ব্যাগপত্র গুছিয়ে মনের আনন্দে বাসা থেকে বের হলাম। ঢাকা স্ট্যান্ডে এসে একটা টিকিট কিনে বাসে চড়ে বসলাম। আজ অনেক বছর পর আমি আমার গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি। সেই ছোট বেলায় আমি গ্রাম থেকে ঢাকা চলে আসছি। তাই আজ গ্রামে যাব। উফফফ, অনুভূতিটাই আলাদা। অনেক আনন্দ হচ্ছে বাসে উঠে। আমি নীল। এখন ডাক্তারী পড়ছি ঢাকায়। আর আমি সেই অনেক ছোট থাকতে হয়তো তখন ক্লাস থ্রি তে পড়তাম। তখন মা বাবাকে ছেড়ে চাচার সাথে চলে এসেছি ঢাকায়। আর কখনো যাওয়া হয়নি বা আমি যেতে পারিনি নানা সমস্যার কারণে। বাসে উঠে যখন বাস ছাড়লো আর একটু একটু করে বাসার দিকে এগোতে লাগলো আর আমার সামনেও একটু একটু করে ছোট বেলার স্মৃতি গুলো ফুটে উঠতে শুরু করলো।
– নীল, নীল এখন ন্যাংটু হয়ে আসিছ?
– সায়মা তুই? এ সব দেখে ফেললো রে।
– তাড়াতাড়ি প্যান্ট পরে আয়,, চল জামগাছ তলা যাব।
– দাড়া আসছি।
আমি কেবল তখন ক্লাস টুতে পড়ি আর সায়মা এখনো পড়ে না। ভর্তি হয়নি আর ও হলো আমাদের পাশের বাড়ির সবচেয়ে লক্ষী মেয়ে আর আমি সবচেয়ে দুষ্টু ছেলে। তারপর একটা প্যান্ট পরে ওদের বাড়ির সামনের জামগাছ তলা গেলাম। অনেক বড় গাছ এটা। সবসময় অনেক ঠান্ডা থাকে এ গাছের নিচে। অনেক বড় হওয়ার জন্য জামও ধরে অনেক। ওখানে গিয়ে দেখি সায়মা কতগুলো মাটির পুতুল নিয়ে বসে আছে।
– নীল জানস? আমাদের গলুটার না আজ বাচ্চা হয়ছে।
– গলু কোনটা রে?
– ওইযে চিনোস না চারটা ঠ্যাং আর একটা ল্যাজ থাকে?
– ওইটা তো গরু।
– গরু ওটা হতে যাবে কেন? গরু তো তুই।
– দাড়া দেখাচ্ছি কে গরু।
– ওই ছাড় ছাড়, আমার চুল ছাড়।
– না।
– আম্মুওওও।
– এই নে ছাড়লাম। আবার খালি কইয়া দ্যাখ।
– হিহিহি, কি করবি?
– চুল সব ছিড়ে দিমু।
– সস্তা না এতো।
– দেখিস। এই বলে ওকে ওখান থেকে তাড়িয়ে দিলাম। আমিও চলে আসলাম। আবার বিকেল বেলা,,,
– সায়মা ওই সায়মা।
– চিল্লাচিল্লি করস ক্যা?
– তোর ওই পুতুল টা দে না,,
– কি করবি?
– আয় খেলি।
– বাড়িতে খেলা যাইবো না। মা বকা দিব, চল পাটি নিয়ে জামগাছ তলা যাই।
– আচ্ছা চল।
তারপর দুজনে মিলে ওই গাছতলায় সারাদিন কাটিয়ে দিতাম। কখনো মারামারি, কখনো ঝগড়া আবার কখনো পুতুল নিয়ে কাড়াকাড়ি। সবসময় এক জন আরেক জনের পেছনে লেগেই থাকতাম। কিন্তু আমরা জাম গাছের নীচ থেকে কোথাও যেতাম না। কারণ বাড়িতে গিয়ে এমন চিল্লাচিল্লি করলেই পিটুনি দিবে। এরকম আরও কত মজা করতাম আমরা। তবুও সবসময় দুটো একসাথেই থাকতাম। কেউ আলাদা করতে পারেনি। কিন্তু আমি যখন চলে এলাম, তখন থেকে দুজন একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম। হয়তো এতদিনে পেত্নীটার বিয়ে হয়ে গেছে। স্বামী সংসার নিয়ে সুখে আছে। আমরা যখন পুতুল দিয়ে বউ বউ খেলতাম তখন ওকে বলতাম।
– সায়মা তোর ভাগ্য ভালো আমি তোর বর।
– ভাগ্য আবার কি করলো?
– এইযে আমি তোর বর হইছি।
– গরু কোথাকার। তোর ভাগ্য ভালো আমি তোর বউ।
– কেমনে ভালো? দেখস না আমি কত সুন্দর।
– ও মোর খোদা,, এই পেত্নী কয় কি?
– এই নে,,
– ওই আমার মুখে কাদা দিলি ক্যা?
– এইবার দ্যাখ কে পেত্নী, হাহাহা হিহিহি হেহেহে। তুই তো এখন পেত্নীর থেকেও খারাপ।
– তবে রে আজকে,,
যাহ্, ধরতে পারলাম না। পালিয়ে গেল। এক দৌড়ে ওর ঘরে চলে গেল। এখন কি হবে? মা আমাকে এ অবস্থায় দেখলে,, টিউবলের পাড়ে আছড়ে আছড়ে পরিষ্কার করবো,। তাই আগেই পুকুরে নেমে পড়লাম। ও রে পরে দেখে নিব। আমারে কাদা দিয়া অবস্থা করছে কি!!!! এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ছি খেয়াল নেই। ঘুম ভাঙলো কন্টাক্টরের ডাকে। তিনি বললো আমি আমার জায়গায় এসে গেছি। আমি তো খুশিতে লাফ দিয়ে উঠলাম।
তারপর তাড়াতাড়ি বাস থেকে নেমে দৌড় লাগালাম সেই গ্রামের আকাবাকা মেঠো পথে। হাটতে খুব ভালো লাগছে, সকাল বেলা। বাসে আসতে আসতে সকাল হয়ে গেছে। পথের দুই ধারে লেবু গাছ আর লেবুর পাতার সুগন্ধ। হটাৎ আমার ছোট বেলার শয়তানী টা জেগে উঠলো,, টপাটপ কয়টা লেবু চুরি করে ব্যাগে ঢুকালাম। হটাৎ লেবু গাছের ভেতর থেকে কোনো এক অল্প বয়সী নারী কন্ঠ বলে উঠলো (কে) আমি তো ভয়ে ছোট থাকতে যেমন আমি আর সায়মা দৌড় লাগাতাম লেবু চুরি করে তেমনই এখনো দৌড় দিলাম। এ লেবু ক্ষেত থেকে বাড়ি বেশী দূরে না। তবুও শেষ রক্ষা হলো না। আমার সামনে কতগুলো কাচের চুড়ি ঝনঝনিয়ে উঠলো, লেবু গাছের আড়াল থেকে আর আমার খুব কাছে ছিলো শব্দ টা। অতঃপর আমি,,,
– ভূত,,,, ভূত,,,
– ওই মিয়া, ভূত আসলো কোথা থেকে? আর আমার মতো একটা জলজ্যান্ত সুন্দরী মেয়েকে ভুত বানাই দিলেন?
– ওহ্, আপনি। আমি তো ভাবছিলাম ভূতের চুড়ির শব্দ।
– দেখে তো আপনারে মনে হয় শহরের বাবু। এখানে কি করেন?
– বাড়ি যাচ্ছি।
– এইযে শহুরে বাবু এমন চুরের অভ্যাস কেন?
– কি করছি?
– সব দেখে ফেলছি লেবু গাছের অাড়াল থেকে। এবার যতগুলো ব্যাগে ভরছেন ওগুলো বের করে দিন।
– আচ্ছা, দিচ্ছি। কিন্তু আপনি মেয়ে হয়ে লেবু ক্ষেতে কি করেন?
– পাহাড়া দেই।
– আর মানুষ থাকতে আপনি কেন?
– সবকিছু সবাইকে বলা যায় না।
– ওকে ওকে,, এ ক্ষেত কে আপনাদের?
– না।
– তাইলে কার ক্ষেত পাহাড়া দেন?
– আজমান চাচার।
– হোয়াট??? আপনার নাম টা বলবেন?
– কেন?
– প্লিজ,,, খুব দরকার।
– ওকে,, সায়মা,,
– পুরোটা,,
– উফফফ, সায়মা ইসলাম মিম।
– নামের পাশে উফফফ কেন?
– ধুরর, পাগল কোথাকার যান তো এখান থেকে।
– আপনার পাহাড়া দেওয়ার দিন শেষ হইছে। আজই তাড়াবো আপনাকে এখান থেকে।
– তবে রে আজকে তুই দাড়া। তোর বকবক ছুটাইতেছি।
কোথাকার কোন শহুরে পাগল। আমার গ্রামে আইসা আমারে কয়, আমার জান্টুসের ক্ষেত থাইকা আমারে তাড়াইবো। অতঃপর আমি সেই ছোট নীলের মতো আজও দৌড়াচ্ছি ওর হাত থেকে বাচার জন্য। আমি জানি ও আমাকে চিনতে পারেনি,, তবুও খুব রেগে গেছে, তাই আমাকে দৌড়াচ্ছে। কারণ আমি ওকে আমার ক্ষেত থেকে তাড়িয়ে দিব, এ কথা বলছি বলে রেগে গেছে।
সারা পথ দৌড়াতে দৌড়াতে এলাম। অনেক কিছু বদলে গেছে। এখন আর টিনের বাড়ি বেশী নেই, সব পাকা বাড়ি। অনেক পুরনো গ্রাম্য জিনিস আজ বিলীন হয়ে গেছে। রাস্তার পাশে যা দেখলাম তাতে বোঝা গেল আমাগো গ্রাম টাও আজ হেব্বী ডিজিটাল হইছে,,, ক্লাস সেভেন এইটের ছেলেমেয়েরা রাস্তায় বসে ফেসবুকে চাটিং করছে আর ম্যাসেঞ্জারে পুকিং পুকিং শব্দ হচ্ছে। হায়রে পোলাপাইন,, যাদের এখন মাঠে দৌড়াদৌড়ি লাফালাফি, ফুটবল নিয়ে মাতামাতি করার কথা তাড়াই এখন ভার্চুয়াল কালো জগতের অধিবাসী। আমাদের অনেক কিছুই আজ হারিয়ে গেছে,, আমি জানি এসব পোলাপাইন বেশী সুবিধার না। তবুও কিছু বললাম না।
অনেক সময় পর আমি বাড়ির পথ খোঁজে পেলাম আর সায়মা অনেক আগেই আমার পিছু ছাড়ছে। তারপর আবার সেই লেবু ক্ষেতে ফিরে গেছে। বাড়ি এসে মা বাবাকে সালাম করলাম। মা তো কেঁদেই দিছে আমাকে দেখে। তারপর সবার সাথে দেখা করতে গেলাম। সবশেষে গেলাম সায়মার বাড়িতে। দেখি পাগলীটা এখনো লেবু ক্ষেত থেকে আসেনি। আমি ওর মাকে খালা বলে ডাকতাম এখনো খালাই ডাকি। আমাকে দেখা মাত্রই ওনি তো চোখের জল মুছতে মুছতে আমাকে ঘরে নিয়ে বসালো। তারপর বসা মাত্রই আমার জন্য কত খাবার দাবার আনলো, উফফফ এতো কিছু খাবার কে খাবে? এতো গুলো আমি খেতে পারবো না, তবুও সকাল বেলা যতগুলো পারি সবগুলো খেলাম।
– খালা সায়মা কই?
– আর বলো না বাবা,,
যখন থেকে একটু বুঝতে শিখলো তখন থেকে ওই তোমার প্রিয় লেবু ক্ষেত আর তোমার ছোট বেলার ছবিটা নিয়ে বসে থাকতো। মাঝেমধ্যে দেখতাম তোমার ছবিটি ধরে কান্না করতো। আর সবসময় ওই জামগাছের নিচে বসে তোমার পুতুল নিয়ে নড়াচড়া করতো। এখনো সেই ছোট্ট দুটি পুতুল বুকে জড়িয়ে ওই জামগাছের নিচে বসে থাকে। ওর জন্যই এতদিন এই গাছটা কাটতে পারিনি,, গাছের একটা ডালও কাটতে দেয়নি। কাটতে গেলেই ওখানে বসে কান্না করে দিতো। এই গাছে নাকি ও তোমাকে খোঁজে পায় তাই কাটতে দেয়নি। আর তোমার সব প্রিয় জিনিস গুলো আজও আগলে রাখছে।
– হিহিহি তাই নাকি খালা?
– হ,
– আচ্ছা দেখি তো গাছের কয়েক টা ডাল কেটে।
– মাইর খাইও না ওর হাতে?
– সেটা আমি দেখবো।
– আচ্ছা।
কতখন পর উঠে পরলাম গাছে। কতদূর উঠে নিচে তাকাতেই দেখি এসে গেছে। তাই একটা ছোট্ট ডাল কেটে একেবারে ওর সামনে ফেললাম। আর জুরে হেসে দিলাম,,,
– ওই হারামি তোরে আজ খাইছি রে, শহুরে গরু, আমারে বাড়িতে আসছস ক্যান? আর আমার নীলের প্রিয় গাছ কাটতে শুরু করছিস। নাম বলছি। ( এই বলে ইটের খন্ড ছুড়তে লাগলো) এইরে বেশী উচুঁতে উঠি নাই। এর একটা লাগলেই আমি শেষ।
– খালা ও খালা, আমারে বাঁচাওওওওওও, তাড়াতাড়ি বাঁচাওওওওওও আমারে, তোমার মাইয়ায় আমারে মাইরালাইলো। ( খালা দৌড়ে এসে ওকে ধরে ফেললো। আর আমি নেমেই দিলাম দৌড়) কিছু বুঝতে পারছি না, আমার কিছু প্রিয় জিনিস নষ্ট করতে গেলে ও এমন ক্ষেপে যায় কেন? এমনকি আমার প্রিয় লেবু ক্ষেতের একটা লেবুও কাউকে নিতে দেয় না। অথচ লেবু গুলো পচে যাচ্ছে। অতঃপর দুপুর বেলা আবার গেলাম ওদের বাড়িতে গিয়ে দেখি ও আর খালা সবজি কুটছে। আর আমি জামগাছতলা গেলাম বসে থাকতে। এখান থেকে ওদের কথা বার্তা শুনা যায়। খালাআমাকে দেখা মাত্রই আবার ডাক দিল,,
– নীল এখানে আসো, কই যাও?
– ( চুপ করে আছি)
– মা তুমি কাকে ডাকলে?
– নীলকে।
– নীল এলো কোথা থেকে?
– আজ সকালেই তো ঢাকা থেকে আসলো। আর তুই ওকে ইট মারলি জামগাছের ডাল কাটছে তাই।
– ওই আমার নীল?
– হ রে,, ( দৌড়ে রান্না ঘর থেকে বাইরে আসলো,, আর আমি লুকিয়ে পড়লাম, দেখি কি করে?)
– নীল এই নীল।
– চুপ,
– কই তুই কথা বলছিস না কেন?
– চুপ,
– কিছু তো বল, আমি জানি তুই এখানেই আসছ।
– চুপ,
– আর কতদিন অপেক্ষা করবো তোর জন্য? প্লিজ আয় না আমার কাছে।
– ( তার মানে ও আমাকে ভালবাসে,, এইজন্যই আমার প্রিয় জিনিস গুলো কাউকে নষ্ট করতে দেয়নি)
– আয় না আমার কাছে প্লিজ !!!( কান্না করে দিছে)
– ( না যাই এখন,, ওকেই বউ করবো,, শহরেও তো আর আমার জিএফ নাই,,, তাই ছোটবেলার সাথীকেই না হয় জীবন সঙ্গী করলাম) জাম গাছের পেছনে থেকে বেরিয়ে আসলাম। আমাকে দেখা মাত্র আমার বুকে ঝাপিয়ে পড়লো তারপর কান্না শুরু করে দিল।
– এই পাগলী কাঁদছিস কেন?
– এতো সময় কেন বলিসনি তুই আমার নীল।
– একটু মজা দেখতে চেয়েছিলাম।
– গরু কোথাকার!!!
– ছাড়, জড়িয়ে ধরলি কেন?
– ছাড়বো না।
– কেন?
– ভালবাসি তাই।
– তাহলে তো আমাকে পেয়ে গেলি এবার গাছ টা কাটি?
– খবরদার কাটবি না।
– কেন?
– এখানে আমাদের মতো আমাদের বাচ্চারাও খেলবে।
– ও মাই গড, মাইয়া বাচ্চাদের কথা পর্যন্ত ভেবে নিছে। জল এতো দূর গড়াই গেছে আর আমি জানিই না। খালা ও খালা।
– কি হইছে?
– তোমার মাইয়ার বিয়ে দাও।
– কার সাথে?
– আমি খাড়াইয়া আছি দেখো না?
– হু, খাড়াইয়া থাক, তোর খালুর সাথে কথা বইলা দেখি।
– তাড়াতাড়ি করো। সায়মা বিয়ের জন্য কাদতেঁছে।
– কিইইই,, শয়তান আমি কান্না করছি?
– তো,, এতখন আমাকে জড়িয়ে ধরে হাসলি?
– ধ্যাত, ( দৌড়ে ঘরে চলে গেল,, আর দরজা লাগিয়ে দিল,,, এতো দেখি লজ্জায় লাল হইয়া গেছে) কি আর করবো সেই ছোটবেলার পুতুল খেলার সাথীকেই জীবন সাথী করলাম। এরপর আমরা পুতুল নিয়ে খেলবো না, আমাদের বাচ্চা নিয়ে খেলবো। তার দুইদিন পর, আমি আর সায়মা দুজনে হাত ধরে লেবু গাছের ভেতর রাস্তা দিয়ে হাটছি।
– নীল তোর এতদিন আমার কথা মনে পড়তো না?
– মাঝেমধ্যে পড়তো।
– তাহলে আমার কাছে আসলি না কেন?
– পড়াশুনা তাছাড়াও আরও অনন্য কাজ আছে, তাই সময় পাইনি।
– তুই জানিস,, জ্ঞান হবার পর থেকে আমি প্রতিদিন তোর অপেক্ষায় পথের ধারে চেয়ে থাকতাম।
– জানলে তো অনেক আগেই তোর কাছে চলে আসতাম।
– তাহলে এরপর থেকে এখানেই থাকবি?
– এখন পারবো না রে,, আরও সময় লাগবো।
– কেন?
– আমি ডাক্তারি পড়ছি,,, আর পাশ না করা পর্যন্ত আমি আর গ্রামে আসবো না।
– তাইলে আমি থাকবো কি করে তোকে ছাড়া?
– আমাকে ভালোবাসিস তো?
– নিজের থেকেও বেশি।
– তাহলে এতো বছর অপেক্ষা করতে পেরেছিস আর না হয় দু এক বছর অপেক্ষা কর। পাশ করে বেরিয়ে একটা ডাক্তারী সার্টিফিকেট পেলেই গ্রামে এসে পড়বো,, আর গ্রামের হাসপাতালেই চাকরি করবো।
– তাহলে এতো কাছে পেয়েও তোকে আমি আবার দূরে যেতে দেব কি করে? ( কান্না সুরে)
– ওই পাগলী অপেক্ষা করতে পারবি না আমার জন্য?
– ( একটু ভেবে) আমাকে পারতেই হবে। এতদিন পেরেছি এখনো পারবো, যত কষ্টই হোক না কেন!!! আবার আমাকে ছেড়ে যাবি না তো?
– কোনো দিনই না। আর আমি গেলেই আমাকে যেতে দিবি নাকি,, বেধে রাখতে পারবি না তোর ভালবাসায়?
– গরুর দড়ি দিয়ে বেধে রাখবো তোকে।
– তবে রে!! আমাকে গরু বলার স্বভাব যাবে না তোর কোনো দিন?
– হিহিহি, না।
– পাগলী একটা।
– এই শুন, আমাকে বিয়ে করবি কবে?
– ফিরে এসে,,
– তাহলে মাকে বললি যে,,,
– এমনি বলছি।
– এই শুন না,, আমাকে প্রপোজ কর।
– কেন? আমরা তো এমনিতেই দুজন দুজনকে ভালবাসি,, প্রপোজ করার কি দরকার?
– উফফফ কর না। আমার খুব শখ, তুই একদিন আমাকে প্রপোজ করবি।
– ওমা তাই নাকি?
– করতো।
অতঃপর পাগলীটাকে লেবু ক্ষেত থেকে একটা লেবু ছিড়ে এনে প্রপোজ করলাম। আমিই বোধ হয় প্রথম লেবু দিয়ে কাউকে প্রপোজ করে বিশ্ব রেকর্ড করে ফেলছি।