ফেসবুক রিলেশন

ফেসবুক রিলেশন

আজকে ভাইয়ার জন্য পাত্রী দেখতে যাবো। সকাল থেকেই সবাই সাজুগুজু কর‍তে ব্যস্ত, দেখে বুঝতে পারছি না ভাইয়াকে বিয়ে দিতে যাচ্ছে নাকি পাত্রীকে দেখতে যাচ্ছে। মেয়ে মানুষ পারেও আরকি? আজকে ছেলে বলে মুখে কিছু না লাগিয়েই যেতে হবে। তবে শুনেছি পাত্রী নাকি ভারী সুন্দ্রী। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে। আমি এখনো পাত্রীকে দেখি নি তবে ছোট বোনের থেকে শুনলাম। ইদানীং মনটা খুব খুশি খুশি থাকে। আসলে নতুন নতুন প্রেমে পড়লে যা হয়। আজকে আমি দুদিকে খুশি, প্রথমতঃ ভাইয়ার জন্য পাত্রী দেখতে যাবো আর দ্বিতীয়তঃ গত দুমাস যাবৎ আমি ফেসবুকে রিলেশন করছি। মেয়েটির নাম এঞ্জেল রুব্বানু। এই রুব্বানুই আমাকে আমার আঠারো বছর সিঙ্গেল লাইফে মিঙ্গেল হবার সুযোগ করে দিয়েছে।

এঞ্জেল রুব্বানুর সাথে এই দুমাসে আমার প্রেম ভালোই জোমছে। রুব্বানুও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে। সত্যি কথা বলতে রুব্বানুকে এখনো আমি ভিডিও কলে দেখি নাই বা দেখাও করি নাই। তবে রুব্বানু আমাকে তার একটা সেলফি দিয়েছে। বেজায় সুন্দর আমার রুব্বানু। দেখেই ক্রাশ খেয়ে যায়। ভাবছি আগামী সপ্তাহে দেখা করবো। আর ভাইয়ার বিয়ের পাশাপাশি আমিও বিয়ের কাজটা সেরে নিবো। শুধু শুধু প্রেম করে কি লাভ। গরু একটা বিয়ে দুইটা বাহ বাবা মাও খুশি হবে আমিও খুশি হবো।

টানা তিন ঘন্টা সাজুগুজু করার পরে বাসার সবাই বের হলো। সকাল থেকে এঞ্জেল রুব্বানুর সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না। সকালে মেসেজে বলছিলো আজকে নাকি খুব ব্যস্ত থাকবে, বাসায় নাকি কিছু মেহমান আসবে। এ কারণে আমিও বেশি কল দিয়ে বিরক্ত করি নি। কিছুক্ষণ পরে পাত্রীর বাসায় পোঁছে গেলাম। আমাদের বাসায় নিয়ে আদরাপ্রায়ন করতে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লো। ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি এখনি বর বর ভাব করে আছে। ভাইয়ার কানের কাছে গিয়ে আস্তে করে বললাম, একটু হাসি মুখে থাক, আজকে তোর বিয়ে হচ্ছে না যে বর বর ভাব ধরে বসে আসিস। আমার কথা শুনে ভাইয়া একটু চোখ বড় করলো। এখানে আমি ভয় পাচ্ছি না কারন এখানে ভাইয়া আমাকে কিছুই করতে পারবে না। হিহিহি।

কিছুক্ষণে পাত্রী আমাদের সামনে এসে হাজির হলো। মাথায় বড়সড় একটা ঘোমটা দিছে। পাত্রীর সাথে একটা সমবসয়ী মেয়েও দেখলাম। আমাদের দেখেই পাত্রীকে রেখে মেয়েটি চলে গেলো। কেউ মেয়েটির দিকে লক্ষ্য না করে পাত্রীকে দেখতে সবাই আগ্রহ নিয়ে বসে আছে। আম্মু বলে উঠলো” মা দাঁড়িয়ে আছো কেনো? আমার পাশে এসে বসো। আম্মুর কথা মতো মেয়েটি আম্মুর পাশে গিয়ে বসলো। আমার খুব হচ্ছিলো ভাবীর ঘোমটা খুলে ওই সুন্দ্রী মুখখানা দেখি। ইচ্ছাটা মনে রেখে কিছু বললাম না। এবার আম্মু বললো” মা তোমার ঘোমটা একটু তুলো তো দেখি। আম্মুর কথায় মেয়েটি ঘোমটা মাথা থিকে নামিয়ে নিলো।

ঘোমটা নামানো মেয়েটির দিকে তাকাতেই আমার চোখ কপালে উঠে গেলো। একি আমার এঞ্জেল রুব্বানু আমার সামনে পাত্রী সেজে বসে আছে। এটা কি করে সম্ভব? যে রুব্বানু আমাকে এতোটা ভালোবাসে সে কিনা অন্য একটা ছেলেকে বিয়ে করবে। কথা গুলো মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো! কিছুক্ষণ চিন্তা করে দাঁড়িয়ে উঠে বললাম, নাহ রুব্বানু তুমি এটা আমার সাথে করতে পারো না। আমার সাথে এই দুমাস প্রেম করে এখন অন্য ছেলেকে বিয়ে করবে তুমি এটা কিছুতেই হতে পারে না। আমার এরকম ব্যবহারে আম্মু বললো” কিরে আফরান তোর আবার কি হলো!? এমন করছিস কেনো? আমি বললাম, আম্মু এই মেয়ের সাথে গত দুমাস আমি ফেসবুকে প্রেম করছি আর আজকে দেখো মেয়েটি পাত্রী সেজে বসে আছে।

আমার কথাশুনে মেয়েটি উঠে দাঁড়িয়ে বললো” কি সব বলছেন আপনি? আপনাকে তো আমি চিনিই না আর আপনি বলছেন আপনার সাথে আমার রিলেশন? মাথা ঠিক আছে তো? মেয়েটির কথায় এবার বুকে ব্যাথা শুরু হয়ে গেলো। বুকে ব্যাথা নিয়েই বললাম, একি বলছো রুব্বানু? তুমি কি আমাকে চিনতে পারছো না? আমি আফরান, আফরান আহমেদ তোমার ফেসবুক প্রেমিক।

আমার কথাতে মেয়েটি বললো, আফরান নামের তো ফেসবুকে আমার কোনো ফ্রেন্ডই নেই, আর আমার আইডির নামতো এঞ্জেল রুব্বানু না জান্নাতুল ফেরদৌস সাদিয়া আমার আইডির নাম। এবার সাদিয়ার কথায় আমি কান্নাভরা চোখে বললাম” এসব কি বলছো আমার রুব্বানু সোনা!? এইযে তোমার দেওয়া সেলফি যেটা দেখে আমি প্রেমে পড়ছিলাম। ফোনটা বের করে সাদিয়াকে ছবি দেখালাম। সেলফি দেখে সাদিয়া কিছুক্ষন চুপ থেকে ডাকা শুরু করলো” রুব্বানু, এই রুব্বানু। তিন চার বার ডাক দেওয়াতে অন্য রুম থেকে একটা মেয়ে বের হয়ে আসলো! মেয়েটি তাদের বাসায় কাজ করে। মেয়েটি আসতেই সাদিয়া জিজ্ঞেস করলো” রুব্বানু এই এঞ্জেল রুব্বানু আইডিটা কার?

মেয়েটি কোনো উওর দিলো না। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাসা দেখছি। সাদিয়া আবার জিজ্ঞেস করলো” চুপ করে আসিস কেনো? সেদিন যে তোর ফোন দিয়ে আমার একটা সেলফি নিলি সেটা কি ফেক আইডি ব্যবহার করার জন্য? তখন মেয়েটি কান্না করতে করতে বললো” আফামনি আমারে মাফ কইরা দেন। আসলে আমি তো কাজের মেয়ে দেখতেও এতোটা ভালা না তাই আপনার ছবি দিয়া ওই আফরান ভাইজানের লোগে ফ্যাসবুক রিলেশন করছিলাম। আমারে ক্ষমা কইরা দেন রুব্বানুর কথা শুনে বেশি অবাক হলাম না তবে মাথাটা ঘুরছিলো। চিন্তায় আমার সিঙ্গেল লাইফ হয়তো আর মিঙ্গেল হবে না। এতোদিন প্রেম করলাম তাও আবার কাজের বেডির লগে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত