয়ের এমন কাণ্ড দেখে জান্নাত শব্দ করে হেসে দিলো। আমাদের দেখাদেখি মেয়েও হেসে দিলো। এভাবেই উপভোগ করি আমাদের মিষ্টি ভালোবাসা। বেচে থাকুক ভালোবাসা।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত