পরিপূর্ণতা

পরিপূর্ণতা

– এই নাও। ( মিম একটি কার্ড দিলো শিশির কে।)
– এটা কি। ( শিশির)
– খুলে দেখ।
– কি তোমার জন্ম দিনের কার্ড?
– হ্যাঁ জন্ম দিনের। তবে এবার একটু ভিন্ন। খুলে দেখ?
– না। বাসায় গিয়ে দেখবো। তাহলে সারপ্রাইজড হবে।
– আচ্ছা তুমি বাসায় গিয়েই দেখ। আমি আসি আজ। ( মিম এতগুলো কথা বলছে কিন্তু শিশিরের দিকে একবার ও তাকাচ্ছে না।)

– কি হয়েছে এদিকে তাকাও।
– কিছু হয় নি।
– এদিকে তাকাও তো।
– তুমি বিয়ে করবে না আমাকে।
– আচ্ছা তুমি ভালোবাসো আমাকে?
– বাসি।

– বিশ্বাস করো আমাকে?
– ভালো ও বাসি বিশ্বাস ও করি।
– তাহলে হারিয়ে যেতে চাও কেন?
– কি বললাম আমি আবার। আমি হারিয়ে যেতে চাই না তো। তুমি দূরে ঠেলে দিতে চাও কেন।
– সেদিন একটা চাকরির পরীক্ষা দিয়েছিলাম। চাকরি টা হয়ে গেছে।
– সত্যি বলছো। ( মিম এতক্ষন দাড়িয়ে ছিলো। শিশির এই কথা বলার পর ধাপ করে শিশিরের পাশে বসে পড়লো মিম।)
– কিসের চাকরি?
– বলবো না।
– আরে বলোই না?
– হুম। তোমাকে সারপ্রাইজড দিবো। একসময়। ( এইবার শিশির অন্য দিকে তাকিয়ে)

– এই এদিকে তাকাও না?
– না।
– কেন?
– ইচ্ছে করছে না।
– তাই আমি গেলাম কিন্তু।
– যাও।
– গেলাম কিন্তু।
– যাও। (শিশির যাও বলাতে। মিম শিশিরের মুখটা হাত দিয়ে ঘুরিয়ে)
– ভাব হইছে নাহ?

– কই না তো। ( শিশির মিষ্টি মিষ্টি হাসছে)
– মার খাওয়ার ইচ্ছা আছে!
– নাহ। ইচ্ছা নেই। ( আবার শিশির অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে)
– তাহলে।
– তাহলে কি।
– ভালোবাসি!
– কি শুনিনি আরেকবার! ( শিশির এইবার মিমের দিকে তাকিয়ে)
– বলবো না।
– তাই। হাত টা খুব চুলকাচ্ছে।
– কেন?
– কেন তুমি জানো না? ( শিশিরের হাত চুলকানোর একটাই কারন। মিমের হাত ধরবে)

– না।
– খুব বেশি চুলকাচ্ছে কিন্তু।
– চুলকাক তো আমি কি করবো। ( মিম অন্যদিকে তাকিয়ে মিষ্টি মিষ্টি হাসছে।)
– কি ডাক্তার তো পাশেই আছে। ঐষুধ টা দিলেই তো হয়।
– ডাক্তার আর ডাক্তারি করবে না।
– খুব চুল কাচ্ছে সত্যি।
– চুলকাক আজ কোন ঔষুধ নাই।
– আচ্ছা দিতে হবে। নাহ। ( শিশির আর কোন কথা না বলে। উঠে চলে যেতে লাগলো।)
– এই যে শুনছেন। ঔষুধ পাওয়া গেছে। ( মিম শিশির কে উঠে যেতে দেখে ডাক দিয়ে বললো।)
– লাগবে না আমার ঔষুধ।

( শিশির হাটছে সামনের দিকে তাকিয়ে। মিম দৌড়ে গিয়ে শিশিরের সামনে দাড়িয়ে গেলো। এবার দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। এবার)

– কি!!!!! পাগল ঔষুধ নেবে না? ( মিম)
– হুম। ( শিশির মাথা ঝাকিয়ে হেসে দিলো।)
– তাহলে হাত ধরো।
– হুম। ( তার পর হাত ধরে দুজন। চলতে লাগলো। তার পর দুজন সেদিন বাসায় চলে গেলো। রাতে মিমের ফোন)
– কার্ড টা খুলে দেখছো? ( মিম)
– না দাড়াও দেখি।
– আচ্ছা ফোন দিও পরে। ( কিছু সময় পরে মিম কে ফোন দিলো শিশির)

– সরি!
– কেন।
– কার্ড টা হারিয়ে ফেলেছি!
– বলো কি। কিভাবে।
– পথের মধ্যে মনে হয়। আচ্ছা কার্ডের মধ্যে কি লেখা ছিলো?
– হারিয়ে যেহেতু ফেলেছো তাহলে আর না বলি।
– বলই না?
– না তোমার চাকরি টা কি তাই বলো। তারপর বলবো।
– আজব তো কার্ডের সাথে চাকরির কি সম্পর্ক।
– আছে পরে বলবো।

– আচ্ছা তুমি পরেই বলো।
– আচ্ছা একটা কথা বলতাম।
– হু বলো।
– ধরো আমি যদি তোমাকে বলি কাল আমাকে পালিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
– এটা কেমন প্রশ্ন ?
– ধরো আমার বাবা জোর করে বিয়ে দিতে চাইলো। তখন তুমি কি করবে।
– সেটা পরিস্থিতি বলে দেবে।
– আমি এমনি জিঞ্জাসা করলাম। তোমার চাকরি টা কি। । ।
– না বলি। ।
– হুম গুড নাইট। ঘুমিয়ে পরো রাত জেগো না আবার।
– আচ্ছা গুড নাইট!

( আসলে ঐ কার্ড টা মিমের জন্ম দিনের কার্ড। কার্ড টা শুধু জন্ম দিনের উপলক্ষে ছিলো না। জন্ম দিন উপলক্ষে মিম কে তার বাবার কোন এক পছন্দের ছেলের সাথে সেদিন বিয়ের কাজ টাও হয়ে যাবে। কিছুক্ষণ পরে শিশির ফোন দিলো মিম কে। )

– ১০ তারিখে চাকরি তে জয়েনিং আমার। ( শিশির)
– সত্যি বলছো। ( মিম অনেকটা জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে কথা টি বললো।)

– হুম। ( শিশির এতটুকু বলাতেই মিম জোরে বলে উঠলো।)
– আমাকে তোমার ঘরে নিয়ে যাবা কবে। ।
– হুম নিয়ে আসবো তো।
– তোমাকে একটা কথা বলা হয় নি।
– কি।
– কাল তো আমার জন্মদিন।
– হুম জানি তো।
– কিন্তু কাল আমার বিয়ে কথা পাকা হবে অন্য কারো সাথে। কিন্তু আমি তোমাকেই চাই। আমি অন্য কারো হতে পারবো না। ( মিম এ কথা বলাতেই শিশিরের গলা শুকিয়ে গেলো।)

– বল কি। তা তো আগে বললে নাহ।
– বলিনি। তার জন্যই তো বলেছিলাম। চাকরি হলেই আমি তোমার ঘরে আসবো। এখন তো হয়ে গেছে। আমি টাল সকালে চলে আসবো।
– কেন চাকরি ছাড়া আসা যেত না।
– আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। এমনিতেই মাসে ধার করে তোমার খরচ চালাও। তারপর আমি যদি তোমার ঘারে চেপে বসি তোমার জীবন টা খুব কষ্টের হবে তখন। আমি চাই না তুমি কষ্টে থাকো।

– তোমাকে হারালে বুঝি আমি সুখে থাকবো ? ( মিম কাঁদছে কোন কথা বলছে না আর। এদিকে শিশির ও একই অবস্থা। অনেকক্ষণ পরে মিম বলে উঠলো কান্নার স্বরে)
– আমিও তো তোমাকে হারাতে চাই না।
– তাহলে এমন কথা বলো কেন?
– জানিনা তোমায় হারানোর ভয় করি তাই।
– আমি আছি তো।

– এখন তো রাত ১১.৪৫ ।
– হুম।
– কাল কি করবো আমি।
– কাল না আজ ই।
– আজ ই কি।
– চলো পালিয়ে যাই। চলে আসো রাস্তায়। আমি আসতেছি।
– তুমি ঠিক আছো তো।
– হ্যাঁ ঠিক আছি তুমি চলে আসো।
– আচ্ছা আসো আমি সব গুছিয়ে নিয়ে আসি।
– কিচ্ছু গুছাতে হবে না। চলে আসো।
– এত পাগলামো করো না তো। তুমি আমার বাসার সামনে আসো।
– আচ্ছা।

( ফোন টা কেটে দিয়ে। শিশির মিমদের বাসার সামনে চলে আসলো। কিন্তু মিমের কোন খোজ নেই। এর মাঝেই মিম কে ফোন দিতেই। মিম তাদের বেলকনিতে এসে ইশারা দিলো। কিছু সময় পর মিম বেড়িয়ে এলো বাসা থেকে।)

– চলো। ( শিশির)
– হুম চলো। (হাটতে হাটতে থেমে গেল শিশির)
– থামলে কেন?

( শিশির তখন থমকে গেল। রাত তখন ২.০০ টা বেজে গেছে।। শিশির সামনে এগুচ্ছে না। কোন কথা ও বলছে না। শুধু মিমের দিকে তাকিয়ে আছে। )

– কি হলো চলো। ( মিম)
– তুমি বাড়ি ফিরে যাও।
– এসব কি বলছো।
– হুম বাড়ি ফিরে যাও।
– এখন বাড়ি ফিরে যাওয়া সম্ভব?
– হুম অবশ্যই সম্ভব। কেউ তো জানে না।
– কিন্তু কেন?
– কেনোর উত্তর টা। জানি না।
– তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না। ( মিম এই কথাটি খুব চাপা কান্নার স্বরে বলছে। শিশির কেদে ফেলছে তখন।)
– অনেক ভালোবাসি অনেক। কিন্তু!
– কিন্তু কি বলো।

– আমার থেকে তোমার বাবা মা তোমায় অনেক বেশি ভালোবাসে। তাদের কাছে আমাদের এ ভালোবাসা একদম তুচ্ছ। বাড়ি ফিরে যাও। ( শিশির এ কথা বলাতেই মিম আরো কেদে উঠলো। চারদিকে পরিবেশ নিরব তখন।। চাদের আলোয় ঝলমল করছে চারপাশ। শিশির ঘুরে দাড়িয়ে বললো।)

– চলো। ( শিশির ও কাদছে শব্দ না করে। দুজনেই নিরব ভাবে হাটছে। এমন সময় শিশির কে জড়িয়ে ধরলো মিম। সাথে শিশির ও।)

– তুমি আমাকে ভুলে যাবে না তো। ( মিম) ( এবার আবার হেটে হেটে।)
– সেই ইচ্ছা টাই হয়তো কোন দিন হবে না। ( এদিকে মিম শুধু কেদেই যাচ্ছে।) হুম আর কাদে না চলো তো।
– বাবা তো কাল আমার বিয়ে দিয়ে দিবে।
– তুমি এখন তোমার বাবাকে গিয়ে বুঝিয়ে বলবা। তুমি আমাকে ভালোবাসো।
– যদি না শুনে বাবা।
– আমি তো আছি। কাল তোমার বাড়িতে যাবো। গিয়ে তোমার বাবার সাথে কথা বলবো।
– কাল আমার বিয়ে আর কাল তুমি কথা বলবা। ।
– হয়ে যাবে চিন্তা করো না তো। সব ঠিক হয়ে যাবে এখন তো আর বেকার না আমি। ( কথা বলতে বলতে মিম দের বাড়ির সামনে এসে পরলো। কিন্তু মিম শিশিরের দিকে তাকিয়ে আছে। )

– যাও। ( শিশির) ( মিম চলে গেল তার বাসায়। এদিকে শিশির ও চলে গেলো। মিম তার রুম এ না গিয়ে। তার বাবার রুম এর দরজায় থাপরাতে লাগলো।। কিছুক্ষণ পর তার বাবা বেড়িয়ে এসে।)
– কি রে মা এত রাতে। আর তোর সাথে এগুলো ব্যাগ কেন? ( মিম তখন তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলো। আর)

– বাবা আমায় ক্ষমা করে দাও। আমি একজন কে।
– কি জন্য কাদছিস আমি সব জানি। ( মিম তখন তার বাবাকে ছেড়ে দিয়ে। আশ্চর্য হয়ে। )
– কি জানো বাবা?
– তুই কি আজ কে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলি শিশিরের সাথে।
– তুমি শিশির কে চেন।
– তুই শিশির কে ভালোবাসিস? ( মিমের মুখে অনেক টা হাসির ছাপ তখন। কিন্তু কোন কথা বলছে না।)
– কি ভালোবাসিস না।
– হুম। ( মিম মাথা ঝাকিয়ে)
– আমি সব জানি।
– কিভাবে।

– ঐ ছেলেটা আমার কোম্পানিতেই চাকরির পরিক্ষা দিয়েছে। আর ছেলেটা দেখতে খুব সুন্দর। কথা বললাম অনেক ভালো তো। ঐ ছেলের সাথে তোর সম্পর্কের কথা তোর স্যার বলেছিলো আমাকে। অনেক আগেই। আমি অনেক আগেই দেখেছিলাম ছেলেটি কে। তারপর ছেলেটির সম্পর্কে সব জেনেছি। আর তোর স্যার বলেছিলো তুই নাকি তাকে খুব ভালোবাসিস। তাই ঐ ছেলের সাথেই তোর বিয়ে ঠিক করেছি।। আর কাল ওর সাথেই তোর বিয়ে সব কথা সেরে ফেলবো। । আমি ছেলেটিকে কিছুই জানাই নি। আমি ওকে বলেছি তোমাকে কাল একটা বড় সারপ্রাইজ দেব। কোথায় দেব তা ও বলিনি।

– সত্যি বাবা। তুমি এত্ত ভালো। (দৌড়ে রুমে চলে গেলো মিম)
– এই মিম ব্যাগ গুলো নিয়ে যা।
– ও তুমি ঘুমাও। নিয়ে আসবো নে আমি। ( মিম ফোন দিলো শিশির কে।)

– কি? ( মিম)
– কিছু বলবা?
– যে ছেলেকে আমার বাবা ঠিক করেছে। আমার এই ছেলেকে পছন্দ হয়েছে। আমি তাকেই বিয়ে করবো।
– কি বলো।
– দারুন ছেলে টা। ( শিশির মিমের এসব কথা শুনে হতম্ভ হয়ে গেলো।)
– তুমি কি বলছো এগুলা।
– সেই ছেলে টি কে জানো।
– কে?
– তুমি।
– কি বলো।

– হুম। সত্যি । তুমি যে কোম্পানি তে চাকরি পেয়েছ। সেটা আমার বাবার কোম্পানি।
– ও সেই জন্যই তো স্যার আমাকে বললো কাল নাকি আমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।
– স্যার নয়।
– তাহলে কি।
– হবু শশুর বলো।
– ও আচ্ছা।
– আচ্ছা কি।
– তোমার বাবা যে এমন তা আমি কল্পনাও করিনি।
– আমার বাবা অনেক ভালো।
– হুম । আর বেশি কথা না বলি।

– কেন?
– যদি হাত চুলকায় কি করবো তখন।
– হুম তাই তো। কাল চুলকাবে। আজ আর নাহ।
– হুম লাভ ইউ।
– কমু না।
– তাহলে কিন্তু কাল থেকে আমার হাত আর কখন ও চুলকাবে না।
– তাই।
– হ্যাঁ তাই।
– লাভ ইউ টু।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত