নিরু

নিরু

– কিরে শ্রাবণ, এতদিন কোথায় ছিলি? কী হয়েছে তোর? শরীরের এ কী হাল হয়েছে! কলেজে আসিসনি কেন এতদিন? কিরে কথা বলিস না কেন?

ক্যাম্পাসে পা রাখতেই নিরু হন্ত-দন্ত হয়ে ছুটে এলো আমার দিকে। তারপর একটানা উপরের কথাগুলো বলে চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি কোনো উত্তর দিলাম না। সে আমাকে চুপ থাকতে দেখে আবারো বললো, কিরে কথা বলিস না কেন? কী হয়েছে তোর? আর তোর ফোন বন্ধ কেন?

– বাড়ি গিয়েছিলাম।
– একবার বলে গিয়েছিস?
– প্রয়োজন মনে করিনি।
– আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বল। তারপর বল যে, প্রয়োজন মনে করিনি। আমি মাথা নিচু করেই দাঁড়িয়ে রইলাম। আমি পারবো না নিরুর চোখে চোখ রেখে কথা বলতে। কেননা তার চোখে চোখ রাখলে আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারি না।

– কিরে? আমার চোখের দিকে তাকাতে বললাম না? সে তার হাত দিয়ে আমার মাথাটা ধরে তার চোখের দিকে করে নিয়ে বললো, এবার বল প্রয়োজন মনে করিনি।

– হু।
– হু কী?
– প্রয়োজন মনে করিনি।
– আবার বল।
– হু।
– হু না, বল প্রয়োজন মনে করিনি।

আমি আর কিছু না বলে ক্লাসের দিকে হাঁটা ধরতেই নিরু আমার হাত চেপে ধরলো। সে বললো, কথা এখনো শেষ হয়নি। আর কথা অসমাপ্ত রেখে চলে যাওয়াটা আমার একদম পছন্দ না। এটা তুই জানিস। কিছুক্ষণ চুপ থেকে সে বললো, দেখ শ্রাবণ আমি সোজাসাপটা কথা বলতে পছন্দ করি। মুখের মধ্যে কিংবা মনের মধ্যে কোনো কথা চেপে রাখি না। এখন সাফ সাফ বল, কোথায় ছিলি এতদিন? আর এত শুকিয়ে গিয়েছিস কেন?

– বাড়ি গিয়েছিলাম।
– আচ্ছা, আমাকে বলে যাসনি। সেটা বাদ দিলাম। এখন বল, শরীরের এই অবস্থা কেন?
– খেতে পারিনি কিছু।
– মানে?
– জ্বর এসেছিল।
– কি?

সে আমার কপালে হাত দিয়ে বললো, এখন তো জ্বর নেই। আমি বললাম, হ্যাঁ।

– শ্রাবণ শোন।
– হু।
– আগের থেকে পাল্টে গিয়েছিস মনে হচ্ছে।
– হু।
– কিন্তু কেন?
– এমনিই।
– এমনিই কেন?
– এমনিই।
– দেখ, এরকম ভাসা ভাসা উত্তর কিন্তু আমার একদম পছন্দ না। কানের নিচ বরাবর কষে একটা লাগিয়ে দেবো।
– হু।
– আবার হু বলে!

আমি আর কিছু না বলে চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম। মেয়েটাকে ভালবাসি আমি, বড্ড ভালবাসি। প্রথম যেদিন ক্যাস্পাসে পা রাখি। সেদিন আমার চোখ দু’টো প্রথমে তাকেই দেখেছিলো। তারপর ক্লাসরুমে তাকে দেখলাম। সময়ের পরিক্রমায় কেমন করে যেন একটা ভাল ফ্রেণ্ডশীপও তৈরি হয়ে গেল। মেয়েটা ভীষণ রাগি এবং ভীষণ রূপবতী। ওর পেছনে হাজারটা ছেলে ঘুরে। তবে সে পাত্তা দেয় না কাউকে। আবার মাঝে মাঝে দেখি ক্যান্টিনে বসে অনেকে মিলে আড্ডা দিচ্ছে। অবশ্য ঐ আড্ডাতে আমাকেও ডাকে। কিন্তু আমি যাই না। স্বচ্ছ আকাশে এক টুকরো মেঘ যেমন, তাদের সাথে বসে আড্ডা দিলে আমিও তেমন।

– শ্রাবণ সে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবারো ডাক দিলো। আমি বললাম, বল।
– আমার দিকে তাকা। আমি তাকালাম। অতঃপর সে বললো, ভালোবাসি তোকে।
– মজা করছিস নিরু?
– কখনো দেখেছিস আমাকে তোর সাথে মজা করতে? হ্যাঁ দেখেছিস, মজার সময় মজা করেছি। আর তুই এটাও জানিস, প্রেম ভালবাসা নিয়ে মজা করার মেয়ে আমি না।

– এটা সম্ভব না নিরু।
– আমার চোখ দিকে তাকিয়ে কথা বলবি। যা বলবি সব আমার চোখের দিকে তাকিয়ে। ওকে?
– হু।
– শ্রাবণ
– হু
– ভালবাসি তোকে।
– বুঝিনি।
– ভালবাসি তোকে।
– কেমন ভালবাসিস?
– যে ভালবাসা বাহির থেকে দেখা যায় না।
– তোর পিছে তো অনেক ছেলেই ঘুরে।
– ওদের ভালবাসা বাহির থেকে দেখা যায়।
– বাড়ি যাওয়ার আগে দেখলাম, রিহানের সাথে বেশ দারুণ সম্পর্ক হয়েছে তোর।
– সে আমার কাজিন।
– আমি তো দেখতে সুন্দর নই।

কথাটি বলতেই সে সজোরে আমার গালে একটা চড় বসিয়ে দিল। তারপর জড়িয়ে ধরে সিক্ত কণ্ঠে বললো, এই তিনটা বছরে আমাকে এই চিনেছিস তুই? আমি কোনো কথা বলছি না। কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে আমার। এই প্রথম কোনো মেয়ের সংস্পর্শে এলাম। তাও আবার ভরা ক্যাম্পাসে। আমি তার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলে সে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আর বললো, দেখ আমি জানি তুইও আমাকে ভালবাসিস। সো ফিরিয়ে দিস না আমাকে। প্লিজ শ্রাবণ।

– তোর এই মোহ কিছুদিন পর ফুরিয়ে যাবে নিরু। তখন আমি কষ্ট ছাড়া কিছুই পাবো না।
– ফুরাবে না শ্রাবণ। যদি এমনটাই মনে হয়, তবে বিয়ে করবি চল।
– এই না না, এখন না।
– তাহলে?
– কিছু না।
– জড়িয়ে ধর তাহলে।
– লজ্জা লাগে।
– আরেকটা থাপ্পড় খাবি? নাকি জড়িয়ে ধরবি।
– না না, ধরছি। জড়িয়ে ধরছি।
– ভালবাসি তোকে।
– আমিও।
– আমিও কী?
– ভালবাসি তোকে।

পুরো ক্যাম্পাসের সকল স্টুডেন্ট আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুটা লজ্জাও লাগছে আমার। তবে তার থেকে বেশি ভাল লাগছে নিরুকে জড়িয়ে ধরে থাকতে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত